মাইনের কিছু টাকা এবার আগে থেকেই সরিয়ে রেখেছিলাম। না হলে বউ কে শাড়ী কিনে দিতে পারতাম না। লাল পাড়ে সাদা শাড়ীটা কিনে অফিস ব্যাগের ভিতরেই লুকিয়ে রেখেছি। এখন বের করবো না। খেয়ে দেয়ে ঘুমুতে যাওয়ার আগে পুনাকে দিবো। জানি না ওর পছন্দ হবে কিনা। তবে মেহেদীটা এখনই দিয়ে দিলে ভাল হয়। এখন না দিলে আর মেহেদী লাগাবেই বা কখন।
– নাও ধরো।
– আরে পুরো গ্লাস ভর্তি করে পানি আনলে কেন? এতো পানি কে খাবে?
– সব তুমি খাবে। এক চুমুকে অর্ধেক গ্লাস পানি খেয়ে বউয়ের দিকে গ্লাসটা বাড়িয়ে দিলাম।
– না আর পারবো না।
– এইটুকু পানি খেলে হয়।
– এতো খাওয়া যায় নাকি।
বউ বাকি পানিটুকু খেয়ে হাতের উল্টোপিঠে ঠোঁট মুছে আমার মাথার চুলে আলতো করে হাত বুলাই দিলো। আমি তাকিয়ে আছি বউয়ের দিকে। এতো মায়া এতো ভালবাসা ওর চোখে মুখে। অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে যখন ঘরে ফিরি ওর হাসি দেখে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায় আমার। বউ আঁচল দিয়ে আমার মুখের ঘাম মুছে দিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল। সবে সাড়ে ছয়টা বাজে। মনে হচ্ছে কত আগে আজ অফিস থেকে বাসায় চলে আসছি। অন্যদিন বাসায় ফিরতে ফিরতে আটটা সাড়ে আটটা বেজে যায়। কাপড় পাল্টে গোসল করতে চলে গেলাম। যাওয়ার আগে বিছানায় মেহেদীটা রেখে দিলাম যেন পুনা দেখতে পায়।
– কি ব্যাপার ম্যাডাম আপনার একহাতে মেহেদী কেন?
– দাও এই হাতে তুমি লাগাই দাও।
– আরে কি আজব! আমি মেহেদী লাগাতে পারি নাকি।
– যা পারো। প্লিজ দাও না।
– ধুর কি যে বলোনা। খামাখা মেহেদী নষ্ট হবে।
– হোক। তুমি লাগিয়ে দাও। প্লিজ দাও না।
বউকে জিজ্ঞেস করেই তো মনে হয় ফাঁদে পরলাম। পুনাকে চিনি ভাল করে। আমার সাধ্য নাই ওর আব্দার ফেলার। এই কথা পুনা ভাল করেই জানে। ওকে মেহেদী না লাগিয়ে দেওয়া পর্যন্ত আমার নিস্তার নাই। খাটে ওর সামনে বসে মেহেদীর টিউবটা নিলাম।
– এই দাঁড়াও দাঁড়াও! আয়নার সামনে রাবার ব্যান আছে আমার চুল গুলো বেঁধে দাও না প্লিজ। প্লিজ।
– তাহলে দিবা আমাকে?
– কি?
– ঐ যে ঐটা। বউয়ের মুখে দুষ্টুমির হাসি। ওর চোখ নাড়ানো দেখলেই বোঝা যায় কি যে দুষ্টুমি খেলা করছে ওর মধ্যে।
– ঐ টা! ঐটা কি?
– ঠিক আছে ম্যাডাম আপনি বুঝতেই যখন পারছেন না। থাক চুল বাঁধার দরকার নাই।
– এই না না। আচ্ছা দিবো তো।
– আগে দাও।
– কাছে আসো।
পুনার ডান হাতে কি যে মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছি। পুনা তো হেসেই কুটিকুটি। বেশ কয়েকবার টিউব থেকে অনেকখানি মেহেদী বের হয়ে গেছে। সেগুলো আবার মুছতে হয়েছে। আর একটু পরপর বউয়ের কপাল নাক চিবুক চুলকে দিতে হচ্ছে। মানুষের দু’হাত যখন ব্যাস্ত থাকে একসাথে তখন নাক চুল্কায়। এটাই ধ্রুব সত্য।
– বুঝলে পুনা। তোমাকে যে জিজ্ঞাস করলাম, কি ম্যাডাম আরেক হাতে মেহেদী নাই কেন। এটা বলে আসলে কি হয়েছে জানো?
– কি?
– আমি খাল কেটে কুমির এনেছি। সেই কুমিরের দুইটা চোখ। চারটা পা। বিশাল দেহ। আর আছে বিশাল এক লেজ।
– খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা। হি হি হি!
বলেই বউ হাসতে হাসতে শেষ। এইরে আবার লেপ্টে গেল মেহেদী। মুছে দিলাম। কুমিরের এই গল্পটা আমরা দু’জন বেশ পছন্দ করি। কোন সুযোগ পেলেই হলো সেখানে কুমির নিয়ে আসি।
– হায় আল্লাহ্। কোন ফাকে পৌনে দশটা বেজে গেল। তোমায় ভাত বেড়ে দিবো কি করে।
– আজকেনা হয় আমিই বাড়লাম সমস্যা কি।
– কিন্তু তরকারি তো গরম করতে হবে।
– লাগবে না। একদিন গরম করে না খেলে কিচ্ছু হয় না।
– বাহ আমার জামাইটা তো দেখি অনেক সুন্দর করে মেহেদী দিতে পারে।
– সুন্দর না ছাই। পলাশীর যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে গেছে তোমার হাতে।
– জি না। অনেক সুন্দর হইছে। আমার জামাই মেহেদী লাগাই দিছে বলে কথা।
– যাই আজ বউ কে ভাত বেড়ে খাওয়াই।
উঠে হাত মুখ ধুয়ে রান্নাঘর থেকে ভাত তরকারির পাতিল নিয়ে এলাম। একটা প্লেট দেখে বউ জিজ্ঞাস করলো, “একটা প্লেট কেন।” বললাম, “আজ দু’জনে একই প্লেটে খাবো।” শুনেই বউয়ের মুখ দেখি আনন্দে ঝিলিক দিয়ে উঠলো। মনে হচ্ছে এক প্লেটে ভাত খাওয়া যেন বিরাট ব্যাপার। প্লেটে ভাত তরকারি নিয়ে মাখাচ্ছি। পুনা আমার পাশে আসন পেতে বসে আছে। দুই উরুর উপরে দুই হাত। মেহেদী শুকাতে আরো সময় লাগবে।
– নাও হা করো। আ…
– আগে তুমি খাও।
– জি না আগে আমার বউ। হা করো সোনা।
বউকে এক নলা খাইয়ে নিজেও খাচ্ছি। পুনাকে প্রতিবার খাইয়ে দেওয়ার সময় ওর ঠোঁটের পাশে থেকে লেগে থাকা ভাত আংগুল দিয়ে নিয়ে নিজেই খেয়ে ফেলছি। বউ এটা দেখে আর হাসে। দুই একবার আংগুলে কামড় ও খেলাম। গল্প করতে করতে খাওয়া শেষ করে বউয়ের মুখ ধুয়ে দিলাম। মুছে দিলাম। আমি দাঁত ব্রাশ করে শুয়ে পড়লাম। বউ রান্নাঘরে প্লেট পাতিল ধুচ্ছে। আজ আমিই ধুতে চেয়েছিলাম কিন্তু পুনা কিছুতেই আমায় ধুতে দিলো না। মেহেদী শুকানোর জন্যই এতোক্ষন ওয়েট করছিলো।
এই সুযোগে আমি শাড়ীটা অফিসের ব্যাগ থেকে বের করে বালিশের নিচে রেখে দিলাম। ও একবারও জিজ্ঞাস করেনি আমায় আগামীকাল কোথায় ওকে ঘুরতে নিয়ে যাবো। এমনকি একবারও বলেনি ওকে বৈশাখের জন্য শাড়ী কিনে দিতে। জানি মুখ ফুটে কখনোই বলবেনা ও। এমন বউ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। টানাটানির সংসারে আমরা দু’জন দু’জন কে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি। পুনা না থাকলে আমার জীবনে আমি নাটাইহীন ঘুড়ি হয়ে যেতাম। আমাদের ঘর ভর্তি সম্পদ নেই কিন্তু অফুরন্ত প্রাচুর্য আছে। আমার পুনার একটা হাসির কাছে কোহিনুর হিরার উজ্জ্বলতাও কিছুই মনে হবে না। পুনা রান্নাঘরের কাজ শেষ করে হাত মুখ ধুয়ে এলো। একগ্লাস পানি এগিয়ে দিলো। অর্ধেক গ্লাস পানি খেয়ে গ্লাসটা ওর হাতে দিলাম। পুনা বাকি পানিটুকু খেয়ে নিয়ে লাইট নেভাতে যাবে এমন সময় বললাম লাইট না নেভাতে।
– কেন?
– পাশে বসো তারপরে বলছি।
– হুম এইবার বলো।
– চোখ বন্ধ করো।
– কেন?
– আহা করো না সোনা।
– কি যে করোনা তুমি বুঝিনা বাবা। নাও বন্ধ করলাম।
বালিশের নিচ থেকে শাড়ীটা বের করে বউয়ের হাতে দিলাম। বউ একটু কেঁপে উঠলো। বলতে হয়নি নিজে থেকেই চোখ খুলে শাড়ীটা দেখে বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
– পছন্দ হইছে আমার বউয়ের?
– অন্নেক!
– সত্যি পুনা?
– সত্যি! তুমি কখন এনেছো শাড়ী? বলোনি কেন?
– আজই কিনেছি। এখন দিবো বলে বলিনি।
– উফফফ! এতো সুন্দর শাড়ীটা। আমার তো এখনই পড়তে ইচ্ছে করছে।
– থাক এখন পড়া লাগবে না। বৈশাখের শাড়ী চৈত্রমাসে পড়লে কি করে হয়।
– আচ্ছা। কিন্তু আমার তো লাল ব্লাউজ নাই।
– একটা ম্যাচিং করে পড়ে নিও।
– হুম আচ্ছা সে আমি ম্যানেজ করে নিবো। সত্যি অনেক পছন্দ হইছে শাড়ীটা।
– তাহলে দাও।
– কি দিবো?
– ঐ যে ঐটা।
– ঐ টা! ঐ টা কি গো?
– দিবানা সোনা?
– ইসসস দিনে কতোবার লাগে তোমার?
– শতবার। হাজারবার। দাও না বউ।
– কাছে আসো।
মুখের উপরে পানির ঝাপটায় ঘুম ভেংগে গেল। চোখ খুলে দেখি পানির ঝাপটা না বউ ভেঁজা চুল ঝাড়ছে। চুলের পানির ছাট চোখে মুখে এসে পড়ছে। কি যে ভাল লাগছে। মনে হচ্ছে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। পুনা হয়তো খেয়ালই করেনি যে চুলের পানি আমার মুখের উপরে পড়ছে। লাল পাড়ের সাদা শাড়ীতে অনেক স্নিগ্ধ লাগছে পুনাকে। আমার দিকে ফিরতেই দেখে আমি তাকিয়ে আছি ওর দিকে।
– কখন উঠেছো?
– এইমাত্র। তোমার চুলের পানির ছাঁটে ঘুম ভেংগে গেছে।
– ওহ সরি। আমি খেয়াল করিনি তোমার মুখে পড়েছে।
আমার মাথার পাশে বসে শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুখটা মুছে দিলো বউ। নরম ঠান্ডা একটা হাত দিয়ে গালে কপালে হাত বুলিয়ে দিলো। খুব ভাল লাগে ও যখন মুখে হাত বুলিয়ে দেয়। আমি মাথাটা ওর কোলের উপরে রেখে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরলাম।
– সোনারে মাথায় হাত বুলাই দাও।
– ইসসস এতো আদর লাগে কেন তোমার। হুহ!
– জানি না।
– মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে আবারতো ঘুমিয়ে যাবে।
– বেশি না পাঁচ মিনিট।
– আচ্ছা। পাগল একটা।
আমি সত্যিই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম আবার। কিন্তু বউ ডেকে ঘুম ভাংগায়নি। আপনাতেই ভেংগে গেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি পাঁচটা পঁচিশ বাজে। পুনা এখনো মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো।
– আমি কতক্ষন ঘুমালাম পুনা?
– বেশিক্ষন না মশাই। মাত্র বিশ মিনিটের মতোন।
– আমায় ডাক দিলে না কেন?
– কেন ডাকবো শুনি? আমার জামাই এতো সুন্দর করে আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমুচ্ছিলো আমি ডাকবো কি জন্য।
– কিন্তু তাই বলে…
বউ আমার ঠোঁটের উপর আংগুল রাখায় কথা থেমে গেল। আমার গালের উপরে হাত বুলিয়ে কপালে আলতো চুমু দিয়ে বলল, “শুভ নববর্ষ”।
– শুভ নববর্ষ পুনা।
– এবার যাও গোসল করে এসো।
– তোমাকে পরীর মতোন লাগছে সোনা।
– পরীরা কি শাড়ী পড়ে?
– কি জানি। দেখি নাইতো কখনো। তবে মনে হচ্ছে শাড়ী পড়লে পরীদের ভালোই লাগবে।
গোসল করে বের হয়ে দেখি বিছানার উপরে হলুদ রংয়ের একটা ফতুয়া। খুব চেনা চেনা লাগছে কাপড়টা। কিন্তু সেলাইয়ের কাজ করায় ধরতে পারছিনা কই যেন আগে দেখেছি। বারান্দায় গিয়ে ভেঁজা কাপড় গুলো মেলে দিয়ে রুমে আসতেই দেখি পুনাও রান্নাঘর থেকে রুমে এলো। ওর দিকে চোখাচোখি হতেই সেই দুষ্টুমি চাহনি তে দেখছে আমায়। বিছানা থেকে ফতুয়াটা হাতে নিলো।
– কি মশাই দেখেন তো ফতুয়াটা পছন্দ হয় কিনা।
– কখন বানালে?
– প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বানিয়েছি। হাতের কাজ গুলো করতেই সময় লেগেছে বেশি।
এখন ধরতে পেরেছি। পুনার সবচেয়ে পছন্দের হলুদ শাড়ীটা দিয়েই ও আমার জন্য ফতুয়া বানিয়েছে। শাড়ীটা একটু ম্লান হয়ে গিয়েছিলো বলে অনেক দিন ওকে শাড়ীটা পড়তে দেখিনি। কিন্তু ও যেভাবে হাতের কাজ করেছে ফতুয়ায় কে বলবে এটা পুরানো শাড়ী। পুনার হাতে ধরা ফতুয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। ভিতরে ভিতরে কেঁপে উঠছি। মেয়েটা কি কাজ করলো এটা। ওর এতো পছন্দের শাড়ীটা কেটে আমার জন্য ফতুয়া বানালো।
– এটা কি করলে সোনা।
– কি করেছি?
– তোমার শাড়ী দিয়ে ফতুয়া বানালে।
– কেন তোমার পছন্দ হয়নি?
– তোমার এতো পছন্দের শাড়ী…
– আমার তো আর টাকা নাই যে তোমায় নতুন পাঞ্জাবি কিনে দিবো।
বউয়ের কাছে গিয়ে বউকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। বউ ফতুয়াটা বিছানায় ছুড়ে দিয়ে দু’হাতে আমায় আঁকড়ে ধরলো। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে পাগলীটা। ওর মাথায় হাত দিয়ে আরো কাছে টানলাম ওকে। ওর বুকে জমাট বাঁধা কষ্ট ঢুকরে ঢুকরে বেড়িয়ে আসছে। টাকা পয়সার অভাবে আমাদের অনেক সখ আহ্লাদ আমরা পুরোন করতে পারি না। এটা নিয়ে আমরা সামনাসামনি কখনো আফসোস করি না। কিন্তু নিজের কাছ থেকে নিজের অপারগতা কি লুকানো যায়। পাগলী বউ আমার যদি পারতো এই শহরের সবচেয়ে সেরা পাঞ্জাবীটাই আমার জন্য নিয়ে আসতো। সেটা পুনা পারেনি। কিন্তু ওর সবচেয়ে পছন্দের শাড়ী দিয়ে ও আমার জন্য ফতুয়া বানিয়েছে। আমার জীবনে এরচেয়ে বড় উপহার আর কি হতে পারে। ফতুয়াটা পড়ে এতো ভাল লাগছে। মনটা বেশ ঝরঝরে লাগছে। অনেক্ষন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছি। আজ আমার চেহারাটাও মনে হয় সুন্দর হয়ে গেছে। এর আগে নিজেকে আয়নায় দেখতে এতো ভাল তো কখনো লাগেনি।
– ও টুকটুকি দেখো তো আমার চেহারা কি আজকে একটু বেশি সুন্দর লাগছে?
পুনা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আয়নার কাছে গিয়ে চোখে কাজল দিচ্ছিলো। এরফাকেই আয়নায় যতটুকু নিজেকে দেখা যায় ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে দেখছিলাম।
– তুমি তো এমনিতেই সুন্দর।
– আহ ফাজলামো না। ফতুয়া পড়ার পরে আমার চেহারা সুন্দর হয়ে গেছে মনে হচ্ছে।
– হি হি হি তাই না। তুমি এমনিতেই সুন্দর। তবে ফতুয়াটা তোমায় অনেক মানিয়েছে। আজ তোমাকে নিয়ে বাইরে যাওয়া যাবে না।
– কেন পুনা?
– সুন্দরী কোন মেয়ে এসে যদি আমার জামাইটাকে নিয়ে যায়।
– হা হা হা! বাচ্চাদের মতো তাহলে কপালে কাজলের টিপ দেই কি বলো।
– ভালো কথা বলেছো তো।
বউ আমার দিকে এগিয়ে এলো। কপালের বাম দিকের চুল সরিয়ে ওর চোখ থেকে আংগুলে কাজল নিয়ে কাজলের ছোট ফোটা এঁকে দিলে।
– পুনা এইটা কি হইলো।
– আমার জামাইয়ের যেন নজর না লাগে।
– কিন্তু আমার বউটাও যে অনেক সুন্দরী। দাও কাজল টা দাও।
– ইসসস কেন।
– প্লিজ দাও।
– তুমি না। নাও।
আমিও বউয়ের কপালে ছোট্ট করে কাজলের ফোটা এঁকে দিলাম। আজ সারাদিন দু’জন বাইরে বাইরে ঘুরবো। তবে আমরা দু’জনেই ভিড়ভাট্টা কম পছন্দ করি। নববর্ষ মানে আমাদের কাছে হৈ হুল্লোড়, পান্তা ইলিশ খাওয়া এইসব নয়। নববর্ষ মানে আমাদের কাছে দু’জন দু’জনকে নিয়ে সারাটা দিন ভাল করে কাটানো। নতুন সালের প্রথম দিনটা উৎফুল্ল মনে গ্রহন করা। আর যাই হোক দু’জনেই চেষ্টা করি আজকের দিনে যেন ভুল কিছু না হয়।
পুনা কানের দুল পড়াতে ওকে আরো অপরূপা লাগছিলো। কি স্নিগ্ধতা পুনার চোখে মুখে। পবিত্রতায় শুভ্রতায় ছেয়ে আছে আমার পুনা। জন্মদিনে দেওয়া এই কানের দুল জোড়া ও কোন অনুষ্ঠান ছাড়া পড়ে না। ও চুল আঁচড়াচ্ছে। আমি তাকিয়ে আছি অপকল। হঠাৎ কি যে ভূত চাপলো। পিছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম বউকে। কানের কাছে ফিস ফিস করে বললাম – “ভালবাসি। অনেক ভালবাসি পুনা।” বউ আমার দিকে ফিরে জড়িয়ে ধরলো। ওর মুখ দু’হাতে আজলা ভরে নিয়ে কপালে আলতো করে চুমু দিলাম। নাক দিয়ে নাক ঘষলাম।
– এই এত্তো গুলা ভালবাসি তোমাকে পুনা।
পুনার চোখ টলটল করছে। ওর চোখে মুখে সুখের ঝিলিক আনন্দের ঝিলিক। ঠোঁটটা তরতর করে কাঁপছে। পুনা যেন কিছু বলতে চাইছে। পাগলীটার চোখ দিয়ে জল গড়ালো। অস্ফুট স্বরে বলল, “নিবে?” আমি অপলক তাকিয়ে আছি।
– কি নিবো পুনা?
– ঐ যে ঐটা।
– ঐটা কি গো বউ?
– নিবা না।
– হুম সোনা নিবো তো।
– আসো। আরো কাছে আসো।
আমার একটুকরো আকাশে সূবর্ণ মেঘ |