সংসার

সংসার

বিয়ের এক সপ্তাহ পর আজ-ই প্রথম এই ভর সন্ধ্যা বেলায় পুরো ঘর জুড়ে মীরা প্রচন্ড দুর্গন্ধ অনুভব করছে।গন্ধটা এতই তীব্র যে রুমে টেকা মুসকিল।এত দুর্গন্ধ কোথা থেকে আসছে?গন্ধের উৎস খুঁজতে খুঁজতে মীরার নাক বিছানার কাছে গিয়ে ঠেকলো।তার ভয় হচ্ছে বিছানার নিচে তাকাতে।মনে হচ্ছে কেউ হয়তো কাউকে বা কিছুকে মেরে বিছানার নিচে রেখে দিয়েছে।

কি হতে পারে সেটা???আর ভাবতে পারছে না মীরা।মিরাজ,তার বর বাথরুমে গিয়েছে অফিস থেকে এসে।তাকে যে জোরে ডাকবে সেই সুযোগটাও পাচ্ছে না সে।গন্ধের তীব্রতায় মুখ আর নাক থেকে হাত সরানো যাচ্ছে না।ভয়টা মুছে ফেলে টর্চ জ্বেলে খাটের নিচে তাকাতেই চিৎকার করে উঠল মীরা!!!!

:একি!!!ও…য়া….ক থু..উ..উ।জুতার ভেতর এভাবে কেউ মুজা ঢুকিয়ে তা খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে নাকি?আশ্চর্য ব্যাপার!!!কারো মুজায় এই পরিমান দুর্গন্ধ হয়!!!ওরে আল্লাহ রে!!এরচেয়ে তো শুঁটকি পঁচা গন্ধও অনেক ভাল!!!!
কথাগুলো শেষ হতে না হতেই মিরাজ বাথরুম থেকে বের হলো।বাথরুম থেকে বের হয়ে তার নিজ দুই পায়ে বডিস্প্রে দিতে লাগল।লজ্জিত দৃষ্টিতে মীরার দিকে তাকিয়ে বললো….

:তুমি মেঝেতে এভাবে বসে আছ কেন মীরা?কোন সমস্যা?
:(রাগী স্বরে নাক চেপে)কাঁরো মুঁজায় এ্যাঁতো পঁচা গঁন্ধ ক্যাঁমনে হঁয় রেঁ ভাই?বিঁশ্বের শ্রেঁষ্ঠ খঁবিছের সাঁথে কিঁ আঁমার বিঁয়ে হল!!!!

:দেখ মীরা যা খুশি তাই বলো কিন্তু খবিছ বলবে না বলে দিলাম।আমি সব সময় পা পরিষ্কার রাখি তবু যদি গন্ধ হয় তবে আমার কি দোষ?এ জন্য সু-রেকে আমার জুতা কেউ রাখতে দেয় না আর তাই নিজের বিছানার নিচে জুতা এনে রাখি।আমার রুম আমার স্বাধীনতা।তুমিও তো রাতে ষাঁড়ের মত নাক ডাকো মীরা।সে জন্য তো আমি এই সাত দিনে একবারো তোমায় কিছু বলিনি।আমার ঘুমাতে কষ্ট হয়েছে তবু চুপ ছিলাম এবং মানিয়ে নিতে ট্রাই করছি।তোমারো উচিৎ এটা মেনে নেয়া।মানিয়ে নিতে পারলে তখন এই গন্ধকে তোমার মনে হবে ফুলের সু…

:খামোশ মি:মিরাজ….আপনার অভিযোগ পুরোপুরি বানোয়াট এবং মিথ্যে।শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা পরিহার করুন।আমি ঘুমের মধ্যে নাক ডাকি না।কখনোই না।
:ইশ্ আসছেন প্রধানমন্ত্রী মীরা কীরা! তার ছিঁড়া। ওই, ঘুমের মধ্যে তুমি কেমনে বুঝ যে তুমি নাক ডাকো না?
:মিরাজ গন্ধ রাজ,আস্ত একটা চাঁপাবাজ।
:খামোশ বেয়াদপ মহিলা!স্বামী কে তুমি চাঁপাবাজ বলো এত্ত বড় সাহস তোমার!!!
:হুশিয়ার মিষ্টার টেষ্টার সাহেব!আমাকে ধমক দেবেন না।মীরা ধমকে ভয় পায় না।আমি এখনি আপনার জুতা বাইরে নিক্ষেপ করবো। কথা শেষ হতে না হতেই মীরা মিরাজের মুজা সহ জুতো জোড়া জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিল।

:মা…ও…মা, দেখে যাও তোমার পুত্রবধূর কান্ড!কি বিয়ে দিলে..এই দজ্জাল ঝগড়াটে মেয়েটা তো আমার জীবনটাকে তেজপাতা অথবা শুকনা মরিচ পোঁড়া বানায় ফেলবে।এই ছিল কপালে শেষ পর্যন্ত হায় হায় রে!!!
মিরাজের মা দৌড়ে রুমে প্রবেশ করলেন,সাথে তার ছোট দুই ভাই এবং একমাত্র ছোট বোনটিও আসলো।

মা:কি রে এই সন্ধ্যায় তোরা এত চিৎকার করে কথা বলছিস কেন?কি হয়েছে?

:মা,মীরা আমার জুতা,মুজা সব বাইরে ফেলে দিয়েছে।আমার নতুন জুতা!!কাল আমি কি পড়ে অফিসে যাবো?

মীরা:আম্মা আপনার ছেলে যদি ঐ জুতা পড়ে অফিসে যায় তবে অফিসের সব লোক পালাবে।
মিরাজ:চুপ যাও পঁচা মেয়ে।

মা:থাম তোরা।এত ছোট খাট ব্যাপার নিয়ে যদি এমন লঙ্কা কান্ড বাঁধাস তবে বাকি জীবন কেমনে একসাথে চলবি?সবাই পারফেক্ট হয় না। সবারই কোন না কোন অভ্যাসগত ত্রুটি থাকে।এটা মেনে নিয়ে ছাড় দিয়ে চলার নামই সংসার।

ছোট বোন :তুমি যা-ই বলো মা ভাইয়ার মুজার গন্ধ হজম করা কষ্ট।ভাবি তুমি উচিৎ কাজটাই করেছো।

মিরাজ:তুই আমার বোন নাকি ওর???আশ্চর্য!!!

মীরা:উচিৎ কথা বললেই শত্রু,হুহ।

মিরাজ:এই উচিৎওয়ালী চুপ করো।

মীরা:মা,এ বলে আমি নাকি নাক ডাকি।এর সাথে আমি আজ থেকে ঘুমাবো না।আমি আপনার সাথে থাকবো মা।
মা বুঝলেন এদের বুঝিয়ে কাজ হবে না।তাই বউ কে নিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলেন।রাতে মীরা তার কাছে ঘুমানোর সময় বেজায় বিকট শব্দে নাক ডাকা শুরু করল।মা নিজের মোবাইলের রেকর্ডার অন করে তা রেকর্ড করে রাখলেন।সকালে বউ শাশুড়ি নামাজ আদায় করার পর মা মীরাকে রেকর্ডটি শুনালেন।মীরা শব্দ শুনে নিজেই নিজের প্রতি বিরক্ত হল।এত জোড়ে সে নাক ডাকে!!তার মা তো তাকে কখনো কিছু বলেননি!ভালবাসলে এভাবেই বুঝি প্রিয়জনের দোষগুলো মেনে নিতে হয়?মীরা তার ভুল বুঝতে পারলো।তাই চুপিচুপি বাগানে গিয়ে মিরাজের জুতো মুজো খুঁজে এনে তার রুমে রেখে দিল। সকাল ৮ ঘটিকা মিরাজ নিজের রুমে জুতা মুজা ফিরে এসেছে দেখে মহা আনন্দিত।নাস্তার টেবিলে মীরার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল…

:মা আজ সাতদিন পর বেশ আরামে ঘুমিয়েছি।মীরা কীরা কে তোমার কাছেই রেখে দিও এখন থেকে। মীরা কিছু না বলে চলে গেল দেখে সে অবাক হল।ভেবেছিলো সকালে একচোট ঝগড়া করে বেড়ুবে কিন্তু আশায় গুড়েবালি অবশ্য ঝগড়াটে বউটাকে সে খুব ভালবেসে ফেলেছে।ঝগড়ার সময় মীরার চোখ মুখের এক্সপ্রেশন দেখার মত হয়।রাতে সে মীরা কে মিস করেছে তবু সেটা গোপন ব্যাপার প্রকাশ করা নিষেধ।মীরাটা জানতে পারলে মাথায় চড়ে বসবে বলে তার ধারনা।মিরাজ অফিসে চলে গেল। রাতে অফিস থেকে ফিরে…

:এই যে মিষ্টার টেষ্টার…
:খবরদার কীরা আমায় টেষ্টার বলবা না।
:এক হাজার বার বলবো।
:কত্ত সাহজ! এই চুল টেনে দেব কিন্তু..
:আমার হাতেও নখ আছে…
:তাতে আমার কি?
:চুল টেনে দেখ তারপর বুঝবে তোমার কি!
:পঁচা মেয়ে..
:বাজে ছেলে।

দুইজনেই কিছুক্ষন চুপ।তারপর মীরা একটা গিফ্ট বক্স দিল লজ্জা মিশ্রিত মুখ নিয়ে। মিরাজ কোন কথা না বলে সেটা নিয়ে খুলল।দেখলো সেখানে সাত জোড়া মুজা।মীরা আস্তে আস্তে বলল..

:সরি কালকের ব্যবহারের জন্য।তুমি প্রতিদিন একজোড়া করে মুজা পড়ে অফিসে যাবে।একজোড়া মুজা একদিন ব্যবহার করলে গন্ধ কম হবে। মিরাজ অবাক হয়ে মীরার দিকে তাকিয়ে রইল।তারপর পকেট থেকে বেলী ফুলের একটা মালা বের করে মীরাকে দিয়ে বললো…

:কীরা এসো তোমার খোঁপায় পড়িয়ে দেই মীরা জোরে হেসে দিল। সেই হাসিতে যেন সম্পর্কের বিনি সুতোর মালাটা নতুন সুতোয় পাকাপোক্ত করে গড়ে তোলার স্বপ্নটা দোল খেতে লাগল।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত