চাদঁ তোমায় বড্ড ভালোবাসি।কারন তোমাকে দেখছে অপর প্রান্তের একজন যাকে আমি দেখিনি বা দেখেছি।চাদঁ সেও কি তোমায় দেখে আমার কথা ভাবছে?কি জানি হয়ত ভাবছে না।চাদঁকে দেখে মনে মনে কথাগুলো ভাবছে ইশানা।আধুনিক যুগের মেয়ে হয়েও কোন সম্পর্কে জড়ায়নি সে।কারন সে মনে করে মানুষ বিয়ের আগে অন্য কাউকে ভালোবাসে কারন সে মানুষটার সাথে সারাজীবন থাকতে চায়।
যাকে বিয়ের আগে ভালোবাসে তাকে যদি সারাজীবনের জন্য না পায় তাহলে তো জীবনটাই কেমন জানি হয়ে যাবে।এসব কথা ভেবে কখনো প্রেম করেনি ও।ও ভাবে হয়ত ওর মত কেউ আছে এদেশের কোন এক প্রান্তে যে তার জন্য অপেক্ষা করে আছে। কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দিতে এসে এরকম ছেলে পাওয়া আর জাদুঘরে নির্দিষ্ট করে কোন আমলের পুরোনো কনো জিনিস খুজে বের করা এক কথা।কিন্তু হয়ত জাদুঘরে যেমন হঠাৎ পুরোনো জিনিস খুজে পাওয়ার সম্ভবনা থাকে তেমনি এরকম ছেলে নিশ্চয়ই আছে।
ইশানা জীবনে সব কিছু সেকেন্ডহ্যান্ড ব্যবহার করতে রাজি আছে কিন্তু লাইফ পাটনার সেকেন্ডহ্যান্ড নিতে সে রাজি না।এই কথা ওর এক ফেন্ডকে বলেছিল। ওর ফেন্ড বলেছিল সেকেন্ডহ্যান্ড মানে কি?ইশানা বলেছিল সেকেন্ডহ্যান্ড মানে যে প্রেম করে একজনের সাথে আর বিয়ে করে অন্য কাউকে। রাত অনেক হয়েছে জানালাটা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো সে।ফেসবুকে বিভিন্ন পোষ্ট পড়ছিল সে।হঠাৎ একটা ছেলে নক করল।সে ছেলেটার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলল।সব ছেলেদের মনে কিছু কমন প্রশ্ন থাকে।যেমন বাড়ি কোথায়;কোথায় পড়েন;রাতে ডিনার করছেন ইত্যাদি।এসব প্রশ্নগুলো ইশানার কেন যেন ভাল লাগে না।আজকে সে ছেলেটা ঠিক এরকমই কিছু প্রশ্ন করছে।ইশানার খুব বিরক্ত লাগছে।হঠাৎ ছেলেটা ইশানার ছবি দেখতে চাচ্ছে।
ইশানার খুব অবাক লাগছে একটা মানুষ কিভাবে একদিনের পরিচয়ে ছবি দেখতে চায়?হয়ত এখনকার যুগে সবাই প্রফাইলে ছবি আপলোড দেয়।ইশানার এই জিনিসটা ভাল লাগে না।তার কাছে মনে হয় ছবি দেখে মানুষ মানুষকে কখনো বিচার করতে পারে না।আর ছবি দিয়ে নিজের প্রাইভেসি সে কখনোই নষ্ট করতে চায় না।সেই ছেলেটা বলল আপনি কি খুব সুন্দর তাই ছবি দেন নি প্রোফাইলে।ইশানা বলল আমি দেখতে সুন্দর না।ছেলেটি বলল সুন্দর না দেখে কি ছবি আপলোড করা যায় না।ইশানার খুব বিরক্ত লাগছে।আসলে ইশানা দেখতে খুব সুন্দর না হলেও একেবারে খারাপ না দেখতে।বলা যায় মোটামুটি দেখতে ভালই।ছেলেটার সাথে সে কথা বারাতে চাচ্ছে না দেখেই এরকম বলেছে।তারপর সে অফলাইনে চলে আসে।ইশানা এক দাওয়াতে গেছে।হঠাৎ একটা ছেলেকে দেখে সে অবাক হয়ে গেল।কারণ ইশানা মনে মনে যেরকম ছেলে পছন্দ করে ছেলেটা ঠিক সেরকম।ছেলেটা একটা মেরুন রঙের পাঞ্জাবি পরেছে।
দেখতে খুব বেশি ফর্সা নয়।চোখের পাপড়িগুলো খুব বড় আর চোখে রয়েছে উপছে পড়া মায়া।এই প্রথম কোন ছেলেকে দেখে তার ভালে লেগেছে।ছেলেটার মধ্যে রয়েছে একটা মার্জিত আচরণ।ইশানা ছেলেটার কন্ঠের মধ্যে আরজে শান্তর মিল খুজেঁ পাচ্ছে।আসলে আরজে শান্তর ভয়েজ ইশানার খুব ভালো লাগে।এসব ভাবতে ভাবতে সে খেয়াল করল ছেলেটার পাশে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে।তাদের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে তারা বিএফ জিএফ। হঠাৎ কউকে একটু ধাক্কা দিল ইশানা।ইশানা ওই ছেলেও মেয়েটাকে দেখছিল আর হাটছিল।তাই কোন দিকে হাটছিল বুঝতেই পারে নি।ইশানা এবার ঘুরে তাকালো যার সাথে ধাক্কা লেগেছে তার দিকে।ছেলেটা বলল আরে ইশানা কেমন আছ?ইশানা আবির কে দেখল। বলল ভালো;তুমি কেমন আছ?অনেক বছর পর দেখা হলো তোমার সাথে।হুম অনেক বছর পর।আমাকে যে ধাক্কা দিলে তার জন্য এখনো আমাকে সরি বলনি কিন্তু।ইশানা বলল ফেন্ডদের সরি বলতে নেই জান না।
আবির বলল হুম জানি তো তারপরেও সরি বল।তোমার জিদ দেখি আগের মতোই আছে আবির।সরি আবির। এবার খুশি তো।আবির হেসে বলল হ্যা অনেক খুশি।তো ইঞ্জিনিয়ার সাহেব এখন দিনকাল কেমন যাচ্ছে?এখনো ইঞ্জিনিয়ার হয়নি এখনো বাকী আছে। ওই তো হবু ইঞ্জিনিয়ার। হাহা ঠিক বলেছ।তুমি তো এবার ফোর্থ ইয়ারে ইশানা।হ্যাঁ।তা এগরিকালচারিস্ট ম্যাম কেমন চলছে দিনকাল?ভালো। আমি তো ভেবছে যখন তোমার সাথে দেখা হবে তখন তোমার সাথে দুই তিনটা গুলুগুলু বাচ্চাকাচ্চা থাকবে।কিন্তু এখন তো দেখছি তোমার হাসবেন্ড ও নাই।আবির তোমার দুষ্টমি আর গেল না।ফেন্ডদের সাথে একটু দুষ্টমি না করলে আমার পেটের ভাত হজম হয় না।তো বিয়ের দাওয়াত পাবো তো নাকি?অনেক দিন কারো বিয়ের দাওয়াত খাওয়া হয় না।মিথ্যুক তো আজকে এটা কিসের দাওয়াত খেতে আসছো।
আরে এটা তো আর আমার ফেন্ডের বিয়ে না।আমি তো অনেক দিন আমার কোন ফেন্ডের বিয়ে খাইনি সে কথা বলছিলাম।ওরে ফাজিল তোর ফাজলামি আর গেল না। আবির বলল হ্যারে পাগলি ফাজলামো না করলে নিজেকে অসহায় লাগে।হাহাহা।ইশানা বলছে তোমার নায়িকার কি খবর?আবির বলল নায়িকা বড় হয়েছে তাই আর প্রেম নিবেদন করতে পারি নি ভয়ে।এবার সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিব।তোমার নায়িকা কি এখনো সিংগেল আছে নাকি অন্য কারো ঘরে উড়াল দিছে?আরে আমার নায়িকা অন্য কারো ঘরে উড়াল দিতে পারে না কোন মতেই না। কলেজে থাকাকালীন কতবার তোমাকে বলেছিলাম তোমার নায়িকার নামটা বল অামি তোমাকে সাহায্য করব।তুমি মেয়েটাকে বলতে না পারো তো আমি বলবো মেয়েটাকে।কিন্তু তুমি কখনোই মেয়েটার নাম আমাদের কাউকেই বলনি।শুধু তুমি আমাকে বলতে যে আমি নাকি মেয়েটাকে চিনি।আর আমি নাকি তাকে দেখেছি।
শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে আর তুমি কিছুই জানো না।আবির বলল না এখনো বিয়ে হয়নি।আমি এতটাও বোকা না ওর সব খবর আমি রাখি।ভালো কথা।বিয়েতে দাওয়াত দিও একবার তোমার নায়িকাকে দেখবো।হ্যাঁ দেব তো দাওয়াত।ইশানাকে ওর বোন ডাকছে। ইশানা বলল ভালো থেকো।ইশানার বাসায় কয়েকদিন থেকে ঘটক আসছে। ইশানার বিয়ে নিয়ে কথাবার্তা চলছে।ইশানা বলেছে যার সাথে বিয়ে ঠিক করা হবে তার সাথে আগে সে কয়েকদিন কথাবর্তা বলে তার পর বিয়ের জন্য রাজি হবে তার আগে না।এরমধ্যে এক ঘটনা ঘটে গেছে।এক লোক এসেছে ইশানাদের বাসায় সে তার ভাগ্নের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।তার ভাগ্নে নাকি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে।এখনো পড়াশুনা কম্পিট হয়নি।কিন্তু ছেলে খুবই মেধাবী পাশ করার সাথেই খুব ভালো জব পেয়ে যাবে।ছেলেটার নাকি ইশানাকে খুব পছন্দ।
ইশানাকে সে অনেক আগে থেকে পছন্দ করে।সে চেয়েছিল জব পাওয়ার পর ইশানাদের বাসায় প্রস্তাব পাঠাতে কিন্তু
তার আগেই তো ইশানার বিয়ের জন্য পাএ দেখা হচ্ছে।তাই তার মামার দিয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে।প্রথমে ইশানার বাবা অমত করেন বিয়ে দেওয়ার জন্য কারণ ছেলের এখনো কোন চাকরি হয়নি।তখন ইশানার মা বলেন এমন ছেলের সাথেই আমাদের মেয়েকে বিয়ে দেওয়া উচিত কারন ছেলেটা আমাদের মেয়েকে পছন্দ করে।আমাদের মেয়েে এই ছেলের কাছে সুখে থাকবে আর কিছুদিন পর তো চাকরিও পেয়ে যাবে।ইশানার বাবা অনেক ভেবেচিন্তে বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজি হলেন।ইশানাকে যখন বলা হল তখন সে ছেলের সাথে দেখা করতে চাইল।ইশানা ছেলের নাম জিঙ্গাসা করল।ওর মা বলল ছেলের নাম আবির।
আবির নামটা শুনে ও অবাক হয়ে গেল।তারপর সে আবিরকে কল করে বলল এই তুমি কি ফাজলামো শুরু করছ?আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছ।আমার বাবা মা তো ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিচ্ছে।তোমার সাথে দেখা করব কোথায় তুমি?আবির বলল তোমাদের বাসার পাশেই আছি।তুমি রিক্সা নিয়ে কাজল কফি হাউজে চলে এসো।ইশানা রাগে ফেটে পরছে।মনে মনে ভাবছে এই ছেলেটা একটু দুষ্টমি করে সেটা নাহয় ঠিক আছে।তাই বলে এতটা বারাবারি করবে।ওকে আজ একটা উচিত শিক্ষা দিতে হবে।কফি হাউজে আবির বসে আসে।ইশানা ঢুকেই আবিরকে বলছে এই ছেলে তুমি কি পেয়েছ?আবির হেসে বলছে শান্ত হয়ে আগে বসো। তারপর কথা বলো।ওই তোর দাতঁ ভেঙ্গে ফেলব আর একবার যদি হাসিস।ফাজলামি করিছ আমার সাথে। আবির এবার মুখ গম্ভীর করে বলল আজ তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই যা আমি এতবছর ধরে বলবো বলবো করেও বলে উঠতে পারি নি।
ইশানা আবিরের কথায় শান্ত হয়ে বসল।আবির বলল তোমায় আমি বলতাম না আমার নায়িকাকে তুমি চেন।তাকে তুমি দেখেছ।হ্যাঁ আমার সেই নায়িকা হচ্ছ তুমি।সেই কলেজ থেকে তোমাকে আমার ভালো লাগত।তুমি যেদিন আমায় প্রথম রেগে গিয়ে বলেছিলে হারামি তোর সাথে আর কোন কথা নেই তুই শুধু আমাকে সবার সামনে পচাস।সেই দিনই তোমার প্রেমে টুপ করে পড়ে গিয়েছিলাম।সেখান থেকে আর উঠতেই পারি নি।তুমি যখন রেগে গিয়ে তুই করে বল তখন আমার খুব ভালো লাগে।তোমাকে আমার ভালোবাসার কথা বলার সাহস হয়নি।কারন তুমি সবসময় বলতে তুমি কখনো প্রেম করবে না।তোমার সব ভালোবাসা তোমার স্বামীর জন্য রেখে দিয়েছ।তাই ভাবতাম বড় হয়ে তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিব।
তোমার সব খবর আমি রাখতাম।একটা ফেক আইডি খুলে তোমার ফেন্ড হয়ে সব সময় তুমি কি পোস্ট কর না কর সব দেখতাম।কিন্তু কখনো তোমার সাথে কথা বলতাম না।জীবনে প্রথম আমার সেইদিন মনে হয়েছিল আমি বুঝি তোমায় হারিয়ে ফেলছি যেদিন তুমি বিয়ের দাওয়াতে মেরুন রঙের পাঞ্জাবি পড়া ছেলেটার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে ছিলে।যান সেইদিন খব কষ্ট পেয়েছিলাম।তাইতো ইচ্ছাকরে তোমার সাথে ধাক্কা খেয়েছিলাম যাতে তুমি ছেলেটার দিকে না তাকাও।আমি সত্যিই তোমাকে অনেক ভালোবাসি।তুমি কি আমার জীবনের বাকিটা পথ আমার সাথে হাতে হাত রেখে চলবে।ইশানা এতক্ষণ অবাক হয়ে সব শুনছিল।ও ভেবেই পাচ্ছে না এতবছর ধরে আবির ওকে ভালোবাসে আর ও কিছুই বুঝতে পারে নি এতবছর।ওর এখন কি করা উচিত ও বুঝতেই পারছে না।
এরকম ভালোবাসাকে প্রত্যাক্ষাণ করবে কি করে।কিন্তু আবিরের জন্য তো ওর মনে কোন ভালবাসা নেই।ওতো ওকে ফেন্ড হিসেবেই মানে।আবির বলছে জানি তুমি কি ভাবছ। ভালোবাসা এমনিতেই তৈরি হয়ে যাবে।তুমি আমায় ভালোবাসতে পারবে কারন তুমি তো এর আগে কখনো কাউকে ভালোবাসনি।আমি তোমায় আমার ভালোবাসায় আবদ্ধ করে নেব।তুমি সময় নিতে চাইলে নিতে পার আমার কোন আপওি নেই।ইশানা একমাসের জন্য সময় চেয়ে নিল।এরপর আবির সব রকমের চেষ্টা করলো যাতে ইশানা ওকে ভালোবাসে।ইশানা একমাস আবিরের সাথে ঘুরে অনেক কিছই বুঝতে পেরেছে।আজ একমাস পূর্নহলো।আবির ও ইশানা দেখা করল সেই কফি হাউজে।আবির আজ খুবই চিন্তিত কারন আজ ইশানা তার উওর জানাবে।ইশানা বলল আবির অনেক ভেবে দেখলাম আমি তোমার চলার সাথি হতে চাই না।একথা শুনে আবিরে চোখে জল ছলছল করসে।আবির কিছু বলতে পারছে না।
অনেক কষ্টে কিছু বলতে যাবে তখন ইশানা বলল আমার কথা এখনো শেষ হয়নি।আমি তোমার চলার সাথি হতে চাই না বরং আমি তোমার প্রত্যেকটা দিনের তীব্র অভ্যাস হতে চাই।যাকে ছাড়া তুমি এক মুহূর্ত চলতে পারবে না।এবার আবিরের মুখে হাসি ফুটে উঠল।ইশানা বলল জনাব এভাবে হাসলে হবে না।আমি যাতে ইম্প্রস হই এরকম প্রোপোজ করতে হবে।জীবনে প্রথম প্রেমে পড়া বলে কথা।আবির বলল কি আর প্রেমে পড়তে চাও নাকি কারো তাহলে নাক ফাটিয়ে দেব।ইশানা বলল আল্লাহ এই ছেলে তো বিয়ের আগে নাক ফাটাতে চাচ্ছে না জানি বিয়ের পর কি আছে কপালে।
আবির হাসছে।ইশানা বলল না হেসে প্রোপোজ করেন জনাব।আবির বলল অন্য মেয়ে হলে তো একটা দামী অাংটি দিলে গেলে যেত কিন্তু তুমি তো সবার থেকে আলাদা তাই ভাবছি কিভাবে প্রোপোজ করবো।ইশানা বলল মানে কি এর আগেও কাউকে প্রোপোজ করেছ নাকি? নাতো। তাহলে বললে কিভাবে যে অন্য মেয়েরা আংটি দিলে গলে যায়।আবির বলল অন্য ফেন্ডদের জিপফ এর বদউলতে জানতে পেরেছি।ইশানা বলল ভালো কথা।আবির বলল ওগো বিশালাক্ষী হবে কি আমার ঘরের লক্ষী।ইশানা হেসে বলল হুম হবো।
(সমাপ্ত)