টুং করে মেসেজ ঢুকলো । ফোনটা হাতে তুলে নেয় ঝিনুক। স্ক্রিন জুড়ে প্রভাতী শুভেচ্ছা। সঙ্গে লেখা ঘুম ভেঙেই সূয্যি মামার তীব্র দাপট। তোমার আঁচল দিয়ে ঢেকে শান্ত করো তাকে।
সারাদিনে কত যে এইরকম মেসেজ আসে তার ইয়াত্তা নেই। পনের থেকে পঁয়ষট্টি সবাই আছে এই তালিকায়। কেউ বন্ধুত্ব করতে চায় , কেউ চ্যাট করতে চায়, আবার কেউ কেউ দায়িত্ব নিয়ে সুপ্রভাত আর শুভরাত্রি জানায় ..ভাবখানা এমন যেন উনি না বললে ঝিনুক বুঝতেই পারতো না এখন দিন কি রাত। অন্তর্জালে বিনোদন খুঁজতে দিয়ে জর্জরিত জীবন।
সৌগত এখনো বাথরুমে । নটার মধ্যে তৈরি হয়ে চেম্বারে বেরিয়ে যাবে। নামকরা জেনারেল ফিজিসিয়ান সৌগত বসু। সারাদিন চেম্বার , নার্সিং হোম, পেশেন্ট, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নিয়ে দিন কাটে। বাড়ি ফিরে স্নান সেরে বরফ কুচি ফেলে একটা হুইস্কি নিয়ে টিভির সামনে বসে। টিভিতে তখন একটা টক শো হয় যার চেঁচামেচিতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে ঝিনুকের। ঘন্টা খানেক পর ডিনার তারপর ঘুম। সকাল বেলা উঠে একটা সৌজন্য বিনিময় তারপর কাজের কোনো কথা থাকলে সেটা তারপর রেডি হয়ে বেরিয়ে যায়।
এত কাজ পাগল বেরসিক লোকের সাথে গোটা জীবনটা কি করে কাটাবে কে জানে। বাড়িতে তারা দুটি প্রাণী ছাড়া সন্ধ্যাদি রান্না ছাড়াও বাড়ির আর সব কাজ করে । আর একজন ঠিকে লোক আছে বাসন মাজে ঘর মোছে, কাপড় কাচে । দু মাস হলো বিয়ে হয়েছে ওর। কিন্তু সারাদিন একা থাকতে থাকতে একদম হাঁপিয়ে গেছে ও। গত সপ্তাহে একটা নামী স্কুলে ইন্টারভিউ দিয়েছিল , মনে হচ্ছে হয়ে যাবে। স্কুলে চাকরি আগেও করতো, কিন্তু আগের স্কুলটা এই বাড়ির থেকে বেশ দূর হয়, যাতায়াতেই অনেকটা সময় চলে যাবে তাই ছাড়তে হয় চাকরিটা । নতুন বউ হিসেবে দু মাস তো কাটলো আবার কি, এবার নতুন চাকরিতে ঢুকতেই হবে ঝিনুককে।
এটা একটা অনিচ্ছার বিয়ে। ওর মতামতের তোয়াক্কা না করে একরকম জোর করে এই বিয়েটা ওর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাবা বেঁচে থাকলে এটা কিছুতেই হতো না। ড্যাডিস প্রিন্সেস বলতে যা বোঝায় ঝিনুক ছিল তাই। একটাই মেয়ে সে। বাবার কাছে সেই ছেলে সেই মেয়ে। লেখাপড়ার সাথে সাথে খেলাধুলাতেও বাবা সমান উৎসাহ দিতো। মা, ঠাম্মির রাগ করতো। বলতো মেয়ে সন্তান হাত পা ভেঙে পড়ে থাকলে আর এজীবনে বিয়ে হবে না। বাবা রেগে বলতো , রাখতো তো বিয়ে, মেয়েদের জন্ম কি শুধু পরের বাড়ি যাবার জন্য হয়েছে ? পড়াশোনার সাথে নাচ, গান , সাঁতার সব চলুক।
তারপর ওর যেটা নিয়ে এগোতে ইচ্ছে হবে সেটাই করবে। এম এ ফাইনাল পরীক্ষার সময় বাবা মারা যায়। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক, কিছু করা যায় নি। একদম ভেঙে পড়েছিল ঝিনুক । কারুর সাথে কথা বলতেও ইচ্ছে করতো না। এমনই এক সময় ফেসবুকে এক উদীয়মান কবির কবিতায় জীবনটাকে নতুন করে ভালো লাগতে শুরু করে । জীবনমুখী গানের মতোই জীবনমুখী কবিতা আর কি। কবিতা গুলো পড়ে মুগ্ধ হয়ে যেত ঝিনুক কথা বলতে ভীষণ ইচ্ছে হতো। জানতে ইচ্ছে হতো কোন চোখে জীবনটাকে দেখে লোকটা । একদিন সাহস করে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েই দিলো। প্রচুর ফ্যান ফলোয়িং। ব্যস্ত কবি, ওর রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করবে কিনা এই নিয়ে দ্বিধা ছিল। দুদিন পর আবেদন মঞ্জুর হলো।
সারাদিন অধীর আগ্রহে চলতো অপেক্ষা কখন নতুন কবিতা পোস্ট হবে। একসময় হতো। খুব বাছা বাছা শব্দচয়নে মন্তব্য করতে ঝিনুক। প্রত্যুত্তর আসতো। মনটা খুশিতে ভরে যেত। একদিন প্রোফাইল পিকচার বদলালো ঝিনুক । অকারণ কিন্তু আশায় বুক ঢিপ ঢিপ করছিল,সে কি খেয়াল করবে ? রাতের দিকে মেসেঞ্জারে বার্তা এলো। তোমাদের বারান্দাটা ভারি সুন্দর ,একাকী দোলনাটা প্রতিদিনের হাওয়া বদলের সাক্ষী থাকে । তোমার কোলে উলের গোলার মতো বেড়াল ছানা গুলোও ভারি মিষ্টি। সব মিলিয়ে দারুন ছবি। মেসেজটা পরে রাগে গা জ্বলে গেল। ওকে দেখাবে বলেই তো এতো কান্ড করা আর ও, বারান্দা, দোলনা, বেড়াল সব কিছুই আদ্যোপান্ত প্রশংসা করলেও ঝিনুকের বিষয়ে একটা শব্দও খরচ করলো না। বিরক্তি চাপতে না পেরে লিখেই ফেললো সব কিছু ভালো আর আমি ? উত্তর এলো…
তুমি কতটা সুন্দর সে উত্তর আমার কবিতায় পাবে। দুম করে অফলাইন হয়ে যায় ঝিনুক । আয়নার সামনে দাঁড়ায় এসে। নিজেকে ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়। এভাবে দিন মাস গড়াতে থাকলো। এটাকে ঠিক প্রেম বলা যায় কিনা জানে না ঝিনুক। কবিতা নিয়েই কথা হতো বেশি। নাঃ শেষ পর্যন্তও প্রেম নিবেদন করেনি সে। প্রতিদিন কথা বলতে চাওয়াটাকে যদি ভালোবাসা বলা যায় তবে এটা হয়তো ভালোবাসাই ছিল।
দীর্ঘ্যতর হতে থাকে চ্যাট। কিন্তু ভাগ্যের লিখন অন্য কিছু । জুঠুমনির কোলিগের বিলেত ফেরত ডাক্তার ছেলের জন্য সম্বন্ধ আসে ঝিনুকের। হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো হাব ভাব গোটা বাড়িতে। পাত্রপক্ষ যেদিন দেখতে এলো সেদিন কি করবে বুঝে উঠতে পারছিল না ঝিনুক। সব চেয়ে কাছের বন্ধু অলিকে ফোন করেছিল। সব শুনে অলি বলেছিল
“ ছ মাস ধরে কথা বলছিস অথচ এখনো তোকে ভালোবসে কিনা তাই জানিস না ! আর তার জন্যই এমন সোনায় মোড়া ভবিষ্যৎ জলাঞ্জলি দিতে চাইছিস ? তুই কি পাগল ? কাকু মারা যাবার পর কাকিমার একটাই চিন্তা তোর বিয়ে। জমানো টাকা শেষ হবার আগে তোকে প্রাত্রস্থ করতে চান কাকিমা, এটা কি ভুল ?”
“কিন্তু তুই বুঝছিস না অলি, হয়তো বলে নি ভালোবাসি তাতে কি। ওর প্রতিটা কথা থেকে বোঝা যায় ও আমায় কতটা চায় ।”
“তাই নাকি ! আচ্ছা দাঁড়া দেখি কেমন ভালোবাসে তোকে.. মেসেঞ্জার খুলে কবিকে মেসেজ পাঠালো অলি ওর লেখার প্রেমে পড়ে গেছে জানিয়ে । তৎক্ষনাত এক গদগদ রিপ্লাই এলো। অলির মতো সুন্দরী তার কবিতা পছন্দ হয়েছে জেনে বড়ই আপ্লুত সে। একলা দুপুর বা নিঝুম রাতের অনেক কবিতা আছে তার, যা ফেসবুকে নেই। অলি যদি শুনতে চায় তো সে অবশই শোনাবে ।….ব্লক করে দিলো অলি।
তারপর বললো
“দেখলি তো, এরা এরকমই। চ্যাটের প্রেমিক। তোর একার নয়, বারোয়ারী। এর জন্য তুই এতখানি সিরিয়াস ডিসিশন নিচ্ছিলি দেখে আমি সত্যিই অবাক হয়ে যাচ্ছি। আর কথা না, যা চট করে তৈরি হয়ে নে। এক্ষুনি ওনারা আসবেন।”
বাক্যহারা হয়ে যায় ঝিনুক। নিজেকে বড্ড বোকা লাগছিলো । তবে এটাও ঠিক ছেলেটা কিন্তু কখনো ওকে প্রেম নিবেদন করে নি বা বিয়ের প্রস্তাবও দেয় নি। দায়বদ্ধতার প্রশ্ন এখানে আসে না। ভুলটা হয়তো শুধুই ওর একার।
বিয়েটা হয়ে গেল। মা যথাসাধ্য সাজিয়ে গুছিয়ে বিয়ের সব ব্যবস্থা করেছিল । শ্বশুর বাড়ি খুবই অবস্থাপন্ন। এলাহি ভাবে রিসেপসন হলো। ফুলশয্যার রাত। টেনশনে মরে যাবে মনে হচ্ছিল ঝিনুকের। একটা অজানা অচেনা লোকের কাছে নিজেকে সমর্পণ করা তারপক্ষে অসম্ভব । পারবে না… কিছুতেই পারবে না সে। জোরজুরি করলে আজ রাতেই বাড়ি ছাড়বে । এই সব ভেবে মনকে শক্ত করছিল ঝিনুক। সৌগত ঘরে এলো। একটু দাঁড়িয়ে থেকে বললো
“ চলুন চাদর টা পাল্টে নিই। এই ফুলের মধ্যে শোয়া ঠিক পোষাবে না কি বলেন ?”
কি আর বলবে ঝিনুক। শরীরের সব শক্তি সঞ্চয় করে বলে ফেললো..
“চাদর চেঞ্জ করে দিচ্ছি কিন্তু তারপর আর কিছু এক্সপেক্ট করবেন না। বিয়েটা খুব হঠাৎ করেই হলো। আমি বিয়ের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। কিন্তু পাত্র হিসেবে আপনি এতটাই লোভনীয় যে বাড়ির লোক আমার কোনো কথাই শুনলো না।”
গম্ভীর হয়ে যায় সৌগত। এমনিতেই অত্যন্ত ব্যক্তিত্ববান পুরুষ সে তায় ফুলশয্যার রাতে বউয়ের মুখে এহেন কথা শুনে থতমত খেয়ে যায়।
“তোমার কি কোনো লাভ অ্যাফেয়ার আছে ? “
একটু থমকে যায় ঝিনুক । তারপর বলে
“না, প্রেম কখনো করিনি তবে কবিতা ভালোবাসতাম তাই এক কবিকে ভালো লেগেছিল। এর বেশি কিছু হয়নি।”
“তোমার অনেস্ট রিপ্লাই খুব ভালো লাগলো। তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো আমি তোমার ওপর কখনো কোনো অধিকার ফলাব না । কারণ এভাবে কিছু পাওয়া যায় না। তুমি নিজে থেকে যদি কখনো আমার কাছে আসো সেটাই আমার জয়। তবে কবিতা বলে তোমায় মুগ্ধ করার সাধ্য আমার নেই। রুগী, ওষুধ , অসুখ এই নিয়ে আমার জীবন। ওসব কাব্য আমার হয় না। অনেক রাত হলো কদিন তোমার ওপর অনেক ধকল গেছে । ঘুমাও।
অনুষ্ঠান মিটতেই আত্মীয় স্বজনে যে যার বাড়ির পথ ধরলো। সৌগতদের পৈতৃক বাড়ি বর্ধমানে। বাবা মা ওখানেই থাকেন। দশদিন যেতে না যেতেই ওনারাও চলে গেলেন। দু হাজার স্কোয়ার ফিট এর ফ্ল্যাট খাঁ খাঁ করে সারাদিন। সবাই চলে যেতেই সৌগত ওর স্টাডি রুমে রাতে শোয়া শুরু করলো। ঝিনুক আপত্তি করে নি। সত্যি সত্যিই এই কদিন ঠিক করে ঘুমাতে পারেনি ও। খালি মনে হতো যদি মন পাল্টায়, যদি ওর কাছে আসতে চায় কি করবে সে ?
আজ শান্তিতে ঘুমোতে পারবে ঝিনুক। পোশাক নিয়েও মাথা ঘামাতে হবে না। নিজের পছন্দের একটা নাইটি পরে শুয়ে পড়লো সে। হঠাৎ মেসেজ এলো একটা। অচেনা নম্বর থেকে।
“বাইয়ে এমন সুন্দর পূর্ণিমার চাঁদ তাকে উপেক্ষা করে ঘুমালেন !? ভারি বেরসিক তো…”
“মানে ? কে আপনি ? “
“বন্ধু”
ডেটা অফ করে দেয় ঝিনুক। এইসব উটকো মেসেজ দিনে কত আসে তার ঠিক নেই। এদের কাজই হলো মেয়েদের মেসেজ করে বেড়ানো। যত্তসব অপদার্থ ।
সকালে উঠতে একটু দেরি হয় ঝিনুকের। অনেকদিন পর শান্তির ঘুম। এখন বৈশাখের শুরু। সকাল থেকেই রোদের তেজ প্রবল। সৌগত চা নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে কাগজ পড়ছিল। ওকে দেখেই বললো “গুড মর্নিং।”
“গুড মর্নিং। সরি, উঠতে দেরি হয়ে গেল।”
“এতে সরি বলার কি আছে। রান্না করা সন্ধ্যা দির কাজ ও সেটা ভালোই করে। তুমি তোমার খুশি মতো চলো। কারুকে জবাব দিহি করতে হবে না। তবে আমি চাইবো তুমি চাকরি করো। সারাদিন বাড়ি বসে কি করবে। লেখাপড়া শিখেছো বাড়িতে বসে থাকার জন্য নয়।”
“থ্যাংক ইউ সো মাচ। এটাই জিজ্ঞেস করার ছিল ।”
“কিছু জিজ্ঞেস করতে হবে না। যা মন চায় করো।”
রামগরুরের ছানা মানুষ মন্দ না। নিজের মনেই হেসে ফেলে ঝিনুক। সৌগত চেম্বারে বেরিয়ে যাবার পর গিফ্ট নিয়ে বসে ঝিনুক। একটা ঘরে ডাই করে রাখা আছে। প্যাকিং খুলে শাড়ি, বেড সিট, শো পিস গুলো আলাদা করছিল সে । এমন সময় আবার মেসেজ।
“শুনছেন ? আপনি কি চাকরি করেন ? না হাউস ওয়াইফ?”
কালকের সেই নম্বরটা। ঝিনুক ভাবলো একটু মজাই করি। মাঝে মাঝে ঝিনুক এটা করে । এই ধরণের ফালতু লোক কে ভালো করে দু চার কথা শুনিয়ে দেয়। লিখলো
“কেন বলুন তো আপনি কি ঝোলায় চাকরি নিয়ে ঘুরছেন?”
“নাঃ চাকরি আমি কোথায় পাবো, নিজেই বেকার।”
“সে তো বোঝাই যাচ্ছে বেকার বলেই তো অচেনা মহিলাকে ফোনে উত্ত্যক্ত করছেন। এসব না করে চাকরির চেষ্টা করুন কাজে দেবে।”
“না হয় আপনি নামকরা ডাক্তারের বউ তাবোলে আমাদের মতো বেকার দের এমন আঘাত দিয়ে কথা বলবেন? দেখুন ডিগ্রি আমারও আছে কিন্তু এই যুগে চাকরি জোগাড় করা কত টা কঠিন আপনি কি বুঝবেন।”
মনে মনে একটু লজ্জা পায় ঝিনুক। এভাবে বলাটা হয়তো উচিৎ হয়নি।
“শুনুন আমি ঠিক এটা বলতে চাইনি। আমি..”
“থাক ম্যাডাম ছেড়ে দিন। বড়লোকরা কবে আর গরিবের দুঃখ বোঝে।”
সবুজ আলো নিভে যায়।
মনটা খচখচ করছে। লোকটা হয়তো আহত হলো। এই এক রোগ ঝিনুকের। কারুকে খারাপ কথা বলে নিজেই অন্তরদংশনে মরে। কে না কে তাকে নিয়ে ভাবার কি আছে? চুলোয় যাক।
রোজ নিয়ম করে দুই মাকে ফোন করে ঝিনুক। সৌগতর মা খুব ভালো মানুষ, খবর নেন ছেলে ওকে সময় দিচ্ছে কিনা। ঝিনুক কিছু মিথ্যে বলে দেয়। ঝিনুকের মা জিজ্ঞেস করে তার জামাইয়ের ঠিকঠাক যত্ন হচ্ছে কিনা। স্বামীর মন জুগিয়ে চলার পরামর্শ দেয়। কিন্তু মন জুগিয়ে চলার কোনো সুযোগই দেয় না সৌগত। একদিন সাধ করে রান্না করেছিল। তৃপ্তি করে খেয়েছিল । কিন্তু যখন জানতে পারে ঝিনুক রান্না করেছে তখন বিরক্ত হয়।
“রান্নার লোক তো আছে, তুমি কেন কষ্ট করছো? এই বাড়িটাকে আগে নিজের ভাবতে শেখ তারপর নাহয় এগুলো করো।”
অপমানে কান লাল হয়ে গেছিল ঝিনুকের আর কোনোদিন ওর জন্য কিছু করবে না ভেবে নিয়েছিল। না খেয়েই শুয়ে পড়েছিলো ঝিনুক। তখনই মেসেজ আসে।
“কি করছেন ?”
“কিছু না”
“একটু কথা বলি ?”
“না..”
“আচ্ছা তাহলে থাক তাহলে ”
“বলুন কি বলবেন…তাড়াতাড়ি। আমার ঘুম পাচ্ছে।”
“বলছিলাম একবার বিছানা ছেড়ে উঠবেন ?”
অবাক হয়ে যায় ঝিনুক কেন ?
“আমি উঠলে আপনার কি সুবিধে ?”
“না না আমার কোনো সুবিধে নেই। মানে চাঁদটা আজ বড়ই মোহময়। অন্ধকারের বুকে এক ফালি চাঁদ যেন একটা সোনার কাস্তে।”
“কাস্তে !!”
“হ্যাঁ, মানে ওই রকমই লাগছে কিনা । হাতলটা আপনি কল্পনা করে নিন… তাহলেই হবে।”
জানলার কাছে আসে ঝিনুক , তাই তো। চাঁদ নিয়ে অনেক উপমা শুনেছে কিন্তু কাস্তে !!
“আপনি কি কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের সমর্থক ?”
হাসির ইমোজি আসে…
“একেবারেই না। এমনি মনে হলো তাই বললাম। আচ্ছা, আপনি তো বিবাহিতা। আপনার কত্তা টের পাবেন না তো আমার সাথে চ্যাট করছেন? পাশেই আছেন নিশ্চই ?”
কি করে বলবে ঝিনুকই তাকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। ছাদ একটাই কিন্তু মাঝে একটা দেওয়াল আছে । কিন্তু একটা উটকো লোককে তো আর এগুলো বলা যায় না। বললো “ঘুমিয়ে পড়েছেন। উনি মস্ত ডাক্তার, খুবই ব্যস্ত মানুষ। সারাদিন প্রচুর খাটুনি যায়। অবসরে অন্যের বউকে বিরক্ত করে বেড়াবার লোক নন। অহেতুক আমায় বিরক্ত করবেন না । গুড নাইট।”
“একটা কবিতা লিখেছি শুনবেন ?”
“আবার কবিতা !”
“আবার মানে ?”
“নাঃ কিছু না …কি কবিতা শুনি”
জানলার বাইরে অপেক্ষমান একা চাঁদ
অবহেলায় রোজ একটু একটু করে ক্ষয়ে যায়।
অভিমানে লুকিয়ে পরে শেষে
রাহুর গ্রাসে আত্মাহুতি দেয়।
হারিয়ে ফেলার পর খুঁজতে চাওয়াই জীবন
মুক্তি শুধু মরণের ওপারে।
এবার আমার প্রতীক্ষার পালা
তারায় তারায় সরলরেখা জুড়ে।।
নাম দিয়েছি ‘হেলায় হারিয়েছি যারে’..
“আপনার লেখা ?”
“হ্যাঁ, তাই তো জানি…কেন ?”
“না, তেমন কিছু না…আসলে চারদিকে আজকাল লেখা চুরির যা ধুম…আসল নকল বোঝা মুশকিল…যাই হোক ভালো লিখেছেন।”
“এত কথা শুনিয়ে তারপর ভালো বললেন… ঠিক বুঝতে পারছিনা কি বলি..”
“কিছু বলতে হবে না ঘুমোন গিয়ে।”
স্কুলের চাকরিটা পেয়ে যায় ঝিনুক। সময়টা যেন গতি পেলো। সারাদিন স্কুল, বাড়ি ফিরে খাতা দেখা, পরদিন যা পড়াবে তার একটু প্রস্তুতি নেয়া দিব্বি দিন কাটছে। মাঝে একদিন অলিদের বাড়ি নেমন্তন্ন ছিল। সৌগত যেতে চাইবে কিনা এটা নিয়ে দোটানা ছিল। তাই ঝিনুক বলেছিল ওর তো সময়ের কোনো ঠিক ঠিকানা নেই আমিই নাহয় একা চলে যাবো।
আঁতকে ওঠে অলি। “তোর কি মাথা খারাপ ! বর ছাড়া আমাদের বাড়ি আসবি ? আমার শাশুড়ি দেবে ঝাড়…প্রথম বার জোরেই আসতে হয়। বুঝলি ?”
“আচ্ছা দেখছি।”
সৌগতকে কি করে বলবে ভেবে পায়না ঝিনুক। তাদের সম্পর্কটা আর পাঁচটা দম্পতির মতো নয়। এই দু মাসে স্ত্রী হিসেবে ওকে কিছুই দিতে পারেনি ঝিনুক। সৌগত চাইলে জোর খাটাতে পারতো। রেগে গিয়ে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে পারতো কিন্তু কিছুই করে নি। একদিকে সৌগতদের মতো লুপ্ত প্রায় কিছু মানুষ, যারা সম্পর্কের মূল্য বোঝে সর্বগ্রাসী চাহিদা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় না সর্বক্ষণ। আর একদিকে সম্পর্কের কোনো দায় নিতে না চাওয়া মেসেজে প্রেমের বন্যা বইয়ে দেওয়া ক্ষয়িষ্ণু একটা সমাজ। এই কদিনে ঝিনুক সম্মান করতে শুরু করেছে ওকে। কিন্তু অলিদের বাড়ি ওকে সঙ্গে করেই যেতে হবে তাই কুণ্ঠা সরিয়ে রেখে বলেই ফেলে ঝিনুক।
“এই রবিবার অলি মানে আমার ছোট্ট বেলার বন্ধু, ওদের বাড়ি আমাদের নেমন্তন্ন করেছে। আমি বলেছিলাম আপনি ব্যস্ত থাকেন কিন্তু ও শুনতেই চাইছে না।” বলে ইতস্তত করতে থাকে ।
“তুমি কি চাও না আমি যাই ?”
“মানে , সেকি ! আমি কেন চাইবো না ?”
“তাহলে ওদেরকে অজুহাত দিলে কেন ? আমি তো বলিনি যেতে পারবো না।”
“না মানে…”
“আর মানের কিছু নেই…যদি না খুব সিরিয়াস কেসে ফেঁসে যাই আমি যাবো।”
কৃতজ্ঞতা ফুটে ওঠে ঝিনুকের চোখে।
স্কুল থেকে ফিরে শরীরটা একদম ছেড়ে দেয় । এসিটা চালিয়ে চুপ করে শুয়ে থাকে ঝিনুক। ধীরে ধীরে ঠান্ডায় ভারী হতে থাকে চোখের পাতা। টুং…আবার মেসেজ।
বিরক্ত হয় ঝিনুক একবার ভাবে উত্তর দেবে না তারপর মত বদলায়। এইসব সারবত্তাহীন কথার পরিসমাপ্তি হওয়া দরকার । ফোন টা তুলে নেয় সে।
“কি করছেন ?”
“ঘুমোবার চেষ্টা করছিলাম আপনি স্পয়েল করলেন।”
“ওহো ভেরি সরি…তাহলে পরে আসি ?”
না না আর পরের কোনো ব্যাপার নেই। কি বলবেন বলেই ফেলুন । তার আগে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিন তো, বারবার মেসেজ করে কি পান ? কি মনে করেন মহিলাদের একাকীত্ব শুধু পুরুষসঙ্গেই দূর হয় ?”
“খুব গুরুতর অভিযোগ আনলেন কিন্তু ম্যাডাম…আমি তো আপনার কাছে কিছুই চাইনি, একটু কথা বলায় দোষের কি হলো বুঝলাম না। আজ মাথা এত গরম কেন ? আর এই যে কথায় কথায় আমাদের মতো পুরুষ বলেন, আপনার স্বামী কি ধোয়া তুলসি পাতা ? উনি কি করেন খোঁজ নিয়েছেন কখনো ? ডাক্তার দের তো লেডি ডাক্তার বা নার্সের সাথে প্রেমের প্রচুর গল্প শোনা যায়। আপনার কাছে ভদ্র সেজে থাকে আসলে কি করে জানতে চেয়েছেন কখনো ? আর আপনি নিজেও যদি এতটাই আদর্শবতী হবেন তাহলে তো আমার মেসেজ ইগনোর করতে পারতেন…আসলে আপনিও চান কেউ আপনাকে সঙ্গ দিক….”
কি এত বড় স্পর্ধা ! তৎক্ষণাৎ ব্লক করে ঝিনুক। রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। এই ভাবে অপমান করলো লোকটা ? সত্যি বড্ড ভুল করে ফেলেছে ঝিনুক এইসব ইতর ছোটলোকদের প্রথম দিনই খেদানো উচিৎ ছিল। মাথাটা ভীষণ ধরে গেছে এক কাপ চা ছাড়া চলবে না।
চায়ে চুমুক দিতে দিতে মনের মধ্যে একটা খচখচানি অনুভব করলো ঝিনুক। আচ্ছা সৌগতর সত্যিই কোনো অ্যাফেয়ার নেই তো ? এই যে ঝিনুকের ওপর কোনো অধিকার ফলায় না এটা নিজেকে বাঁচাবার জন্য নয় তো ? মহান হবার ভান করে, আদতে হয়তো একটা চরিত্রহীন। রাতে আলাদা ঘর, আলাদা বিছানা এটা হয়তো ওই পরকীয়ারই অঙ্গ। গভীর রাত অব্দি হয়তো চ্যাট করে প্রেমিকার সাথে। মাথাটা আবার ধরছে । এবার বোধহয় ওষুধ খেতে হবে।
রাতটা কোনো রকমে কাটলো। পরদিন ঘুম ভেঙেই দেখলো সৌগত বেরোবার জন্য তৈরি। এটা ঝিনুক খেয়াল করেছে প্রতি বুধবার সকাল সকাল বেরিয়ে যায়। কারণ জানতে চায়নি ঝিনুক । কিন্তু আজ নিজেকে সামলাতে পারলো না। জিজ্ঞেস করেই ফেললো
কোনো ইমারজেন্সি আছে ? এত তাড়াতাড়ি যাচ্ছেন ?
হ্যাঁ, নার্সিং হোমে একটা বোর্ড মিটিং আছে তাছাড়া কিছু সিরিয়াস কেসও আছে। হাসলো সৌগত।
বিনিময়ে মৃদু হাসলো ঝিনুক।
সৌগত চলে যাবার পর একটু কিন্তু কিন্তু করে ফোনটা করেই ফেললো ঝিনুক…রিং হচ্ছে।
“হ্যালো, ব্লু ভিউ নার্সিং হোম। বলুন কি করতে পারি।”
“একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে চাই আজকের। ডক্টর সৌগত বসুকে দেখাতে চাই।
“সরি ম্যাম, আজ তো হবে না। আজ স্যারের অফ ডে।”
“আপনি শিওর ?”
“হান্ড্রেড পার্সেন্ট ম্যাম…বুধবার উনি ছুটিতে থাকেন। খুব ইমারজেন্সি নাহলে আসেন না।।”
লাইনটা কেটে দিয়ে ধপ করে বসে পড়ে ঝিনুক। তবে কি ওই লোকটাই ঠিক ? ভালো মানুষের মুখোশ পরে দু মাস ধরে ঠকাচ্ছে ওকে ? আর ঝিনুক ওকে ভগবান ভাবতে শুরু করেছিল। এত বোকা ও ? নিজের ওপর রাগে দুঃখে কান্না পায় ঝিনুকের। আজই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। একটা অনিচ্ছার বিয়ের সাথে এক কথায় মানিয়ে নিতে পারে নি ঠিকই কিন্তু এই দু মাসে আপ্রাণ চেষ্টা করছিল। ধীরে ধীরে সৌগতকে ভালো লাগতেও শুরু করেছিল। ব্যক্তিত্ববান , আত্মমর্যাদা সম্পন্ন পুরুষ কোন মেয়েরই না ভালো লাগে। ওই টক শোয়ের চেঁচামেচি বাদ দিলে আর কোনো অভিযোগের পথ নেই। কিন্তু ভদ্রতার মুখোশের আড়ালে যে একটা নোংরা লোক আছে সেটা ঝিনুক বুঝতেই পারিনি…সত্যিই খুব বোকা সে।
বিছানায় উপুড় হয়ে কাঁদতে থাকে ঝিনুক।
সন্ধ্যে বেলা সৌগত ফিরল। কিছুক্ষণ পর দরজা নক করলো। খোলাই ছিল। আসছি বলে ঢুকে পড়লো সৌগত।
“সন্ধ্যাদি বললো তুমি সারাদিন কিছু খাওনি। কি হয়েছে শরীর খারাপ ? আমায় ফোন করোনি কেন ? আমি চলে আসতাম।”
উঠে বসে ঝিনুক লাইটটা জ্বালে ।কথা গুলো বলার সময় সৌগতর মুখটা দেখতে হবে। ধরা পড়ার পর সাধু পুরুষ কি করে নিজেকে বাঁচান দেখতে হবেই।
“ফোন করলেই আপনি আসতে পারতেন বুঝি ? নার্সিং হোমের এত কাজ ফেলে ?”
“তেমন সিরিয়াস হলে আসতেই হতো…”
“না, আপনি আসতে পারতেন না। কোনো সুন্দরী ডাক্তারের মায়াজাল থেকে নিজেকে মুক্ত করে আমার কাছে আসতে পারতেনই না।”
“মানে ! কি যাতা বলছো তুমি ?”
“যা সত্যি তাই বলেছি। বুধবার আপনার তো অফ ডে, “তাহলে নার্সিং হোমের নাম করে কোথায় কাটালেন সারাটা দিন ? বলুন ? উত্তর দিন। আমি তো সেটাই ভাবি আপনি স্বামী হবার সব অধিকার এত সহজে ছেড়ে দিলেন কেন। আর আমি বোকার মতো আপনাকে ভগবানের আসনে বসাতে যাচ্ছিলাম। আপনার ব্যক্তিত্ব , আপনার শিষ্টাচারে মুগ্ধ হয়ে ভালোবেসে ফেলছিলাম আসতে আসতে…”
“কি! সত্যিই তুমি আমাকে ভালোবাসো ?”
“হ্যাঁ বাসতে শুরু করেছিলাম কিন্তু কাল ওই লোকটা আমার চোখ খুলে দিল…তাই তো আপনার আসল চেহারাটা সামনে এলো।”
“কোন লোকটা ?”
“আছে একজন আপনি চিনবেন না।”
“ওই যে তোমায় জানলায় ডেকে চাঁদ দেখায়। সোনার কাস্তের মধ্যে হাতল লাগিয়ে নিতে বলে সে ?”
হ্যাঁ সেই…থমকে যায় ঝিনুক। আআআপনি কি করে জানলেন!!”
“আমার মোবাইলে মেসেজ গুলো আছে তো”
বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে ঝিনুক ।
“মানে ? আপনি আমার ওপর গোয়েন্দাগিরি করেন ? আপনার মোবাইলে কি করে এলো মেসেজ গুলো !?”
“কারণ আমিই তো সে…তোমার বন্ধু।”
“কি যাতা বলছেন !…আমি কিছু বুঝতে পারছিনা।”
এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে ঝিনুককে…ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিতে চায় ঝিনুক কিন্তু সৌগতর শক্ত পেশীবহুল হাত থেকে নিজেকে থেকে মুক্ত করতে পারে না।
“যা বলবো চুপ করে শুনবে তারপর ঝগড়া করতে হলে করো।”
রাগে ফুঁসতে থাকে অসহায় ঝিনুক।
“তোমার ফটো যেদিন মা দেখিয়েছিল সেদিনই প্রেমে পড়ে গেছিলাম। তোমার মুখে একটা অদ্ভুত কোমলতা আছে আর চোখ দুটো বড়ই আকর্ষনীয় । একবাক্যে রাজি হয়ে যাই বিয়েতে। তারপর তো তোমাদের বাড়ি যাওয়া, পাকা দেখা, বিয়ে সবটাই ঠিকঠাক হয়ে গেছিল। কিন্তু ফুলশয্যার রাতে তোমার আমায় দূরে ঠেলে দেওয়ায় সত্যি বলি বড় কষ্ট পেয়েছিলাম। তোমার সাথে কথা বলতে, ভাব করতে ইচ্ছে হতো। সারাদিন তুমি কি ভাবো জানতে ইচ্ছে হতো। কিন্তু সেটার যদি তুমি অন্য মানে করো তাই একটু ছলচাতুরী করতে হলো। অন্য নম্বর থেকে বন্ধু সেজে তোমার সাথে চ্যাট করতাম। তোমার কাটা কাটা কথাগুলো শুনতে দিব্বি মজার লাগতো । আসতে আসতে বুঝতে পারছিলাম তুমিও ভালোবাসতে শুরু করেছ আমায় তাই তো আমার নিন্দে হলে তুমি রেগে যেতে। কিন্তু কতদিন আর এইভাবে দূরে থাকা যায়। তাই কাল একটু বেশিই খেপিয়ে দিলাম তোমায়। মেয়েরা সব সইতে পারে শুধু স্বামীর জীবনে অন্য মহিলা নৈব নৈব চ।”
এই পর্যন্ত শুনে অস্থির হয়ে উঠলো ঝিনুক।
“বুঝলাম । আপনি সাংঘাতিক বুদ্ধিমান । আমায় খুব বোকা বানিয়েছেন এই কদিন। কিন্তু এতে তো আসল সত্যি চাপা দেয়া যাবে না মিস্টার বোস। বুধবার করে আপনি কোথায় যান সেটা তো বললেন না..”
“পতিতালয়”
“কি !!!” এবার সত্যিই আর পারা যাচ্ছে না। সমস্ত স্নায়ু নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে। এত বড় একটা অপকর্ম করেও লোকটা কি নির্লজ্জের মতো বুক ফুলিয়ে স্বীকার করেছে। ঘেন্নায় মরে যেতে ইচ্ছে হয় ঝিনুকের।
সৌগত আরো চেপে ধরে ওকে…
“আমার কথা শেষ হয়নি এখনো।”
“কিন্তু আমার আর কিছু শোনার প্রবৃত্তি নেই।”
“সে বললে তো হবে না…আগে আমি শেষ করি তারপর তোমার সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নেব…আমরা তিন জন ডাক্তার বন্ধু মিলে সপ্তাহে একদিন শহরের বিভিন্ন রেড লাইট এরিয়ায় যাই। বিনামূল্যে ওদের এবং ওদের বাচ্চাদের চেক-আপ করি, প্রয়োজনীয় ওষুধ দি। সবটাই আমরা একা করি এমন নয়, দুটো এনজিও আমাদের সাথে কাজ করে। এছাড়া অনাথ আশ্রমেও যাই। বিশ্বাস নাহলে আমার বন্ধু অনিমেষকে ফোন করতে পারো আমরা একসাথেই কাজ করি। ও গাইনোকলজিস্ট ।”
স্তব্ধ হয়ে যায় ঝিনুক। “তবে যে সবাই বলে ডাক্তারেরা কসাই।”
“সেটা আমি কি বলি…আমার কথা আমি বললাম এবার বিচার ভার তোমার ওপর…”
“ছাড়ুন…”
হতাশ হয় সৌগত…শিথিল হয়ে বাহুডোর।
জানলার কাছে এসে দাঁড়ায়। তবে কি…
পেছন থেকে নরম দুটো হাত জড়িয়ে ধরে ওকে…ঝিনুক !!
ঘুরে দাঁড়ায় সৌগত । ওর বুকে মাথা রেখে ঝিনুক বলে
“কথা তো এটাই ছিল আমি যেদিন আপনাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবো আমি নিজে থেকেই ধরা দেব…এলাম …আর এই যে এলাম আর ছাড়বো না।”
পরিতৃপ্তিতে ভরে যায় সৌগতর মন।
“কিন্তু যদি কোনো লেডি ডাক্তার বা নার্সের প্রেমে পড়ি তখন কি হবে ?” হাসতে থাকে সৌগত
“আমিও তখন কোনো চ্যাটের প্রেমিক খুঁজে নেব…কেমন ?”
“তবে রে…”
লাইট অফ হয়। একে অপরের মধ্যে ডুবে যেতে থাকে দুজনে।
শহরটা এখনো জেগে আছে…হয়তো নীলচে আলোয় অথবা সবুজ বিন্দিতে প্রেম খুঁজে মরছে। ভালবাসার বৃত্তে থেকেও নিজেকে শূন্য ভাবতে ভালোবাসে অনেকেই। তবে ব্যতিক্রম ও আছে…নিশ্চই আছে।
সমাপ্ত