গল্প বউ

গল্প বউ

অাজ অামার দ্বিতীয় বিয়ে,পরিবারের সম্মতিতে।অামার মা এবং বোনদের ধারনা পায়ের নিচে মাটিহীন মেয়েরা কথার বশে থাকে।

বউকে অামি বিয়ের অাগে দেখিনি।তবে যতোটুকু বোনদের কাছ থেকে শুনেছি।পাত্রীর নাম রানী, মা মরা দুই বোন, ঘরে সৎ মা।বোনেরা বলাবলি করছিলো বেশ সুন্দরী, মা মরা মেয়েরা বেশ লক্ষী হয়।তারা প্রতিকূল পরিবেশে ও স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারে।অন্তত মাথা তুলে দাঁড়াবে না,সংসারই হয় এসব মেয়েদের জীবনের লক্ষ্য।

বাসর ঘরে দেখলাম মেয়ে টা অাসলেই বেশ সুন্দরী। রিতীমত মাথা ঘোরে যাবার অবস্থা। অাসমানের পরী ভুল করে অামার খাটে বসে অাছে।
কাছে গিয়ে বললাম কেমন অাছো?
লাজুক হেসে রানী বললো ভালো।

সেই লাজুক রানীর, লাজুক ভাব তিন দিনেই কাটিয়ে উঠতে পেরেছে।
রানী সকালে নাস্তা খাবে না,দুপুর পর্যন্ত বিছানায় রাগ করে শুয়ে অাছে।কত ভাবে রানীর রাগ ভাংগাতে চাইছি রানী শুয়ে শুয়ে কখনো কাঁদছে কখনে ঘুমাচ্ছে।

অামার বোনেরা তার রাগের কারন জানতে অাপ্রাণ চেষ্টা করছে।রানী মুখ থেকে এক বর্ণ কথা ও বের করছে না।

অামার বড় বোন রানী কে শুনিয়ে শুনিয়ে অামাকে বলছে-
নতুন বউকে নিয়ে একটু বাহিরে ঘুরে অাসলেও তো পারিস।ঘরে থেকে থেকে বেচারি হয়তো বিরক্ত বোধ করছে।
মেঝো বোন সবাই কে বুঝাতে ব্যাস্ত-

অল্প বয়স কি অার বুঝে,অাস্তে অাস্তে সব শিখে নেবে।
মা বলছে বউ মাসাঅাল্লাহ্ লাখে একটা পরী ও ফেইল যাবে এই বউয়ের কাছে।
রাতে রানী খাটের এক কোনায় বসে বসে কাঁদে,অামি অারেক কোনায় ঘুমানোর চেষ্টা চালাই।
অামার বোনেরা দুইদিনেও রানীর রাগের কারন জানতে ব্যার্থ হয়ে তার বড় বোন কে ফোন দিলো।

রানীর বড় বোন বেশ রাগী স্বরে অামাদের হাজার দোষ ধরিয়ে বললো-

কি দিয়েছেন অামার বোন কে,বড় ঘর দেখে বিয়ে দিয়েছি অাপনারা তো ফকিরের মতো ব্যাবহার করলেন।
ঘরে কি নেকলেস পরে রাখা যায়,অাবার নতুন বউয়ের গলা খালি থাকাও বেমানান।বোনের কথায় বুঝতে পারলাম গলায় চেইন,পায়ে নূপুর প্রয়োজন রানীর।

এরপর রানীর রাগের সাথে সবাই পরিচিত হয়ে উঠেছি।
এখন বোনেরা যার যার বাচ্চা সংসার নিয়ে ব্যাস্ত।মা’য়ের ও অাগের মতো জোর নেই।অামি বসার বাহিরে থাকলে রানী অামার মাকে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করে।

এখন অামার বোনেরা প্রতিবাদ করতে অাসে না।
রানীর খুঁত ধরে ধরে মায়ের কান ভারী করে না।বরং মা কে বুঝানো হয় একটু মানিয়ে চলো।
রানী কে তালাক দেওয়ার কথা ও এখন কেউ অামাকে বলে না।

বোনেরা তাদের কাছে মা কে রাখতে পারবে না বিভিন্ন সমস্যার কারনে।সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলো মা কে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে অাসার।

তুলিকা অামার প্রথম বউ, শিক্ষিত নম্র স্বভাবের ছিলো।অন্যায় কে অন্যায় বলতো।পিছনে কথা বলা,গীবত করা তার পছন্দ ছিলো না।মিথ্যা তার খুব বেশি অপছন্দের ছিলে।অামার পরিবার চাইতো ঘরের বউ মাথা নিচু করে,অন্ধ,বোবা,কালা হয়ে চলুক।

তুলিকা সে রকম চলতে পারতো না,সে মাথা উঁচু করেও চলতো না অাবার মাথা নিচু করে চলা ও পছন্দ করতো না।সে চাইতো পরিবারের দায়িত্বশীল সদস্য হয়ে চলতে।

অামি বাহিরে থাকলে বোনেরা মিলেমিশে মা কে সাথে নিয়ে তাকে কথা দিয়ে অাঘাত করতো।

তুলিকা কে বুঝানো হতো অামাদের বাবার কামাই করা টাকা থেকে তিল তিল করে জমানো টাকার বাড়ির সম্পূর্ণ কৃতিত্ব অামার মায়ের ।

সেই বাড়িতে ছেলের বউ কে তারা দয়া করে রাখছে।
একটা সময় তাদের দলে বাবা কে ভর্তি করালো।
একরাতে তুলিকা কাঁদছিলো জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে-
বাবার অাচরনে তুলিকা বেশ কষ্ট পেয়েছে।

ঘটনা টা ছিলো এমন, বাবার হাতে বাহিরের খাবারের কিছু প্যাকেট ছিলো।তুলিকা কে দেখে বাবা লুকিয়ে ফেলেন,তারপর সবাই মিলে একটা রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ফেলে সাথে বুয়া কেও ডেকে নিয়ে যায় তারা।
এতে সে খুব অপমান বোধ করে,কারন তুলিকা অন্তত তার শ্বশুরের কাছ থেকে এমন অাচরন অাশা করেনি।সে বুঝতে পারে এই বাড়িতে তারা তাকে বুয়ার জায়গাতেও রাখেনি।

একটা সময় তুলিকা নীরবে চলে যায়,অামি যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তুলিকা বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে সারা পাইনি।

অামার পরিবারের তেজস্বী দাপটের কাছে তুলিকা হার মানলো।
অামার পরিবারের লোকজন তুলিকার প্রস্তান কে নিজেদের বিজয় ভাবতে থাকলো।
অামি পরিবার ছাড়া অন্য কিছু ভাবার মানুষ কোন কালেও ছিলাম না।এখনো ঠিক তাই অাছি।
মা কে নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে অাসলাম, অামি চেয়েছিলাম মাকে অালাদা বাসায় রাখতে।মায়ের দেখাশোনা পারিপার্শ্বিক সমস্যার কথা চিন্তা করে বৃদ্ধাশ্রমেই অানতে হলো।

বৃদ্ধাশ্রমের অাফিসে বড় করে টানানো অাছে তুলিকার ছবি।মা অবাক হয়ে তাকিয়ে অাছেন,সাথে অামিও।
একজন অামাদের বললেন উনি হচ্ছেন এই অাশ্রমের মালিক।

এই প্রথম তুলিকা বুঝিয়ে দিলো অামাদের,

“দাপট শুধু তেজস্বীয়তায় থাকে না স্নিগ্ধতার ও প্রবল দাপট থাকে।”

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত