এই যে শুনুন আপনি প্লিজ আমাকে রিজেক্ট করে দেন,আমি আপনার যোগ্য না, আমি খুব খারাপ। কথাগুলো শুনেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে যান নাদিম। হাতে থাকা চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়েও আর দেয়না। পরে নিজেকে সামলে নিয়ে কৌতুহলী মন নিয়ে জিগ্যেস করে
– আচ্ছা তারপর আমাকে এখন কি করতে হবে?
– আপনি আমার আব্বাকে গিয়ে বলবেন আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি।
নাদিম হা হা করে হেসে উঠে। নাদিমের এই অট্টহাসি দেখে মিলা বিরক্ত হয়ে যান। তার চোখেমুখে বিরক্তির স্পষ্ট ছাপ লক্ষনীয়।
– কিন্তু আমার তো আপনাকে ভালো লাগছে,আমি মিথ্যা কেন বলতে যাবো?
– আমাকে ভালো লাগার কি আছে? আমি কোন দিক দিয়ে ভালোলাগার মতো?
– এই যে আপনি খুব সুন্দর করে রেগে যান সেটাই ভালো লাগে
– প্লিজ আপনি কি আমাকে হেল্প করবেন? নাকি আমি অন্য ব্যবস্থা নিবো?
– অন্য ব্যবস্থা কি? ক্ষনিক ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে নাদিম।
– ঘর ছেড়ে পালাবো
– বাব্বা তাই? আপনার তো দেখি সাহস কম না!
– হ্যা আমিতো বলছিই আমি অনেক খারাপ। প্লিজ আপনি আমাকে রিজেক্ট করে দেন। মিলার এসব কথাবার্তায় নাদিম খুব মজা পাচ্ছে। সে মনে মনে ফন্দি আঁকে মিলাকে আজ খুব জ্বালাবে।
– তো আপনি কি রকম খারাপ একটু খুলে বলেন তো শুনি
– আমি না মাঝে মাঝে পাগল হয়ে যায়
– তাহলে তো ভালো, আমার খুব ইচ্ছা পাগল বিয়ে করার। পাগল বিয়ে করে ফেইসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিবো got married with pagol
– আমি না খুব কালো, একেবারে কালির মতো, এখন মেকাপ করছি তো তাই একটু ফর্সা মনে হচ্ছে৷
সমস্য নেই, এক জৌতিষী আমার হাত দেখে বলেছিলেন আমার রাশির জন্য নাকি কালো বউই ভালো।।
– আমি রাতে ঘুমে খুব নাক ডাকি
– তাও সমস্য নেই আমার আওয়াজের মধ্যাও ঘুমানোর অভ্যস আছে। আমি কানে কম শুনি তো তাই!
– এক হুজুর বলেছিলেন আমাকে যে বিয়ে করবে সেও নাকি পাগল হয়ে যাবে
– তাহলে তো ভালো হবে যা ইচ্ছা তা করতে পারবো,পাগলের তো কোন দোষ নেই।
– ধুর আপনি মানুষ টা বড়ই খারাপ বলেই হঁন হঁন করে হেটে নিচে চলে যায় মিলা
নাদিম দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসতেছে, মিলাকে রাগাতে পেরে সে খুব মজা পাচ্ছে৷ মা যখন মিলার ছবি দেখিয়ে নাদিম কে বলেছিলেন আমার বান্ধবির মেয়ে, এই মেয়েই তুর জন্য আমি আনবো। সেদিনই ছবি দেখে নাদিমের কেমন যেন একটা ভালো লাগা কাজ করেছিলো। মাঝেমধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে ছবিটা দেখতো নাদিম। অদ্ভুত একটা মেয়ে মিলা,প্রথম দেখাতেই নাদিমকে পুরাই অপ্রস্তুত করে দিলো!
– এই যে মিস্টার শুনছেন? মিলার ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ে নাদিমের।
– হ্যা বলুন,
– আম্মু বলছেন আজ খেয়ে যেতে, উনি আপনার জন্য রান্না করতে গেছে।
– অহ আচ্ছা
– বাই দ্যা ওয়ে আমার আব্বু আম্মুকে আপনি তাবিজ টাবিজ করেন নি তো? উনারা আপনার নাম শুনতেই ফানা হয়ে যাচ্ছেন কেন? শুনেই নাদিম হা হা করে হেসে উঠে
– প্লিজ আপনার অদ্ভুত হাসিটা থামান আমার বিরক্ত লাগতেছে। আমি টেনশনে মরি আর উনি হা হা করে হাসেন। নিষ্ঠুর!!
– আচ্ছা কোনভাবেই কি এই প্রপোজাল টা ক্যানসেল করা যায়না? করুণ কন্ঠে বলে মিলা।
– হুম ক্যানসেল করা যাবে তবে একটা শর্ত আছে
– কি শর্ত প্লিজ প্লিজ বলেন।
– আজকে সারাদিন আমাকে গান শুনাতে হবে, আপনি নাকি অনেক ভালো গান পারেন।
– আপনি কিভাবে জানেন
– এই শুনেছি আর কি।
– গান শুনালেই আপনি প্রোপোজাল ক্যানসেল করে দিবেন?
– আগে তো শুনান, তারপর না হয় ভাবা যাবে।
– আচ্ছা ঠিক আছে বলেই গান শুরু করে মিলা
মিলা একটার পর একটা গান গেয়ে যাচ্ছে আর নাদিম মুগ্ধ হয়ে শুনতেছে৷ মূহুর্তেই অসাধারণ একটা আবহ তৈরি হলো। নাদিম ভাবনায় মিশে গেলো।
– এই যে মিস্টার? আর ইউ দিয়ার? মিলার ধাক্কায় নাদিমের ভাবনায় ছেদ পড়ে।
– থামলেন কেন?
– আমি কি এফ এম নাকি যে সারাদিন গাইতেই থাকবো?
– হুম এফ এম ই তো বলে হেসে উঠে নাদিম
– আপনার শর্ত তো পুরণ করলাম এবার আপনার কথা রাখার পালা, আই মিন প্রোপোজাল টা ক্যানসেল করার পালা।
– আমি তো গান শুনেই পুরাই আপনার প্রেমে পড়ে গেছি এই অবস্থায় ক্যামনে ক্যানসেল করি?
– হোয়াট? ঢং করেন কেন? আপনি না বললেন গান শুনালে ক্যানসেল করে দিবেন?
– তখন কি আমি জানতাম যে আপনার গান শুনলে আমি আপনার প্রেমে পড়ে যাবো?
– খুব খারাপ মানুষ তো আপনি, ধুর হুদাই আপনার পিছনে সময় নষ্ট করলাম, এখন দেখতেছি আমার ব্যবস্থা আমাকেই নিতে হবে বলে রাগে গজরাতে গজরাতে চলে যায় মিলা।
ব্যাগ আর প্রোয়জনীয় জিনিস গুছিয়ে খুব সাবধানে বেরিয়ে যায় মিলা৷ জীবনের খুব কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে আজ৷ অনেক ভেবে মিলা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভালোবাসার মানুষ আদিলের হাত ধরে পালিয়ে যাবে ৷ আদিল আর মিলার ফেসবুকেই পরিচয়, সেখান থেকেই ভালোলাগা ভালোবাসার শুরু। প্রথম প্রথম মিলা আদিল কে খুব একটা পাত্তা দিতোনা, পরে একসময় গিয়ে আদিলের প্রতি তার একধরনের ভালোলাগা তৈরি হয়ে যায়৷ আদিলের কাছেই মিলা তার প্রকৃত সুখ খুৃঁজে পায়। গাড়ি থেকে নেমে মিলা এদিকওদিক থাকায়, এখানেই তো থাকবে বলছিলো আদিল। কিন্তু সে কোথায়? দেখতেছিনা কেন? উদ্বেগ আর চিন্তিত মন নিয়ে আদিল কে ফোন দেয় মিলা।
– হ্যালো কোথায় তুমি? তুমি যে জায়গায় বলছিলা সেখানে আসলাম কিন্তু তোমাকে দেখতেছিনা কেন?
– আমি একটু এদিকে আছি, তুমি সামনের দিকে হেটে চলে আসো আমাকে দেখতে পাবে।
মিলা ফোন রেখে হাটতে থাকে, একটু সামনে এগুতেই দেখে সুঠাম দেহি এক পুরুষ উল্টো দিকে মুখ করে দাড়িয়ে আছে। মিলা একটু কনফিউশনে পড়ে যায়। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে আদিল কে আবার ফোন দিতেই রিসিভ করে বলে এইতো আমি তোমার সামনে৷ কৌতুহলী হয়ে মিলা সামনে যেতেই চমকে উঠে।
– আপনি? আপনি এখানে কি করেন? নাদিম কিছু বলেনা হাসতে থাকেন।
– প্লিজ আপনার বিশ্রি হাসিটা বন্ধ করেন হেয়ালি করে হেসে হেসে নাদিম বলে
– কোথায় পালাচ্ছেন ম্যাডাম? এত সহজে পালাতে পারবেন ভাবছেন?
মিলা তড়িঘড়ি করে মোবাইল বের করে আদিল কে ফোন দিতেই দেখে নাদিমের হাতে থাকা ফোনটা বেজে উঠে।
– তুমি?
– জি আমি
– তুমি আদিল?
– না আমি নাদিম?
-তাহলে আদিল কে?
– নাদিম হেসে বলে আমি
– নাদিম কে?
– তাও আমি
– ইউ চিটার, মিথ্যুক বলেই নাদিমের দিকে হাতে থাকা ব্যাগটা ছুড়ে মারে মিলা
– এসবের মানে কি আমি তো কিছুই বুঝতেছিনা!
– কুল ম্যাডাম, কুল, চলেন ঐদিকটায় বসে সব খুলে বলতেছি।
– আম্মু যখন তোমার ছবি দেখিয়ে বলল এটা আমার বান্ধবির মেয়ে, এই মেয়েকেই আমি আমার ছেলের বউ করে ঘরে তুলবো। তখন ছবি হাতে নিয়ে দেখতেই তোমাকে ভালো লেগে যায়৷ মনে মনে ভাবলাম এই মেয়ের সাথে যদি একটু প্রেম করতে না পারি আফসোস থেকে যাবে। বিয়ের আগে একটু প্রেম মন্দ হয়না! দ্যান আদিল হোসেন নামে নতুন আইডিটা খুলে ছোট বোন থেকে তোমার আইডি নিয়ে রিকুয়েষ্ট পাঠালাম, আর বাদ বাকিটা তো তুমি জানোই৷
– চিটার, শয়তান একটা
– জি, তো এখন কি পালাবা?
– হ্যা পালাবোই তো তবে আদিলের সাথে না নাদিমের সাথে বলতেই হা হা করে হেসে উঠে দুজনে…..