আজ অনেক আনন্দ লাগছে আমার।৫বছর পর দেশের মাটিতে পা দিলাম।৫বছর আগে প্রবাশ জীবনে বিদেশের মাটিতে পা দিয়েছিলাম।সেই প্রবাশ জীবন শেষ করে।আজ নিজের দেশের মাচিতে পা দিলাম। এয়ারপোটে নামার পর কেমন ভালোলাগা শুরু করেছে।কতদিন পর মা বাবার সাথে দেখা হবে।বিশেষ করে আমার জানটাকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব।ঐ তো সবাই কে দেখা যাচ্ছে।আমাকে দেখেই মা আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।
—কত সুকিয়ে গেছিসরে বাবা।
–মা কোথাই সুকিয়ে গেছি।দেখছোনা কত মোটা হয়ে গেছি।
–বললেই হলো।আমি মনে হয় চোখে দেখিনা।
—তোমরা তোমাদের কথা থামাও।বাড়িতে গিয়ে কথা হবে।
বলেই বাবা আমার ব্যাগগুলো নিয়ে গাড়িতে তুললো।
–মা মিহাকে দেখছিনা যে??
—বৌমার নাকি শরীর খারাপ তাই আসেনি।বাসায় চল। বাসায় আসলাম।দেখি মিহা শুয়ে আছে।
—কি ব্যাপার মিহা তুমি অসুস্থ আমাকে কেন বলোনি??
—বললে তুমি চিন্তা করতে তাই বলিনি।
–কাজটা কিন্তু মোটেই ভালো করোনি।
—হু।সরি আর এমন হবেনা।
–ঠিক আছে।
–আচ্ছা যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।কত পথ এলে।
–থাকিনা আমার বউটার কাছে।কত দিন পর দেখছি।
–না এখন যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।সারা জীবন আছে দেখার জন্য।
—জো হুকুম মহারানী।
ফ্রেশ হয়ে ।সবাই আড্ডা দিলাম।রাতে খাবার পর শুতে যাচ্ছি এমন সময় মায়ের ডাক।
—হ্যা মা বলো??
–একটা কথা বলার ছিল।
–কি??
–কিছু মনে করবিনা তো??
—আরে মা বলোই না কি বলবে।তোমার কথাতে আমি কিছু মনে করবো কেন।
—তোর বউ প্রতিরাত কার সাথে যেন কথা বলে।অনেক রাত অব্ধি।
–কোন প্রয়োজনে কারো সাথে কথা বলে হয়তো।
–তাই বলে প্রতিরাত??
—বাদ দাওনা মা।আমি দেখছি।
–ঠিক আছে তাই দেখ।
মার সাথে কথা বলার পর রুমে আসলাম।দেখি মিহা শুয়ে আছে।কপালে হাত দিয়ে দেখি খুব জ্বর।মিহাকে কিছু না বলে শুয়ে পড়লাম। রাতে হঠাৎ মিহার ফোনে মেসেজ আসলো। একবার ভাবলাম সিম থেকে মেসেজ দিয়েছে। পরে হঠাৎ মায়ের কথাটা মনে পড়াতে মোবাইলটা নিয়ে মেসেজ দেখলাম।লেখা আছে মিহা আজকে আসোনি কেন??তোমার জন্য সবাই অপেক্ষা করে চলে গেল। মনটাতে তখন খটকা লাগলো।সারারাত আর ঘুম হলোনা।সকালে মিহার অসুখ কমে গেছে।স্বাবাভিক ছিল। সকালে একটু বের হয়েছিলাম।বাসায় আসতে আসতে ১১টা বেজে গেল।বাসাতে আসার সময় দেখি মিহা কোথায় যেন যাচ্ছে।
–করিম চাচা মিহা কোথয় গেল??
—আপা মনি তো সপ্তাহে ৩দিন এই সময়ে কোথায় যেন জায়।
–ঠিক তো??
–হ্যা বাবা।ঠিক।
বাসাতে চলে আসলাম টেনশনে মাথাটা কেমন করছে।মাথাতে পানি দিলাম তবু ঠান্ডা হচ্ছেনা।কোন মতে নিজেকে শান্ত করলাম।সপ্তাহে ৩দিন কোথায় যায়?? ১মাস দেখলাম কোন ভুল নেই কোথাও না কোথাও তো যায়। রাতে ঠিক মতো ঘুম হয়না।মিহা শেষে আমার অনুপস্থিতিতে এসব করছে।ছিছিছি ভাবতেই পারছিনা। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি।মিহা আমার পাশে বসে আছে।
—কি ব্যাপার মিহা।
—তোমাকে কিছু বলার ছিল?
—কি বলো??
—তুমি কেমন বদলে গেছ।আমাকে ঠিক মতো সময় দাওনা। কথা কম বলো।রাতে ঘুমাওনা।
—আরে তেমন কিছুনা।এমনি
—ও।ভালো তোমাকে একটা খুশির খবর দেব?
—কি বলো?
—-তুমি বাবা হতে চলেছো।
কথাটা শুনেই মাথার ভিতর চিনচিনে ব্যাথা শুরু হলো।সবাই বাবা হবার কথা শুনলে খুশি হয়।কিন্তু আমি পরলামনা।মিহার সীমা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছে গেছে।এবার একটা বিহিত দরকার। মিহার গালে একটা কসে চড় দিলাম।মিহা ছিটকে মাটিতে পড়ে গেল।আমার দিকে মিহা ছলছলে চোখে তাকিয়ে আছে।যাকে বিয়ের পর কখনো মারিনি।এত ভালোবাসা দিয়েছি।সে এমন কাজ করেছে ভাবতেই নিজের প্রতি ঘৃনা হচ্ছে।
–ভাবছিস তোকে মারলাম কেন??তোকে এত ভালোবাসলাম আর তুই এই কাজ করলি?
–কি করেছি আমি?কান্না জরিতো গলায়।
—ভেবেছিস আমি কিছু জানিনা??মাঝ রাতে ফোনে মেসেজ আসে।।প্রতিদিন কোথায় যাস তুই।তুই মা হতে যাচ্ছিস যে আমার সন্তান না তাকে কেন আমার নামে চালিয়ে দিচ্ছিস??বললেই তোকে মুক্তি দিয়ে দিতাম।
–তুমি থামো।তুমি যা ভাবছো তা না।
–তুই চুপ কর।বড়বড় কথা বলবিনা।তোর চরিত্র সম্পর্কে জানা হয়েগেছে।ছিছিছিছি
—তুমি আমাকে মারো কাটো। কিন্তু চরিত্র খারাপ বলবেনা।
তুমি কেন এসব ভাবছো বুঝতে পেরেছি।আমার সাথে চলো সব উত্তর তুমি পেয়ে যাবে। মিহা আমাকে নিয়ে একটা বাড়িতে নিয়েগেল।বাড়িটা অনেক বড়ই। একটা রুমে নিয়ে গিয়ে আমাকে বলো এই তোমার উত্তর।
—তুমি ভাবো আমি কোথয় যাই??এখনে আসি।
এখানে যত শিশু দেখছোনা??এদের কাছে আসি।তুমি বিদেশে যাবার পর টাকা পাঠাতে।আর তার থেকে কিছু নিয়ে এদের দেখাশোনা করি।এদের পৃথিবিতে কেউ নেই।আমিই এদের মা আমিই বাবা। সপ্তাহে ৩দিন দুপুরে এদের সাথে থাকি খাওয়া দাওয়া করি। যদি না আসি তখন এরা কেউ খায়না।যদি বলতাম তাহলে হয়তো এদের সাথে থাকা হতোনা।মায়ের মমতা দিয়ে এদের বড় করেছি।কত নর পিশাচ তাদের পাপের ফল ডাসবিনে রেখে যায়।আমি তাদের কে এখানে রাখি।আর রাতে মেসেজের কথা বলছো।এসো/ বলে আমাকে একটা লোকের কাছে নিয়ে গেল।দেখতে ৬০+বয়স বলে মনে হচ্ছে।এই লোকটা রাতে মেসেজ দিয়েছ।আমি অসুস্থ থাকায় আসতে পারিনি তাই এরা কেউ খায়নি।তাই মেসেজ দিয়েছিল।
হঠাৎ দেখি একটা পিচ্চি মেয়ে আসছে।
–মাম্মা তুমি কানছো কেন??আর ইনি কে??
—ও কিছুনা।ইনি হলেন।তোমার নতুন বাবা।
–বাবা??
–*হ্যা।
মেয়েটা ওমনি আমাকে বাবা বলে জ্বরিয়ে ধরলো।তুমি এত কোথায় ছিলে বাবা??মাম্মা একা আসতো তুমি আসতেনা।
চোখ দিয়ে তখন দু ফোটা পানি বেয়ে পড়লো নিজের অজান্তেই।আমি মিহাকে সুধুসুধুই সন্দেহ করলাম।
–মামনি তোমার মাম্মাম একা আসবেনা।এখন থেকে তোমার মাম্মামের সাথে বাবাও আসবে।
–*কি মজা বাবাও আসবে এখন থেকে।সবাইকে বলতে হবে বলেই দৌগ দিল। মিহা তখন ও কান্না করছিল। মিহার চোখের পানি মুছে দিলাম।
—অনেক জরে লেগেছে তাই না??
–হু।
—এবারের মতো মাফ করা যায়না??
—-আমি কিছু মনে করিনি।
—আমার বউটা দেখি এখনো রাগ করে আছে।
মিহাকে বুকের সাথে জ্বড়িয়ে ধরলাম। তখন বাবা বলে সবাই দৌড়ে আসছে।মিহাকে ছেড়ে বাচ্চাদের দিকে আমিও দৌড় দিলাম।শিশুদের ভালোবাসা সতিই অসাধারন।যারা তা অনুভব করতে পারে তারাই যানে।