নিলয় : তোমাকে না বলছি অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলতে না!
বৃষ্টি: ওরা আমার ফ্রেন্ড ৪-৫ বছর এক সাথে পড়েছি কথা না বললে কি হয় হা..??
নিলয় : তুমি নিষেধ করার পর আমি তো কোন মেয়ের সাথে কথা বলিনা…!! তুমি তোমার মেয়ে বন্ধুদের সাথে কথা বলো সমস্যা নেই। কিন্তু ছেলে বন্ধুদের সাথে কোন কথা বলবে না, এটা আমি পছন্দ করি না, এটা আমি সহ্য করতে পারি না।
বৃষ্টি: তোমার পছন্দ অপছন্দে আমার কিছু যায় আসে না। তুমি ছাড়াও আমার পার্সোনাল লাইফ আছে যা আমি এড়িয়ে চলতে পারবো না।
নিলয় : কি!! ??? আমি ছাড়া তোমার অন্য পার্সোনাল লাইফ!! আমি তোমার স্বামী, আমার কি তোমাকে কিছু বলার, নিষেধ করার অধিকার নেই ???
বৃষ্টি: বেশি অধিকার ফেলাতে এসো না !!
নিলয় : সরি, তোমাকে নিষেধ করা আমার ভুল হইছে, ক্ষমা চাই, ক্ষমা করে দিও আমায়। বৃষ্টির কথা শুনে নিলয় খুব কষ্ট পেলো। নিলয় কল্পনাও করেনি এমন কথা বলবে বা বলতে পারে বৃষ্টি। নিজের অজান্তেই কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে দু’চোয়াল শিক্ত হলো..। বৃষ্টিকে নিলয় অনেক বেশী ভালবাসে।
বৃষ্টি : কি ব্যপার না ঘুমিয়ে অমন করে কি দেখছো???
নিলয় : আচ্ছা বৃষ্টি!! ধরে নাও আমি নেই আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে??
বৃষ্টি: কেন কোথায় যাবে তুমি??
নিলয় : এমনি ধরে নাও মানুষ এই আছে এই নাই, কখন কি হয় বলা তো যায় না! আমায় ছাড়া একা থাকতে পারবে???
বৃষ্টি : এসব কি বলতেছো?? ঘুমাও তো
নিলয় : আমার কথা কি মনে পড়বে???
বৃষ্টি : না একটুও মনে পড়বে না।
নিলয় : আমি তোমার যোগ্য নই তাই না??
বৃষ্টি : আমার এসব একটুও ভালো লাগছে না ঘুমাও তো, আর একটা কথাও বলবে না। বৃষ্টি ওপাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়লো। সকাল বেলা চোখ খুলতেই মও বৃষ্টি দেখতে পেলো নিলয় ওর দিকে চেয়ে আছে, নিলয়ের চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে, পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে নিলয় রাতে ঘুমায় নি।
বৃষ্টি : কি ব্যপার সারারাত ঘুমাও নি…???
নিলয় : হুম, ঘুমাইছি তো… একটু আগেই উঠলাম।
বৃষ্টি: তুমি তো আমার আগে উঠো না আজ কেন..???
নিলয় : না এমনিতেই
নিলয় কখনোই বৃষ্টির সাথে মিথ্যা বলেনা সেটা যে বিষয়ই হোক না কেন। কিন্তু বৃষ্টি স্পষ্ট বুঝতে পারলো নিলয় মিথ্যে বলছে নিলয় সারারাত ঘুমায়নি। নিলয় প্রতিদিন বের হবার সময় বৃষ্টির কপালে একটা চুমু খেয়ে বের হয়। আজ দুইবার চুমু খেলো, অন্য দিন হাসিখুশি যায়, আজ চুপচাপ নিস্তব্ধ, চোখে পানি ছলছল করছে।
নিলয় : যাই বাবু…. (কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে আবার ফিরে আসলো)
বৃষ্টি : কি হলো কিছু ফেলে গেছো…..???
নিলয় : না….
বৃষ্টি: তবে…
নিলয় কিছু না বলে বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরলো কপালে আবার চুমু খেলো আর বললো লক্ষী হয়ে থেকো বাবু। নিজেকে কনট্রোল করতে পারছে না নিলয়। আর কিছু না বলে নিলয় চলে আসলো, বৃষ্টির চোখে পানি বৃষ্টি ভাবছে নিলয়ের কি হলো?? ও তো এমন না!! নিলয়কে খুব ভাল করেই চিনে বৃষ্টি, প্রেম করে বিয়ে হয়েছে ওদের। নিলয় বৃষ্টির চেয়ে পড়াশোনা কম করছে আবার চেহারার দিক দিয়েও বৃষ্টি ওয়াও আর নিলয় একটু কালো। কিন্তু বৃষ্টি জানে নিলয় ওকে নিজের চেয়েও বেশী ভালবাসে। নিলয় বৃষ্টিকে অনেক বার বলেছে আমি কি তোমার যোগ্য…? উত্তরে বৃষ্টি বলেছে : দেখো নিলয়…!! ভালবাসা যোগ্যতা বা চেহারা দিয়ে হয় না, তুমি আর এসব কথা বলবে না। বৃষ্টি নিলয়ের অনেক কথাই মানতে চাইতো না যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করতো।
নিলয় কিছু বলতো না, কোন বিষয় জোর করতো না, হার মেনে নিতো। বিছানা ঠিক করতে যেয়ে বৃষ্টি একটা চিরকুট পেলো। নিলয়ের লিখা বাবু তোমাকে ছাড়া থাকা কষ্টের। তোমার সাথে অন্য কাউকে দেখা বা কথা বলা আরো অনেক অনেক বেশী কষ্টের যা আমি সহ্য করে নিতে পারছি না। আমি চেষ্টা করেছি তোমাকে ফিরাতে কিন্তু আমি ব্যর্থ। হয়তো এখন আমার কোন মূল্য নেই তোমার কাছে যেখানে আমি তোমার স্বামী হয়ে কোন মূল্য পেলাম না তাই চলে যাচ্ছি অনেক দূরে আজ থেকে তুমি স্বাধীন, মুক্তো করে দিলাম তোমায়। বাবু ‘ আমার কথা মনে পড়লে আকাশের তারাঁর দিকে তাকাবে সবচেয়ে উজ্জ্বল তাঁরা টাই আমি, দূর থেকে তোমায় দেখবো, কথা বলবো আমার বাবুটার সাথে।
লক্ষী হয়ে থেকো, ভালো থেকো” সাথে সাথে নিলয়ের মোবাইলে কল দিলো বৃষ্টি কিন্তু মোবাইল বন্ধ পেলো। কি করবে বুঝতেছে পারছে না বৃষ্টি। নিলয় অন্য ছেলেদের তুলনায় খুব বেশী ইমোশনাল। বৃষ্টি ফ্যামিলির সবার কাছে কল দিলো। সবাই নিলয়ের নাম্বার বন্ধ পাচ্ছে!! বৃষ্টি অঝোর ধারায় কাঁদছে এদিকে সবাই নিলয়কে খুঁজতে খুঁজতে পেরেশান হয়ে যাচ্ছে কোথাও নিলয়কে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রায় ৪-৫ ঘন্টা পর খবর এলো নিলয়ের লাশ হাসপাতালে!! রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে নিলয়। বৃষ্টি পাথর হয়ে গেল, বৃষ্টির মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো, বৃষ্টি জানে এটা এক্সিডেন্ট না। নিলয় আত্যহত্যা করছে। আর এ জন্য দায়ী বৃষ্টি।
বৃষ্টি কিছুতেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছে না, বৃষ্টি নিজের ভুল বুঝতে পারছে, হাউ মাউ করে কাঁদতেছে সামান্য কিছু ভুলের জন্য সে আজ তার ভালোবাসার মানুষকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেললো। বৃষ্টি হাজার চাইলেও আর নিলয়কে ফিরিয়ে আনতে পারবে না। বৃষ্টি এখন রাত হলেই ছাদে গিয়ে বসে থাকে নিলয়ের সাথে কথা বলার জন্য। ছাদে গিয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল তাঁরাটার দিকে তাকিয়ে থাকে আর কথা বলে ” বাবু কেমন আছো তুমি আমাকে ছেড়ে”…?? বাবু আমি এখন কারো সাথে কথা বলি না।
বিশ্বাস করো, প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও, শুধু তোমার সাথে বলি এখন আমি শুধু তোমার বাবু। আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি বাবু তাই না?? বাবু আমি বুঝতে পারি নাই আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমি খুব পচা,খুব খারাপ তাই না বাবু?? আমি আজ বড় একা হয়ে গেলাম । তোমার অপেক্ষায় থাকবো সারা জীবন।