বিজয়- দিদি আমার পাচশ টাকা লাগবে,,,
–সে কি রে ভাই এইতো কালকে তিন’শ টাকা দিলাম আজ কে আবার কেন?
বিজয়- এতো প্রশ্ন কেন করিস টাকা দিবিনা সোজা ভাবে বললেই হয় (রেগে)
— রাগ করিস কেন ভাই? তুই তো জানিস আমার অবস্থা কেমন কোনো রকম টিউশন করে সংসার টা চালাচ্ছি,,
এতো টাকা কোথায় পাব আমি,,
বিজয়- তোকে টাকা দিতে হবে না আমি চললাম,,(রেগে)
–ভাই শোন, খাবার টা তো খেয়ে যা
বিজয়- খাবো না তোর খাবার
–তুই তো জানিস ভাই তোকে না খাইয়ে আমি কখনো খাই না, আমার খুব খিদে পেয়েছে রে প্লিজ খেয়েনে,
বিজয়- আমি এখনো বাচ্চা নই যে তুই খাইয়ে দিবি,, আমি বাইরে খেয়ে নিব কোথাও তুই গান্ডেপিন্ডে গিল সব ( রেগে চলে গেল)
– তুই কবে বুঝবি ভাই তোর দিদি কত কষ্ট করে এই সংসার টা টিকিয়ে রেখেছে,,,কেন বুঝিস না তুই,,,(টপটপ করে চোখের জল গাল বেয়ে পড়ে যাচ্ছে)
–এ হচ্ছে মমতা বিজয়ের দিদি, ছোটো বেলায় বিজয় কে জন্ম দিতে গিয়ে মা মারা যায় আর কিছুদিন পর একটা
দূর্ঘটনায় বাবা র দুটো পা,নষ্ট হয়ে যায়,, তখন মমতার বয়স ছিল ১০ বছর আর বিজয়ের ২,,, অনেক কষ্ট করে ছোটো ভাই কে বড় করেছে মায়ের মত যত্ন করে,আর সেই ভাই আজ তার দিদিকে প্রতিনিয়ত কষ্ট দিয়ে যাচ্ছে,
এসব ভাবলে মমতার চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করে কিন্তু পারে না,, যদি বাবা শুনে তাহলে কষ্ট পাবে এই ভয়ে,,,,তাই আজকেও নিরবে কেদে যাচ্ছে,,, এমন সময়,, মা মমতা কোথায় তুই
মমতা- এই তো বাবা আসছি,( চোখের জল মুছে ছুটে গেল বাবার কাছে)
মততা- কি হয়েছে বাবা এমন করছ কেন?
বাবা- বুকে খুব ব্যাথা করছে মা, খুব কষ্ট কচ্ছে মনে হয় আর বাচবনা,,যন্ত্রনায় ছটফট করছে,
মমতা- বাবা তুমি ওষুধ খেয়েছ আজকে,
বাবা- ওষুধ শেষ হয়ে গেছে,,,
খুব কষ্ট হচ্ছে মা কিছু একটা কর,, কাতরাতে কাতরাতে মমতা দিশাহীন ভাবে ছুটে যাচ্ছে,, কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা,,,,কয়েক জায়গায় ধার খুজেও পেলনা,,, শেষে মায়ের শেষ স্মৃতি একটা চেন ছিল সেটা বিক্রি করে বাবার ওষুধ নিয়ে আসল,,, এভাবেই চলে যাচ্ছে মমতার দিনকাল কিছুদিন পর হঠাৎ বিজয় এসে বলল তার পরিক্ষার জন্য দশ হাজার টাকা লাগবে,,, আর কিছু না ভেবেই মমতা বলল পরে নিয়ে যাস, বিকেলে রক্ত বিক্রি করে মমতা ভাই কে দশ হাজার টাকা দিয়ে দিল,,,ভাইকে আর যাই হোক কষ্টের মাঝে রাখবেনা,,ভাবনা করে ভাই পড়া শেষ করে চাকরি নিলে সংসার টা ভালো ভাবে চলবে,,, কিন্তু ভাই সেই টাকা নিয়ে গার্ল ফ্রেন্ড এর শপিং করায় দিনে দিনে বিজয় অনেক দুরে সরে যাচ্ছে তার দিদির থেকে আর বাড়ছে মমতার কষ্ট,,, সামান্য কথাতেই বিজয় অনেক কথা শোনায় দিদিকে অনেক বকাঝকা করে আর বলে তাকে নিয়ে না ভাবতে,
মমতা- ভাই তুই এতো নিষ্ঠুর কেন হচ্ছিস,, আমিতো খারাপ চাইনা তোর,,আমি চাই তুই সব সময় ভালো থাক,,তাহলে এতো অভিযোগ কেন তোর??
বিজয়- হুহ তুই,,তুই আমার ভালো চাস? এটা ও আবার আমাকে মানতে হবে? ভালো চাইলে আমার সব চাহিদা পুরণ করতি এভাবে সব কিছুতে না না করতি না,
মমতা- সৎ পথে চলতে গেলে অনেক কষ্ট করতে হয় ভাই
বিজয়- তোর এতো সৎ পথে যদি কষ্ট হয় তাহলে অসৎ পথে কেন যাচ্ছিস না, তুই না গেলে আমাকে যেতে দে,,
মততা- ঠাসসসসসস এই আমি তোকে শিক্ষা দিয়েছি? আমার ভালোবাসার এই দাম তোর কাছে,,যা বেড়িয়ে যা আমার বাড়ি থেকে,,(রেগে)
বিজয়- হ্যা চলে যাচ্ছি তবে এটা মনে রাখিস তুই না মরা পর্যন্ত আমি এই বাড়িতে আর আসবনা
বাবা- এটা তুই কি করলি নিজের ভাই কে বের করে দিলি কেমন দিদি তুই ছি ছি তুই দিদি হওয়ার যোগ্যতা রাখিস না ( কিছু না বুঝে শুধু শেষের কথা শুনে মমতা কে দোষারোপ করছে) বিজয়ের আজকে বাইরে মন টিকছেনা কেন জানি দিদিকে খুব মনে পড়ছে,,,,ছুটে গেল বাসায়
বিজয়- দিদি কোথায় তুই?? দিদি?বাবা দিদি কোথায়?
বাবা- সন্ধ্য থেকে আমার কাছে আসেনি দেখ ঘরে আছে হয়ত
বিজয়- ছুটে চলে গেল দিদির ঘরে,,দিদিইইইইইইই হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিল,
বাবা- কি হয়েছে কাদছিস কেন,
বিজয়- কথা আটকে যাচ্ছে কোনো রকম বলল বাবা দিদি আর নেই,
ছয়মাস পর,,,, এই ছয় মাস বিজয় কোমায় ছিল এখনো মমতার মৃত্যুটা মেনে নিতে পারছেনা, সব জায়গাতেই দিদিকে খুজে বেড়ায়,,,আর বারবার মনে মনে সেই কথা,,, তুই কবে আমাকে বুঝবি ভাই কবে ভালোবাসবি,,
আজকে মমতার আশা পুরন হয়েছে বিজয় খুব ভালোবাসে তার দিদি কে কিন্তু আফসোস আজকে দিদি কাছে নেই,,, ছবি টা হাতে নিয়ে,, দিদি এই দিদি কথা বল না দেখ আমি তোকে খুব ভালোবাসি রে প্লিজ কথা বল (চিৎকার করে কেদে যাচ্ছে) দিদি কথা বল না দেখনা আমিও তোর জন্য না খেয়ে বসে আছি,, আমার খুব খিদে পেয়েছে রে,, দিদিইইইইইইই ( অঝোরে বয়ে যাচ্ছে চোখের জল),,,
সমাপ্ত