ভাইয়া ভালো আছেন?
– হ্যা ভালো! কিন্তু তুমি কে?
– চিনতে পারছেন না? আমি নিলা।ওই যে ক্লাস সেভেনে থাকতে যে আপনার কাছে প্রাইভেট পড়তাম!
– ওহ্! তা এখন কি করছো?
– এবার এসএসসি পরীক্ষা দিব!
– ওহ্, চালিয়ে যাও বলেই হাটতে লাগলো ছেলেটি! পিছনথেকে মেয়েটা আবার ডেকে উঠলো,
– ভাইয়া একটা কথা ছিলো!
– কি কথা?
– কিভাবে যে বলবো বুঝতে পারছি না!
– আরে বলে ফেলো!
– না ভাইয়া আমি পারবো না, আপনি বলেন!
– আমি কি বলবো?
– আচ্ছা থাক বলতে হবে না! আমি আপনাকে একটা চিরকুট দিচ্ছি এটা বাড়িতে গিয়েপড়বেন! কিন্তু প্লিজ এখানে খুলবেন না।
– আচ্ছা দাও
চিরকুটটি হাতে নিয়ে খুশিতে গদগদ করে বাসায় যাচ্ছে ছেলেটি! আর মনে-মনে ভাবছে, অনেকদিন পর কোনো একটা মেয়ে আমার দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছে! ভালোই হলো অবশেষে একটা প্রেম জুটলো। ছেলেটা একটু গম্ভির টাইপের! তবেমেয়েদের সংস্পর্শে একদম গলে যায়! বাসায় গিয়ে খুব আদর করে চিরকুটটি খুলতে লাগলো! কাগজটিতে লেখা আছে,
–“ভাইয়া আমার পরীক্ষার আর মাত্র কিছুদিন বাকি! কিন্তু লেখাপড়ার যা অবস্থা!!! আপনিতো গনিতে অনার্স করতেছেন, তাইভাবলাম আপনার কাছে কিছুদিন অংক করি!!!আমাকে পড়াবেন???”অতঃপর চিরকুটটির দিকে ভ্যাবাচ্যাকাখেয়ে তাকিয়ে আছে ছেলেটি! হঠাৎ করে মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো,রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নীলার কন্ঠ!
– ভাইয়া আপনি কখন আসবেন?
– আসতে পারবো না!
– কেন ভাইয়া?! প্লিজ ভাইয়া না করবেন না!
আপনি না পড়ালে আমি ফেইল করবো, আরফেইল করলে আত্মহত্যা করবো! তারপর সবকিছুরজন্য দায়ী থাকবেন আপনি। আপনাকে এসেপুলিশ ধরে নিয়ে যাবে, থানায় বেধেঁ পিটাবে……!
– এই থামো!!!!
– আসবেন’তো??? (অভিমানী কন্ঠে)
– ওকে আসবো।
পরেরদিন মেয়ের বাসায় গিয়ে হাজির হলো ছেলেটি! প্রতিদিন বিকালেনীলাকে প্রাইভেট পড়াতে যায়! এভাবেইচলছে কিন্তু মেয়ের আবদার দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে! এবার বলছে,
– ভাইয়া আপনি আমাকে পরীক্ষার হল’এ নিয়ে যাবেন!
– নাহ্, পারবো না।
– তাহলে আমি পরীক্ষা দিব না।
– তুমি পরীক্ষা না দিলে আমার কি?!
– আব্বু আপনার নামে মামলা করবে! তারপরপুলিশ এসে ধরে নিয়ে!
– আচ্ছা যাব!
আসলে ছেলেটার একটা দূর্বলতা আছে, তা হলো, পুলিশের মাইরের ভয়! একবার এক বন্ধুকেতার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে পালিয়ে যেতেসাহায্য করেছিল! তারপর পুলিশ ওদেরকে না পেয়ে তাকে ধরে থানায় নিয়ে ইচ্ছেমতধোলাই দেয়! সেই থেকে পুলিশ স্টেশনের নাম শুনলে ছেলেটি একটু ভয় পায়! প্রতিদিন রিকশায় করে নীলার সাথেপরীক্ষার হল’এ যেতে ভালোই লাগেছেলেটির! মেয়েটি বেশ চঞ্চল, উৎকন্ঠা। কিন্তু ছেলেটি খুব গম্ভীর! গম্ভীর থাকলেওমনের মধ্যে রোমান্টিকতার বিন্দুমাত্র অভাব নেই, বরং অন্যদের থেকেও বেশী। আস্তে আস্তে পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়! ছেলেটিও এখন আর আসেনা। একদিন নীলা তার প্রাইভেট টিচারকে ফোন করে তাদের বাসায় আনে। তারপর হাতে একটা বিয়ের কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বলে, – ভাইয়া আগামী শুক্রবার আমার বিয়ে! আপনাকেই প্রথম দাওয়াতটা দিলাম! আসবেন কিন্ত।
– হুম। বলেই ছেলেটি রুম থেকে বের হয়ে যেতে লাগলো! পিছন থেকে মেয়েটি ডাক দিলো,
– ভাইয়া এই সল্প সময়ে ছেলেটার চোখে অশ্রু চিকচিককরছে!
– একি ভাইয়া আপনি কাঁদছেন কেন?
– কাঁদি না, চোখে কিজানি একটা পড়ছে! মেয়েটা বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, আমি কি কিছু বুঝি না!!!
– কার সাথে আমার বিয়ে, জিজ্ঞেস করবেন না?
– যাকে তোমার পছন্দ, নিশ্চয়ই তার সাথে। কথাটা বলেই ছেলেটা চলে গেল। রাত ১২টা বাজে! ছেলেটার একদম ঘুম হচ্ছে না। শুধু নীলার কথা মনেহচ্ছে! এমন সময়, নীলার ফোন,
– কি করো আমার হবু জামাই! ছেলেটা চমকে গিয়ে বলে উঠলো, রঙ নাম্বার।
– না বাবু আমি ঠিক নাম্বারেই ফোন করেছি! তুমি এখনো বিয়ের কার্ডটা দেখোনি?
– না।
– তুমি আসলেই একটা বুদ্ধু! তাড়াতাড়ি দেখো এমন সময় ছেলেটা তার পাশে থাকা বিয়ের কার্ডটা উল্টিয়ে দেখতে লাগলো, নীলার নামের সাথে তার নামটা স্বর্ণাক্ষরে লেখা।ফোনের ওপাশ থেকে মেয়েটা বলে উঠলো, খুশী হওনি?
– না।
– কেন?
– কারন তুমি আসলেই একটা পাগলী।
– কি আমি পাগলী?!!!