কাচা সকাল

কাচা সকাল

-আচ্ছা আমি কি আপনার বউ হয়ে গেছি?

বাসর ঘরে বসে থাকা মেয়েটার কথা শুনে বেশ অবাক হলাম। এ আবার কেমন প্রশ্ন? বিয়ে হলো আর বউ হবে না? তবুও ঠোটের কোণে একটু হাসি এনে বললাম,

-হ্যাঁ বউ তো হয়ে গেছো। আমার উত্তর পেয়েই মেয়েটা খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে হতাশা ভরা বদন নিয়ে বললো,
-ওমা কখন বউ হলাম? আমি তো জানতেই পারলাম না। তার কথা শুনে আবারও অবাক হবার পালা। বউ কিভাবে হলো সেটাও জানে না!

-হা হা যখন আমাদের বিয়ে হলো ঠিক তখনি তুমি আমার বউ হয়ে গেছো।
-ওমা তাই বুঝি? আচ্ছা বিয়ে করলেই বউ হয়ে যায়? তাহলে তো আমার ফুফাও ফুফুর বউ তাই না?  কথা শুনে হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝে উঠতে পারলাম না। হাসিটা চেপে রেখে বললাম,,
-না তো। ছেলেরা বউ হয় না ছেলেরা বর হয়।
-কার বর হয়?
-যে মেয়ের সাথে বিয়ে হয় তার বর হয়।
-ও আচ্ছা। তাইলে আজ থেকে আমি আপনার বউ তাই না?
-হ্যাঁ তাই।
-আপনি কেমন বর হ্যাঁ? এখনও আমার নামটাই জিজ্ঞেস করলেন না।
-কিন্তু আমি তো তোমার নাম জানি।
-সে জানলে জানেন, আবার প্রশ্ন করেন। কি হলো করেন প্রশ্ন।

বুঝলাম মেয়েটা বয়সে বড় হলেও মানসিক দিক থেকে এখনও বাচ্চার স্বভাবটা যায়নি। কি আর করার বাধ্য হয়ে আবার প্রশ্ন করলাম,

-আচ্ছা তোমার নাম কী? প্রশ্ন করতেই ফিক করে একটা হাসি দিয়ে বললো,,
-রিয়া। খুব সুন্দর নাম তাই না?

নিজের নাম বলেই একটা প্রশ্ন জুড়ে দিলো। রিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম গালের টোলটা বেশ গভীর আকার ধারণ করেছে একটু হাসার কারণে।

-হ্যাঁ খুব সুন্দর নাম। আমার নাম জিজ্ঞেস করলে না?
-কেন জিজ্ঞেস করবো কেন? আমি তো আপনার নাম জানি। দেখেন অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করলে লোকে পাগল ভাববে। যদিও আমাকে কেউ পাগল বলবে না বললে পাগলি বলবে। কারণ আমি তো মেয়ে আর মেয়েরা তো পাগলিই হয় তাই না?
মুখে কোনো কিছু না বলে মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলাম। আমার উত্তর পেয়েই ঘরের চারিদিকে একটা চক্কর দিয়ে আবার আমার সামনে এসে দাড়ালো। রিয়ার ভাব দেখে বুঝলাম কিছু একটা বলবে কিন্তু সাহস করে উঠতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে আমিই প্রশ্ন করলাম।

-রিয়া কিছু বলবে? আমার প্রশ্ন শুনেই তাড়াতাড়ি করে কয়েকবার মাথা নাড়লো। বুঝলাম কিছু বলতে চায়।
-কি বলবে বলো। প্রশ্ন করলাম।
-আপনি এর আগে কাউকে বউ করেছেন? প্রশ্ন শুনে এবার আর হাসি আটকাতে পারলাম না। হো হো করে হেসে বললাম,
-নাহ্।
-বাহ্ কত মিল। আমিও এর আগে কাউকে বর করিনি।
-কেন করোনি কেন? মজার ছলে প্রশ্ন করলাম।
-আব্বু আম্মু বউ বানায়নি তাই। শোনেন না, আমার না খুব ঘুম পেয়েছে। আমি ঘুমালাম।  কথাটা বলেই লম্বা একটা হাই তুললো।
-আচ্ছা ঠিক আছে তুমি তাহলে ঘুমাও।

কথাটা শুনার আগেই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। একটু পর বুঝতে পারলাম রিয়া ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমন্ত মেয়েদের নাকি বেশি মায়াবতী লাগে আজকে তার প্রমান পেলাম। কি নিষ্পাপ তার চাহনি। দেখেই প্রেমে পড়ে যেতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে একটু ছুয়ে দিতে।

আমি সজীব মাহমুদ নীল। সবাই নীল বলেই ডাকে। নামটা আমার বাবার রাখা। নীল নামটা নাকি বাবার খুব পছন্দের তাই রেখে দিয়েছে। সবে একটা চাকুরিতে জয়েন করেছি। কিন্তু এরি মধ্যেই মায়ের মাথায় ছেলের বউ দেখার ভূত চেপে বসলো। প্রেম ভালোবাসার ধারে কাছে যাওয়ার সময় হয়নি। কারণ লেখাপড়াতে এতটাই মগ্ন ছিলাম যে লেখাপড়া ছাড়াও যে কোনো জগৎ অাছে সেটা ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই মায়ের মাথায় এমন ভুত যে কিভাবে এসে বাসা বাঁধলো সেটা বুঝতে পারলাম না। কয়েকদিন আগে মা এসে জানিয়ে দিয়েছিলো, মেয়ে নাকি সবার খুব পছন্দ হয়েছে। তার মানে আমি ছাড়া সকলেই মেয়ে দেখার কাজটা সম্পূর্ণ করে ফেলেছে। কি আর করার? আর কোনো কথা বললাম না।

বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পরও মেয়ের সামনে আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো না। তবে একটু জোরাজুরি করাতে বিয়ের ঠিক দুইদিন আগে মানে আজ থেকে তিন দিন আগে একনজরের জন্য মেয়ের মুখটা দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো সেটাও সরাসরি নয় মেয়ের বাসা থেকে একটা ছবি পাঠানো হয়েছিলো সেইখানটাই চোখের দেখা দেখে নিয়েছিলাম।যদিও ছবিতে খুব একটা সময় নিয়ে দেখতে পারিনি তার আগেই মা বলেছিলো, এখনি এত দেখতে হবে না। বিয়ের পর দেখিস।

কিন্তু এই অল্প সময়ের দেখাতেই বেশ ভালো লেগে গেল। বাবা মা যে আমার পছন্দের দিকে নজর রেখেছে সেটা বলার বাকি থাকে না। যাই হোক অবশেষে বিয়েটা হলো আর আজকে বাসর রাতে দেখলাম মেয়ের কাণ্ডকারখানা ।
আরও একবার ঘুমন্ত রিয়ার দিকে তাকালাম। না বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যাবে না, নেশা লেগে যাচ্ছে। চোখটা সরিয়ে নিতেই কানে একটা কথা ভেসে আসলো।

-ও মা আমি না আপনার বউ? তাইলে তাকাতে সমস্যা কী? কথাটা শুনেই রিয়া দিকে তাকালাম। চোখে ঘুম ঘুম ভাব।
-তুমি ঘুমাওনি? প্রশ্ন করলাম।
-হুম ঘুমাইছিলাম না। কিন্তু আমার না খুব পানি খেতে ইচ্ছে করছে।

কথাটা শুনেই পাশের টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা রিয়ার হাতে দিতেই এক চুমুকেই পুরো পানির গ্লাস ফাকা করে দিলো। বুঝলাম বেশ পিপাসা পেয়েছিলো।

-এবার ঘুমাও। রিয়ার পানি খাওয়া শেষ হতেই বললাম।
– আপনি ঘুমাবেন না?
– হুম ঘুমাবো। একটু পরই।
– আচ্ছা, আর শোনেন সকালে আমাকে ডাক দিবেন না। আমি অনেক ঘুমাবো।
-আচ্ছা দিবো না। তুমি ঘুমাও।

হা হা হা “সকালে যেনো আমাকে ডাক দিবেন না আমি অনেক ঘুমাবো।” আল্লাদি কণ্ঠের কথাটা শুনে বেশ হাসি পেল। রোমান্টিকতা আমার মাঝে আসে না। সারাটা জীবন থ্রিলার আর সাইকো গল্প উপন্যাস পড়েই অভ্যাস। কিন্তু কেনো জানি আজ রিয়ার মত বাচ্চা বাচ্চা স্বভাবের কাছে রোমান্টিক হতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে ওর পাশে গিয়ে ওরে বুকে টেনে নিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকি। ওর গরম নিঃশ্বাস পড়বে আমার বুকে এতেই যেনো শান্তি আর তৃপ্তি। আবারও কখনও যদি রিয়ার ঘুম ভেঙে যায় আমাকে দেখে চমকে যাবে, ওই এই চমকে যাওয়া চাহনিটা দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। দেখে নিবো কোনো একদিন সময় করে।

ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি আসতে শুরু করেছে। তার সাথে সাথে পাখিরাও শুরু করেছে কলরব। রিয়াকে একবার ডাক দিবো নাকি ? এই ভোরের সকালটা দুইজনে উপভোগ করলে কিন্তু মন্দ হতো না। কিন্তু না রিয়া বলে দিয়েছে, পাগলিটা অনেক ঘুমাবে।। থাক না কিছু অপূর্ণতা একদিন ঠিকই সুদে আসলে আদায় করে নিবো আর সেইদিন আমিই হবো এই তামাম জামানার সবচেয়ে সুখি মানুষদের একজন।  নামাজটা ঘরেই পড়ে নিলাম। নামাজ পড়ার পর কখন যে চোখটা বুজে এসেছিলো টেরই পাইনি। ঘুম ভাঙলো রিয়ার ডাকে।

-ওমা মানুষ এত ঘুমায়? দেখেন বেশি ঘুমালে কিন্তু গায়ে পানি ঢেলে দিবো এই বলে দিলাম।

চোখ খুলতেই দেখি রিয়া আমার দিকে অনেকটা ঝুকে দাড়িয়ে আছে। আর তখনি হাতটা ধরে টান দিলাম নিজের দিকে। হাতটা ধরে টান দিতেই নিজের শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে না পেরে আমার গায়ের উপর ঢলে পড়লো। জানালা দিয়ে সকালের মিষ্টি রোদ এসে উঁকি দিয়ে ঘরের ভেতর। আর আমি উঁকি দিয়ে রিয়ার চোখের মাঝে। চোখে নেশা, বড্ড বেশিই নেশা। দিনটা বেশ ভালোই যাবে প্রতি সকালে যদি এই নেশা পান করতে পারি। কাচা সকালে চোখের নেশা। হুমমম নেশাটা যে বেশ সু্স্বাদু হবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত