– ওরে বাবা রে ওরে মা রে মরে গেলাম গো কী ব্যাথা ওহুহুহু…আবার উঠছে, আবারউঠছে ডান দিকে দাঁতটাই… ও আল্লাহ্আমারে তুমি এমন ব্যাথা না দিয়া তুইলানাও না ক্যান।
– এমন না করে চুপচাপ বসে থাক বলছি… তা না হলে কিন্তুু আবার ইনজেকশন দিবো হুমমমম। -আরে এমন ব্যাথা করলে কী আমার দোষনাকি।
– কেনো… সারাদিন এত চকলেট খাওয়ার সময় মনে ছিলো না হুমমমমম… এখন তো ব্যাথা করবেই ! ঐটা কী।
– কিছু না.. চুপচাপ শুয়ে থাকো বলছি। না না আমি মরে গেলে ও তো ইনজেকশন নিবো না হুমমমমমম ।
– একটা থাপ্পড় দিমু… তা না হলে আরো ব্যাথা করবে।
– ঐ টা যদি আমার দাঁতের মধ্যে ঢুকে দেওয়া হয় আমি তো এমনি মরে যামু।
– মোয়াজ ভালো হচ্ছে না কিন্তুু তোমাকে দেখতেই এক ঘন্টা চলে গেছে আরো রুগি আছে।
– আচ্ছা ওদের কেই দেখো আমাকে ইনজেকশন দেওয়া লাগবে না হি হি.. এই যে দেখোব্যাথা ভালো হয়ে গেছে।
– এখানে এসে বসবা নাকি.. আবার জোর করে বসাবো।
– হুমমমমমমমমম আসছি ।
– ম্যাডাম… আর কতক্ষণ লাগবে আরো রুগি আছে তো (নার্স)।
– তুমি এক কাজ করো সবাই কে হাফিজ সাহেবের কাছে পাঠিয়ে দাও কেমন আরবলবা ম্যাম বিজি আছে।
– ঠিকআছে ম্যাডাম ।।
– ঐ তোমার জন্য কত মানুষ বসে ছিলো।
– আমি কী করবো সবার থেকে তো আমিই বেশি সিরিয়াস।
– হুমমমমমমম এবার চুপচাপ কাছে আসো বলছি।
– যাবো ঠিকআছে তবে একটা কন্ডিশন আছে।
– কীইইইইই।
– আস্তে আস্তে করে ইনজেকশন দিবা কেমন।
– আচ্ছা বাবা এবার তো কাছে আসো। হুমমমমম।
– হা করো……। হাাাা করছি ওহহহহহহহহহহহ। হয়েছে।
– হি হি লাগলো না তো.. আর ব্যাথা ও নাই।
– পকেট এ ঐ গুলো কী দেখি। – কই কিছু না তো..।
– কী লুকাচ্ছ দেখি। – কিছু না হুমমমমম।
– মোয়াজ আমি দেখছি পকেটে কিছু আছে..দেখাবা নাকি।
– না মানে… এই যে এই গুলো।
– ছি… এত বলার পরে ও তোর কোন লজ্জা হয় নাই .. তবু এই চকলেট খেতেই হবে। আমার সাথে আর কথা বলবি না.. আর যদি কখন ও দাঁতের ব্যাথার জন্য আমার কাছে আসবি না।
– আরে বাবা এই গুলো পাশের বাসার পিচ্চির জন্য।
– আবার একটা মিথ্যা কথা.. আমি কী জানি না যে পাশের বাসাই কোন পিচ্চি নাই আর ওটা আমাদের বাসা পাগলি পাইছিস না আর কখন ও ফোন বা এস এম এস করবি না।
– এই যা ভুলে বলে ফেলছি…. সরি… আর কখন ও খাবো না সত্যি।
– এত দিন অনেক শুনছি…এখন আমার সামনে থেকে যা বলছি।
– যাচ্ছি… আপনার বিল কত হয়েছে বলেন। লাগবে না যা।
– ওকে ওকে। বাসাই আসতেছি
– আসলেই ও একটা পাগলি মানে নূপুর একটা পাগলি,
আমাকে অনেক ভালোবাসে, তবে রেগে গেলে তুই তুকারি করে.. একটু এদিক ওদিক হলেই হইছে…. আর আমি ও খাঁটাসলেভেল এর… ও ভালো পড়ছে তাই আজকে বড় একজন নাম করা ডাক্তার… আর আমি ওর সাথেই পড়ছি তবে আমি লাষ্ট ব্রেঞ্চ এ ছিলাম তাই আজকে আমি ওর রুগি। প্রায় প্রতিদিনআমার চেকআপ করে… একটু কিছু হলেই বকা ঝকাশুরু… তবে আমার আবার একটাই প্রবলেম… এই দাঁতের সমস্যা…. সারাদিন চকলেট খেঁয়ে খেঁয়ে আজ এই অবস্থা… পাগলিটার সাথে কোথাও গেলে তো হয়েছে… এটা খাবা না, ওটা খাবা না, এটা খেলে এই সমস্যা ওই সমস্যা, বাহিরের খাবার বেশি খাবা না ওহহহহহহহ… মনে হয় এমনে চললেই সারাজীবন বাঁচবো বুঝি না আমি। হঠাৎ পকেট টা কেঁপে উঠলো ফোন টা বেঁর করে দেখি, নূপুর পাগলিটাই ফোন করেছে.. জানতাম আমাকে ছাঁড়া একটু ও থাকতে পারবে না।
– ওই তুমি না কথা বলবা না মাত্র বললা।
– কথা বলবো না কখন বলছি.. তোমারে ফোন দিতে বারণ করছি…. আচ্ছা এখন কই আছো। রাস্তাই।
– ভালো করে যাবা.. আর ঠিক মতো দেখে রাস্তা পার হবা।
– হি হি আমি তো কানে হেডফোন দিয়ে যাচ্ছি, আর এখন রাস্তার মাঝ খানে আছি।
– মোয়াজ এটা মোটে ও মজা করার ব্যাপার না… এক্ষুনি সাইটে আসো… আর কই আছো তাই বলো।
– বেশি দূরে না… তোমার ওখান থেকে একটু।
– ঠিকআছে আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
– না না না গাড়ি লাগবে না তোমার ওটা তো ড্রাইভার না যে পিঁপড়ে… আমিহেঁটেই চলে যাবো।
– ঐ থামতে বলছি না…।
– আরে আমি দৌঁড় দিছি এক মিনিটে বাসাই চলে আসবো, আর আমি সাইট দিয়েই আসছি।
এখন টাটা কেমন। ওহহহহহ এমন যেনো কারো গার্লফ্রেন্ড না হয়… সারাদিন কথা শুনতে শুনতে আমি শেষ। বিকেলে হঠাৎ করে খুব জোরে বৃষ্টি আসলো…। আর বৃষ্টি দেখলেকার ঘরে মন টিকে তাই বলেন। দৌড়ে ছাঁদে চলে গেলাম… সেই হাঁড়ে ভিঁজতেছি আর লাফাইতেছি, একটু ও খেঁয়াল ছিলো না যে, নূপুরের জানালা দিয়ে আমাদের ছাঁদ পুরোপুরি দেখা যায়। মনে হতেই দৌঁড়ে নেমে আসলাম, ফ্রেশ হয়ে ঘরে আসতেই নূপুরের ফোন।
– কই ছিলি। – কোথাও না তো… রান্না ঘরে মার কাছে।
– তাই না… মিথ্যা বলতে একটু ও লজ্জা করে না।
– এই রে ধরা খেঁয়ে গেলাম। সরি বাবু আর হবে না। কে শুনে কার কথা।
– আর কোনদিন ফোন দিবি না, আর আমি ও দিবো না, যার কাছে আমার কোন কথার দাম নেই, তাঁর সাথে কেনো কথা বলবো, ভালো থাকিস টাটা বাই। ফোনটা কেঁটে দিলো…।
– কী আর করার..খেঁয়ে দেঁয়ে শুয়ে পড়লাম। মাঝ রাতে গাঁয়ের কাঁপুনিতে ঘুম ভেঁঙ্গেগেলো… ১০৫ ডিগ্রি জ্বর। মা তো ভয়েনূপুরকে ফোন করলো। একটু পরে দেখি ও আসলো।
– আমি জানতাম এমনটাই হবে, কে শুনে কার কথা, যা লাফাবি না আর, আরো লাফা,ভালোই হইছে এক দিক দিয়ে তাও যদি একটু শিক্ষা হয়। সারাটাদিন কিছু না কিছু হবেই..এই দাঁতের ব্যাথা, এই দৌঁড়াতে গিয়ে পড়েগেছে, বিকেলে বৃষ্টিতে ভিঁজে আবারজ্বর। আরে একটা দিন তো একটু শরীর টাকেশান্তি দিতে পারিস…. এই বলেই বা লাভকী.. কোন কথা তো কানে ঢুকে না। – অনেক বকা দেওয়া পড়ে।
– আন্টি আপনি ঘরে যান… আমি সব দেখতেছি… মা ঘরে গেলো
– আচ্ছা বাবু খুব কষ্ট হচ্ছে। – হুমমমমমম একটু।
– কেন করো এমন বলতো… আমার কথা একটু শুনলে কী হয়।
– কালকে থেকে শুনবো। ঠিকআছে মাথাই পানি দিয়ে দিলো..আর কিছু টাবলেট খাইয়ে দিলো। মাথাই হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো…। কখন যে ঘুমিয়ে গেছি জানি না, সকালে উঠে দেখি আমি নূপুরের কোলে শুয়ে আছি… একদম চাঙা লাগতেছে… সব ক্লিয়ার..।
– ঐ ঐ সকাল সকাল আবার শুরু করলি।
– আরে ব্যায়াম করছি তো।
– তাই বলে এমন লাফিয়ে লাফিয়ে।
– হুমমমমম… এই গুলো হলো আমার স্টাইল এর ব্যায়াম।
– জানতাম আমি…. তুই কোনদিন ঠিক হবি না একটু ভালো হলেই বাঁদরামি শুরু। আজকে বিকলে ঘুরতে যাবো, মনে থাকবে তো। – হুমমমমমমমমম।
– এবার আমি গেলাম। বিকেলে ঘুরছি….
– ঐ গুলো একটু খাই। – না ঐ সব খাওয়া যাবে না।
– ঠিকআছে। – আইসক্রিম খাবো।
– না দাঁতের সমস্যা হবে আবার।
– আরে বাবা তাহলে খাবোটা কী ।
– এই যে বাসা থেকে খাবার আনছি, আর পানি।
– তাহলে ঘুরতে এসে লাভ কী হুমমম।
– ঘুরতেই তো আসছি খেতে তো আসি নাই।
– ওহহহহহহহহ….না আমি আইসক্রিম খাবোই খাবো।
– মোয়াজ ভালো হবে না কিন্তুু।
– না খাবো। নূপুরের দিকে তাঁকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে রাস্তা মাঝ খানে চলে গেছি।
আর একটা বড় ট্রাক এসে জোরে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো। কপাল ভালো তাই, একে বারে রাস্তার সাইটে এসে পড়ছি। শুধু নূপুরের জোরে একটা চিৎকার শুনতে পেলাম। মোয়াজজজজজ তাঁরপরে আর কিছু মনে নাই। হঠাৎ দেখতেছি.. কেউ একটা হাতুরি দিয়ে আমার মাথাই আঘাত করা জন্য আসছে আর তখনি লাফ দিয়ে উঠলাম, উঠেই যা দেখি… আমি মর্গে.. আর আমার দুই সাইটে দুইটা লাশ… ভয়ে দৌঁড় দিয়ে বাহিরে আসলাম, পুরো শরীল খুব ব্যাথা করছে। বাহিরে এসে যা দেখি… বাসার সবাই কাঁদছে, নূপুর পুরো পাগল হয়ে গেছে দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে। এক জনকে বললাম, আচ্ছা ভাই ওনাদের কী হয়েছে। – এখানে থাকেন আর এটা জানেন না… নূপুর ম্যাডাম এর ভালোবাসার মানুষটা আজকেই মারা গেছে, তিন মাষ ধরে তিনিই তাঁর চিকিৎসা করছিলেন, আজকেই মারা গেলো বেচারা।
– তাঁকে কোথাই রাখা হয়েছে।
– এই রুমের, মাঝ খানের লাশটা।
– আপনি তাঁকে দেখেছেন।
– আরে মিয়া না…দূর যান তো।
– ভাই আমিই সেই লাশ।
বলতেই সেই অজ্ঞান মনে হয় আল্লাহ্ তালা নিজ হাতেই আবার আমাকে পাঠিয়েছে তাঁদের কাছে। আস্তে আস্তে তাঁদের কাছে গেলাম। সবাই আমাকে দেখে অবাক হয়ে তাঁকিয়ে আছে… ভাঁবছে মরা মানুষ আবার কেমনে বেঁচে উঠে…। নূপুর উঠে এসে হালকা করে আমার গাঁয়ে হাতটা রাখলো, আর সাথে সাথে কেঁদে উঠলো… আমার মাথাই আবার কী যেন হলো… আবার ধপ করে পরে গেলাম…। কয়েকদিন পরে…। জ্ঞান ফেঁরার পরে দেখি… পাগলিটা আমার হাতটা ধরে কাঁদছে….।
– আমার ও কান্না পাচ্ছে.. আজ ওর ভালোবাসার জোরেই হয়তো আমি জীবিত…। আস্তে করে উঠলাম…। সে কেন কথা বললো না.. অন্য দিকে মুখ ঘুরালো..
– বাবু একটু আমার দিকে তাঁকাও.. আমি আর কখন ও তোমার কথার বাহিরে যাবো না, সব সময় তোমার সাথেই থাকবো, একবার যখন জীবনটা ফিরে পেঁয়েছি সেটা পুরোটাই তোমার জন্য রেখে দিলাম, একবার তাঁকাও পিলিজ।কোন কথা না বলে বুকের মধ্যে মাথা দিয়ে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো। একান্না কোন দুঃখ্যের কান্না না, এটা পুরোটাই সুখের কান্না… আর সেটা চলতেই থাকবে কিছুক্ষণ।
– বাবু… অনেকদিন আইসক্রিম খাইনি, একটু আইসক্রিম এনে দিবা… হি হি হি।