বন্ধুর পিঠে কিল দিতে গিয়ে পাশে বসা মেয়েটাকে মেরে দিলাম! মেয়েটা ওরে বাবা গো বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো! এই যা! করলাম কি এইটা! বাসের সবাই এক নাগাড়ে পিছনের দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে!আমি কি করবো বা কি বলবো কিছুই মাথায় আসছে না।
বাসের পিছনের সিটে বসে ঢাকা যাচ্ছি বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করার জন্য। বন্ধু অনেক কষ্টে ফেসবুকে একটা মেয়েকে পটাতে পেরেছে। ফেসবুক থেকে ফোনে কথা বলা অব্দি চলে গিয়েছে। সে কি প্রেম! ক্লাসে বসে, বাথরুমে বসেও কথা বলে! মেয়েটার ফেসবুক আইডির নাম এঞ্জেল প্রিয়া।
এঞ্জেল প্রিয়ার সাথে আজকে’ই প্রথম দেখা করতে যাচ্ছে, বেচারা একা একা যেতে ভয় পাচ্ছিলো! তাই আমাকে সাথে করে নিয়ে যাচ্ছে। বন্ধু আমাকে তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে করা কিছু ১৮+ মেসেজ দেখাচ্ছিলো এর মধ্যে একটা মেসেজ দেখে বন্ধুর পিঠে কিল দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু হারামিটা সরে যাওয়াতে কিল’টা গিয়ে লাগলো বন্ধুর পাশে বসা মেয়েটার পিঠে! ওর সাথে যে কোনো মেয়ে বসে ছিলো সেটা খেয়াল’ই ছিলো না। যখন কিলটা গিয়ে মেয়েটার পিঠে পড়লো তখন বুঝলাম! বাসের সামনে থেকে কয়েকজন ছুটে আসলো আমাদের দিকে। মেয়েটা তখন পিঠে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বাসের কন্ট্রাক্টর এসে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে আপু? মেয়েটা এতক্ষণ চুপ করেছিলো কিন্তু এখন ন্যাকা কান্না শুরু করে দিয়েছে! যাহ্ বাবা কিল’টা কি এতো’টাই জোরালো ভাবে দিলাম নাকি! অবশ্য অনেক আওয়াজ হয়েছিলো যখন কিল’টা পিঠে পড়েছিলো! কন্ট্রাক্টরসহ বাসের কিছু উৎসুক যাত্রী আমাদের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে থাকিয়ে আছে! এই বুঝি দৌঁড়ে এসে লাত্তি গুতা দিবে, তারা এমন ভাব করছে, যেন আমি এইমাত্র মেয়েটার সাথে শীলতাহানী করতে যেয়ে ধরা পড়লাম! পাশ থেকে একজন ভদ্র মহিলা আমার বন্ধুর দিকে থাকিয়ে বললো, এই ছেলেটারে দেখতে’ই তো চুরের মতো লাগে। বন্ধুর দিকে তাকিয়ে দেখি বন্ধু আমার কান্না করে দিবে দিবে অবস্থা! তিনি আমার দিকে ফিরে আবার বললেন, বাসে উঠার পর থেকে দেখতেছি দুইটা মিলে মোবাইলে কি জানি দেখে হাসাহাসি করছিলো। আজকালকার ছেলেদের কোনো ঠিক নাই।
বাস থেমে আছে সেই অনেক আগে থেকে’ই। সামনে থেকে একজন এসে বললো এতো কিছু দেখার সময় নাই, কয়েকটা দিলে’ই সব ঠিক হয়ে যাবে। কথাটা শুনে দু’জন দু-জনের দিকে তাকিয়ে আছি। আমি বন্ধুকে ইশারায় বললাম জানলা দিয়ে লাফ দে। বন্ধু কি বুঝলো জানি না সে মেয়েটার পিঠে ধাম করে কিল মেরে দিলো! আমিসহ বাসের সকল যাত্রী বন্ধুর দিকে থাকিয়ে আছি!
সেই দুপুর থেকে বসে আছি। দিনের বেলায় এতো মশা কই থেকে আসে বুঝলাম না! দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো থানাহাজতে বসে মশা মারছি। আমি মশা মারছি আর বন্ধু মশাগুলোর হাত-পা ধরে গুনেগুনে সিরিয়াল করে লাইন বাই লাইন সাজিয়ে রাখছে।বাসের ঘটনার পর কেউ একজন পুলিশে খবর দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে আমাদের। হঠাৎ চিকনা টাইপের একজন কনস্টেবল এসে দুইজনকে হাজত থেকে বের করে নিয়ে আসলো। কনস্টেবল’কে দেখে মনে হচ্ছে এই বুঝি বাতাসে পড়লো বলে! শরীরের অবস্থা আমার থেকেও সূচনীয়! কি ভাবে যে পুলিশে চাকরি পেয়েছে বুঝিনা বাপু!
পুলিশের বড় কর্তার সামনে দাঁড়িয়ে আছি! তিনি আমাদেরকে পা থেকে শুরু করে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করছেন আর একটু পরপর তার টেবিলের পাশে রাখা একটা পাত্রে পানের পিক ফেলছেন। পাশ থেকে একজন কনস্টেবল বললো
-স্যার এই দুইটা বাসে একটা মেয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে৷ কয়েকজন বললো মেয়েটার গায়েও না’কি হাত দিয়েছে স্যার..। উত্তরে বড় কর্মকর্তা বললেন..
-মুতালেব তুমি যাও আমার জন্য পাশের দোকান থেকে পান কিনে নিয়ে আসো। বলবা কাঁচা সুপারি দিয়ে দিতে।
আমি এই দুইটারে দেখতেছি। এই বলে তিনি তার টেবিল থেকে একটা পানের খিল মুখে নিতে নিতে আমার দিকে থাকিয়ে বললো দেখে তো ভদ্রঘরের ছেলে মনে হয়। নাম কি? আমার নাম নাদিম মাহমুদ উৎস আর… পাশ থেকে বন্ধু বলে উঠলো ইবরাহিম হক স্যার..।
– তা এই কাজে কত দিন? আমি আকাশ থেকে পড়লাম। বলে কি! এই কাজে কত দিন মানে! আমি উনাকে বললাম
– স্যার কোন কাজে?
– বুঝিস না? বাসে মেয়েদের সাথে গা ঘেঁষে দাঁড়ানো, শরীরে হাত দেওয়া! এইসব কত দিন ধরে করিস?
– আসতাগফিরুলাহ! এইগুলা কি বলেন স্যার। আমরা মোটেও ওইরকম না স্যার। আমরা দুজনই খুব ভালো পরিবারের ছেলে স্যার এই বলে ইবরাহিম হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিলো।
– এই কান্না থামা,থামা বলছি।
পাশ থেকে আমি বললাম কয়েকদিন আগে ফেসবুকে দুইটা মেয়ে ” গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না” এই টাইপের লেখা টি-শার্ট পড়ে বাসে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছিলো না … আমি উনাদের সাথে এক মনে সহমত ‘ভাই’! ওই বেয়াদব, আমি আবার তোর ভাই হলাম কবে থেকে রে..। এই জাকির সাহেব এদের হাজতে ঢুকিয়ে দেন তো…।
সকাল এখন দশ’টা বেজে পনের মিনিট। ঢাকা পৌছালাম মাত্র।থানা থেকে সকাল সকাল ছেড়ে দেওয়া হয়েছিলো আমাদের। রাতে বড় স্যার’কে বাসের ঘটনাটা একটু ইনিয়ে-বিনিয়ে বলেছিলাম তিনি প্রথমে বিশ্বাস করেন নি। অনেক আকুতি মিনুতি করে হাতে পায়ে ধরে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বলার পর উনি আমাদের ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু শাস্তি হিসেবে থানার প্রত্যেকটা রুম ঝাড়ু দিয়ে চেয়ার টেবিল পরিষ্কার করে তবে ছেড়ে ছিলেন। ভাগ্যিস তখন শুধু আমার কথা’টাই বলেছিলাম। থানা থেকে বের হয়ে সকাল সকাল ট্রেনে করে ঢাকা চলে এসেছি। কমলাপুর রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি,ইবরাহিম’কে বললাম তোর গার্লফ্রেন্ডকে ফোন দে। সে মোবাইল বের করে ফোন দিলো। আমি পাশের দোকানে গেলাম কিছু খাওয়ার জন্য। সেই কালকে দুপুর থেকে না খেয়ে আছি, রাতে অবশ্য থানার বড় স্যার দুইজনকে দুইটা বনরুটি খাইয়ে ছিলেন। বন্ধুর কাছে এসে তার দিকে দুইটা কলা আর দুইটা বনরুটি বাড়িয়ে দিয়ে বললাম..
– কিরে কথা হলো? কি বললো?
– হ্যাঁ হয়েছে, একটা ঠিকানা মেসেজ করে বললো এইখানে চলে এসো।
– কই দেখি! হ্যাঁ চল যাই।
স্টেশন থেকে সিএনজি করে যাচ্ছি ইবরাহিমের গার্লফ্রেন্ড এর দেয়া ঠিকানায়। আমরা এখন যেখানে আছি সেটা একটা পার্ক। এই ঠিকানা’টাই দিয়েছিলো। আমি আর ইবরাহিম অনেক্ষণ ধরে বসে আছি পার্কের এক কোনায়। বিরক্ত লাগছে। সারা পার্কে মেয়ে-ছেলে ভরপুর। সবাই জোড়ায় জোড়ায় বসে আছে। কেউ কেউ গাছের চিপায় শুয়ে আছে! সে কি লোমহর্ষক ঘটনা! না এখন আর ঘটনা’টা খুলে বলবো না। কারণ আমি যেটা বুঝাবো সেটা আপনারা বুঝবেন না। আপনারা যেটা বুঝবেন না সেটা আমি বুঝাতে চাচ্ছি না। ইবরাহিম’কে ধমক দিয়ে বললাম
-কিরে তোর গার্লফ্রেন্ড কই?
-আরে এতো তাড়াহুড়ো কেনো করছিস। আসবে তো ফোন দিচ্ছি দাঁড়া।
-আমি বসে আছি সেটা তোর কাছে ভালো লাগছে না?
– আরে আমি সেটা বলি নাই। ওই রিং হচ্ছে চুপ থাক…!
হ্যালো.. কোথায় তুমি। সেই কখন থেকে বসে আছি। আমি লাল রঙের শার্ট আর কালো রঙের প্যান্ট পড়ে আছি। আমার পাশে আমার বন্ধুও আছে। হ্যাঁ.. হ্যাঁ আসো তুমি। রাখছি বায়..।
আমি বেঞ্চে শুয়ে মোবাইলে ফেসবুকিং করছি এমন সময় শুনলাম কেউ বললো’হাই জানু’। আমি উঠে বসতে’ই দেখি একটা মেয়ে খুব সাজুগুজু করে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দেখতে সেই লাগছে মেয়েটাকে। প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ার মতো অবস্থা! যে কেউ দেখলেই প্রেমে পড়ে যাবে। আমি ইবরাহিম এর দিকে তাকিয়ে দেখি সে মুখ হা করে থাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। আমি ইবরাহিমের মাথায় পরপর দুইটা টুকা মেরে বললাম ওই ব্যাটা মুখ বন্ধ কর।
মেয়েটা ইবরাহিম এর দিকে হাসি-হাসি মুখ করে চেয়ে বললো কি সুইট লাগছে গো তোমায়। আমাকে চিনতে পেরেছো? আমি এঞ্জেল প্রিয়া! তোমার এঞ্জেল প্রিয়া……! আমি মেয়েটার কথা শুনে বিষম খেলাম। আমার কেমন জানি সন্দেহ হলো। আমি মেয়েটাকে আবার ভালো করে খেয়াল করলাম। কাম সারছে রে ! এই তো দেখি ওই টাইপের! বুঝেন নি? আরে ওই’যে ঢাকার রাস্তায়, বাসে, পার্কে সব খানে’ই যাদের আনাগোনা! মাঝে মাঝে গায়ে-গতরে হাত দিয়ে যে বলে “ওই টাকা দে…তা না হলে টিপে দিবো!”
আমি পাশ ফিরে বন্ধুর দিকে ফিরতে’ই দেখি বেচারা মাটিতে পরে আছে। অজ্ঞান হয়ে গেছে! দুই কেজি আপেল, এক কেজি কমলা নিয়ে বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। এইগুলা খেতে হয় এইসময়। কি ভাবছেন? হাসপাতালে যাচ্ছি? না হাসপাতালে না যাচ্ছি পাবনা পাগলাগারদে। হ্যাঁ বন্ধু আমার সেই ধাক্কা আর সামলে নিতে পারে নি। শুনেছি এখন না’কি সে পাগলা গারদে এঞ্জেল প্রিয়া এঞ্জেল প্রিয়া বলে চিল্লায়!