-ভাইয়া আমার আইডিতে লগিন হচ্ছেনা,একটু দেখবেন। (রাত্রি)
> কেনো কি হয়েছে (সিয়াম)
– জানিনা (রাত্রি)
> আমি তো এসব বিষয়ে বেশি জানিনা (সিয়াম)
-তবুও যদি দেখতেন, তাহলে একটু ভালো হতো (রাত্রি)
> আইডির ইমেইল,আর পাসওর্য়াড দাও।
-ইমেইল তো নাই।
> তাহলে ফোন নাম্বার দাও।
-হুম নেন।
> পাসওর্য়াড বলো।
-সিয়াম আই লাভ ইউ।
> মানে কি?
– এইটাই তো আমার আইডির পাসওর্য়াড।
> শেষ পর্যন্ত আমার নামের সাথে মিল রেখে পাসওর্য়াড দিয়েছো কেনো?
-এছাড়া তো মনে থাকতো না আমার।
> মনে থাকতো না বলে আমার নাম দিয়ে পাসওর্য়াড দিতে হবে,তোমার নাম দিতে পারো না।
মনে হচ্ছিলো আইডিতে লগিন করবো না,কিন্তু সেটা আর হলো না। রাগ হচ্ছিলো অনেক। পৃথিবীতে এতো ছেলের নাম থাকতে সে কেনো আমার নাম দিবে,তারপরে আবার লিখেছে সিয়াম আই লাভ ইউ। অনেক রাগ নিয়ে রাত্রির আইডি লগিনকরলাম। লগিন করতেই লগিন হয়ে গেলো।আমাকে মেয়েটা কি পেয়েছে।সবসময় আমার সাথে লেগে থাকে,আইডিরকিছুই হয়নি,শুধু শুধু আমার কাছে এসে,আমাকে জ্বালানো।
-কি ব্যাপার আইডির তো কোন সমস্যাই ছিলো না। (সিয়াম)
> আমি তো সেটা জানিনা,শুধু জানি আমার ফোন দিয়ে আইডিটা লগিন করতে পারতেছিলাম না। (রাত্রি)
-এখন পারবে দেখো।
> আচ্ছা ধন্যবাদ ভাইয়া।
-ঠিক আছে।
> এখন তাহলে আসি ভাইয়া।
> আচ্ছা যাও।
-অনেক ধন্যবাদ।
> তুমি এখন যাও আমার সামনে থেকে।
রাত্রি চলে গেলো,মনে মনে এটাইচাইতেছিলাম।ও এখান থেকে চলে না গেলে বিভিন্ন প্রশ্ন করে বসতো,আর আমাকে বোকার মতোসেগুলোর উত্তর দিতে হতো, মেয়েটা কেমন সেটা আমি আজও বুঝতে পারিনি।এখানে থাকলে ড্যাবড্যাব করে আমার দিয়েচেয়ে থাকতো, আর মনে যা ইচ্ছে হতো সেটাই বলতো।
তখন ওর চোখের দিকে তাকালে মনে হতো আমার মাঝেই তার সবচাওয়া পাওয়া। ওর এমন ব্যাবহারে আমি বুঝতে পেরেছি রাত্রি আমাকে ভালোবাসে,বিভিন্ন ভাবে বলারও চেষ্টা করে কিন্তু সে আমার জন্যই সেটা বলতে পারে না। আসলে ওর আইডিটার কিছুই হয়নি,ওর এভাবে বলার কারন আমি বুঝতে পেরেছি। ওর আইডিটা সে আমাকে দিয়ে গেলো ব্যাবহার করার জন্য । আজকাল এইটা মানতেই হবে যে সব প্রিয় মানুষেরা সব দিয়ে দিবে তবে নিজেরফেসবুক আইডি দিতে চাইবে না।কিন্তু রাত্রি সবসময় চাই,তার সবকিছু দিয়েআমাকে বুঝাতে, ও আমাকে কত ভালোবাসে। কিন্তু বারবার সে ব্যার্থ হয়। রাস্তা দিয়ে আনমনে হেঁটে চলেছি, হটাৎ করে কারো ডাকে হুশ ফিরে পেলাম।
-কি খবর দুলাভাই, আনমনে কোথাই হেঁটে চলেছেন। (ছেলেটি)
> জানিনা,তবে দুলাভাই বললে কেনো? (সিয়াম)
-তাহলে কি বলে ডাকবো (ছেলেটি)
> সিয়াম বলে ডাকবে (সিয়াম)
– এটা কি করে হয়,আমার বোনকে আপনি বিয়ে করেছেন, তাহলে তো আপনি দুলাভাই হন আমার।
> তোমার বোনকে কখন বিয়ে করলাম।
-মিথ্যা বলবেন না, রাত্রিকে বিয়ে করে এখন বলছেন বিয়ে করেন নি।
ছেলেটির মুখে রাত্রির নাম শুনে থেমে গেলাম। রাত্রি আমার পেছনে দুইবছর ধরে লেগেআছে।কিন্তু কোন ভাবেই সে আমাকে ওর প্রতি দুর্বল করতে পারেনি। তাহলে সে এভাবে বলে আমাকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে । ছেলেটির কাছে থেকে চলে আসলাম। কিছুদুর যেতেই আবারো দুলাভাই বলে ডাকতে শুনলাম । যতই এলাকা ঘুরে বেড়াই,এলাকার যত মানুষের সাথে দেখা হয় ঘুরেবেড়ানোর সময় ততই কমবেশি সবাই দুলাভাই বলে ডাকে। রাত্রির সাথে আমার বিয়েই হলো না,আর আমি দুলাভাই হয়ে গেলাম। ওদের মুখে দুলাভাই ডাক শুনে অনেক লজ্জালাগতেছিলো। এলাকার সবাই এখন সিয়াম না ডেকে দুলাভাই ডাকতেছে। ওদের মুখে এমন কথা আর শুনতে চাইছিলাম না,কিন্তু তারা একদম অবুঝ হয়ে গেছে, সেইজন্য দ্রুত বাসাই চলে আসি।
-ভাইয়া তুই চুরি করে বিয়ে করেছিস কেনো? (আমার বোন)
> চুরি করে বিয়ে করেছি মানে (সিয়াম)
-ন্যাকা করবি নাতো,সত্যি করে বল চুরি করে বিয়ে করলি ক্যানো (বোন)
> সত্যি বলছি আমি তো বিয়ে করিনি।
-মা ভাইয়া এসেছে,আর এসেই দেখো মিথ্যাবলা শুরু করেছে। বোনের ডাকে মা রান্নাঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসলো।
-কিরে সিয়াম, বিয়ে করবি আমাদেরকে বললেই হতো,এতো নাটক করার কি দরকার ছিলো (মা)
> কি বলছো এসব তুমি,আমি তো বিয়ে করিনি,আর বিয়ে করলে তো তোমাদেরকে জানাবো।
-মিথ্যা বলার দরকার নাই,দুদিন পরে অনুষ্ঠান করে বউমাকে ঘরে তুলে নিবো।
> কিসের বউমা মা,আর কোন মেয়ে।
-রাত্রির সাথে তোর দুদিন আগে বিয়ে হয়নি।
> না। কে বলেছে তোমাকে এসব।
-তোর বোন বলেছে।
> ওর সাথে সত্যিই আমার বিয়ে হয়নি,একটু বোঝার চেষ্টা করো। কাউকেই কোনভাবে বুঝাতে পারছি না। মা বোনকে আবারো ডাকলো ।
-হ্যাঁ ভাইয়া আমি বলেছি,তুই রাত্রিকে বিয়ে করেছিস। এই দেখ ভাবি ওর ফেসবুক আইডিতে পোষ্ট দিয়েছে,ওর সাথে তোর দুদিন আগে বিয়ে হয়েছে,আর তোদের দুজনার ছবিও আছে।
> বোনের হাত থেকে ফোন নিয়ে দেখলাম ঘটনা সত্যি।
এইজন্য সবাই আমাকে দুলাভাই বলে ডাকছে।আর বাড়ির সবাই বিশ্বাস করে ফেলেছে ওর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। কিছুক্ষন পরে বাবা এসে আমাকে উত্তম মাধ্যম দিয়ে দিলেন। পরিবারের কাউকেই বোঝাতে পারলাম না,ওর সাথে আমার বিয়ে হয়নি। সবাই মানতেই নারাজ। বাবা বলে দিলো দুদিন পরে বাবা মা অনুষ্ঠান করে মেয়ে ঘরে তুলে আনবে। তাহলেই সব সমস্যার সমাধানা হয়ে যাবে।
বাবা মাকে বুঝাতে না পেরে রাগে ঘরের দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম। মনে হচ্ছিলো,রাত্রিকে কাছে পেলে চড় মেরে ওর গালটা ফুলিয়ে দিতে। কিন্তু সেটাও এখন সম্ভব না। কোন উপাই বের করতে পারছিলাম না। কি করে সবাইকে বোঝানো যায়,সেটা ভাবছিলাম। শেষ পর্যন্ত অনেক ভেবে আমার বন্ধুকে ফোন করে বললাম, রাত্রিকে গিয়ে বল বিকালে মাঠের দিকে আসতে,ওর সাথে আমার কথা আছে। বিকাল বেলা মাঠের দিকে গেলাম। রাত্রিকে আজ কিছু বলার দরকার,মেয়েটা অনেক বাড়াবাড়ি করে ফেলছে। মাঠে গিয়ে দেখি রাত্রি আগে থেকেই উপস্থিত। রাত্রির কাছে চলে গেলাম। রাত্রির কাছে গিয়ে দাড়িয়ে রইলাম কোন কথা বললাম না, রাত্রি একবার আমার দিকে তাকালো শুধু, আর কোন কথা বললো না রাত্রি। দুজনেই কিছুক্ষন নিরবতা পালন করলাম। নিরবতা শেষ করে প্রথমে আমিই বললাম,
-রাত্রি তুমি এসব কি করেছো।
> যা সত্যি তাই করেছি।
-যা সত্যি মানে, তোমার সাথে আমার বিয়ে হলো কখন।
> বিয়ে হয়নি,তবে এবার হবে।
-এবার হবে মানে।
> এবার আপনের সাথে আমার বিয়ে হবে।
-আমি এই বিয়েতে রাজী না।
> কেনো?
– তোমাকে আমার পছন্দ না।
> বললেই হলো, আমার মাঝে কি নেই,যেটা অন্য মেয়ের মাঝে আছে।
-তোমার মাঝে কিছুই নাই।
> বললেই হলো,আমার মাঝে সব আছে, আমি আপনের থেকে শুধু দুই আঙ্গুল ছোট, আমি দেখতেও অনেক সুন্দর। আট দশটা ছেলে সবসময় আমার প্রেমে হাবুডুবু খাই।
– তাহলে ওদের সাথে প্রেম করবে,আমাকে পেলে কেনো?
> সবাই তো সিয়াম না।
-তাই বলে তুমি সবাইকে বলে বেড়াবে,তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।
> আমার ভুল হয়ে গেছে, এটা না বললে আমি আপনাকে পেতাম না(মাথা নিচু করে)
-তুমি থাকো তোমার বিয়ে নিয়ে,আমি তোমাকে বিয়ে করবো না,কথাটি বলে চলে আসছিলাম। পেছন থেকে রাত্রি আমার হাত চেপে ধরলো।
-অামি আপনাকে সত্যি ভালোবাসি,সেইজন্য এগুলো করেছি ।আর আমাকে না ভালোবাসলে আমি সুইসাইড করবো।
> রাত্রির মুখের দিকে তাকালাম। রাত্রি কথাটি বলে মাথা নিচু করে আছে। কিন্তু রাত্রির ঠোটটা কাঁপছে। ইচ্ছে হচ্ছিলো রাত্রিকে জড়িয়ে ধরে,ওই কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে কিস করতে,কিন্তু করলাম না। দুদিন পরেই না হয় সব করবো। এটা ভেবে আর কিছু করলাম না।
> এতোদিন লাগলো কথাটি বলতে,এই কথাটি না বললে সত্যিই আমি তোমাকে বিয়ে করতাম না। আর সুইসাইড করারর কথা আরাকবার মুখে আনলে আমিই তোমার আগে চলে যাবো ওপারে।
– রাত্রি আমার মুখে এমন কথা শুনে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। সত্যিই আমি আর এমন কথা বলবো কোনদিন। রাত্রি আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখে,কিছু শর্তও জুড়ে দিলো, আজকে থেকে তুমি আমার,আজকে থেকে তোমাকে অামি অন্য কারো হতে দেবো না, আর তুমিও অন্য মেয়েদের দিকে তাকাবে না,সবসময় আমাকে দেখবে। আমিই তোমার সব আমিই তোমার শেষ। কথাটি জেনো মনে থাকে।
> তুমি যখন বলেছে তখন তো মনে থাকবেই। আর ভুলে গেলে তুমি তোমার ভালোবাসা দিয়ে মনে করিয়ে দেবো।
– ভুলে গেলে কিছুই পাবে না।
> বললেই হলো,তোমার সবকিছুই এখন থেকে আমার, আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করবো এখন থেকে।
> যাহ দুষ্টু কোথাকার।
রাত্রি আপনি থেকে তুমিতে নেমেছে,অনেক ভালোলাগছিলো তখন, কেউ আমাকে এতো ভালোবাসে,আর আমি তাকে না করে এতোদিন দুরে রেখেছিলাম। এখন থেকে কেউ একজন সিয়ামের জীবনের দায়িত্ব নিয়ে নিলো। দুজনে দুজনের হাত ধরে বাড়ির দিকে হাটতে থাকলাম। আর মনে মনে ভাবতে থাকলাম দুদিন পরেই পেয়ে যাবো আমার রাত কাটানোর জন্য প্রিয় কোলবালিশকে।