নেশা বউ

নেশা বউ

মাহবুব একবার ভাবলো, উঠে অন্য রুমে যাবে। পরে ভাবলো, কেনো যাবে?? রুশা তো বৌ’ই হয় তাঁর। অার তাঁর নিজের ঘর এটা, এখানে সে একশবার থাকবে৷ রুশা বিব্রত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো,

——–অামি কি এই শাড়িটা চেঞ্জ করে ফেলবো?? মাহবুব রাগী গলায় বললো,
——–শাড়ি চেঞ্জ করবো অাবার কি??শাড়ি চেঞ্জ করবে না তো এই বাইশ কেজি বেনারসি গায়ে ঘুমোবে??? কে জানে, হয়তো সকালে ঘুম ভেঙে দেখা যাবে, শাড়িতে চাপা পড়ে মরে অাছো! শাড়ি শুধু চেঞ্জ করবে না, এটাকে উত্তরের জানালা দিয়ে ডোবায় ফেলে দেবে।

——-বিয়ের শাড়ি ফেলে দেবো???
———হ্যাঁ দেবে।হাতির ওজনের শাড়ি, এই শাড়ি ঘরে থাকলে নিশ্চিত ঘরের মেঝে দেবে যাবে। এই শাড়ি কিনেছেটা কে??

রুশার মন খারাপ হয়ে গেলো। মানুষটা রোমান্টিকতার কিছুই বুঝে না। সবসময় মেজাজ গরম।মি. এংরি ইয়ংম্যান। বাসর রাতে এরকম করে কেউ বৌয়ের সাথে কথা বলে?? রুশার ইচ্ছে করলো, মাহবুবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাজারটা চুমু খেয়ে নেয়, মুহূর্তেই। মাথার চুলে অাঙুল চালিয়ে শক্ত করে টেনে দেয়! তারপর…. তারপর… অারেকটা ভয়াবহ ইচ্ছের কথা ভেবে রুশা নিজেই কেঁপে উঠলো। রুশা শাড়ির উপরের অংশটার নিচে খুব সাবধানে হাত ঢুকিয়ে একটু টেনে দিলো। গুড, এই তো পেটের ভাঁজটা বেড়িয়েছে। লোকটা কি একটু পেছন ফিরে তাঁকাতে পারেনা?? এই যে রুশার পেটের ভাঁজটা, এটা ইনি দেখবে না তো কে দেখবে?? রুশা অারেকটু নড়েচড়ে বসলো। চুড়ি বেজে উঠলো তাতে। মাহবুব মনোযোগ দিয়ে পেপার পড়ছে, অাশ্চর্য! পেপারে অাছেটা কি?? বাসরঘরে শেরওয়ানি গায়ে কি কোনো বর এরকম পেপার পড়ে??

———কি হলো, শাড়ি খুলছো না কেনো???

পেপারে চোখ রেখেই মাহবুব কথাটা বললো। এবার যেনো মাহবুবের গলায় ধমকের স্বর। রুশার ইচ্ছে করলো, বসা থেকে উঠে এসে, মাহবুবকে ঠাস করে একটা চড় দেয়! চড় দিয়ে বলে, এই ব্যাটা, অামি যে দু-ঘন্টা ধরে ঘোমটা মাথায় বসে থাকলাম, ঘোমটা তুলে মুখ দেখ। মুখ দেখে অাংটি দে! দে.. নাকে-কপালে চুমু দে… এই যে, এটা খোল ইচ্ছেটাকে চাপা দিয়ে রুশা বিছানা থেকে নামলো। শাড়িটা সত্যিই খোলা দরকার, জ্যাম হয়ে অাছে শরীর। এতক্ষণ অপেক্ষা করার কোনো লাভই হলো না, তাঁর রাগী বরটা ঘরে অাসা অবধি পেপারে মুখ গুঁজে অাছে। রুশা লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাতের চুড়ি খুলতে লাগলো। মাহবুব পেপার রেখে, উঠে দরজার কাছে গেলো, গিয়ে অাবার ফিরে এলো।

———রুশা, যাও তো দরজাটা বন্ধ করে এসো।
———অামি দরজা বন্ধ করবো মানে?? অাপনি বর, অাপনি দরজা বন্ধ করবেন! মাহবুব বিরক্ত গলায় বললো,
———-বর হলে , দরজা বন্ধ করতে হয়??
———হ্যাঁ, বর হলে সব করতে হয়, সব.. দরজা বন্ধ করতে হয়, এসি ছাড়তে হয়, এই যে অামার বাকি কথাটা রুশা চেপে গেলো। ইশ্ কি ভয়ংকর লজ্জার কথাটানাই বলতে যাচ্ছিলো!

———যান, দরজা বন্ধ করুন…

মাহবুব বিব্রত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলো। সে দরজা বন্ধ করতে পারছে না দুটো কারণে, প্রথম কারণ, দরজার কাছাকাছি কিছু ফুসুরফাসুর অাওয়াজ হচ্ছে, বোঝাই যাচ্ছে বাড়ির পুরো গ্রুপ ওঁৎ পেতে অাছে। দ্বিতীয় কারণটা একটু অন্যরকম।সে দরজা দেখছে দুটো, একটা ঘেঁষে উপরে অারেকটা লাফাচ্ছে, কোনটা অাসল দরজা ঠার করতে পারছেনা।

বন্ধু রফিকের বদবুদ্ধি শোনে এমন হয়েছে। সে বুদ্ধি দিয়ে মাহবুবকে দু-পেগ হুইস্কি খাইয়ে দিলো। বললো, বাসর রাতে হেব্বি সাহস লাগে বুঝলি দোস্ত??এই জিনিস পেটে গেলে, মারাত্মক সাহস বাড়িয়ে দেয়। বাঘের মত সাহস।
বাসর রাতে বৌয়ের কাছে তোর এই সাহস জিনিসই কাজে লাগবে। এই যে তোর এম. এসসি ডিগ্রী, তোর এত বড় চাকরি, এত এত টাকা-পয়সা, এত এত জ্ঞান বুদ্ধি এইসব কিছুই কাজে লাগবে নারে দোস্ত।এই দিন বৌয়ের কাছে ইমেজ তৈরির প্রথম এবং একমাত্র চান্স। সুতরাং সাহসই ভরসা দু-পেগ খেয়ে মাহবুবের সাহস বাড়েনি, বেড়েছে সমস্যা, হাত-পা নিস্তেজ নিস্তেজ লাগছে। সব জিনিসই একটু পরপর দুটো দুটো দেখছে, প্রথমে দরজার কাছে গেলো, গিয়ে দেখে দরজা দুটো, সে কোন দরজা অাটকাবে??? এই যে, রুশাকে এখন দেখছে সে তিনটে। মাহবুব বিড়বিড় করে বললো, ও মাই গড! এতক্ষণ পেপারে মুখ গুঁজে নিজেকে সামলানোর অাপ্রাণ চেষ্টা করেছে। কাজ হয়নি একদম। রুশা অারো একবার রাগী গলায় বললো,

——— অাপনি তো দেখি মহা ঘাড় ত্যাড়া মানুষ, সামান্য একটা দরজা বন্ধ করা নিয়ে বাসররাতেই বৌয়ের পিছনে লেগেছেন! মাহবুব মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,

———রুশা, অামি একটু হুইস্কি খেয়েছিলাম, ওই যে অামার বন্ধু রফিক অাছে না, সে জোড় করলো বলে….
———তো??
———ইয়ে মানে, বোধহয় একটু নেশা ধরে গেছে। সব জিনিস দুটো -তিনটে -চারটে করে দেখছি। ঝাপসাটে ও লাগছে,

———অামার তো মনে হয়, দুটো তিনটে না, অাপনি কোনো কিছুই ঠিকঠাক দেখতে পাচ্ছেন না!
——–না, না দেখতে পাচ্ছি তো, এই যে তুমি দাঁড়িয়ে অাছো। গয়না খুলছো রুশা ইচ্ছে করেই শাড়ির অাঁচলটা খুলে ফেললো, তারপর ভারী কণ্ঠ করে বললো,
———অামি দাঁড়িয়ে গয়না খুলছি শুধু সেটাই দেখছেন অার কিছু না???
——-না না, এই যে তুমি শাড়ির অাঁচলটা ফেললে.. সেটাও তো দেখছি…।।
———-অাশ্চর্য, অামি অাঁচল ফেললাম কখন?? অাপনার তো দেখি ভালোই নেশা হয়ে গেছে, বলতে বলতে রুশা, এবার শাড়ির কুঁচিটাও ছেড়ে দিলো।
———-অার কি দেখছেন???

মাহবুব নার্ভাস বোধ করছে, তার সামনে তিন তিনটে রুশা শাড়ি খুলছে, এটা কি সত্যি??
মাহবুব কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

———রুশা, তুমি কি শাড়িটা একেবারেই খুলে ফেলবে?? রুশা নির্বিকার অার গম্ভীরগলায় বললো,
———একেবারে ই খুলবো মানে??

অামি কোনো শাড়িটাড়ি খুলবোনা, শাড়ি পড়েই ঘুমোবো। অামাকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিন তো…
এবার রুশা অারেকটা ভয়ানক কাজ করলো। মাহবুব হাঁ করে একদৃষ্টিতে রুশার দিকে তাঁকিয়ে অাছে, একদম নড়ছে না।

——–কি হলো?? পানি দিতে বলছি তো..

মাহবুব মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। সে কি দেখছে, কিছুই বুঝতে পারছে না। অাজগুবি সব জিনিস… রুশা একে একে ব্লাউজের সব বোতাম খুলে ফেলছে… গোলাপি ব্রা এর অনেকটাই স্পষ্ট এখন সে কি নেশার ঘোরে এমন দেখছে??? নাকি সত্যি সত্যিই ঘটছে। মাহবুব চোখ বন্ধ করে ফেললো,

———রুশা, তুমি কি করছো বলোতো??
———-কি অার করবো?? শুয়ে পড়েছি।
———বিছানায়??? শুয়ে পড়ছো??
———শুয়ে পড়বো না তো কি করবো??

অাপনার হাতের এক গ্লাস পানি খাবার জন্য অনন্তকাল জেগে থাকবো?হুহ.. ঘুম পাচ্ছে, ঘুমোবো অামি। মাহবুব চোখ মেললো। এবং সাথে সাথেই বন্ধ করে ফেললো। অর্ধনগ্ন রুশা তাঁর মুখের কাছে ঝুঁকে অাছে। রফিক কি হুইস্কিতে কিছু মিশিয়েছিলো??? ভালোই তো নেশা হয়ে গেছে । মাহবুব চোখ বন্ধ রেখেই বললো,

——–রুশা তুমি কি বিছানায় শুয়ে?? সত্যি করে বলো…
——-হুঁ।
———-একটু উঠে বসো তো রুশা এবার মাহবুবের নাকে একটা চুমু খেয়ে নিলো টুপ করে।
———-নিন, উঠে বসলাম। মাহবুব বিড়বিড় করে বললো,

———–এত নেশা কেনো হলো অামার?? উদ্ভট সব ফিল করছি….. মনে হচ্ছে তুমি চুমু খাচ্ছো….
———-ছিঃ.. অামি কেনো চুমু খাবো অাপনাকে???

মাহবুব চোখ কচলাচ্ছে অার চোখ মেলছে।হচ্ছেটা কি এসব?? রুশা বাতিটা নিভিয়ে ফিসফিস করে বললো, অাপনার কিচ্ছু নেশা হয়নি বোকারাম। নেশা তো এবার অামি অাপনাকে ধরাবো….

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত