আমার বয়ফ্রেন্ড গত দুইমাস ধরে একটা গেঞ্জিই পরছে। কালো রঙের একটা গেঞ্জি। বিষয় টা আমায় খুব ভাবাচ্ছে কারন একটা গেঞ্জি দুইমাস ধরে পরার মত ছেলে তো নিলয় না। ছেলেদের দুই টা শার্ট হলেই চলে তা জানি কিন্তু একটা গেঞ্জি দিয়ে চলে কিভাবে? এগুলো ওর কাছে জিজ্ঞেসও বা করি কিভাবে।
পার্কের বেঞ্চে বসে বসে এসব ভাবছি। নিলয় বলছে বিকাল 4টায় দেখা করতে আসবে এখন সাড়ে চারটা বেজে গেছে আসার কোন নাম গন্ধ নেই । যতই সময় যাচ্ছে মেজাজ টা ততই তিক্ত হচ্ছে। অবশেষে নিলয়ের দেখা মিললো। পাঞ্জাবী,প্যান্ট আর গায়ে চাদর মুড়ি দিয়ে আসছে। হাতে একটা ডায়েরী। হঠাৎ গেঞ্জি রেখে এমন লুক! যাক গেঞ্জি টা পড়া তো বাদ দিয়েছে এই ভেবে স্বস্তি পেলাম। নিলয় আমার কাছে এসে বলল,
-‘আসসালামু আলাইকুম।’
আমি যথারীতি অবাক হয়ে গেছে। জীবনের প্রথম আমায় সালাম দিয়েছে। আজকে কেমন যেন ওর লুকটা খাপছাড়া হাবা মার্কা। আমি বললাম,
-‘অলাইকুম আসসালাম।’ নিলয় খুব ইন্নোসেন্ট ভাব নিয়ে বলল,
-‘বসবো?’
এবার আমি খুব বেশী অবাক হয়ে গেলাম। বসার জন্যও পারমিশন নিচ্ছে। হঠাৎ হলো টা কি ওর?
আমি বললাম,
-‘বসো।’ তারপর ধমক দিয়ে বললাম,
-‘এত লেট হয়েছে কেন?’ নিলয় আমতা আমতা করে বলল,
-‘আসলে আমি দাওয়ার খেতে যাবো।’
-‘হয়েছে টা কি তোমার বলদ বলদ ভাব করছো কেন? হাতে ওটা কিসের ডায়েরী?’
-‘তুমি তো খেয়াল করেছো আমি গত দুই মাস ধরে একটা গেঞ্জি পরেছি। আসলে কি জানো আমার আফরান নিশো কে খুব ভালো লাগে ।’ আমি ধমক দিয়ে বললাম,
-‘ভালেলাগে তো কি হয়েছে?’
-‘আসলে আমি এখন সব কিছুতে আফরান নিশো কে ফলো করি। ‘ছেলেটা বেয়াদব’ নাটকে ও শুধু একটা গেঞ্জিই পরে। আসলে গেঞ্জি কিন্তু একটা না,কালে রঙের গেঞ্জি তিনটা। তাই সবাই মনে করে আমি একটা গেঞ্জি ই পরি।আজকে যে লুক টা নিলাম এটা হলো ‘ভাই প্রচুর দাওয়াত খায়’ এই নাটকের লুক।’ আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতেছি না। হাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। বললাম,
-‘পাগল হয়ে গেছো তুমি? মানুষ কে এভাবে কেউ ফলো করে? আজব! কালকে পর্যন্ত টাইম দিলাম যদি আগের মত স্বাভাবিক না হও তো স্রেফ ব্রেক আপ। পরের দিন দেখি ঠিক ঠাক হয়ে এসেছে। যাক তাহলে মাথা থেকে আফরান নিশো হওয়ার ভুত টা নেমেছে। নিলয় বলল,
-‘রিসা তোমায় একটা কথা বলি রাগ করবে না তো?’ খুব বিনয়ের সুরে বলল। আমি বললাম,
-‘না রাগ করবো কেন বলো?’
-‘ negative positive নাটক দেখছো?’ নাটকের কথা শুনে আমার মেজাজ টা আবার গরম হয়ে গেলো। রাগ কন্ট্রোল করে বললাম,
-‘দেখেছি। কেনো?’
-‘ওই নাটকে মেহজাবিন কেমন যেন হাবা হাবা একটা ভাব করে ওটা আমার কাছে খুব ভালো লাগে। তুমি যদি আমার সাথে ওমন ভাবে আচরন করতে।’
-‘শেট আপ। আর একটা কথা বলবা না । আমি মেহজাবিন না,আমি রিসা। নাটকের ক্যারেক্টার নাটকেই সাজে বাস্তবে না।’ আমার রাগ খেয়ে বেচারা চুপ হয়ে গেল । বলল,
-‘আচ্ছা সরি এটা করতে হবে না। টম এন্ড জেরি নাটকে মেহজাবিন যেমন জগড়া করে সেরকম জগড়া করতে পারবা?’
আরও দুই চারটা কথা শুনিয়ে বাসায় চলে গেলাম। ইদানিং আমার হেয়ার স্টাইল মেহজাবিনের মত হতে হবে,হাঁটা মেহজাবিনের মত হতে হবে, কথা বলার স্টাইল মানে আমাকে এখন মেহজাবিন হতে হবে। ফাইনাল্লি খুব রাগ হলো। নিজের প্রেমিকার মধ্যে মেহজাবিন কে খুঁজে কারই বা রাগ না হয়। আজকে আবার নিলয় ঢিলাঢালা শার্ট ,প্যান্ট, এলোমেলো চুলে এসেছে। এসে বলল,
-‘ভাবিনি কখনো’ নাটকে আফরান নিশোর ড্রেস আপ এমন ছিলো ।’ রাগ চেপে বললাম,
-‘নিলয় শেষ বেলার কাব্য একটা নাটক দেখেছো?’ নিলয় শিহরিত হয়ে বলল,
-‘হ্যাঁ দেখেছি তো। কেন কেন?’
-‘তোমার যেমন মেহজাবিন নিশো কে ভালোলাগে,আমার তেমন অপূর্ব মমো কে ভালোলাগে। ওই নাটকের ব্রেক আপ করাটা খুব ভালোলেগেছে আমার।’ নিলয় ভয় ভয় কন্ঠে বলল,
-‘তো কি হয়েছে?’
-‘তেমন কিছু না,আগামী তিন দিনের মধ্যে তুমি যদি সম্পূর্ন ঠিক না হও।
মানে আফরান নিশোর ভুত যদি তোমার মাথা থেকে না নামে তাহলে ওরকম ভাবে ব্রেক আপ করে দিবো।’ তারপর তিন দিন সত্যি সত্যি ফোন অফ করে রেখেছি,আইডি ডিএক্টিভ করে রেখেছি।মানে নিলয়ের সাথে তিন দিন যোগাযোগ অফ করে রেখেছি। তিন দিন পর ওর সাথে দেখা হলো । কেমন যেন বিষন্নটা ওর চেহারায়। ওকে দেখে খুব মায়া হলো। মনে মনে অপরাধ বোধ কাজ করল। ওর সাথে এমন করা একদম উচিত হয় নি। নিলয় কেঁদে দিলো । কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-‘প্লীজ আমায় ক্ষমা করে দেও ।’ নিলয়ের কান্না দেখে নিজের উপর আরও বেশী রাগ হলো। ছেলে টার সাথে এমন করা একদম উচিত হয় নি। বললাম,
-‘প্লীজ কান্না বন্ধ করো। তোমার কান্না দেখে আমার কষ্ট হচ্ছে।’ বাসায় ফেরার পথে নিলয় ম্যাসেজ করল,
-‘আজকে তোমার সাথে অপূর্বের ইমশোনালফুল নাটকের অভিনয় করলাম। কান্না টা কেমন হয়েছে বাবুনি?’
আমি যথারীতি রাস্তার মাঝে ‘থ’ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।