অনেক ভালোবাসি

অনেক ভালোবাসি

ইফতারি কেনার জন্য মেস থেকে বের হলাম।মেস থেকে ৫ মিনিট লাগে হেঁটে গেলে,যেখানে ইফতার পাওয়া যায়।হাটতেছি হাটতেছি ঠিক এমন সময় কে যেন পিছন দিকে থেকে ডাক দিল,

-এই জুবায়ের ভাই

পিছনে তাকিয়ে দেখি একটি মেয়ে, আমি যেই মেসে থাকি তার পাশের বাসায় এই মেয়েটি থাকে।মেয়েটির নাম নিলীমা।এই বছর ক্লাস টেনে পড়ে।মেয়ে আবার ধনী ঘরের সন্তান।আমি বললাম…

-কি হয়েছে (আমি)
-কোথাই যাচ্ছেন (নিলীমা)
-ইফতার কিনতে
-কেন মেসে কি ইফতার তৈরি করেন না?
-না, ইফতার সবসময় বাজার থেকে কিনি

এই বলে আমি আবার হাটতে শুরু করলাম।ইফতারের সময় আরো ১৫ মিনিট আছে।তাই একটু দ্রুত হাটতেছি। অাবার নিলীমা ডাক দিল..

-জুবায়ের ভাই
-আরে কি হলো
-এত দ্রুত হাটতেছেন কেন
-এমনি, তোমার কাছে বলতে হবে

তারপর মেয়েটি যে কোথাই চলে গেল আমার সেদিকে খেয়াল নেই।ইফতার করার পর নামাজ পড়লাম।ভাবলাম একটু ছাদে যায়। ওম্মা,ছাদে গিয়ে দেখি নিলীমা তাদের ছাতে দাঁড়িয়ে আছে।আসলে প্রত্যেক দিন ইফতারের পরে আমি ছাদে আসি।তার জন্য ও নিলীমা ছাদে আসে।আমি জানি নিলীমা আমাকে ভালোবাসে। তবে এখনো বলতে পারে নাই।আর আমার নিলীমা কে একদম পছন্দ হয় না। কেমন যেন তার চেহারা,সবসময় রাগি মুডে থাকে,চোখ দুটো বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে তাকে আর আমার দিকে তাকিয়েই একটা মুচকি হাসি দিবে।এই মেয়েকে আমার ভালো লাগে না।পরের দিন সকালে যাচ্ছি একটা টিউশনি করার জন্য।আমার যাওয়ার রাস্তার সামনে নিলীমা দাঁড়িয়ে রয়েছে।প্রত্যকদিন আমাকে দেখার জন্য মেয়েটি দাঁড়িয়ে থাকে।আমি শুধু নিচের দিকে মাথা দিয়ে হেটে চলে যায়।মেসে আসতে আসতে প্রায় বিকেল হয়ে গেল।মেসে ঢুকেই আমি হা করে তাকিয়ে আছি।কিছুই বুঝলাম না।আমার পড়ার টেবিল, বিছানা,রুম সব পরিষ্কার করে সুন্দর করে গুছানো।কে করল এসব ভাবতেছি।এমন সময় আমার রুম মেট কে বললাম…

-কেরে এসব করছে(আমি)
-কেন তুই জানস না
-না,জানি না কে করছে
-আমার ভাবি
-ভাবি টা কে
-ন্যাকা যেন কিছুই বুঝেনা
-আরে বল কে
-নিলীমা ভাবি

আমি কিছুই বললাম না।আমার এই মেয়েকে একদম পছন্দ হয় না।আর এর মধ্যে সবারে বলছে যে নিলীমা আমার বউ।আজকে আবার ইফতান কিনতে যাচ্ছি। এমন সময় দেখি নিলীমা।

-এই নিলীমা তুমি কি পাইছ,যেটা মনে চায় সেটাই কর
-আমি আবার কি করলাম
-এই যে, সবারে বলছ যে তুমি আমার বউ
-তাকে কি হয়ছে, আমি তো আপনার বউ হবই
-মানে
-মানে খুব সহজ, আমি আপনাকে ভালোবাসি আর আপনিও আমাকে ভালোবাসেন
-কি বলছে এসব তোমাকে
-বাহ্ রে,আপনি সবসময় আমার দিকে তাকিয়ে তাকেন,আমার সাথে কথা বলেন
-আমি কি তোমারে কোনো দিন বলছি যে, নিলীমা আমি তোমারে ভালোবাসি?
-না,বলেন নাই তবে আমার মন বলছে আপনি আমাকে ভালোবাসেন
-না,আমি তোমাকে ভালোবাসি না,তোমাকে আমি ঘৃণা করি।যাও আর কোনো দিন আমার সামনে আসবা না

আরো অনেক কথা বলছি।আজকে ইচ্ছে মতো বকে দিলাম।কি পেয়েছে মেয়েটা যা ইচ্ছে তাই করবে।আমার সামনে থেকে মাথাটা নিচু করে চলে গেছে। এতদিনে তাহলে মেয়েটার উচিত শিক্ষা হয়ছে।ইফতারি করে ছাদে গেলাম।আজকে গিয়ে দেখি নিলীমা ছাদে আসে নাই।আমি বললাম যাক বাবা তাহলে এতো দিনে মেয়েটার বুঝ আসল।রাত্রে ভালো ভাবে ঘুমিয়ে পরলাম।সকাল বেলা যখন মেস থেকে বাহির হলাম, পথের মাঝে আজকে আর নিলীমা কে দেখতে পারলাম না।সারাদিন চলে গেল একবার ও নিলীমা কে দেখলাম না।কেমন যে মনের ভেতর একটা খাণি অনুভব লাগতেছে।ভাবলাম আজকে নিলীমাদের বাসায় যাবো।নিলীমার বাবার সাথে আমার আবার একটু সম্পর্ক ভালো।বাসার কলিং বেল বাজতেই আন্টি এসে দরজা খুলল।মানে নিলীমার মা।

-আসসালামু….আন্টি
-অঅালাইকুম…
-কেমন অাছেন আন্টি
-ভালো,তুমি কেমন আছ বাবা
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো অাছি,আন্টি নিলীমা কই
-বাজান গতকাল ধরে নিলীমা কিচ্ছুই খাইতেছে না।সারাদিন ধরে রুমের দরজা খুলে না।একা একা শুধু কাঁদে।কতবার বললাম মা কিছু খেয়ে নে।আমার কোনো কথাই শুনল না(আন্টি এক সাথে এগুলো বলল )
-আন্টি নিলীমার রুমটা একটু দেখিয়ে দিবেন(আমি)
-ওই যে বাবা, ওই রুমটা

আমি নিলীমার রুমের দরজাতে নক করলাম কোনো সারা শব্দ নাই।আমি বললাম….

-নিলীমা দরজা খুল
-কে ওখানে,আমি দরজা খুলব না
-আরে নিলীমা দরজা খুল,আমি জুবায়ের
-আপনে কেন এসেছেন, এখান থেকে আপনি চলে যান,আপনি ওই তো বলছেন আমি যেন আপনার সামনে আর না যাই
-আরে দরজা খুল
-না খুলব না
-তাহলে আর কোনো দিন তোমার সাথে কথা বলব না,আমি চলে যাচ্ছি এই বলে চলে যাব এমন সময় নিলীমা দরজা খুলে, আমার শার্টের কলার ধরে একটানে নিলীমার বিছানাই নিয়ে বসাল।তারপর নিলীমা বলতেছে…

– অামাকে ভালোবাসেন তো
-না,বাসি না
-তাহলে চলে যান এখান থেকে এই বলে ফুফিয়ে কাঁদা আরম্ভ করে দিল।আমি কিছুই বললাম না।নিলীমা বলতেছে….
-আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি জুবায়ের
-আমি যে তোমাকে ভালোবাসতে পারব না, নিলীমা
-কেন
-কেন এর কোনো উত্তর নেই আমি চলে যাচ্ছি নিলীমার রুম থেকে এমন সময় নিলীমা বলল……

-আমি যদি আপনাকে না পাই তাহলে আমার জীবন রাখব না আমি শুধু একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে আসলাম।ভাবলাম এটা আবেগ কয়েকদিন পরে এই আবেগ চলে আমি কে তা আর কোনো দিন চিনবেনা নিলীমা।

ভালই দিনকাল চলতে ছিল।আমার লেখা পড়া আর টিউশনি।মনে মনে ভাবি এমন মেয়েই আমি খুঁজতেছি, যে আমাকে আমার চেয়ে বেশি ভালোবাসবে।কিন্তু একটা সমস্যা। সমস্যা হলো আমি মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে আর নিলীমা ধনী ঘরের মেয়ে। নিলীমার বাবা কি আমাদের সম্পর্ক মেনে নিবে।এর মধ্যে অনেক দিন নিলীমা আমাকে বলছে যে তাকে আমি ভালোবাসি কি না।তখন আমি কোনো উত্তর দিতাম।তার কারন আমিও নিলীমা কে ভালোবেসে ফেলি।নিলীমা কে ঘর বাধার স্বপ্ন ও দেখি।একদিন মেসে এসে দেখি আমার ডায়রিটা আমার পড়ার টেবিলে।মানে টা কি। আমি তো ডায়রিটা লুকিয়ে রেখেছিলাম।তার মানে কি নিলীমা এসেছিল। এই ভেবে ডায়রিটা খুললাম।খুলে যা দেখলাম। তা ভাববার মতো নই….

এই ডায়রিতে নিলীমার সাথে প্রত্যকটা কথা তুলে ধরছি।আমি নিলীমা কে ভালোবাসি তাও সব লেখা এই ডায়রিতে।ডায়রির শেষ প্রান্তে লেখা ছিল। “আমি ও তোমাকে অনেক ভালোবাসি নিলীমা। আমিও তোমাকে না পেলে মরে যাব।কিন্তু তোমার পরিবার কই আর আমার পরিবার কই।তোমার আমার সম্পর্ক কি তোমার বাবা-মা মেনে নিবে ?? এটার নিচে নিলীমা লেখছে হ্যা মেনে নিবে আমি তখন ডায়রিটা বন্ধ করে দিলাম।ছাদে গেলাম। গিয়ে দেখি নিলীমা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিল,আর বলল….

-তুমি অামাকে ভালোবাস বল নি কেন….
-আসলে নিলীমা আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি,কিন্তু…..
-কোনো কিন্তু নাই,আমি বাবাকে সব বলছি বাবা রাজি হয়ছে,আর তোমাকে বলছে বাবার সাথে কাল দেখা করতে…..

পরের দিন নিলীমার বাবার সাথে দেখা করলাম।সব সমস্যা সমাধান হয়ে গেল।আমাদের বিবাহ হবে আগামি ঈদের পরে।অর্থাৎ আমাদের প্রেমের চার বছর পরে আমাদের বিয়ে হয়েছিল। এগুলো কল্পনা করতে ছিলাম এমন সময় নিলীমা ডাক দিল।তারপর আমার হুশ আসল। আমাদের ভালোবাসার কাহিনী এতক্ষণ ধরে কল্পনা দেখতেছিলাম।আমাদের বিবাহ হয়েছে আজ এক বছর।নিলীমা কে বললাম….

-নিলীমা মনে আছে গতবছর এমন রোজার মাস টাকে
-হুম,মনে আছে
-আসো একটু তোমাকে ঝড়িয়ে ধরি

তারপর নিলীমা কে ঝড়িয়ে ধরলাম।আর মনের অজান্তেই চোখ থেকে পানি চলে আসল। কি থেকে কি হয়ে গেল,ভাবতেই অবাক লাগে। আপনারা সবাই দোয়া করবেন আমাদের একটি মেয়ে সন্তান হয়েছে।আমি আর নিলীমা অনেক সুখে আছি মেয়েটির নাম হলো জুমা।অর্থাৎ আমার নামের প্রথম অক্ষর জুবায়ের থেকে “জু” নিলাম আর নিলীমার নামের শেষ অক্ষর থেকে “মা” নিলাম।হয়ে গেল জুমা।অনেক অনেক সুখে আছি আমাদের এই তিনজনের পরিবার। সবাই দোয়া করবেন বাকিটা জীবন যেন আনন্দে ভরপুর থাকে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত