সবাইকে বলতাম অল্প সময়ে কাওকে বিয়ে করা উচিৎ না । বিয়ের আগে অন্তত এক দুই মাস একে অপরের সম্পর্কে জেনে তারপর বিয়ে করা উচিৎ । আর সেই আমিই কিনা এক সপ্তাহের পরিচয়ে ওকে বিয়ে করে ফেল্লাম !কি আর করবো, মা যখন ওর ছবিটা দেখাল শুধু এতোটুকুই মনে হচ্ছিলো এতদিন তো একেই খুজছিলাম ! ওদের বাসায় ওকে যেদিন দেখতে গেলাম ওইদিন ও বেশি কথা বলেনি । যেটুকু বলল তাতেই বুঝে গেলাম এরকম সুন্দর গলার আওয়াজ খুব কম জনেরি থাকে ।
আমাকে বিয়ে করতে ও রাজি কিনা জিজ্ঞেস করলে ও বলেছিল রাজি । ওর বাবা অসুস্থ তাই ৭ দিন পরেই বিয়ে ঠিক হল । ওর ফোন নাম্বার আমার কাছে থাকলেও বেশি কথা বলা হয়নি । বিয়েটা হয়েই গেলো । বাসর রাত নাকি সবার জীবনেই আনন্দের । ও আমার সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে । বুজতেছিলাম না কি বলে কথা শুরু করবো । একটু পরে যেই কথা বলতে যাবো খেয়াল করলাম ও কাঁদছে । অনেক জিজ্ঞেস করার পরও ও কিছু বলল না । জিজ্ঞেস করলাম বাসার জন্য মন খারাপ ? এরপর ও যা বলল টার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না । ও বলল “আমি আপনাকে কখনই মন থেকে ভালবাসতে পারবোনা । আমি একজনকে ভালবাসতাম । ওই ছিল আমার প্রথম এবং একমাত্র ভালবাসা । কিন্তু যেদিন ও আমাকে নোংরা একটা প্রস্তাব দিলো সেদিনি ওর প্রতি আমার সব ভালবাসা শেষ হয়ে গেছে । ও আমাকে সত্যিকারে ভালবাসতে না পারলেও আমি ওকে সত্যিকারে ভালবেসেছিলাম। আপনাকে এইমুহূর্তে বিয়ে না করলে বাবার অবস্থা আরও খারাপ হত । তাই আপনাকে বিয়ে করা । বিয়ের আগে আপনাকে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি । আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন আর প্লিজ আমাকে যোর করে স্পর্শ করেন না ।
” ওর কথা শুনে মনে মনে বললাম দুনিয়াতে এত ছেলে থাকতে আমার কপালেই কেন এরকম ছিল ! ওকে কথা দিলাম ও যে পর্যন্ত আমাকে মন থেকে ভালবাসতে পারবেনা সেই পর্যন্ত ওকে আমি স্পর্শ করবনা । ওর বাম গালে একটা চুমু দিয়ে বললাম ওর পাশে সবসময় আছি । ওর কাছে একটাই অনুরোদ করল্লাম বাসার কেও যাতে এসব কিছু না বুজতে পারে । পরদিন যখন ঘুম ভাংলো দেখলাম ও বিছানায় নেই । পরে দেখলাম মার সাথে নাস্তা বানাচ্ছে । যাক বাসার সবার সাথে মানিয়ে নিয়েছে দেখে ভালো লাগল । সবার সামনে আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলছে যেন ও আমাকে কত ভালবাসে ! তাওতো ভালো বাসার কেও বুজবেনা । এমনি ভাবেই দিন কাটতে লাগল । আমার কোন পছন্দের কাপর ওকে পরতে বললে ও পরতো, আমার পছন্দের কাজ গুলো ও করত ঠিকি তবে মন থেকে না ।ওর নাম টাই তো তোমাদের বলা হলনা । ওর নাম মিলি । মাঝে মাঝে মনে হত ও কি কোনদিনই আমার ভালবাসা বুজবেনা ! অফিস এ গেলে ও কোনদিন ফোন করে জিজ্ঞেস করতনা দুপুরে খাইছি কিনা । আমিই সবসময় ফোন করে জিজ্ঞেস করতাম ও খাইছে কিনা । ফোন রাখার পর ও মেসেজ দিয়ে জিজ্ঞেস করত আমি খাইছি কিনা । বাসায় টিভি দেখার সময় ও কখনো আমি যেই সোফাতে বসা থাকি সেখানে বসে না । তখন মনে হত ওর ভালবাসা আমার আর পাওয়া হবেনা । আমি যে ওকে কত ভালবাসি এটা কি ও বুঝেনা ? আমরা এক বিছানায় ঘুমালেও মাঝে থাকে কোলবালিশ । তখন মনে হয় কোন দুঃখে যে এত বড় কোলবালিশ বানাইতে গেছিলাম !
ঘুমালে ওকে আরও বেশি সুন্দর লাগে । মাঝে মাঝে মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখতাম ও আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে আর মাঝের কোলবালিশটাও নাই । তখন কি যে ভালো লাগে যদিও ও অবচেতন মনে আমাকে ধরে আছে । আমিও ওকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরতাম । কখন যে সকাল হত টেরি পেতাম না । আচ্ছা ও ঘুমালে যে আমি ওর কপালে চুমু দেই এটা কি ও বুজতে পারে নাকি পারেনা ? জানিনা । অফিস এ যাওয়ার সময় ও চা দিয়ে যায় । আগে ওকে এক চুমুক খেতে বলি তারপর আমি খাই। ও জিজ্ঞেস করে এতে আমি কি মজা পাই । তখন আমি বলি যাকে ভালোবাসো টার টা খেয়ে দেখো আমি কি মজা পাই ও কিছু বলেনা । এক সকালে দেখলাম ও মন খারাপ করে বসে আছে । কি করা যায় কিছু বুজতে না পেরে ওকে নিয়ে বেরাতে বের হলাম । বেরাতে বেরাতে যখন ওদের বাসার সামনে আসলাম তা দেখে ও যে কি খুশি হোল । ওর খুশি দেখে আমারো খুব ভালো লাগল ।
সারাদিন ওখানে ছিল । রাতে বাসায় আসার পর শুধু এতটুকু বলল ” থাঙ্কস ” !!! একদিন দেখলাম ও কেমন করে যেন হাঁটছে । বোঝাযাচ্ছিল পায়ে কিছু একটা হইছে । জিজ্ঞেস করলে ও বলল কিছুনা । আমিই জোর করে দেখতে চাইলাম ।দেখলাম ওর পা কেটে গেছে ।বলল চেয়ারের সাথে লেগে কেটে গেছে ।ওসুদ লাগাইছেকিনা জিজ্ঞেস করলে বলল ও ছোট বেলা থেকেই নাকি কাটা জায়গায় ওসুদ লাগাতে ভয় পায় । ওর নাকি জলাটা সহ্য হয়না ।
তখন আমিই ওকে বিছানায় বসালাম । কাটা জায়গায় ওসুদ লাগাতে যাবো ও বলল ওর সহ্য হবেনা । আমি বললাম আমার এক হাত শক্ত করে ধরো বেথা পাবানা । ওসুদ লাগানোর সময় ও আরও শক্ত করে আমার হাত ধরে ছিল । দেখলাম ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছি ওর যেন কি হইছে । আমার পছন্দের কাপর গুলো পরছে যদিও আমি পরতে বলিনাই । আজ যখন চা অর্ধেক খেয়ে টেবিলের উপর রেখে বারান্দায় গেলাম তখন দরজার ফাক দিয়ে দেখলাম ও আমার চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে । কিছু বুঝলাম না, শুধু দেখলাম ও একটু মুচকি হাসছে ! হটাত দুপুরে ও ফোন দিলো ! ভাবলাম বাসায় মনে হয় কিছু হইছে । বলল আমি নাকি বাসায় রুমাল ফেলে আসছি । এরপর আস্তে করে জিজ্ঞেস করছে খাইছিকিনা ।
আমিতো প্রায়ই বাসায় রুমাল ফেলে আসি কই কোনদিনতো ও ফোন দিলনা ! বুঝলাম রুমাল আসলে ছুতা । তাইলে কি ও আমাকে ভালবাসতে শুরু করছে ! ? জানিনা । বাসায় এসে দেখলাম ও খুব হাসি খুশি । বুঝলাম মনটা খুব ভালো । রাতে সোফায় বসে টিভি দেখছিলাম ও এসে জিজ্ঞেস করলো চা খাবকিনা ? বললাম খাব । চা নিয়ে এসে ও ঠিক আমি যেই সোফায় বসেছিলাম তাতে এসে বসলো । চারপাশে তাকিয়ে দেখছিলাম সব সোফা ঠিক আছেত না আমি ভুল দেখতেছি ! সবতো ঠিকি আছে, তাইলে ওর আজ কি হলো ! কিছুই বুজতেছিনা । রাতে ও আমার আগেই শুয়ে পরছিল । আমি যখন শুতে গেলাম দেখি বিছানায় কোলবালিশ নাই । এতবড় কোলবালিশটা গেলো কই ! আমিও শুয়ে পরলাম ।
আমি শোবার একটু পর ও আমার দিক ফিরে শুইল । বুঝলাম ও ঘুমাইনাই । আমিও ঘুমের ভান করে শুয়ে রইলাম । একটু পর ও আমার হাতের উপর হাত রাখল । জিজ্ঞেস করলাম কি হইছে ? কিছু বলল না । আবারো জিজ্ঞেস করলাম । দেখলাম ওর চোখ দিয়ে পানি পরছে । ওকে কাছে টেনে নিলাম । জিজ্ঞেস করলাম মন খারাপ ? ও বলল না । তাহলে ? :সরি । :কেনো ? :তোমাকে অনেক কষ্ট দিছি । তুমি আমাকে কষ্ট দিতে পারলানা ?
:ভালবাসিতো ।
:আর বাসবানা ।
:আচ্ছা বাসবনা ।
এরপর ও আমাকে শক্ত
করে জরিয়ে ধরে বলল
” I Love You “