তোমার দেখা

তোমার দেখা

আমি কানে একটা হেডফোন লাগিয়ে রিক্সা করে অফিসে যাচ্ছি। আজ খুব দেরি তে ঘুম থেকে উঠলাম। কি করব?
ব্যাচেলার ছেলে। কোনো কিছু নিদিষ্ট করে করতে পারি না। প্রেম একটা করেছিলাম কিন্তু মাইয়া টা ছাত্র জীবনে তাকতেই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমি কিছু মনে করে নি। চলে গিয়েছিল আমার ভালো হয়েছিল। পকেট থেকে মাইয়া টার জন্য কত টাকা খরছ করেছি তার হিসাব দিতে গেলে মাথার চুল আগে হিসাব করতে হবে।

আমি দেখতে পেলাম একটা মেয়ে আমার রিক্সার দিকে দৌড়িয়ে আসছে। আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম। মেয়েটা কি চায় ? মেয়েটা আমাকে মারবে নাতো। ও বাবা মেয়েটা আমার রিক্সা দাড় করিয়ে বলে ” এক্সকিউজ মি। সরেন। বসব। মেয়েদের সম্মান করতে শিখেন নি। “আমি তো রাগে চটপট করতে তাকলাম। মেয়েটা বলে কি? আমি হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বললাম ” মামার বাড়ির আবদার। আপনি কে? হ্যাঁ। লজ্জাশরম নাই। একটা অপরিচিত ছেলের সাথে তর্কবিতর্ক করতাছেন। ” মেয়ে টা ঠাশ করে একটা হাসি দিয়ে আবার মুখ টা কালো করে বলে ” আমি এই জায়গায় নতুন। আমি খুব বিপদে পড়ে এসেছি। আপনি আমাকে একটু সাহায্য করবেন না ? কথা দিচ্ছি আমি আপনাকে জ্বালাব না। আমি একদম ভালো মেয়ে। ”

আমি মেয়েটার কথায় অবাক হলাম। মেয়েটা কে আমার একটু মায়া লাগল। মেয়ে টা সেই মেয়ের মতো না। দেখতে কিছু টা ভালো মনে হচ্ছে। হিমু সাবধান। এতো মেয়েদের প্রেমে পড় না। মেয়েরা ছেলেদের সহজে মুরগি বানিয়ে দেয়। এই কথা মনে মনে বলে একটু চিন্তা করলার। তারপর আমি একটু নরম কন্ঠে বললাম ” আপনি কি আর কোনো ছেলে পান নি যে আমার কাছে আসলেন। রাস্তাঘাটে তো কত ছেলে তাদের কাছে যাও। ”

মেয়েটা ভ্যা করে কান্না করে দেয়। আমি বললাম ঠিক আছে চলেন। কাঁদতে হবে না। মেয়েরা কাঁদলে আমি সহ্য করতে পারি না। তারপর রিক্সা মামা কে বললাম ” মামা আমার বাসায় নিয়ে চলেন। ” মেয়েটা দেখলাম কান্না তামিয়ে মনে মনে কি যেন ভাবল। আমি কিছু মনে করে নি। কিন্তু আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। মেয়েটা আমাকে যদি মেরে আমার টাকা পয়সা সব নিয়ে যায়। আমি কি করব? আমার বাসায় তো কেউ নেই। আমি একা থাকি। আমি মনে মনে একটা জিনিষ ভাবলাম।

রিক্সা দাড় করিয়ে মেয়ে টা কে বললাম ” দাঁড়ান এখানে। আমার ঘাড়েভূত এসে প্রবেশ করেছে। সব বিপদ আমার। বিপদ থেকে কিছুতেই উদ্ধার হতে পারি না। ” মেয়ে টা কে দেখলাম মন খারাপ করেছে। মেয়েটা মুখ টা কালো করে দাঁড়িয়ে তাকল। আমি তো এই কালো মুখ দেখে শুধু রাগে ফুঁসছি ফুঁসছি।

আমি নিজে ওই কান্না করে রাগের মাথায় দরজা টা ধাক্কা দিলাম। ও মা গো কি ব্যথা। ইশ! এই কথা বলে পা টা হাত দিয়ে ধরে হাতাতে লাগলাম। মেয়ে টা আমার কাছে এসেছিল। আমি রাগের মাথায় বললাম ” এই সাবধান। আলগা পিরিতি দেখাইতে আইছেন না। এসব বহুত দেখছি। আমার মাথায় আর মাথায় ঠাশ হবে তারপর দু’জন দু’জনের দিকে চেয়ে তাকব। তারপর প্রেম। এসব আমার ভালো লাগে না। ১০ হাত দূরে থাকেন। ”

এই কথা বলার পর মেয়ে টা কে দেখলাম ১ হাত দূরে চলে গেল। মেয়ে টা আমার রুমের ভিতর ঢুকতেই পিক করে হাসি মেরে দেয়। আমি তো ভয়ে কান্না করে দিয়েছিলাম। মেয়ে টা ভূত নাতো। এই সময় কারেন্টও চলে গেল। আমি তো ভয়ে ভয়ে আমার হাত-পা একদম ঠাণ্ডা হয়ে গেল। আমি এতো টা ভিতু না। কিন্তু এই টা তো মেয়ে পেত্নী ভয় কিছু পেয়ে গেলাম। পরে ৩ সেকেন্ডের মাথায় কারেন্ট চলে আসল। এখন আমি হিরো হয়ে গেলাম। মেয়ে টা দেখি মুখে হাত দিয়ে হাসতে তাকল। আঙুলের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে। আমি মিনমিন করে বললাম “আজকের রাত তারপর ললনা আপনাকে বিদায় করে দিব। তারপর বড় গলায় আমি বললাম ” শুনেন আপনি কি রান্না করতে পারেন? মেয়ে টা হাসি দিয়ে বলে ” সব কিছু করতে পারি। আপনি শুধু রান্নাঘর টা দেখিয়ে দেন। দেখবেন ২০ মিনিটের ভিতর সব করে নিয়ে আসব। ”

আমি মনে মনে ভয় পেয়ে গেলাম। মেয়ে টা সব করতে পারে। তারমানে খুনও করতে পারে। তারমানে আমি আজ বাচঁতে পারব না। না আমি শেষ। এই সময় মা কে একটা ফোন দিতে যাব কিন্তু মায়ের ফোন বন্ধ। না আমি শেষ। মাগো ও মাগো। তুমি আমাকে বাঁচাবে না। আমি মায়ের উপর অভিমান করে মোবাইল টা ঠাশ করে সোফারসেটের মধ্যে ফেলে দিলাম। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি মেয়েটা খুব সহজে রান্না করে নিল। আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। ২৫ মিনিটে কি রান্না হয়? আমি মেয়ে টা কে এখন বেশি ভয় পেয়ে গেলাম। আমি মেয়ে টা কে বললাম ” আগে আপনি খান। নিজের হাতে রান্না করছেন। আগে নিজে ওই খাঁন। ” এই কথা বলে ঠোট টা চুকা করে মুখ টা একটু সামনে নিয়ে দেখলাম মেয়ে টা সত্যি খাচ্ছে কিনা। মেয়েটা দেখলাম কিছু মুখে নিয়ে ভিতরে খাবার ঢুকিয়ে পানি খাইল। আমি মনে মনে বললাম মেয়ে টা মরে নি কেন?

তাইলে বিষ খাবারের মধ্যে দেয় নি। আমি তো ভাবলাম মেয়ে টা খাবারের মধ্যে বিষ মাখিয়ে আমার সব জিনিষপত্র নিয়ে নিতে চায়। আমি আস্তে আস্তে খাবার খাইলাম। মেয়েটার হাতে কি? খাবার এতো মজা। আমি সব খেয়ে নিলাম। আমি মেয়েটার দিকে চেয়ে বললাম ” আপনি রাঁধুনি নাতো? “মেয়ে টা হাসি দিয়ে বলে ” স্বামীর জন্য রান্না করতে শিখছি। মা বলছে আমি যদি স্বামী কে ভালোমন্দ রান্না করে দেই। তাইলে আমাকে স্বামী খুব মায়া করব। ” আমি এই মেয়ের কথায় একটু বোকা বোকা সাজলাম। মেয়ে টা কি এই যুগের। এই যুগের মেয়েদের তো স্বামীরা নিজে রান্না করে খাইয়ে দেয়। আমি বললাম ” আপনার নাম টা কি? মেয়ে টা আমার দিকে চেয়ে বলে ” সুস্মিতা। আমি বললাম ” আপনার হাসি খুব সুন্দর। এক কাজ করেন। আপনি এই রুমে থাকেন আর আমি ওই রুমে তাকব। কোনো কিছু দরকার হলে আপনি আমাকে ডাক দিবেন ” এই কথা বলে পানি খেয়ে নিজের রুমে শুয়ে গেলাম।

মেয়ে টা কি সুন্দর। আচ্ছা এ রকম সুন্দর মেয়ে আমার মতো হিমুর বাসায় কেন আসবে? উত্তর খুঁজে পাই নি। না বাবা এই মেয়ে কে বিশ্বাস করা যাবে না। সব কিছুতে প্রথম। আমি আমার রুমের ভিতরে থালা মেরে ঘুমিয়ে তাকলাম। এখন মেয়ে টা থালা ভাঙতে পারবে না। আমি তো মনে মনে খুশি। মাথায় একটা বালিশ দিয়ে ঘুমিয়ে তাকলাম। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার বাসা টা সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে। কি অপরূপ সুন্দর। আমি ডাইনিং টেবিলে যেতেই কত রকম নাস্তা। আমি সব কিছু খাচ্ছে আর নাকে দিচ্ছি। মেয়ে টা হাসি দিয়ে বলে ” বিয়ে করেন না কেন?

আমি মেয়েটার কপালের দিকে চেয়ে বললাম ” আপনার কি তাতে? এখানে আসছেন সকালের খাবার খেয়ে নিজের জায়গায় যান। এতো কিছু জানতে হবে না। ” মেয়ে টা কে দেখলাম মন খারাপ করল। আমি নিজের চোখে দেখে আমার কিছু টা খারাপ লাগল। আমার এতো খারাপ লাগছে কেন? মেয়ে টা কে? মেয়েটা কোথায় থেকে এসেছে? আমি কিছু জানি। এমনিতেই মেয়েটার মন ভাঙল না পা ভাঙল তাতে আমার কি ? তারপর অফিসে চলে গেলাম। অফিস থেকে রাতে এসে দেখি মেয়েটা যায় নি। আমি এক পা দুই পা করে মেয়েটার রুমে গেলাম। আমি চোখ টা কপালে তুলে বললাম ” এই শুনেন আপনি কার জন্য সাজেন? আজ এই বাসায় কেউ আসবে নাকি?

মেয়ে টা মাথা আঁচড়ি বলে ” না। এমনি। অনেক কাজ করছি তো। আপনি তো বাসা টা আফ্রিকার জংগল বানিয়ে রেখেছেন। এই জংগল পরিষ্কার করতে তো আমি নিজেই বাংলাদেশের ছোটখাটো জংগল হয়ে গিয়েছিলাম। তাই একটু নতুন রূপে একটু সাজলাম। আমি মেয়েটার দিকে চেয়ে অবাক হলাম। মেয়েটার রূপ দেখতে বাতি লাগবে না। বাতি নিবিয়ে নিলে মেয়েটার রূপের গুনে সমস্তরুম অন্ধকার থেকে আলোতে ফিরে আসবে। আমি আমার মাথায় একটা থাপ্পড় দিলাম। এই ধরণের মেয়েরাই ছেলেদের মন ভাঙে। ধ্যাত আমি হাত মুখ ধুয়ে খেতে যাই।

মেয়েটা আমার কাছে এসে বলে ” আমাকে কেমন লাগছে ? ” মেয়েটার হাত পিছনে ছিল। আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। পিছনের দিকে কোনো অস্ত্র আছে। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম ” আমি পরী দেখে নি কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আপনি পুরী। “মেয়েটা একটা বড় হাসি দিয়ে বলে ” দূর পাগল। আমি পরী হতে যাব কেন? আমি তো সুস্মিতা। “মেয়েটা এই কথা বলে পিছন দিক থেকে হাত টা সামনে এনে চিঁড়নি টা খাটের উপর রাখল। আমি তো খুব অবাক হলাম। আমি মনে মনে বললাম ” ও চিঁড়নি ছিল। ”

আজ অনেক পেট বড়ে খাইলাম। আচ্ছা মেয়েটার পরিচয় তো আমি জানি না। আমি মেয়েটা কে বললাম ” ঢাকা শহর আপনি কিসের জন্য এসেছেন ? কার কাছে এসেছেন ? এসব প্রশ্ন করতেই মেয়েটা বলে ” ও আমি তো আপদ। আমি বিদায় হলে আপনি খুশি। যান সকালে ঘুম থেকে উঠে চলে যাব। আমার মা-বাবা কেউ নেই বলে আমাকে সবাই আপদ ভাবে। আমাকে সবাই অবহেলা করে। “আমি মেয়েটার কথা শুনে মন টা খারাপ হয়ে গেল। আমি মা কে একটা ফোন দিলাম কিন্তু মায়ের ফোন বন্ধ কেন? আমি তো উত্তর খুঁজে পাই নি। মেয়ে টা আমাকে বলে ” আপনি কি পুলিশ কে ফোন দিচ্ছেন ? এই কথা বলে মেয়ে টা আমার দিকে চেয়ে রইল। আমি বললাম ” না। তা হবে কেন? আমি তো মাকে ফোন দিলাম। ”

মেয়েটা দেখলাম খুশি। মনে হচ্ছে আরেকটা প্রাণ খুঁজে পেল। আমি আর কোনো কিছু না বলে ঘুমিয়ে তাকলাম। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি মেয়েটা নেই। আমি মনে মনে কষ্ট পেলাম। সালার মেয়েরা এ রকম কেন একটা বার তো আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে যেতে পারত। এরজন্য ওই মেয়েদের সুযোগ দেওন না। আমি নিজের হাতে এক কাপ কফি করে খেতে লাগলাম। এখন থেকে আমাকে কফি খেয়ে জীবন টা বাঁচাতে হবে। সকাল সকাল মায়ের ফোন। মা আমাকে বললেন ” আজ তো শুক্রবার। তুই এক কাজ কর বাবা। একটা পাঞ্জাবি পড়ে গ্রামে চলে আয়। তোর জন্য আমরা অপেক্ষা করব। আমি মাকে বলতে যাব দুই দিন ফোন বন্ধ ছিল কেন? এই কথা বলার আগেই মা ফোন টা কেটে দিলেন। আমি কি আর করব গ্রামে গেলে মায়ের হাতের রান্না খেয়ে আসতে পারব। তাই সব ঠিকঠাক করে বাস স্টেশনে চলে গেলাম। বাস দিয়ে চলে আসলাম গ্রামে।

গ্রামে ঢুকতেই সবাই আমাকে দেখে অবাক। কি খবর হিমু। আজ কিসের জন্য আসলে। নতুন বউ কে শহরে নিয়ে যেতে। আমি পুরাই অবাক। কার বউ? কিসের বউ? বউ কোথায় থেকে আসল। বাড়িতে যেতেই সবাই দেখি আমাকে ভিতরে নিয়ে আমাকে বলতে লাগল ” মেয়েটা ভাইয়া খুব সুন্দর। তুমি না মেয়ে টা কে দেখলে অজ্ঞান হারিয়ে ফেলবে। ”

আমি সব টিরে থাপ্পড় দিয়ে বললাম ” চুপ। মেয়ে দেখলে অজ্ঞান হয়ে যাব। তাইলে এ রকম মেয়ে আমাকে দেখাচ্ছিস কেন? এবার দেখি সবাই। একদম চুপ হয়ে গেল। আমি মাকে ডাক দিতেই মা আমার কাছে আসলেন। আমার কাছে এসে আমার কপালে একটা চুমু দিলেন। আমি মায়ের প্রতি রাগ এনেছিলাম। কিন্তু মায়ের এই আদরে আমি কিছু বলতে পারলাম না। আমি মাকে বললাম ” এসব কি শুনি? কার বিয়ে? ” মা আমার দিকে চেয়ে বলেন ” চল তোকে মেয়ে দেখাব। ”

আমি মেয়ের রুমে যেতেই রাগে চটপট করতে করতে বললাম ” আপনি এখানে ? আপনি তো খুব নিমকহারাম। আপনি একটিবার আমাকে জিজ্ঞাস করে আসতে পারলেন না। আপনার মতো মেয়ে আমি অনেক কম দেখছি। ”
মেয়ে টা উত্তর দেয় নি। মা আমার দিকে চেয়ে বলেন ” মেয়ে টা খুব ভালো। মেয়ের মা-বাবা কেউ নেই। মেয়েটা তার মামার বাসায় ছিল এতো দিন। আমার ছোটো কালের বান্ধবীর মেয়ে। মেয়েটা আমার কথায় সেখানে গিয়েছিল। আমি বলেছিলাম মা তুমি তোমার ইচ্ছামত আমার ছেলে কে বিয়ে করবে আমি কোনো জোর করব না। তারপর মেয়ে টা পরীক্ষা করার জন্য সেখানে গিয়েছিল। ”

আমি তো বোকা হয়ে গেলাম। আমি বললাম ” মেয়ে আমাকে বিয়ে করবে মানে কি আমি মেয়ে কে বিয়ে করব না। ”
মায়ের মুখ টা কালো হয়ে গেল সাথে সাথে সুস্মিতার মুখটাও। আমি না খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমি চিন্তা করে দেখলাম দুই জনের মন ভাঙা যাবে না। আমি একটা ফ্যাকাসে হাসি দিয়ে বললাম ” আচ্ছা আমি বিয়ে করব তার আগে আপনার বউ আমাকে সরি বলতে হবে। ” মা কে এই কথা বলে সুস্মিতার দিকে চেয়ে রইলাম।
সুস্মিতা দেখি আস্তে করে বলল ” সরি। ” সবাই ৩২ টা দাঁত বের করে হাসি দিলাম।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত