ভিষণ ভালোবাসি

ভিষণ ভালোবাসি

মাসের শেষে প্রতি বারের মতো এবার ও আমার কাছে একটা টাকা ও নাই। ভাবছি কাল আপনের আম্মু টাকা দিবেতো। আমি প্রতিদিনের মতো আজও আপনকে পড়াতে আসলাম। আমি আপনের আম্মুকে সালাম দিলাম ওনি ও আমার সালামের প্রতি উত্তর করলেন। “আন্টি আপন বাসায় আছে.? ,,, না বাবা ও বাইরে খেলছে। তুমি বসো আমি ওকে ডেকে নিয়ে আসছি। জি আচ্ছা,,বলে আপনের পড়ার টেবিলে যেয়ে বসলাম। বাড়িতে আমি একা আর কেউ নাই।

হঠাৎ রান্নাঘর থেকে গুন গুন করে শব্দ হচ্ছে কে যেন গান গাচ্ছে। অতঃপর আমি ভাবলাম না আন্টি আর আপন ছাড়া এ বাড়িতে আর কেউ থাকেনা। হটাৎ আপন আসলো স্যার কেমন আছেন.? ভালো আছি,,, আপন কোথায় ছিলে অনেক্ষণ বসে আছি,,,স্যরি স্যার আন্টি আমায় বলছে ইসলাম আজকে পড়া না হলে ওকে মারবে তুমি জি,,,আন্টি বাসায় তো আমি ছাড়া আর কেউ ছিলোনা তবুও যেন রান্নাঘর থেকে শব্দ আসছিল যেন ভিতরে কেউ আছে.? হ্যা ইসলাম ভিতরে একটা মেয়ে আছে ও তোমার সাথে কথা বলেনি না,, কিন্তু,,,ও অনেক লাজুক মেয়ে গ্রামে বাড়িতো। ওকে আমি আজকে নিয়ে আসছি আমার বাবার বাড়ি থেকে,,,ওর নাম শান্তি। পোরা কপালি মেয়েটা ওর বাবা মারা গেছে,,,ও এসএসসি পরিক্ষার্তি ছিলো।

ওর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে ওদের সংসার,ই চলেনা,,,আর লেখাপড়া করবে কি করে। আন্টির মুখে শান্তির কথা শুনে আমার ভিষণ ওকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো। আপনকে পড়াতে পড়াতে এক সময় আন্টি শান্তিকে বললো স্যারকে নাস্তা দিয়ে আয়,,,হঠাৎ,ই আমি খেয়াল করলাম অনেক লাজুকতার সাথে শান্তি আমর জন্য খাবার নিয়ে আসছে,,,ওর মুখটা ভালো করে দেখা যাচ্ছিলোনা। অনেক চেষ্টাকরে আমি শান্তির মুখটা দেখলাম,,,যেমন ভদ্র তেমন সুন্দরি মেয়ে,,,কোন রকমে খাবারটা রেখেই ও চলে যায়,,,আন্টির মুখে শান্তির কথা শুনে ওকে আমার দেখার ইচ্ছে হচ্ছিলো,,,সেটা পুরণ হলো। শান্তিকে দেখে,ই যেন আমি এক মুহূর্তে কোথায় হারিয়ে গেলাম,,,আমার মনে হচ্ছিলো এতো সুন্দর একটা মেয়ের জীবনী এতো কষ্টের,,,এসব ভেবে আমি শান্তি প্রতি আরও মায়ায় পড়ে গেলাম।

দ্বিতীয় বারের মতো আমি ওকে আর দেখলাম না,,,আপনের পড়ানো শেষ করে আমি বাসায় আসবো আন্টি আমায় বললো ইসলাম নাও এই মাসের টাকাটা,,,আমি চলে চলে আসলাম। বাসায় এসে আমার মাঝে আমি এক নতুন শান্তির ইসলাম কে দেখতে পেলাম,,, যে ইসলাম আগে কখনো কোন মেয়েকে নিয়ে বাবিনি,,,সেই আমি আজকে শান্তির কষ্টের জীবনের কথা শুনে আর ওর ওই সুন্দর লাজুক চেহারা দেখে আমি এই প্রথম কোন মেয়ের প্রতি দূর্বল অনুভব করছি নিজেই নিজেকে। পরেরদিন সকালে আমি আয়নার সামনে গিয়ে নিজের,,,চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার চোখ দুটি লাল হয়ে গেছে,,,আমি বুঝলাম যে কাল রাতে ঘুমাতে পারিনি বলে এমন হইছে,,,আমার আম্মু আমাকে খাইতে ডাকছে আমি আম্মুকে বললাম আসছি,,,আম্মু বলছে ইসলাম তোর কি হয়ছে কাল রাতে খাইতে,,,ডাকছিলাম কিছু খাইলি কেনো,,,? এমনি আম্মু আমি মনে মনে বললাম এই আম্মুগুলো এতো বোঝে কেমন করে,,,আমি এখন একটি মুহূর্তের জন্য ও শান্তির কথা ভুলে থাকতে পারছিনা।

পর পর তিনদিন আপনকে পরাতে যায় কিন্তু শান্তির সাথে ইচ্ছে থাকলে ও কথা বলতে পারিনা,,,একদিন আন্টি বাসায় নাই আর আমি জানি শান্তি হয়তো রান্নাঘরে আছে,,,আপন পরছে আমি রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছি হাল্কা উকি দিয়ে দেখি ও রান্না করছে,,,পিছন থেকে আমি ওকে দেখছিলাম ওকে অনেক সুন্দর লাগছিলো,,,হঠাৎ করে ও আমাকে বললো কিছু বলতে চান আমাকে,,,আমি চম্কে উঠলাম আর বললাম হ্যা আন্টি বাসায় নাই,,,?না,,,এক গ্লাস পানি হবে হ্যা শান্তি আমায় বললো গত দুই তিন দিন ধরে দেখছি আপনি যেন আমায় কিছু বলতে চান,,,কি করে বুঝলেন.?না এমনি আমার মনে হলো,,,হ্যা আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই,,,শান্তি শুনে মুসকি মুসকি হাসছিলো।

অতঃপর ও আমায় বললো খালাআম্মা আসছে,,,আমি চলে আসলাম,,,আমি চলে আসার সময় আন্টি আমায় বললো ইসলাম আজকে খেয়ে যেও বাড়িতে মাংস রান্নাকরা হয়েছে,,,আর শান্তি অনেক ভালো রান্নাকরে,,,একবার খেলে আর ভুলতে পারবেনা,,,অবশ্য আমার খাওয়ার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু,,,আন্টিকে বললাম আন্টি আর একদিন খাবো আজকে একটু তাড়া আছে। এমনি ভাবে প্রাই,ই আমি শান্তিকে দেখে হাসতাম ও বুঝতে পারতো কিন্তু আমায় কোনদিন ও কিছু বলতো না,,,আর ও অনেক লাজুক মেয়ে ছিলো,,,আন্টি প্রাই,ই আপনকে পড়ানোর সময় বাজারে কেনাকাটা করতে যেতো,,,আজকে আন্টি বাসায় নাই,,,আমি শান্তির দিকে অপলোক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি আর ও আমায় দেখে হাসছিলো,,,শান্তি আমাকে বললো ঐ দিন কিছু একটা বলতে চেয়েছিলেন,,,আমি বললাম তুমি বুঝোনা,,,?না,,,তোমায় আমার ভালোলাগে আমি তোমায় ভালোবাসি সত্যি হ্যা,,,কিন্তু আপনি আমার সম্পর্কে জানেন না,,,আমি সব জানি কিকরে.? তোমার খালাআম্মার থেকে আমি সব শুনেছি।

শান্তি আমায় বললো ওই দিন খেয়ে যননি,,,আজকে খেয়ে যাবেন,,,আলুর দম আর লুচি করা আছে আপন খেতে চাইছিলো,,,আচ্ছা। আমি শান্তিকে বললাম আমার উত্তরটা কিন্তু এখনো পয়নি,,,শুনে ও ভিষণ হাসছিলো,,, আন্টি আসলো এবং আমাদের ভিতরে যা কথা হয়েছে উনি সব শুনেছেন,,,আমি আন্টিকে দেখে লজ্জায় কোনো কথা বলছিলাম না,,,আন্টি আমাদের দিজনকে,ই দেখে বলে উঠলো লজ্জা পাওয়ার কিছি নাই,,,এমনটা হতে পারে,,,আমি বললাম আপনি বলছেন আন্টি..?হ্যা, আন্টি আমি শান্তিকে অনেক ভালোবাসি,,,আপনি ইসলামের বুকে শান্তিকে তুলে দিবেন তো!!! আন্টি বললো হ্যা কিন্তু আজকে শান্তির মা আমাকে গ্রাম থেকে,,,চিঠি পঠিয়েছেন ওকে নিয়ে যেতে বলেছেন,,,আর আমি শান্তির মার সাথে তোমার বিষয়ে কথা বলবো,,,আন্টি আপনি আমার মায়ের মতো আপনাকে বিশ্বাস করি,,,হ্যা বাবা,,, কালকে,ই গ্রামে যাচ্ছি আমরা,,,শান্তি আমি তোমাকে ভালোবাসি,,,তোমারি অপেক্ষায় থাকবোে।

পরের দিন শান্তি গ্রামে চলে যায়,,,বাড়িতে যেয়ে দেখে ওর মা ভিষণ অসুস্থ,,,শান্তি মার এমন অবস্থা দেখে ভিষণ কাঁদছিলো,,,মা ওকে বলছিলো মারে আমার সময় মনে হয় ফুরিয়ে আসছে,,,আমার একটা শেষ ইচ্ছে রাখবি মা,,,শান্তি কাঁদছিলো আর মাকে বলছিলো,,,তুমি যা বলবে আমি তাই করবো  মা তোর বাপে আমাদের এই ভিটা,বাড়ি বন্ধক দিয়া রাখছিলো,,,জুলুমউদ্দীনের,,,কাছে তুই তো জানোস হ মা,,,তোর বাপে মারন যাওয়ার আগে ওই টাকা,,,ষোধ করে যেতে পারেনাই। জুলুম এসে আমারে সাসায় কয়ে গেছে আমাদের ভিটা ছাড়া করবেনা,,,কিন্তু একটা শর্তে,,,কি মা.???ক,তুই,ক জুলুমউদ্দীনের ছেলের সাথে যদি আমি তোর বিয়া করায়,,,তুই বিয়া করবি না মা,,,এই বুড়ি বয়সে আমারে কষ্ট দিবি,,,আমার শেষ ইচ্ছেটা রাকবিনে,,,মা??? শান্তি অনেক কাঁদছিলো আর বলছিলো হ,মা,হ আমি রাজি তোর জন্য আমি আমার জীবনটা ও দিতে পারিরে মা। শান্তির বিয়ে হয়ে গেলো জুলুমউদ্দীনের ছেলের সাথে,,,ছেলেটা ছিলো নেশাখোর অনেক খারাব চরিত্রের।

শান্তি একটা চিঠি লিখছিলো,,, ওর প্রিয় ইসলামের জন্য,,,যকে ও ভিষণ ভালোবাসতো কিন্তু কোনদিন ও ও ওর ইসলামকে বলতে পারেনি,,,ওদিকে ইসলাম শান্তির অপেক্ষায় পথচেয়ে আছে,,,আন্টি আমার কাছে আসলো আমি আন্টিকে বললাম আন্টি আমার শান্তি কই? আন্টি আমার প্রতি উত্তর করলোনা,,,আমার হাতে একটা কাগজ দিয়ে কাঁদতে,কাঁদত চলেগেলো আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না,,,কাগজটা খুলেই দেখি শুরুতেই লেখা ছিলো,,,প্রিয় ইসলাম শান্তির জীবন,ই ছিলো ইসলাম,,,আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি কিন্তু তোমাকে বলতে পারিনি,,,আমি তোমারি থাকবো যতোদিন এ দেহে প্রাণ থাকবে,,,আমি যে এক খাঁচায় বন্ধি হয়ে গেছি,,,যেখান থেকে আমাকে মুক্ত করার মতো কেউ নাই,,,আমাকে তুমি ক্ষমাকরে দিও আমি যে চাইলে ও পারলাম না ইসলামের বুকে শান্তি হয়ে থাকতে। ইতি ইসলামের শান্তি।

আমি আমার মাথার উপরে আকাশটাকে যেন অনুভব করছিলাম,,,আমার জীবনে ঐ একদিন,ই। আমি আমার শান্তিকে আজও ভিষণ ভালোবাসি,,,ও থাকবে আমার স্মমৃতিতে আজীবন,,,আমি যখন চিঠিটা পরছিলাম মনে হচ্ছিলো চিঠির প্রতিটা লাইনে আমার শান্তি মিশে আছে,,,আমার সাথে ও কথা বলছে। পারবো না তোমায় কোনদিন ভুলতে আমি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত