বন্ধুমহলের সবচেয়ে বোকাটাইপ ছেলে জাহিদ এসে, আমার কানের কাছে দুইদিন ধরে মিন মিন করছে।। ঘটনা হচ্ছে- সম্প্রতি সে ফুপাতো ভাইয়ের বিয়েতে গিয়েছিলো।। সেখানে একটা মেয়েকে নাকি তার মনে ধরেছে, পরে খোঁজ নিয়ে দেখে তার নতুন ভাবীর আপন মামাতো বোন এই মেয়ে।। মানে বিয়াইন সাবের প্রেমে পড়েছে জাহিদ!!
এখন আমি জাহিদকে যেনো ঐ মেয়ের সাথে যেভাবেই হোক প্রেম করিয়ে দেই, এটাই জাহিদের আপাতত আমার কাছে কামনা-বাসনা!! আসলে, নিজে প্রেম করা এক জিনিস, আর অন্যকে করানোর ব্যাপারটা ভিন্ন।। ভাবলাম চেষ্টা নিয়ে দেখি- আমার নিজের প্রেমের অভিজ্ঞতা কাঁচা হলেও, বিধাতার দয়ার অন্যকে প্রেম করানোর ব্যাপারে ভালো সুখ্যাতি আছে।। বন্ধুকে শুরুতেই ভরসার বাণী দিলাম এই বলে যে- সম্পর্কে মেয়ে আর তুই বিয়াই বিয়াইন।। অর্ধেক প্রেম তো সম্পর্কের টাইটেলেই আছে।। তারপর জাহিদের কাছে মেয়ে সম্পর্কে ও যা জানে, সব জানতে চাইলাম!!
মেয়ে হোম ইকোনোমিক্স এ পড়ে।। নাম আদিবা।। গ্রামের বাড়ি জামালপুর নান্দিনা রেলস্টেশনের পিছনে।। বাবা- মা জামালপুরেই থাকে।। আদিবা ঢাকায় লালবাগ শাহী মসজিদের উত্তর পাশে ২২/এ নাম্বার বাসায় থাকে।। আমি একটু তাজ্জব হলাম, বোকা ছেলেটা এত তথ্য যোগাড় করে ফেলেছে।। আরো অবাক হলাম এটা শুনে যে- আদিবার ফেসবুক আইডি আর মোবাইল নাম্বারও নাকি আছে ওর কাছে।। আমি এবার প্ল্যান “এ” চালু করলাম- জাহিদকে বললাম- হাজারখানেক টাকা ম্যানেজ কর।। কিছু চকলেট-ফকলেট, ডায়রি, শোপিস এসব কিনতে হবে।। জাহিদ কোন প্রশ্ন না করে বিকেলের মধ্যেই সব ম্যানেজ করে ফেললো।। ফটোশপে আদিবার নামধাম দিয়ে একটা গিফট কার্ড বানিয়ে, মৌচাক ফটোল্যাব স্টুডিও থেকে প্রিন্ট আউট করলাম।।
একটা বক্স সাজালাম।। সব কেনা জিনিস, প্রিন্ট করা কার্ড বক্সে রেখে, উপরে এমন ভাবে আদিবার নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার লিখলাম- যেনো মনে হয় এটা কুরিয়ারের পার্সেল।। তারপর দু”জন রওনা দিলাম, আদিবার বাসার দিকে।। জাহিদকে আদিবার বাসার নিচে দাঁড়া করিয়ে, আমি বাসায় ঢুকলাম।। বিপত্তিটা হলো আদিবা কত তলার কোন পাশে থাকে এই ব্যাপারে কিছুই জানি না।। যাক, দুইটা ফ্ল্যাট ভুল করে অবশেষে পেলাম, আদিবার ফ্ল্যাট।। দরজা আদিবাই খুলে দিয়েছে।। পরিচয় নিশ্চিত হয়ে নিলাম।। একনজর আদিবাকে দেখে বললাম ম্যাম- আপনার একটা পার্সেল ছিলো।। এই কাগজে সিগনেচার করে নিয়ে নিন।। আমি এই ফাঁকে আবার আদিবাকে একঝলক দেখে নিচ্ছি- আদিবা শ্যামলা মেয়ে।। চোখগুলো খুব সুন্দর, টানা টানা।। চেহারায় মায়া আছে বটে।। বন্ধুর পছন্দ একবারে খারাপ না।।
আদিবা আমাকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করলো, আমি তড়িঘড়ি করে বললাম- ম্যাম, এটা অনলাইন কুরিয়ার সার্ভিস।। আমার দায়িত্ব শুধু পৌঁছে দেয়া, আর কোন ডিটেইলস জানি না।। আপনি এটা নিয়ে আমাকে বিদায় দিন প্লিজ।।
দ্বিধা, অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও আদিবা বক্স গ্রহণ করলো।। এর মধ্যে দরজায় আরো দুইটা মেয়ে এসে দাঁড়িয়েছে।। সম্ভবত আদিবার রুমমেট।। একজনকে দেখলাম আমার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে।৷ আমি এখন পার্সেল বয়, আমার এসব ধ্যান ফ্যান গুনার টাইম নাই। জাহিদকে নিয়ে মালিবাগ চলে আসলাম।। হোসাফ টাওয়ারের সিঁড়িতে বসা- শুন জাহিদ প্ল্যান বি শুরু এখন- আজ থেকে প্রতিদিন ঠিক রাত ১০ টায় আদিবার নাম্বারে, রোমান্টিক টাইপ ম্যাসেজ দিবি।।
-আচ্ছা বন্ধু।। জাহিদ যন্ত্রের মত বললো। আজ রাত থেকেই শুরু কর।। আর হ্যাঁ একদম নতুন বা অব্যবহৃত সিম থেকে দিবি।। আর ঐ নাম্বারে কোন ইনকামিং কল আসলে আপাতত রিসিভ করবি না!! আদিবা কল করলেও না!!
-আচ্ছা বন্ধু!!
রাত ৯.৩০ টায় গাধাটা ফোন দিয়ে বলে- দোস্ত একটা রোমান্টিক ম্যাসেজ পাঠা না।। আমি বুঝতাছি না কি ম্যাসেজ পাঠামু।। এভাবে টানা ৭ দিন হলো।। ঠিক রাত ১০ টার দিকেই নিয়ম করে ভিন্ন ভিন্ন ভালোবাসার ম্যাসেজ পাঠালো জাহিদ।। সব আমি নেট ঘেঁটে গাধাটাকে আগেই দিতাম।। ঘটনা হলো- ওর ঐ নতুন নাম্বারে আদিবা তো দূরের কথা, কেউ কোন কলই দিলো না, গত এক সপ্তাহে।। মেয়েটা একটা নাম ঠিকানা বিহীন গিফট্ বক্স পেলো।। আবার সেদিন থেকেই রোজ রাতে আননোন নাম্বার থেকে ম্যাসেজ পাচ্ছে, তবুও কি নূন্যতম কৌতুহল নেই আদিবার।। অদ্ভুত মেয়ে তো!!
খানিক ভেবে জাহিদকে বললাম- আপাতত আর, ম্যাসেজ দিস না।। প্ল্যান সি শুরু করি, এইবার একটু অন্য কাজ করা লাগবে দোস্ত।। শুন, আদিবাকে ফলো কর।। মানে কখন কি ড্রেস পড়ে কলেজে যায়।। এটা জানার জন্যে নিয়ম করে লালবাগের ওখানে দাঁড়িয়ে থাকবি।। আমাকে সব ফোনে জানাবি।। আমি কিন্তু এইসব দাঁড়াদাঁড়িতে নাই, তুই একাই যাবি।।
– আচ্ছা দোস্ত!!
পরের দিন সকালে জাহিদ কল দিয়ে বলে- দোস্ত থ্রি পিস পরা ছিলো।। রিক্সা নিয়া সম্ভবত কলেজে গেলো।।
আমি জিজ্ঞেস করলাম- জামার কালার কি? জাহিদ চুপ করে আছে।। এটা দেখে, রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে।। আমি আবার ধমক দিয়ে বললাম- বলিস না কেন, জামার কালার কি ছিলো?? জাহিদ আমতা আমতা করে বলে- লাল, নীল, হলুদ কি জানি অনেক কালার।।
আমি অধিক রাগের চোটে হেসেই দিলাম, তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম- আরে বাপ, লাল নীল হলুদ মানে কি? বেটা ওই মাইয়া কি রংধনু নাকি, রিক্সা নিয়া কি আকাশে গেছে, লাল নীল হলুদ কইলি, সবুজ বেগুণী এইগুলা আর বাদ দিলি কেন? এইগুলাও বল।। বা****ল জাহিদ এবার একটু জোর গলায় বললো- আরে না শোভন, শুন মনে হয় জামাটা দুই কালারের।। লালও আছে, নীলও আছে।। আমি বললাম- সিওর তুই?
-হ, বন্ধু!!
আমি ফোন রেখে দিয়ে, একটা ম্যাসেজ টাইপ করলাম- “লাল নীল পোশাকে পরীটা আমার সামনে দোলা দিয়ে চলে গেলো, একবার ফিরেও চাইলো না।। অথচ কত রমনী আড় চোখে আমাকে দেখে চোখ সরাতে ভুলে যায়।।” জাহিদের যে হ্যাবলা মার্কা চেহারা, এই ম্যাসেজ এখন আদিবাকে পাঠাতে বলবো আমি, এটা ভাবতেই হাসি পাচ্ছে।।না!! না!! না!! আদিবার তবুও কোন সাড়া শব্দ নেই।। আমার হিসাব মিলেই না, একটা মেয়ে কিভাবে এতটা কৌতুহল চেপে রাখতে পারে।। একটা সিংগেল মিসড্ কলও আসলো না, আদিবার নাম্বার থেকে।। এবার ভাবলাম, শেষ চিকিৎসা নেই।। জাহিদকে কল দিয়ে বললাম- জরুরী কথা আছে, আমার বাসার নিচে আয়!
প্রেমিক পাগল জাহিদ ছুটে এলো আমার বাসায় নিচে।। আমরা একটা চা স্টলে বসলাম।। জাহিদের চোখে চোখ রেখে বললাম- আচ্ছা, আদিবার নাম্বার কি ঠিক আছে? এমন তো হচ্ছে না, আমাদের কাছে যে নাম্বার আছে, সেটা ওর মা অথবা বাবা ব্যবহার করে।। এসএমএস পড়তে জানে না এমন টাইপ কেউ!!
গাধাটা হাঁ করে তাকিয়ে আছে!!
আমি আমার নাম্বার থেকে আদিবার নাম্বারে কল দিলাম।। একটা মেয়ে ধরলো।। কয়েক সেকেন্ড কথা বলে বুঝলাম, না আদিবাই হবে সম্ভবত।। অন্তত কোন তরুণীর গলা যে ছিলো এতে কোন সন্দেহ নেই।। তাহলে ঘাপলাটা কোথায়?? কিছু একটা ভুল তো হচ্ছেই আমাদের!! ফোন ম্যাসেজ অপশন বাদ দিয়ে আদিবার ফেসবুক আইডি ফলো করা ধরলাম।। গবেষণা চলে আমার, আদিবার আইডিতে কোন ছবি দেয়া নাই।। নিরেট আদিবা সুবাহ্ নামে একটা সাদামাটা আইডি।। সব প্রাইভেট করা।।
এদিকে কুরবানির ঈদ এসে যাচ্ছে প্রায়।। একদিন আদিবার আইডিতে দেখলাম, পাবলিক করা স্ট্যাটাস- “ঈদে বাড়ি যামু, কেউ আমারে ট্রেনের একটা টিকেট ম্যানেজ করে দ্যান না!! আমি তারে প্রাণ ভরে ভালো ভাসা দিমু।” বুঝলাম ফানি স্ট্যাটাস।। তবুও প্ল্যান ডি সাজালাম।। জাহিদকে আমার বাসায় ডেকে বললাম- কমলাপুর যাবি আজকেই, ঈদের অগ্রিম টিকেট ম্যানেজ করবি।। কেমনে করবি জানি না, তিনটা টিকেট লাগবে।।
-আচ্ছা দোস্ত!!
বেচারা রাত-দিন বিশাল লাইন ধরে অনেক কষ্টে তিনটা টিকেট ম্যানেজ করলো।। আমি ওর ডেডিগেশন দেখে মনে মনে বলি- হায়রে ভালোবাসা”! মানুষকে দিয়ে কি না করায়!! ঈদ ২৪ তারিখে, টিকেট ম্যানেজ হলো ১৭ তারিখের।। একটা টিকেট বাদামী খামে ভরে, সোজা আদিবার বাসায় গিয়ে দরজার নিচ দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে আসলাম।। খামের ভিতর ছোট্ট একটা চিরকুটও ছিলো।। ”তোমার ট্রেনের টিকেট- নিরাপদে বাড়ি যাও।।” ১৭ তারিখ আমি আর জাহিদ কমলাপুর রেল স্টেশনে।। জামালপুরগামী তিস্তা ট্রেনের “গ” বগির ডাব্লিউ ১৩, ১৪ নাম্বার সিটে বসে আছি।। আদিবাকে ডাব্লিউ ১৫ এর টিকেট দেয়া আছে।। আদিবার আগমনের অপেক্ষায় আমরা দু’জন।। কিন্তু একি অপেক্ষা করতে করতে ট্রেন ছেড়ে দিলো!!
না আদিবা এলো না, বরং ঐ সিটে মাগনা এক ব্যাটা বসে যাচ্ছে।। ট্রেন লোকে লোকারণ্য, তিল ধারণের ঠাঁই নাই।। শুধু শুধু জামালপুর যাওয়ার কোন মানেই হয় না, দুঃখের চোটে এয়ারপোর্ট এসে ট্রেন বিরতি দিলে নেমে পড়লাম।।
না!! না!! না- কিছুতেই হিসাব মিলে না।। আদিবা ম্যাসেজ পাইলো, উড়ো টিকেট পাইলো, গিফট পাইলো আর বিন্দুমাত্র আগ্রহ নাই ওর।। একটা মানুষের কি নূন্যতম কোন কৌতুহল নাই!!
আমি সাতপাঁচ ভেবে জাহিদকে বললাম- আচ্ছা কাকতালীয় ভাবে এমন হতে পারে কি, ঐ বাসায় দুইটা আদিবা থাকে।। আমরা গিফট্ টিকেট দিচ্ছি ভুল আদিবাকে।। আর ম্যাসেজ দিচ্ছি আসল আদিবাকে? আদিবা নামটাও আজকাল কমন।। আর মজার ব্যাপার, ঐ বাসা পুরোটা সম্ভবত মেয়েদের ব্যাচেলর বাসা হিসেবেই ভাড়া দেয়া।। সুতরাং, দুইটা আদিবা থাকা অসম্ভব কিছু না।। আর, আমাদের একটা না একটা ভুল তো আছেই।।
বলদ জাহিদ খালি আমার দিকে তাকিয়ে আছে, কিছু বলছে না।। আমি আবার বললাম- তোর কাছে ছবি আছে আদিবার? জাহিদ অপরাধীর মত জবাব দিলো- না বন্ধু, ছবি কই পাবো বল? আমি ভাবলাম, আদিবার ফেসবুকেও তো ছবি নাই।। পরক্ষণেই আবার জাহিদকে বললাম- আচ্ছা শুন জাহিদ, আমি তোকে আদিবার চেহারার বর্ণনা দেই, দেখ তো মিলে কিনা?
– আচ্ছা বন্ধু!!
আমি বলে গেলাম- আমি যাকে পার্সেল দিছি, ঐ মেয়েটার গায়ের রঙ শ্যামলা।। চোখ সুন্দর, হাইট ৫ ফুট ২ এর মত হবে।। চেহারা এভারেজ, লম্বাটে মুখ।। স্বাস্থ্য চিকন চাকন মনে হয়।। জাহিদ উত্তেজিত কণ্ঠে বললো- হ, হ দোস্ত।। আসল আদিবাই।। এইরকমই চেহারা, ভুল নাই কোনো।। এদিকে আমি এত এত ঘাঁপলা নিয়ে ভাবছি, যে সব ভুল হলেও হতে পারে- তবুও কোন কূল কিনারা পাচ্ছি না।। অদ্ভুত, মেয়েটা এত কিছুর পরেও নূন্যতম কৌতুহল দেখাচ্ছে না।। রহস্যটা কি, সব বাদ দিয়ে রহস্য জানার জন্যে মন আকুলি বিকুলি করছে।। আমি আবার কিছুক্ষণ ভেবে জাহিদকে বললাম- আচ্ছা, তুই কি সিওর আদিবার কোন বয়ফ্রেন্ড নাই? জাহিদ খুব জোর দিয়ে বলে- না রে ভাই নাই কোন বয়ফ্রেন্ড।।
অতঃপর আদিবা মিশন বাদ।। আসলে খুব বেশি কিছু করারও নাই আমার।। একে একে চারটা মাস্টার প্ল্যান ব্যর্থ হলো।। এভাবে কিছু দিন এমনি কেটে গেলো!! আচমকা এর মধ্যে একদিন নতুন করে আবার আশার আলো দেখলাম।। ঈদের পর পর আদিবার বাবা ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি হলো, উনার ডেংগু জ্বর দেখা দিয়েছে।। ইমারজেন্সি বি+ ব্লাড লাগবে দুই ব্যাগ।। আদিবা ফেসবুকে ব্লাড চেয়ে পোস্ট দিয়েছে।। আমি জানতাম, জাহিদের ব্লাড গ্রুপ “বি পজেটিভ”!! আমি একটু ভেবে জাহিদকে বললাম- তোর নাম্বার থেকে আদিবাকে কল দে তো, বল তুই ব্লাড ডোনার।। যা থাকে কপালে, তুই ব্লাড দিবি।।
-আচ্ছা বন্ধু!!
জাহিদ এবার ফোন বের করলো।। কিন্তু সে আদিবাকে না দিয়ে সোহেল ভাইকে কল দিচ্ছে।। সোহেল ভাই ওর সেই বিবাহিত ফুপাতো ভাই, যার বিয়েতে গিয়ে আদিবাকে পেয়েছিলো জাহিদ।। আমি বললাম- আরে আদিবাকে আগে কল দে।। “বি পজেটিভ” গরুর রক্ত, ঠুস কইরা ডোনার পাইয়া গেলে পরে এই কামও হইবো না।। জাহিদ নির্লিপ্ত গলায় বললো- দাঁড়া বন্ধু, সোহেল ভাইকে আগে জানাই ব্যাপারটা।। আমি অবাক হয়ে বললাম- কোন ব্যাপারটা, সোহেল ভাইকে কি ব্যাপার জানাবি? জাহিদ যন্ত্রের মত বলছে- রক্ত দিতে যাবো যে আমি, এই ব্যাপারটা!!
আমি সরল গলায় বললাম- কেন, উনারে জানানের কি আছে, জানাইলে জানাইস পরে জানা, এখন আদিবারে কল দে আগে।। জাহিদ শান্ত গলায় বলছে- দোস্ত শুন, আমি যাই করি না কেন, সোহেল ভাইরে বলি।। উনি আমার বড় ভাই, বা বন্ধুর মত বলতে পারিস।। সে শুরু থেকেই সব জানে।। আমরা কবে কি করলাম, কবে পার্সেল দিলাম, টিকেট দিলাম, সব জানে।। সেও আমাকে অনেক সুন্দর সুন্দর পরামর্শ দেয় এই প্রেমের ব্যাপারে।। আমি কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।। মেজাজ খুব খারাপ, আস্তে করে আমার প্যান্ট থেকে বেল্ট খুলতেছি, আমার ৩১ সাইজের কোমরে ৩৪ সাইজের জিন্স প্যান্ট পড়া।। বেল্ট দিয়ে এডযাস্ট করে রাখা ছিলো।।
বেল্ট খুলার সাথে সাথে প্যান্ট নিচে খুলে পরে যেতে নিলো, বাম হাতে প্যান্ট উঁচু করে ধরে, অন্যহাতে বেল্ট দিয়া জাহিদ গন্ডারটাকে সজোরে দুইটা বারি দিলাম।। জাহিদ ভড়কে গেলো, আচমকা এমন কিছু সে আসা করে নাই, ভয়ার্ত গলায় বলছে- ঐ কি হইলো তোর, কি শুরু করলি?? মারোস কেন, পাগল হইলি নাকি?
আমি উত্তেজিত কণ্ঠে বলে যাচ্ছি- ওই গাধার গাধা, বলদের বলদ, তুই আর কথা কইস না।। তুই তোর সোহেল ভাইকে সব বলে দিস, সে নিশ্চই তার বউকে এসব বলে।। আর তার বউ হয়তো আদিবাকে সব প্ল্যান আগে থেকেই জানিয়ে দেয়।। তাইতো, আদিবা সাড়া দেয় না।। আদিবার কাছে তো এগুলো আর সারপ্রাইজ বা কৌতুহল থাকে না।। আসলে এত কষ্ট করে এত কাহিনী করে আমরা আদিবাকে কি টেনশন দিবো, চিন্তায় ফালাবো উল্টা আমাদের কান্ড দেখেই এই মেয়ে মজা পাইছে।। আমাকে সহ বেকুব বানাই দিলি তুই, মনডায় চায়, তোরে বাইরিয়া চামড়া তুলে লবণ লাগাই দেই।। গাধাটা কিচ্ছু বলে না, একদম হাঁ করে তাকিয়ে আছে!! সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী মাসের চার তারিখ আদিবা আর জাহিদের বিয়ে।। বিয়ে ঢাকার পুলিশ কনভেনশন সেন্টারে।। তিন বছরের সম্পর্কের সফল পরিণতি হতে যাচ্ছে।। দোয়া করবেন সবাই!!