ছেলে পক্ষ নবনীকে দেখতে এসেছে।মেহমান চলে যাওয়ার পর আয়েশা বেগম মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসি হাসি মুখ করে বললেন, নিশ্চয় তোর এই ছেলেটা পছন্দ হয়েছে? নবনী বললো, এইটা তুমি কি বললা, মা? ছেলের হাইট দেখেছ? রাস্তায় হাটতে গেলে তো এই ছেলে আমার হাটুর নীচে পড়ে থাকবে। মানুষ ডাকবে খাট্টা পীর বলে! কোথাও বেড়াতে গেলে ওকে তো আমাকে কোলে করে রিকশায় তুলতে হবে।তোমার একমাত্র মেয়ের জামাই এমন দুই ফুটের হউক তা তুমি চাও? আয়েশা বেগম বললেন, কি বলছিস তুই! ছেলের হাইট পাঁচ ফুট চার ইন্ঞি! তা হউক, এই ছেলে ক্যানসেল করে দাও।
পরের সপ্তাহে ঘটক এক লম্বা ছেলের সন্ধান নিয়ে এলো। ছেলে সদ্য ইন্জিনিয়ারিং পাশ করেছে। আয়েশা বেগমের ছেলে পছন্দ হলো। তিনি মেয়েকে বললেন, এই ছেলের সাথেই তোর বিয়ে দেবো,এইবার না করতে পারবি না।
নবনী বললো, তোমার কি মাথাটা গেছে, মা! এই ছেলের হাইট দেখেছ? এই ছেলের সাথে আমার যায়? বাসর রাতে তো চেয়ারের উপর উঠে ওর গলায় আমাকে মালা পড়াতে হবে। বান্ধবীরা দেখলে ক্ষেপাবে না? ওরা বলবে, কি রে নবনী, এই তালগাছ জোগাড় করলি কোত্থেকে? মান থাকবে? তুমিই বলো?শত হলেও তোমার একমাত্র মেয়ের জামাই,,,,
আয়েশা বেগম আর কথা বাড়ালেন না। এর একমাস পর ঘটক একটা অসম্ভব ভালো ছেলের সন্ধান নিয়ে এলো। ছেলে ডাক্তার। উচ্চবংশজাত ছেলে। আয়েশা বেগম আল্লাহকে ডাকতে লাগলেন। মেয়ের যেন এই ছেলেকে পছন্দ হয়। নবনী বললো, দুর মা,এই ছেলের চোখদুটো দেখেছো? বিড়ালের মতো চোখ। দেখলেই ভয় লাগে। তুমি শেষমেশ একটা বিড়ালের সাথে আমার বিয়ে দিবা? আয়েশা বেগম মেয়ের বিয়ের আশা ছেড়ে দিলেন। নবনীও হাল ছেড়ে বাঁচলো।
রাহাত এবার ভার্সিটির ফাইনাল ইয়ারে। লেখাপড়ায় অসম্ভব মেধাবী, কিন্তু নবনীর কেন যেন ওকে বোকা বলে মনে হয়। তার এই চাচাতো ভাইটা লেখা পড়া ছাড়া কিছু বুঝে না। ওদের বাসায় থেকেই লেখা পড়া করে, নবনী ওকে আকারে ইংগিতে অনেক কিছুই বুঝাতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে। নবনী যে এক কথায় এই গাধাটার জন্য জীবন বিসর্জন দিতে পারে, তা গাধার মাথায় ঢুকেই না। রাহাত যদি বলে নবনী, এই বোতলে বিষ আছে, আমাকে খেয়ে দেখাতে পারবে? নবনী কোন প্রশ্ন না করেই সেই বিষ খেয়ে ফেলবে! দুঃখ একটাই মা বাবা কখনোই এই গাধাকে মেনে নেবে না। আজ নবনীর মনটা ভীষণ খারাপ। সে রাহাতের রুমে ঢুকল, রাহাত বইয়ে মুখ গুঁজে আছে। নবনী যে রুমে ঢুকল তার কোন প্রতিক্রিয়া নাই। নবনী পাশে বসে বললো, রাহাত ভাইয়া,তোমার কখনো মন খারাপ হয় না? রাহাত অবাক হয়ে বললো, আমার অহেতুক মন খারাপ হবে কেন,? জান,আজ আমার একটা বান্ধবী তার বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে পালিয়েছে। রাহাত বললো, আচ্ছা।
তোমার কাউকে নিয়ে পালাতে ইচ্ছে করে না? আমার এসব বাজে ইচ্ছে করবে কেন? কি বলছিস পাগলের মতো? তোমার কখনো কাউকে ভালো লাগেনি? লেগেছে তো। নবনী উৎসাহ নিয়ে বললো, কাকে? একটা ছাগল কে। ছোট বেলায় বাবার সাথে বাজারে গিয়েছিলাম,একটা কালো ছাগল আমার মনে ধরলো। বাবাকে বলতেই কিনে দিল।তিনটা বাচ্চা ও হয়েছিল, একদিন ছোট বাচ্চাগুলো কুকুরে খেয়ে ফেলল। কি যে কষ্ট পেয়েছিলাম তখন! নবনী ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
নবনী বললো, জান রাহাত ভাইয়া, আমার মাঝে মাঝে মরে যেতে মন চায়। কীভাবে সহজে মরা যায়, আইডিয়া আছে তোমার? রাহাত নির্বিকারে বললো, ছাদ থেকে লাফ দে,সহজেই মামলা খতম! শুনেছি, আত্মহত্যা করলে মানুষ দোজখে যায়,কথাটা কি ঠিক? আমি কি করে বলবো, এর আগে তো আর আমি আত্মহত্যা করিনি। করলে তোকে বিষয়টা বলতে পারতাম। নবনী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বেড়িয়ে গেল। এই গাধার সাথে আর কথা না বাড়ানোই নিরাপদ। আয়েশা বেগম মেয়েকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। মেয়ে কোন ছেলেই পছন্দ করছে না।ওর কি কোন পছন্দ আছে? তাও তো বলছে না। নবনীর বাবা আয়েশা বেগম কে বলেছেন মেয়ের ব্যাপারে খোঁজ নিতে। তিনি অচিরেই মেয়ের বিয়ে দিতে চান।
আজ একটা ছেলের আসার কথা।ঘটক বলেছে, এই ছেলেকে নবনীর পছন্দ হবেই।রুপেগুনে অনন্য ছেলে। এ রকম ছেলে কোটিতে একটা পাওয়া যায়। আয়শা বেগম মেয়ের রুমে ঢুকলেন। কিছুক্ষণ বসে থেকে গলা খাঁকারি দিতে লাগলেন। নবনী বললো, মা কিছু বলবা? আয়েশা বেগম বললেন, আজ একটা ছেলের আসার কথা। নবনী বললো, আমি জানি। তোর কি পছন্দের কেউ আছে? আরে না! কি যে বল! তোর বাবাকে বলবো না। আমাকে সত্যি কথাটা বল। আমাকে আবার কোন গাধা পছন্দ করবে? আয়েশা বেগম ফিসফিস করে বললেন, তুই আমাকে বান্ধবী মনে করে সব কিছু বলতে পারিস।কথা দিচ্ছি তোর বাবাকে বলবো না।
নবনী ফিসফিস করে বললো, সত্যি জানতে চাস? আয়েশা বেগম অবাক হয়ে বললেন, তুই আমাকে তুই তোকারি করছিস কেন? নবনী বললো, বান্ধবীকে কেউ আপনি করে বলে নাকি? আশ্চর্য! আয়েশা বেগম রাগ করে বেড়িয়ে যেতে গিয়ে দরজার সামনে থেকে ফিরে এলেন।মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন, ঠিক আছে বল। নবনী বললো, একবার কি হলো শোন,তুই আমাকে গত সপ্তাহে মার্কেটে পাঠালি না রাহাত ভাইয়ার সাথে? সেদিন তো ব্যাটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলছে। আয়েশা বেগম ফিসফিস করে বললেন, কি ঘটনা? নবনী ফিসফিস করে বললো, ব্যাটা আমাকে একা পেয়ে রিকশার হুড লাগিয়ে দিলো, তারপর জড়িয়ে ধরলো,,আয়েশা বেগম চাপা চিৎকার দিয়ে বললেন, বলিস কি রে! হারামজাদা এতো খারাপ!
খারাপের আর দেখেছিস কি? একদিন তো আমাকে কু প্রস্তাব দিয়ে দিল! হায় আল্লাহ! বলিস কি! তুই কি করলি? কি আর করবো, রাজি হয়ে গেলাম! আয়েশা বেগম আর্তচিৎকার দিয়ে বললেন, রাজি হলি মানে? এক রাতে চুপি চুপি রাহাত ভাইয়ের রুমে ঢুকে দেখি দরজা খোলা, আমি আস্তে করে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বাতি নিভিয়ে দিলাম। তুই আমাকে এইসব বলছিস, লজ্জা করছে না? গাধার মতো কথা বলিস না তো! তুই আমার বান্ধবী না! আয়েশা বেগম দরজার দিকে যেতে যেতে ঘটক কে ফোন করে বললেন, ছেলেকে বল,আসার দরকার নাই।