মায়ের অপেক্ষা

মায়ের অপেক্ষা

কোচিং এর সিড়ি দিয়ে ঢুকতে যাবো এমন সময় সুমন হাতটা ধরে চিপায় নিয়ে গেলো এক টানে। আমি নিজেকে কোনো মতো সামলে নিয়ে বললাম, কেউ দেখে ফেলবে সুমন। প্লিজ।

: কিসের প্লিজ? সারাদিন তুই কই ছিলি? সকালেও ক্লাসে আসিস নাই। আর এখন বলতাছিস প্লিজ।
: সুমন, আম্মা বাসায় নাই। আমি কিভাবে যোগাযোগ করবো?
: আমাকে এটা জানানো উচিত ছিলো তো তাই না?
: আমি কিভাবে জানাবো? আম্মা তো কাল সন্ধায় চলে গিয়েছে। আমি বাসায় যাইয়া দেখি, আম্মা বের হইতাছে। তখন তোরে কেমনে জানাইতাম?

: কেন? তোর আব্বু?
: আব্বুর সাথেই তো গেছে। ভাইয়া, বাসায় আসছে। ভাইয়ারে রেখে গেছে।
: সকালে আসলি না কেন? জানিসই তো আমি চিন্তা করবো।
: আজ কতো তারিখ?
: ওহ।। এজন্য চোখ মুখ এতো শুকনা?
: জ্বী এখন ছাড়েন। ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। স্যার সন্দেহ করবে।
: আরে দূর। চল পালিয়ে যাই।
: চুপ।
: চোখের নিচে কালি কেন পড়তাছে?
: কেডা জানে…

এমন সময় আকাশের ডাক।। সুমন, স্যার ইভানারে ডাকতাছে। কোনো মতো করে দৌড়ে ক্লাসের সামনে গিয়ে হাজির হলাম।

: স্যার, আসবো?
: কয়টা বাজে?
: স্যার, আসলে নিচে এক আন্টির সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিলো তাই।
: থাক। বুঝছি। যাও বসো গিয়ে। আর হ্যা, তানহার সাথে বসবা না।
: আচ্ছা স্যার।

তানহা সামনের ব্যাঞ্চ থেকে ইশারা দিয়ে জানতে চাচ্ছিলো, কোথায় ছিলাম।আমি উত্তর দিয়ে যাবো, এমন সময় স্যার হাতেরমার্কারের হ্যাডটা আমার দিকে ছুড়ে মারলেন। ক্লাসের সবাই চুপ ক্লাসের বাইরে সুমন আর আকাশ দাড়িয়ে আছে।স্যার ধমকের সাথে বলে উঠলো, ক্লাসে ঢুক। বদমাশের দল। আমি পিছনের সীটে বসে আছি। সুমন মাথা চুলকাতে চুলকাতে আড় চোখে আমাকে খুজছে।আমি ইচ্ছা করেই মাথা নিচু করে রাখছি। সুমন হতাশ হয়ে পিছনের দুই ব্যাঞ্চ সামনে বসে পড়লো। আবার মেয়েদের দিকে তাকিয়ে দেখলো, আমি মুচকি মুচকি হাসছি। সুমন, চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো, কুত্তি।কোনো শব্দ না হলেও, ওর ঠোট নাড়ানো দেখেই বুঝে নিলাম কুত্তি বলছে। আমি কিছু একটা বলতে যাবো, এমন সময় স্যারের ডাক।

: জ্বী স্যার।
: বাসায় কি করো সারাদিন?
: জ্বী স্যার?
: অংকে রিটেনে মাত্র আটত্রিশ পাইছো। এতো কম কেন?
: স্যার আমি তো চল্লিশ পাইয়াম।
: মানে?
: স্যার ৪ টা সৃজনশীল দিছি। সবগুলাই তো হবে। তাহলে ৩৮ কেন?
: প্রশ্নে কি ৪ টা সৃজনশীল চেয়েছিলো?
: না স্যার।
: তাহলে?
: স্যার, আসলে
: কেন লেখো নাই? পারো না এগুলা?
: স্যার পারি।
: আজ বাসায় কল দিবো তোমার।বসো।

বসে, সুমনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সুমন হাসছে। আমি মুখে ভেংচি কেটে স্যারের খাতা দেওয়া দেখছিলাম।স্যার, একটা খাতা সাইড করে রেখে দিয়ে সবার খাতা দিচ্ছিল।

: রিতা, ঐ খাতা কার রে?
: জানি না। ঐ নো তো একটা না। তিনটা খাতা। আগে থেকেই আলাদা করা। স্যার সবার খাতা দেয়া শেষ করে বললো, কে কে খাতা পাও নাই? সুমন আর আসিফ দাড়ালো।

: স্যার আমরা।
: তোমাদের সবার উদ্দেশ্যে বলছি, বদমাশ দুইডা ৭০ এর মাঝে ৭০ ই পাইছে।আমি সহ আরও কয়েকজন উচ্চ স্বরে হেসে উঠলাম। সাথে স্যারেও হেসে দিলো। সুমন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।

: আরে গাধার দল, তোরা নকল করছিস বালা কথা। তাই বলে, কিছু তো বাদ দিবি। স্যার..

: সুমন, লোখাপড়া করো। সময় আছে এখনও।
: স্যার, লেখাপড়া করলেও তো আপনারা সন্দেহ করেন। নিজে লিখে ৭০ পেলাম। আর আপনি?

: আরে বদমাইশ, প্রশ্নে তিন নম্বর টা ভুল ছিল। আমি তো প্রশ্ন ঠিক করে দেই নাই। কিন্তু তুই সঠিক প্রশ্ন অনুযায়ী অংক কেমনে করলি?

: প্রশ্নে ভুল করা ঠিক হয় নাই স্যার।
: তুই আর ভালো হবি না। বস।

সুমন আর আমি ক্লাস মেট। প্রায় ৬ মাস যাবৎ আমাদের সম্পর্ক। হুম, প্রেমের সম্পর্ক। প্রেম বলতে তখন বুঝি শুধু, সুমনের আড় চোখে তাকানো। প্রেম বলতে শুধু বুঝি, সবার ভিড়ে সুমনের আঙুলের স্পর্শ। কয়েক দিন যাবৎ, সবাই সন্দেহ করে যাচ্ছিলো কিন্তু বুঝতে পারছিলো না, আমি এমন কিছু করতে পারি। সুমনের কয়েকজন বন্ধুর কাছে ধরা পড়ে গিয়েছিলাম, সিড়ির নিচে কথা বলতে গিয়ে। কয়েকদিনের ভেতর সবাই জানতে পেরেছিলো বিষয়টা। বাবা, আমার কোচিং অফ করে দিয়েছিলেন। তখন এসএসসি পরীক্ষার মাত্র দুমাস বাকি। আমাকে মামার কাছে রেখে দিয়ে আসলো, বাবার গা ছুয়ে ওয়াদা করালো যেনো আর কখনও সুমনের সাথে যোগাযোগ না করি।এগুলো বলতে বলতেই আম্মু চোখের পানি মুছলো।

: আম্মু, তারপর?
: আমি সুমনকে ভালোবেসেছিলাম।

সুমনকে ছাড়া, আমার পক্ষে থাকা সম্ভব ছিল না। তাই তিনদিন পরই মামার বাসা থেকে পালিয়ে এসেছিলাম।একটা দোকান থেকে ফোন দিলাম সুমনের নাম্বারে।দুইবার রিং হওয়ার পর যখন সুমন কল ধরলো, তখন মনে হলো আমার হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।আমি শুধু এপাশ থেকে বলেছিলাম, সুমন.. আমি বলছি।সুমন, ইবু বলে চিৎকার দিয়ে বলেছিলো। আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারি না, জানিস না তুই?

: সুমন..
: ইবু, কাদবি না তুই। একদম কাঁদবি না।
: আমি বাবার গা ছুয়ে বলেছিলাম, তোর সাথে যোগাযোগ করবো না।
: ইবু…
: কিন্তু আমি পারি নাই।
: এটা কার নাম্বার?
: দোকানের। আমি মামার বাসায় ছিলাম। পালিয়ে আসছি।
: এয়ারপোর্ট রেলওয়ে স্টেশনে আসতি পারবি?
: হুম।
: তুই আয়। আমি নিশানকে কল দিয়ে বলতাছি নিশানের সাথে আরও ৪ টা ছেলে আমাকে দেখে ইসামনে এগিয়ে এলো।
: ইভানা, সুমন আসছে। সব রেডি করা আছে। তোমরা আজই চট্টগ্রাম চলে যাবা।নিশানের ফোন দিয়ে সুমনকে কল দিলাম। সুমন বললো, সেআসছে।

: আর নানা বাড়িতে কেউ খোজ পায় নি?
: যখন ওরা বুঝেছিলো, আমি পালিয়ে গেছি। তারপর তারা আমাকে খোজার বিন্দু মাত্র চেষ্টা করে নি।শুনেছিলাম, কিছু দিন পরই বাবা বাসা বিক্রি করেএলাকা ছেড়ে চলে গেছে।
: তুমি যোগাযোগ করো নাই?
: কোন মুখ নিয়ে করতাম?

সুমন আর আমি নিশানের এক বোনের বাসায় উঠলাম।সুমনের বরাবরই মাথাটা গরম ছিলো।সবাই এসএসসি পরীক্ষাটা দেয়ার জন্য তাগাদাদিচ্ছিলো, কিন্তু আমি ফিরতে চাইছিলাম না। শেষ পর্যন্ত সুমন একাই পরীক্ষা দিয়েছিলো। সুমনপরীক্ষা দিয়ে আবার চট্টগ্রাম ফিরে এলো।

: পরীক্ষার সময়টাতে তুমি একা ছিলা?
: নিশানের বোন মানে রেনু আপার সাথে ছিলাম।

রেনু আপার স্বামী তখন মালয়েশিয়া থাকতো। রেনু আপার দুইমেয়ে আমি আর রেনু আপা থাকতাম।সুমন সবসময় ভয় পেতো, আমি ওকে রেখে চলে যাবো। তাইআমাকে ওর বাধনে চিরদিনের জন্য বাধতে সন্তান নিতেচাইলো। আমিও অমত করি নাই। তারপর তুই এলি। এমন সময় আমার ফোনটা বেজে উঠলো, আম্মু কিছুটাস্বাভাবিক হয়ে বললো , দেখতো সুমন নাকি। ফোন ধরে দেখলাম, বাবা।

: হ্যা, বাবা।
: তোর মা কল ধরে না কেন? তোর মা কই?
: এখানেই তো।
: তোর মাকে বল, টেংরা মাছের ঝোল রান্না করতো। মেহমান আসতাছে।
: আচ্ছা বাবা। এটা বলেই কল কেটে দিলাম। মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, আজ টেংরা মাছ আমি রান্না করি?

: মা সহজ গলায় বলে উঠলেন, তোর বাবা অন্য কারো হাতে টেংরা খায় না।
: কিন্তু মা। আমি রান্না করবো।
: রোদ, তোর বাবার খিদা লাগছে। সকালে বের হয়েছে।যাহ, ফোন রেখে পড়তে বস।
: আচ্ছা, যাও। তুমি রান্না করো কিন্তু আমিও রান্না ঘরেথাকবো তোমার সাথে।
: কেন?
: ইচ্ছা আমার। এমন করো কেন?
: আচ্ছা থাক।
:আচ্ছা আম্মু, আগে কোনোদিন বলো নাই তো, তোমাদেরলাভ মেরেজ।
: এটা বলার কি ছিলো?
: আম্মু এখন তাহলে বাবাকে তুই করে ডাকো না কেন? আর বাবাও তো তোমাকে তুমি করেই বলে।( আম্মু, চুপ ছিল)
: বাবা কয়েক মাস পরপর আসে কেন? আসলেও ১ দিনেরজন্য। তোমার সাথে তো তেমন কথাও বলে না, দরকার হলে আমাকে কল দেয়। এই পনেরো বছরে বাবাকেদেখেছি হয়তো হাতে গোনা কয়েক বার। কিন্তু কেন?

: তোর বাবার কাজ আছে।
: আম্মু, রাতে তুমি আমার সাথে ঘুমাও কেন?
: তুই একা থাকতি পারিস না। তাই আম্মুর কথাটা শুনে খুব কষ্ট হচ্ছিলো, আমি তো ইচ্ছাকরলেই একা থাকতে পারতাম।
: আচ্ছা আম্মু, আজ আমি একা থাকবো।
: নাহ।আরও বড় হ।
: আম্মু, আমি ক্লাস টেনে পড়ি। আমি ছোট না।
: থাক হয়েছে। যাহ পড়তে বস। সুমন চলে আসবে এখুনি ।

আমি সোজা আমার রুমে চলে আসলাম। আর ভাবতে থাকলাম, আম্মু কি মজা করছে আমার সাথে? নাকিসত্যিই এমন কিছু। আমার নানা নানু তারাও আছে এখনো?বেশ কিছুক্ষণ পর বাবা চলে এলো। উনার সাথে সাদাকালো চুলেরর একটা লোক বেশ গম্ভী হয়ে বসে আছে। মুখে খোচা খোচা দাড়ি।

বাবা আমাকে চেচিয়ে ডেকে বললেন, এদিকে আয়।লোকটাকে সালাম দিয়ে বাবার পাশে এসে বসলাম। আম্মু রান্না ঘর থেকে বলছে, রোদ কে আসছে। আমি এখানে এসেই বলে উঠলাম, একটা আংকেল আসছে মা। আম্মু, ট্রেতে করে কিছু নাস্তা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন বসার ঘরে।লোকটাকে দেখা মাত্র আম্মুর হাতের ট্রেটা ফ্লোরেপড়ে গিয়েছিলো।আম্মু অস্ফুট কন্ঠে বলে উঠেছিলো, সুমন। আমরা সবাই উঠে দাড়ালাম। লোকটা কাচের উপর পা দিয়েই সামনে এগুলো, আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললো, ইবু। আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিলাম না। আম্মু তো বাবাকে ডাকলো, তাহলে এই লোকটা এভাবে উঠে দাড়ালো কেন? আম্মু ট্রেটা ফেলে দিলো কেন? কে এই লোকটা? আম্মুর চোখে পানি। লোকটার চোখেও পানি। কিন্তু বাবা স্বাভাবিক হয়েই বসে আছে। আমি হা করে তাকিয়ে আছি।

লোকটা আম্মুর গালে জমতে থাকা পানি মুছতে মুছতে বলছে, ইবু কাদবি না তুই।কথাটা শুনে আমার হৃদ কম্পন বেড়ে গেলো। এটা তোবাবার বলার কথা। লোকটা কেন বলছে, লোকটা আম্মুকেতুই করে বলছে, লোকটা আম্মুকে স্পর্শ করছে আর বাবাচুপ করে আছে। আম্মু আবার বলে উঠলো, সুমন তারপর হাউমাউ করে কেদে উঠলো। লোকটার বুকে আম্মু মাথা গুজে দিয়ে কি সব জেনো বলে চললো, আমি কিছুইবুঝতে পারছিলাম না। লোকটাও কেদে চলেছে।কী আশ্চর্য, লোকটা আমার মতো করে কাদে। ঠোট বাকিয়ে। আমি ধপাশ করে সোফায় বসে পড়লাম। মা নিজেকেসামলে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তোর রোদ।লোকটা ইশারায় আমাকে কাছে ডাকলো। আমি গেলামনা, বাবার দিকে তাকিয়ে রইলাম চোখে হাজারটা প্রশ্ন নিয়ে।

বাবা, বলে উঠলো এটা সুমন। তোর বাবা। আমার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। বাবার থেকে কিছুটাসরে এসে বললাম, আমি তোর বাবার বন্ধু। আমার ডাক নাম নিশান।। আম্মু, চাপা গলায় বলে উঠলো। তোর বাবা কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য বাড়ি গিয়েছিলো। আর ফিরে আসে নি। তুই তখন আমার পেটে। রেনু আপার কাছেই থাকতে শুরু করলাম। সুমন যোগাযোগের সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিল। রেনু আপা নিশানের সাথে যোগাযোগ করেছিল। তুই রেনু আপার বাসায়ই জন্মেছিলি। টিউশনি করা শুরু করলাম, তোর বয়স তখন ১৫ মাস। রেনু আপার স্বামী দেশে চলে এলো এরইমধ্যে। নিশানের স্ত্রী এর পরিচয়ে সাবলেটে উঠলাম আমরা। নিশানও আমাদের ব্যাচমেট ছিলো। সবাই জানলো, এটাই সুমন। পড়াশোনার জন্য আমাদের সাথে থাকতে পারে না। রেনু আপাও আমাদের খোজ নিতো।

: এজন্য তুমি বাবাকে তুমি করে ডাকতে?
: হুম।
: আমাকে বললে কি হতো আম্মু?
: রোদ তুই ছোট।

আমি চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম, আমি বড় হয়েছি আম্মু। তুমি কেন বুঝতে চাও না?লোকটা মানে আমার প্রকৃত বাবা, চিৎকার করে বলে উঠলেন। আমি কখনো ইবুর সাথে গলা উচু করে কথা বলি নাই।

: তো? কি হয়েছে? লাস্ট ১৫ বছর কি গলা নিচু করেও একবার কথা বলে ছিলেন?

লোকটা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।আম্মু কড়া গলায় বলছে, রোদ চুপ কর। যাকে বাবা বলে জানতাম, উনি বলে উঠলেন। তানহা আসছে। রেনু আপার বাসায় আছে। আমি আসছি এখন। বাচ্চারা আবার আমাকে ছাড়া ঘুমায় না। আমি ঠাই দাড়িয়ে উনার কথা গুলো শুনছিলাম। মা বললেন, আচ্ছা, কাল ওদের নিয়ে এসো এখানে। সত্যি সত্যি উনি চলে গেলেন। আমিও চুপচাপ আমার রুমে এসে বসে পড়লাম। আমি এগুলা পরিষ্কার করতে লাগলো। আমার নতুন বাবা, আমার রুমেরদরজায় দাড়িয়ে আমাকে দেখছিলেন।আমি কড়া গলায় বলেছিলাম, এভাবে তাকাবেন নাআমার দিকে।লোকটা চোখ সরিয়ে নিয়ে আমার পাশে এসেবসেছিলো।আমতা আমতা করে বলেছিলো,, সরি রোদ।

: আমাকে সরি বলছেন কেন? যার সাথে অন্যায় করেছেন তার কাছে চান। আর হ্যা, উনি তো মাফই করেদিয়েছেন।। আর মাফ চেয়ে কি করবেন?

: রোদ…
: আমাদের এতো কষ্ট দিলেন কেন? পনেরোটা বছর।
: ইচ্ছা করে দেই নি আমি।

তোর মাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। কলেজ ভর্তিহওয়ার জন্য বাড়িতে গিয়ে দেখি তোর দাদা মারাগেছেন। আর তোর দাদী, আমার হাত ধরে বললো, যদি ইবুরসাথে যোগাযোগ করি তাহলে আমি উনার মরা মুখ দেখবো।আমি ভয় পেয়েছিলাম,।মা স্পষ্ট করে এটা মনে করিয়েদিতে লাগলো। আমি মায়ের কথা রাখতে গিয়ে ইবুর কথা রাখতে পারে নি।

: আমার আম্মুও তো নানাভাইকে ছুয়ে বলেছিলো, আপনার সাথে কথা বলবে না। কই মা তো এমনটা করে নি । তাহলে আপনি?

: আমি পারি নি রোদ। কাল তোর দাদী মারা গিয়েছে।  আর আমি
: আর অমনি আপনি চলে এলেন, দরদ দেখাতে? আম্মু দরজার সামনে থেকে চেচিয়ে বলে উঠলো, রোদ, এটা কেমন ব্যবহার।।।
: আম্মু, আমি তোমার মতো করে সবটা মানতে পারবো না
: তোকে কিছু মানতে বলি নাই আমি।
: ইবু, চুপ কর। আমি কথা বলতাছি তো।
: ইশ, আমার মাকে ইবু বলে ডাকবেন না। আমার রাগে শরীরটা জ্বলছে। বুঝতে পারছেন না?
: রোদ, আমি আমার মায়ের প্রতি কর্তব্য পালণ করতে গিয়ে কিন্তু একটি বারের জন্যও আমার মেয়ের প্রতি কর্তব্য ভুলে যায় নি।
: ওহ, আমার প্রতি কর্তব্য পালণ করছেন? কিভাবে? ১৫ বছর পর আমার সামনে এসে?
: রেনু আপা নিশানের সাথে কথা বলেছিলো ইবুর ব্যাপারে।

নিশান যখন কল দিয়ে বললো সবকিছু। তখন আমি একদম নিরুপায়। নিশান তোমার বাবা সাজতে রাজি হচ্ছিল না। তাই বলা হলো, তোমার বাবার নাম সুমন। প্রতিটা সার্টিফিকেটে তোমার বাবার নাম সুমন। তোমাকে কিনে দেয়া নিশানের প্রতিটা জিনিসের টাকা আমি আমার বুক পকেট থেকে বের করে নিশানের হাতে তুলে দিয়েছি। নিশান অনেকবার বলছে, রোদ আমারও তো মেয়ের মতোন। আমি নিজের থেকে কেন কিছু কিনে দিতে পারি না? আমি সবসময় বলে গিয়েছে, এগুলা সব সুমনের দেয়া। তুই বুঝবি না। তুই শুধু আমার মেয়েটাকে ভালোবাসা দিবি। ইবুকে তো তোর ধর্মের বোন বলিস। ওরেও কিছু জানানোর দরকার নাই। আমি চাই না, ইবু কিছু জানোক।

: বাবা আর কখনও আসবেন না এখানে?
: কে নিশান?
: হু
: আসবে। নিশানই আসবে। তুমি যদি চাও, তাহলে এক্ষুণি আমি চলে যাবো। আর কোনোদিন আসবো না তোমাদের জীবনে।

: আমি আপনাকে যেতে বলছি? আপনার বন্ধুকে আমি বাবার মতো ভালোবেসেছি কিন্তু আপনার বন্ধু হয়তো আপনার মতো হতে পারে নাই। বাবার জায়গায় সবসময় উনি আমার কাছে বড় একটা জিরো পেয়েছেন। কোনোদিন আমাকে নিয়ে বের হন নাই। কোনোদিন জানতেও চান নাই, আমার কোন রং পছন্দের।

: লাল রং।
: আপনাকে কে বললো?
: হা হা হা। তুমি আমার মেয়ে।
: হ্যা, আর আপনি অনেক খারাপ একটা বাবা।
: হু।
: ট্যাংরা মাছ কি আপনার পছন্দ নাকি আপনার বন্ধুর?
: তোমার কি মনে হচ্ছে?
: আম্মু, আপনাকে অনেক ভালোবাসে।
: আমি আমার রোদ, আমার ইবু দুজনকেই খুব ভালোবাসি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত