‘ঐ মেয়েটা কেরে?’ ক্যাম্পাসে বসে মোবাইলে গেমস্ খেলছিলাম তখন-ই তাসমিয়া কণ্ঠ শুনতে পেলাম। আমি বললাম….
–কোন মেয়েটা?
-ঐ যে পিংক কালারে ড্রেস পরা মেয়েটা?
–মাথায় কি গোলাপি হিজাব ছিলো?
-বাহহহ, হিজাব কোন কালারের সেটাও দেখছি মনে আছে।
–না থাকার কি আছে? আমার স্মৃতি শক্তি ভালো তাই মনে থাকে।
-আমার বেলায় স্মৃতি শক্তি কোথায় যায় তোর?
–মানে?
-ঘোড়ার ডিম… (রেগে)
–রাগ করিস ক্যান?
-আচ্ছা বল মেয়েটার নাম কি?
-পরী….
–শুধু পরী?
-না, নাম তন্বী আমি আদর করে পরী বলে ডাকি।
–ও আচ্ছা ভালো। (মন খারাপ করে)
-তোর কিছু হইছে..?
–অরু কে?
-কোন অরু?
–যার ঠোঁট শুকনো থাকলে তোর খেয়াল থাকে?
-মানে…?
–তোর গল্পে?
-ওটা জাস্ট একটা চরিত্র।
–মিথ্যে কেনো বলিস?
-সত্যি বলছি।
–আচ্ছা বাদ দে…গতকাল বাইকে করে যে মেয়েটাকে নিয়ে ঘুরলি সে কে?
-তুই দেখেছিস তাইলে?
–বল মেয়েটা কে?
-খালাতো বোন।
–নাম কি?
-নূপুর।
–ও তোর কাঁধে হাত রাখছিলো।
-হুম, তো কি হইছে?
–তোর সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।
-তারপর?
–তোর সাথে হাত ধরে ঘুরে বেড়িয়েছে।
-আরো কিছু?
–আর কিছু দেখিনি?
-লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার কারণ?
–তোর খোঁজ নিচ্ছিলাম।
-কেনো?
–হারিয়ে গেলি নাকি তাই।
-হারিয়ে গেছি?
–অনেকটা খাপছাড়া হয়ে গেছিস, তবে হারিয়ে যাবি।
-কবে সেটা।
–তোর যেদিন ইচ্ছা হবে সেদিন।
-আমার সব ইচ্ছা অনিচ্ছা সবতো তোকে ঘিরেই।
–মানে?
-কিছুনা।
–আর হ্যা ফেসবুকের ঐ মেয়েটা কেরে?
-কোন মেয়েটা?
–ঐ যে তোকে সবসময় বাবু বাবু, জানু, বেবি, সোনা বলে ডাকে?
-ফেসবুক ফ্রেন্ড।
–ওসব বলে ক্যান?
-সেটা আমি কেমনে বলবো, ওর ইচ্ছে হয় বলে।
–তুই সেখানে রিপ্লে দিবিনা আর।
-কেনো?
–কারণ আজ থেকে ঐ মেয়েটা তোর খালা।
-আস্ত একটা গুলুগুলু মেয়েকে খালা বানিয়ে দিলি?
–বেশি কথা বললে আম্মা বানিয়ে দিব।
-আচ্ছা বলবনা।
–রাত ১ টার সময় ফেসবুকে কি করস প্রতিদিন?
-গোল্লাছুট খেলি।
–ফাইজলামি করছিস?
-মোটেও না, এ আইডি থেকে ও আইডি ঘুরে বেড়াই, এটাকে ফেসবুক গোল্লাছুট বলে।
–আচ্ছা বুজলাম। (হাসতে চেয়েও হাসলো না)
-কি বুঝলি?
–তোর মাথা, আমার মুন্ডু।
-হা হা হা….
–হাসবিনা ছাগল।
-তুসু….
–তুসু কি?
-তাসমিয়া ছোট করে তাসমি আরেকটু ছোট করে তুসু।
–আগেতো কখনও এভাবে বলিসনি।
-এমনি বলিনি।
–আমায় কষ্ট দিতে ভালোলাগে তোর?
-তুই ওতো আমায় কষ্ট দেস।
–কখন দিলাম।
-মনে নাই, সেদিক রবিনের (আমার ক্লাসমেট) সাথে হেসে হেসে কথা বললি।
–তাতে কি?
-আমার গা জ্বলে, ভাল্লাগেনা।
–কেনো, তোর সমস্যা কি?
-সিনিয়র ভাইদের সাথে একসাথে ফুসকা খাসনা তুই?
–ডাক দিলে আমি কি করব?
-তুই যাবিনা আর।
–কেনো?
-আমি বললাম তাই।
–আচ্ছা বুঝলাম। তাহলে এই তোর কষ্টেরর কারণ?
-হুমম।
–কেনরে, এতে কষ্ট পাওয়ার কি আছে?
-তাহলে আমি যে অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলি তুই কষ্ট পাস কেন?
–কারণ আমি তোকে ভা…..
-হুমম বল বল…কি যেন বললি?
–কিছুনা…(মাথা নিচু করে)
-সত্যি কিছুনা?
–আচ্ছা এবার বল, তুই কেনো কষ্ট পাইলি?
-কারণ তুই আমার বউ।
–কি বললি? (চোখ বড় বড় করে)
-বউ বলছি।
–এহহহ আইছেড়ে….আমার জামাই হওয়ার সখ কত্ত। চলল
ফট…
-হ যামুইতো…
–থাক আমি বাসায় গেলাম।
-এত তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়ে কি করবি?
–কান্না করব।
-কেনো?
–এমনি…
-তাহলে এককাজ কর, আমার টি’শার্ট টা নিয়ে যা।
–আমি তোর টি’শার্ট নিব কেনো?
-বারে তুই কান্না করবি চোখ দিয়ে পানি বের হবে সেগুলো মুছবি।
–পানি মোছার জন্যতো টিস্যু আছে।
-তুই টি’শার্ট দিয়েই মুছবি।
–লাগবেনা, কারণ তোর টি’শার্ট একটা আমার কাছে আছে।
-মানে?
–তোর মেস থেকে সাদা টি’শার্টা টা চুরি করছি।
-ওরে চুন্নিরে… সেজন্যইতো বলি আমার টি’শার্ট গেলো কই।
–ঐ খবরদার চুন্নি বলবিনা।
-একশবার বলবো।
–আচ্ছা বল, আমি গেলাম।
-পরে গেলে হয়না?
–নারে, আজকে কান্না করব।
-কতক্ষণ করবি?
–মন যতক্ষণ চায়।
-তোর কান্নাগুলো ভিডিও করে রাখিস, দেখার ইচ্ছে আছে..।
–খবিশ, ইঁন্দুর, হনুমান, বিল্লাআআআআআআআবই থাক তুই।
-হা হা হা….
তাসমিয়া চলে যাচ্ছে। মেয়েটার চোখে পানি। এ মেয়েটা কোন কারণ ছাড়াই কাঁদে। কাঁদার মাঝে কি আছে যে কাঁদতে হবে? কোন সুখ? দুংখ, আবেগ, ভালোবাসা? জানিনা….এই প্রশ্নের উত্তর যে তাসমিয়ার মতো মেয়েরাও দিতে পারবেনা। জগতে কিছু প্রশ্ন আছে যেগুলোর উত্তর খুবই সহজ। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় কি জানেন! এই সহজ প্রশ্ন গুলোর উত্তর আমরা দিতে পারিনা। অদ্ভুত না? হ্যা… বড়ই অদ্ভুত!