মধ্যবিত্ত

মধ্যবিত্ত

:- কেমন আছো? (আমি)
:- অনেক ভাল। তুমি? (সে)
:- যাচ্ছে কোন রকম। কিন্তু বেচে আছি।
:- তা বুঝাই যাচ্ছে। তা কি করছ এখন?
:- টিউশনি করাচ্ছি।
:- ও চাকরী হয়নি কোথাও?
:- হয়েছিল করি নাই।
:- কোথায়?
:- বাংলাদেশ রেলওয়্যাতে।
:- সরকারী চাকরি করলে না কেনো?
:- ভাল লাগে নাই তাই করি নাই।
:- জীবনে কখনো সিরিয়াস হলে না।
:- মধ্যবিত্তদের হাসিটাও সিরিয়াস কিন্তু সেটা অনেকেই বুঝে না।
:- মধ্যবিত্তদের হলেও তোমার না। জীবনে সিরিয়াস হলে আজ তুমি আমি মিলিত হতাম।
:- মিলিত না হয়েই বোধহয় ভাল আছি। মিলিত হলে ভালবাসাটা কমে যেত।
:- কমত না বেরে যেত।
:- হা হা বাড়ত কিভাবে সাংসারিক চাপে আর চাহীদার তাগিদে ছুটাছুটিতে তোমাকে সময় দিতে পারতাম না তখন হয়তবা তুমিই বলতে আগের মত ভালবাসি না।

আচ্ছা যাই হোক আমার টিউশনির সময় হয়ে গেছে। যাই ভাল থেকো?

.
যার সজ্ঞে কথা হলো সে হচ্ছে আমার এক সময়ের প্রেমিকা ছিল কিন্তু এখন নেই। ভাল ছেলে পেয়েছিল তার বাবা বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।

মেয়েটাও সেটাই চেয়েছিল। সে ভাল আছে দেখে ভাল লাগল।
.
ওর আর আমার দেখা হয়েছিল ভার্সিটিতে আমি তখন গ্রাম থেকে সবে এসেছি। রাজশাহী শহরের কিছুই চিনি না।

ভার্সিটির পাশেই এক বড় ভাইকে বলে মেস নিলাম। সেদিন প্রথম ভার্সিটিতে গিয়েছিলাম। গিয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগ চিনছিলাম না।

তাই উনাকে বলেছিলাম….
:- আপু একটু শুনবেন?
:- কি হয়েছে ভাইয়া।
:- এইখানে ব্যবস্থাপনা বিভাগ কোথায় যানেন কি?
:- ভাইয়া নিজ দ্বায়িত্বে খুজে নেন।
:- আসলে আমি নতুন তো তাই পাচ্ছি না।
:- চোখের কি মাথা খাইছেন হ্যাঁ। একটা করে বিভাগে যান আর খুজে নেন।
:- আপনাকে হেল্প করতে বললাম না চিনলে বলবেন চিনি না। এত প্যাচানোর কি দরকার।
:- তাই জিজ্ঞাস করতে আসছিস কেন। চাক্কু মেরে পেট ফুটো করে দিব?
:- আপু ধন্যবাদ আবার দেখা হবে।
:- যা ব্যাটা তোর সাথে দেখা হবার জন্য আমার বয়ে গেছে।
:- চলি
.
আমি চলে আসলাম। রিক্সা ভাড়া করে শেষ অবদি আমি নিজ বিভাগে পৌছালাম। আমি ক্লাস করে সেদিনের মত মেসে ফিরলাম।

পরের দিন আবার ভার্সিটিতে গেলাম। কিছুদুর যেতেই দেখি ঐ মেয়েটি আমি মুখে ঢিকে থাকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলাম তখন মেয়েটি বলল..
:- এইযে আপনাকে দুরে থেকে দেখেছি।
:- ও আমার ক্লাস আছে আমি যাই।
:- ঐ এই দিকে তাকা।
:- জ্বি আপা।
:- আসলে আমিও ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্রী। সেই দিন ঐভাবে তোমার সাথে কথা বলার ঠিক হয় নি।
:- ও এই কথা। আচ্ছা ঠিকাছে।
:- না মানে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
:- আচ্ছা যা ক্ষমা করে দিয়েছি।
:- চলুন এক সাথে গল্প করতে করতে যাই।
:- না মানে আমার একটু কাজ আছে আপনি যান।
:- একটু আগে না বললেন ক্লাস আছে।
:- না মানে।
:- যাবেন কিনা বলেন?
:- হ্যাঁ যাব চলুন।
.
নিরব ভাবে হাটছিলাম হঠাৎ সে বলল
:- আমি মারিয়া মেহজাবিন নিতু। আপনি?
:- মশিউর রহমান মিরু।
:- কোথায় থাকেন?
:- পাশেই একটা মেসে।
:- মানে আপনি এখান কার স্থানিয় না?
:- না। আমি গ্রাম থেকে এসেছি।
:- ও আচ্ছা।
.
এইভাবেই আমাদের পরিচয় হয়। তার পরে থেকে মাঝে মাঝে আমাদের কথা হত ।
.
একদিন ভার্সিটিতে বসে আছি। কয়েকটি ছেলে আসল এসে বলল..
:- এই দিকে আয়?
:- জ্বি ভাইয়া কিন্তু কেনো যাব।
:- তোরে বলতেছি আয় আসবি।
:- আমি কেন যাব।
:- কথা আছে। না আসলে কি ভাবে আসাতে হয় আমাদের জানা আছে।
.
তারা আমার কলার চেপে আমাকে একটু আরালে নিয়ে গেল। তারপরে বলল..
:- কিরে নিতুর সাথে তোর কি সম্পর্ক্য?
:- আমরা তো যাস্ট বন্ধু।
:- খালি বন্ধু না অন্য কিছু?
:- না ভাইয়া শুধু বন্ধু।
:- ওরে তোর ভাল লাগে?
:- সুন্দরী মেয়ে সবারই তো ভাল লাগে।
:- থাম তোর ভাল লাগাচ্ছি।
.

এই কথা বলার পরেই আমাকে তারা মারতে শুরু করল। মারার শব্দে কয়েক জন এগিয়ে এসে তাদের থেকে আমাকে বাঁচাল। হাস্পাতালে নিয়ে যায়।
.
১ সাপ্তাহ পরে আমি ভার্সিটিতে আসি। নিতুকে দেখার সাথে সাথে অন্যদিকে চলে যাই কিন্তু নিতুই আমাকে দেখে এগিয়ে আসে আর বলল..
:- কই যাচ্ছো। এই দিকে তাকাও?
:- কোথাও না ঐদিকে কাজ আছে।
:- নাকি অন্যকিছু।
.
বলেই আমাকে থাপ্পর মেরে দেয়। আমি পুরাই হকচকিয়ে যাই।
:- ভেবেছিলাম তুমি ভাল কিন্তু দেখছি।
:- মারলে কেনো? সে বললে আমি মারটাকে মেনে নিব কিন্তু না বললে আমিও বাধ্য হব।
:- কেন ইমরানদের কি বলেছ আমার আর তোমার নাকি সম্পর্ক্য চলছে?
:- ইমরান কে?
:- (ফোনে পিক দেখিয়ে) এইটাই ইমরান?
:- ও আচ্ছা।
.
আমিও একটা থাপ্পর মারলাম তার গালে। সেও আমার থেকে বেশি অবাক হয়ে গেল। আমাকে বলল..
:- আমাকে মারলা কেন
:- আমি বলেছিলাম সে আর আমার মধ্য বন্ধুত্বের সম্পর্ক্য তার শুনে আমাকে বেদাম পিটিতেছে। আজ আমি ৮ দিন পরে ভার্সিটিতে আসছি।

না যেনে আমাকে থাপ্পর মারার জন্য আমিও মারলাম।
:- কিন্তু ওরা যে আমাকে বলল?
:- তার সত্যতা যাচাই করে আমাকে মারা ঊচিৎ ছিল। যাই হোক ভাল থেকো?
:- মিরু সরি আমি বুঝতে পারি নাই।
:- ইটস ওকে। ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে।
:- আচ্ছা চলো যাই।
.
এই ভাবেই চলছিল আমাদের বন্ধুত্বের গাড়ি। কখন যেনো বন্ধু থেকে তাকে প্রিয়তমা ভেবে নিয়েছিলাম নিজেও যানি না।

কিন্তু বলি নাই কারন মধ্যবিত্তদের অধিক আশা করতে নাই।
.
একদিন টিউশনি করাচ্ছিলাম ঐসময় নিতু ফোন দিল।
:- কই আছো তুমি?
:- টিউশনিতে আছি। কেনো?
:- আজ বিকালে পার্কে দেখা করতে পারবা।
:- কয়টার দিকে?
:- ৫ টার দিকে।
:- আচ্ছা।
.
বিকালে পার্কে গেলাম দেখি নিতু বসে আছে। হলুদ শাড়িতে তাকে দারুন লাগছিল। আমি পাশে গিয়ে দাড়াতেই বলল
:- আসতে এতক্ষন লাগে ?
:- বাজে ৪ টা ৫৩ এখনো ৫ টা বাজতে অনেক দেরি আছে।
:- আচ্ছা যাই হোক।
:- কেন ডেকেছো সেটা বল?
:- আসলে মিরু আমি তোমাকে ভালবাসি?
:- আসলে ভালবাসা এতটা সহজ না। আমার এখন নেই কোন চাকরী কিংবা আমার বাবার অঢোল সম্পত্তি নাই।

আমি গেয়ো মিডিক্লাস। শহুরে হলে এক কথা ছিল কিন্তু আমি গ্রামের।
:- শুনো মিরু আমি সব যেনেই তোমাকে ভালবেসেছি আর আমার দরকার নাই টাকার কিংবা সম্পত্তির যাস্ট তুমি হলেই চলবে।
:- একটা কথা আছে যানো। যখন অভাব দরজা দিয়া ঢুকে ভালবাসা তখন জানালা দিয়া পালায়। আর বাস্তবতা বরই কঠিন।
:- আমি বাস্তবতা বুঝি না তোমাকে ভালবাসি এটাই এনাফ।
:- কিন্তু আমি বাস্তবতা বুঝি আমরা বস্তবতার সাথে পাল্লা দিয়ে বেরে উঠি আজ ভাল ছাত্র না হলে হয়তবা গ্রামের কোন কলেজ ডিগ্রি করতে হইত,

কিংবা বাবার ব্যবসায় হাল ধরতে হইত। আমি তোমাকে ভালবাসতে পারব না।
:- তুমি কখনই সিরিয়াস হবা না মিরু।
:- হাহাহাহা জীবনে সিরিয়াস হয়েছি অনেকটাই।
:- ভাল থেকো।
:- তুমিও ভাল থেকো।
.
তার পরে কি ভাবে যেনো আমাদের প্রেমটা হয়ে যায় আমি নিজেও অনুভাব করতে পারি নাই।

শেয়ারিং কেয়ারিং কথা বলা কিংবা সারা দিন ঘুরে বেড়ানো এই ভাবে আমাদের দিন গুলা অতিবাহীত হয়ে যাচ্ছিল।

সেবার আমি ফাইনাল ইয়ার এ ছিলাম। জবের জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছি। রিটান দিচ্ছি কিন্তু কাজ হচ্ছে না।

অন্যদিকে নিতুর বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে তার বাবা আমাদের বিষয়ে যেনে গেছে সেটা আমি যানি যাস্ট কিন্তু নিতু যানে না।
.
সেদিন বিকালে আমি মেসে বসে ছিলাম। তার বাবা আমার মেসে আসল আর বলল
:- তোমার বাবা কি করে?
:- ব্যবসায়ী।
:- যাই হোক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আর আমার মেয়ে উচ্চবিত্ত তাও শহরের। আর তুমি কিনা আমার মেয়ের সাথে প্রেম করছো ।
:- আমি করছিনা আপনার মেয়ের চাপে পরেই করেছি।
:- যাই হোক নিজের থেকে আমার মেয়ের লাইফ থেকে যাবে কিনা আমিই সরাতে বাধ্য হব।
:- আংকেল এক কাজ করেন বিয়ে দিয়ে দিন নিতুর সেও ভাল থাকবে আমিও।
:- ভাগরা বাধাবে না তো তুমি।
:- আংকেল বাগরা বাধালে আমি এই বুদ্ধি দিতাম না।
:- ঠিক আছে মনে রেখো।
.
আমি যানতাম আমার মাথার ওপরে ভবিষৎএ একটা পরিবার ভরসা করে আছে আমি তাদের ভরসা ভাঙ্গতে পারব না।

আবার নিতুও খুশি কিংবা সুখী হবে না।
.
একদিন নিতু পার্কে ডেকে বলল
:- কিছু ভাবলে?
:- ভেবেছি।
:- কি?
:- তুমি বরং বিয়ে করে ফেল। তুমি আমার সাথে বিয়ে হলে সুখী হবা না। সাথে তোমার ফ্যামেলিও মেনে নিবে না।

আর পালিয়ে বিয়ে করাও সম্ভাব না। তাই বলছি।
:- তোমার কথা কি শেষ?
:- হু
:- জীবনেও সিরিয়াস হলে না। তোমাকে ভালবাসে দারুন ভুল করেছিলাম।
:- সেটা আগেও বলেছিলাম।
:- ভাল থেকো।
:- বিয়ের দাওয়াত দিও অনেক দিন বিয়ে খাই না।
:- সিরিয়াস হলে না। ভাল থেকো?
:- আচ্ছা। ভাল থেকো?
.
এটাই ছিল আমাদের শেষ কথা। আজ ভাল আছে সে আমিও ভাল আছি নিজের পরিবার আর নিজেকে নিয়ে।

মধ্যবিত্তদের অনেক কিছু ছার দিতে হয়। আমিও দিলাম।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত