বাসর রাত

বাসর রাত

বাসর ঘরে একলা চুপচাপ বসে আছে মিষ্টি। বিয়ের টেনশনে সারাদিন কিছু খেতেও পারেনি মেয়েটা। প্রচন্ড ক্ষুধায় এখন মাথা ঘুরছে তার। নতুন বউ! কাউকে বলতেও পারছে না যে তার ক্ষুধা লেগেছে, কিছু খেতে দেন! লোকজন ভাববে বিয়ে করে বউ ঘরে তুললো নাকি রাক্ষস; আসার আগেই খাই খাই করছে…

ভাবীরা আগেই বলে দিয়েছে, বাসর রাতেই নাকি বিড়ালটা মারতে হয়। অথচ মিষ্টি এক ঘন্টা হয়েছে এই বাড়িতে এসেছে, বাসর ঘরে তো দুরের কথা, এই বাড়িতেই কোন বিড়াল আছে বলে মনে হচ্ছে না তার…

রাত ১২ টার দিকে তার স্বামী আকাশ ঘরে ঢুকল, ঢুকেই দরজাটা লাগিয়ে দিল। মিষ্টি চমকে উঠলো, তার হঠাৎ মনে হলো- বাসর রাত নিয়ে বান্ধবীর বলা কথাগুলো কি তাহলে সত্যিই। অজানা আতঙ্কে আবার বুকটা কেঁপে উঠে মিষ্টির। দাদি বার বার বলে দিয়েছে স্বামী ঘরে ঢুকলে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে। মিষ্টির ইচ্ছা করছে না তবুও সালাম করতে গেল। পায়ে হাত দেওয়ার আগেই আকাশ তার হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলো। মিষ্টি মনে মনে ভাবলো, হায়রে! সালাম করার সময়টুকুও কি সহ্য হল না!!

নাহ! মিষ্টির সব ভুল ভেঙ্গে দিয়ে আকাশ বলে উঠল- এই রকম মোটা শাড়ি পরে আর কতক্ষন থাকবে? এইটা খুলে অন্য শাড়ি পরো। এই বলে অন্য রুম থেকে একটা সুতি শাড়ি এনে দিল মিষ্টিকে। মিষ্টিকে শাড়িটা চেঞ্জ করতে বলে আকাশ রুম থেকে বের হয়ে গেল…

এরপর যখন রুমে আসলো তখন আকাশের হাতে অনেক ধরণের খাবার। খাবারগুলো টেবিলে রেখে বলতে লাগল, আর বইলো না! তোমাদের বাড়িতে যে খাবার দিয়েছে লজ্জার কারণে সেগুলো কিছুই খেতে পারিনি আমি। আকাশের কথা শুনে মিষ্টি ফিক করে হেসে ফেললো। সে রাতে তারা ২টা পর্যন্ত বারান্দায় বসে গল্প করলো। সেই রাতটা মিষ্টির জীবনের সবচেয়ে সুন্দর একটা রাত ছিল। বাসর রাত সম্পর্কে মিষ্টির যে ভুল ধারণা ছিল সেটা ভেঙ্গে গেল।

ঐদিন আকাশদের সংসার সম্পর্কে অনেক বিষয় নিয়ে কথা হলো দুজনের। সে রাতে মিষ্টি শুধুই শ্রোতা, যা কিছু বলার সব আকাশই বলেছিল- শোন মিষ্টি! কালকেও তুমি শুধু একটা মেয়ে ছিলে। আজকে তুমি কারো স্ত্রী, কারো সংসারের বউ। কারো ভাবি, কারো জা, কারো চাঁচি, কারো মামী। যেহেতু বিয়েটা পরিবারিক, তাই আমরা একে অপরকে জানার সময়ও কম পেয়েছি। তবুও যেহেতু আমাকে তোমার বর হিসেবে মেনে নিয়েছো, সুতরাং আমাকে তোমার যোগ্য মনে করেছ। আর আমাকে যদি তোমার যোগ্য করে কেউ গড়ে তুলে থাকে, তারা হল আমার বাবা-মা। আমি চাই তুমি তাদেরকে সম্মান দিয়ে চলবে। তাদেরকে নিজের বাবা-মা মনে করবে…

আজ তাদের বিয়ের প্রায় দু’বছর হতে চলছে, অথচ কোনদিন সামান্য সময়ের জন্যেও সংসারে কোন মনোমালিন্য হয় নি, কোন অশান্তি হয় নি। আর হবেই বা কি করে! এ ব্যাপারে মিষ্টি খুব সতর্ক…

যেমন, তরকারি রান্না করার সময় লবণ ঠিকঠাক মতই দিতে পারে মিষ্টি। কিন্তু সে ইচ্ছা করেই তরকারিতে নিজে লবণ দেয় না। তার শাশুড়িকে ডেকে এনে লবণ দিয়ে নেয়। এতে অবশ্য তার শাশুড়ি আম্মা খুব রাগের ভান করে বলে- ‘এত বয়স হইছে এখনও তরকারিতে লবণ দিতে পার না! আমি না থাকলে কি করবা? মিষ্টি তখন কিছু বলে না, শুধু হাসে। অবশ্য তরকারিতে নিজ থেকে লবণটা না দেওয়ার বুদ্ধিটা তার না, এই বুদ্ধিটা তার স্বামীর মানে আকাশের। মিষ্টি একদিন জিজ্ঞেস করেছিল- এই হাস্যকর কাজটা করার দরকার কি?

আকাশের উত্তরটা ছিল এই রকম- মনে কর তুমি একটা অফিসে অনেক দিন ধরে কাজ করছ, হুট করে নতুন লোক এসে যদি তোমার সব কাজ করে, তখন এক পর্যায়ে তাকে তোমার প্রতিদ্বন্দি মনে হবে। তুমি তখন নানাভাবে তার পিছনে লাগবে।

ঠিক তেমনি, এতদিন সংসারের কাজগুলো মা একাই দেখাশুনা করত। এখন যদি তুমি সব কাজ কর তখন মা মনে মনে ভাববে, সব দায়িত্ব তুমি নিয়েছো; এই সংসারে তার কোন মূল্য নেই। তখন সে নিজেকে বেকার মনে করবে, তার মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। তাই এই সামান্য তরকারিতে লবণ দেওয়াটাকেই সে মনে করবে এই সংসারে এখনও তাকে দরকার…

এই দুই বছরের সংসার জীবনে মিষ্টির কখনোই মনে হয়নি এটা তার শ্বশুড়বাড়ী বরং মনে হয়েছে সে বাবার বাড়ী থেকে এখানেই অনেক ভাল আছে। এর সবের মূলে রয়েছে তার স্বামী। সে শুধু স্বামীই নয়, একই সাথে বন্ধু, পরামর্শদাতা সবকিছুই…

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত