প্রেমো খেলা

প্রেমো খেলা

আমি তন্ময় । বর্তমানে পড়াশুনা করছি। আজকের গল্পটা অনেক দিন আগের কাহিনী। তো এবার শুরু করি, ৭৮৬ এই ছেলে শোনো। ( এক অচেনা আপু)

– জ্বি।[কাছে এগিয়ে গিয়ে আমি)
– হাতে কি?
– ফুল।
– স্পেশাল কাউকে দিতে এনেছো?
– না।
– তাহলে?
– এমনি।
– কোন ইয়ার?
– প্রথম।
– তাহলে তো নতুন মাল।এক কাজ করো,দূরে ওইযে একটা মেয়ে দেখতে পাচ্ছো? কালো রঙের জামা পড়ে দাঁড়িয়ে। যাও..ওকে গিয়ে ফুলটা দিয়ে প্রপোজ করো।

– যদি না করি?
– বড় আপুদের মুখে তর্ক করার শাস্তি নিশ্চই জানো।
– হেহেহে!যাচ্ছি তো [হাবলা মার্কা হাসি দিয়ে] অতঃপর গুটিগুটি পায়ে মেয়েটার কাছে এগিয়ে গেলাম।

তারপর ই ঝটকা। অপরূপ দেখতে সে কন্যা। গভীর দুটি চোখ। দুধে আলতো গায়েন বরণ। হাসি যেনো মুখ থেকে সরে না। সব মিলিয়ে এই রূপবতী যে কারো মনে ধরে যেতে যথেষ্ট। বিপরীত ঘটেনি আমার বেলায়।সেও জ্বলে গেলো রূপের আগুনে।পুড়ন্ত অবস্থা চেয়ে রইলাম মেয়েটার দিকে।

মেয়েটা আচ করতে পেরে সুন্দর মুখ মলীন করে জিজ্ঞাসা করলো “কিছু বলবেন?” আমি থতমত খেয়ে গোলাপ সামনে তুলে ধরে এক নাগারে বলে গেলাম “আমার কোনো দোষ নেই।অচেনা বড় আপু আপনাকে দেখিয়ে I love you বলতে বলেছে।সোজা ভাষায় যেটাকে বলে র্ গিং।পরে ভেবে দেখলাম,না বললে চাকরি থাকবেনা।তাই চলে এলাম।কিন্তু এসে আমি পুরো ফিদা। র ্যাগিং যে কারো উপকারে আসে,এমন ঘটনা না ঘটলে বিশ্বাস করতাম না।প্রথম দেখাতে আপনার প্রেমে পড়ে পেছি।will you my gf?” মেয়েটা চোখ বড় বড় করে জবাব দিলো “এখন পর্যন্ত পাওয়া প্রপোজ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য প্রপোজ এটা।”

– বালিকা অপমান করোনা।হতে পারে একসময় তুমি আমার ছেলের মা হলে।
– সাট আপ।
– তাহলে কি রিজেক্ট ধরে নিবো?
– দূর হো সামনে থেকে।
– এই ব্যবহারের মাশুল একদিন চুকাতে হবে।
– নেক্সট টাইম সামনে দেখলে জুতার বারি একটাও মাটিতে পরবেনা।

শেষ বাক্যটা দৃঢ় ভাবে আঘাত করলো আমার মনে। ফুলটা ফেলে দিয়ে মাথা নিচুকরে মুহূর্তে স্থান পরিত্যাগ করলাম। গভীর রাত।জানালা দিয়ে দিয়ে জুঁইফুলের ঘ্রাণ ভেসে আসছে।জোৎসনায় মাখা পরিবেশ। প্রকৃতির যেনো গল্প লেখার জন্য এমন রূপ ধারণ করেছে।

মুগ্ধ হয়ে আমি নিজেকে আটকাতে পারলোনা।ল্যাপটপ হাতে নিয়ে চলে গেলাম ছাদে।তারপর বিবরণ স্বরূপ টাইপ হচ্ছে ছোটো গল্প।এমন সময় মেসেঞ্জার “টুং” করে বেজে উঠলো। বাম হাত দিয়ে মোবাইল তুলে দেখি Angle Nidhi আইডি থেকে মেসেজ “আপনি দারুণ গল্প লিখেন।আমি আপনার অনেক বড় ফ্যান।এতদিন মেসেজ দেওয়া হয়নি।কিন্তু আজকের গল্প পড়ে মেসেজ না দিয়ে থাকতে পারলাম না।” কথা গুলো সাধারণ লেখকদের কাছে বড় কিছু। ছোটো মানের কিছু লেখক হলেতো লুতুপুতু প্রেম আলাপ শুরু করে দিতো।

কিন্তু আমি কোনো পাত্তা দিলাম না আমি কনভার্সন সিন করে রেখে দিলো। পাঁচ মিনিট পর আবার “টুং”,এবার মিষ্টি করে লেখা “আপনি খুব পচা।” ব্যাপারটা বিরক্তিকর।কিছু সময় মানুষ নিসঙ্গ থাকতে পছন্দ করে।তবুও এক শ্রেনীর লোক ইচ্ছে করে তাকে জ্বালিয়ে পৈচাশিক শান্তি পায়। কোনো রিপ্লে না দেওয়ায় তৃতীয় বার গরুর রচনা ভেসে উঠলো “কি ভাবেন নিজেকে?আমি সবার সাথে ভাব নিই আর আপনি আমার সাথে ভাব নিচ্ছেন।ধ্যাত,আগ বাড়িয়ে কথা বলাটা ভুল। গুড বাই।” শেষ মেসেজটা পড়ে আমি হাসিতে কুপোকাত। এমন সময় মনে হলো কে যেনো চিল্লাতে চিল্লাতে ছাদে আসছে।কণ্ঠটা মেয়ের। চিল্লানি কথা গুলো এমন ছিলো “কিভাবে সে নিজেকে!ব্লোক না দিয়ে শান্তি হচ্ছেনা।কিন্তু ব্লোক দিলে আরেক জ্বালা।এমন সুন্দর গল্প কোথায় পাবো!” কিছুক্ষণে ছাদে এক মেয়ে উপস্থিত হলো।যা দেখে আমি হতভম্ব। ভার্সিটির মেয়েটা এখানে কি করে সম্ভব?

– আপনি এখানে?(আমি)
– সরি!কে আপনি?
– সকালে যাকে অপমান করেছেন।
– ওহ্ হো,আপনায় না বলেছি সামনে না আসতে।
– হ্যালো ম্যাডাম,আপনি আমার সামনেএসেছেন।
– যাইহো,হুহ্।
– নতুন ভাড়াটে?
– মানে?
– বাড়িটা আমার আপু।
– চেহারা দেখে তো মনে হয় বস্তি থেকে উঠে এসেছেন।আবার বড় গলায়বলা হচ্ছে বাড়িটা আমার। (মেয়েটা)

– আজব ঝগড়াটে মেয়ে তো আপনি।মুড পুরা নষ্ট হয়ে গেলো।আজ আর গল্পলেখা,হলোনা। গল্প শব্দটা শুনে মেয়েটার বুক কেঁপে কেপে উটলো মনে হলো, ইনি Toñmoy Ãhämêd নাতো।

– এই নাম কি যেনো বলছিলেন? (মেয়ে)
– তন্ময়।
– পুরো নাম!
– তন্ময় আহম্মেদ কেন ।

নিধী কান্না করছে।বালিশে মুখ লুকিয়ে অঝরে কান্না করছে।এই কান্নার স্রত থামবার নয়।ভাবতেও পারছেনা সে Tonmoy ahamed লেখকের দেখা পাবে।তাও আবার এমন পরিস্থিতিতে। আমি ওকে মেসেঞ্জারে নক করলাম নিধী মেসেজ সিন করলো আমি “ছাদে আসো।” সে কিছু ভাবলোনা।চোখ মুছে দৌড়েছাদে চলে গেলো। তারপর দুজন সামনাসামনি দাঁড়িয়ে।নিধীর মাথা নিচু,চোখ ফুলে লাল হয়ে আছে।

– এভাবে ছাদ থেকে চলে গেলেন কেনো?
– আপনি কিভাবে জানলেন এটা আমার আইডি?

– প্রশ্নের ওপর প্রশ্ন করা মেয়েদের জন্মগত স্বভাব।তবুও বলছি,ছাদে ওঠার সময় যে বকবক করছিলেন।বকবক শুনে আপনায় অল্প আচ করতে পেরেছিলাম।

– আমি প্রথম থেকে আপনার গল্প পড়ছি। প্রতিটা গল্প আমার পড়া।বড় লেখদের চেয়েও আপনার গল্প আমার কাছে ভালোলাগে।জীবনে ভাবতে পারিনি আপনার সাথে দেখা হবে।দুর্ভাগ্যবশত নিয়তি দেখুন।দেখা হলো,কথা হলো,প্রপোজও করলেন।কিন্তু আমি!মরে যেতে ইচ্ছে করছে এখন।

– আপনি কিন্তু আমার প্রথম ক্রাশ।
– প্রথম প্রেম কি হতে পারি?
– জুতার বারি!
– সরি,প্লিজ ক্ষমা করে দেন।
– শুর্ত আছে।
– আমি রাজি।
– না শুনে?বেশ অদ্ভুত তো।
– যার গল্প সুন্দর,তাঁর কল্পনা সুন্দর।আপনার কল্পনা এতো সুন্দর যে মন কুৎসিত হওয়ার প্রশ্ন আসেনা।
– বাহ্,এবার চোখ বুজে দুয়ের নামতা বলুন।

নিধী হাত দ্বারা মুখ ঢেকে তাই করলো। দুই অক্ষে দুই,দুই দুগুণে চার,তিন দুগুণে ছয়,চার দুগুণে আট,পাঁচ দুগুণে দশ…..দশ দুগুণে বিশ। এবার খুলি? কোনো সারা পাওয়া গেলোনা। চারিপাশ নীরব। নিধী চোখ খুলে এদিকওদিক চোখ গুলিয়ে মন খারাপ করে ফেললো।তারপর নিচে তাকাতে বিস্মিত। চারটা জুঁই ফুল হাতে আমি হাঁটু গেরে বসে আছি।

চোখে চোখ পরতে বললাম- “সৃষ্টির শ্রেষ্ঠা তুমি, যত্নে গড়া পরী। মুগ্ধ আমি দেখা পেয়ে, তোমার দর্শন খানি। জোৎসনা রাতে এসেছো কাছে, দিয়ে মনে দোলা। রাখবো আগলে জনম জনম, মাতবো প্রেমো খেলা। again said,will you my gf?” নিধী উজ্বল চোখে তাকিয়ে বললো “yes,yes,yes..I’ll” তারপর তাকে জড়িয়ে ধরলাম। এভাবে আমাদের নতুন জীবন শুরু হলো। সবাই দোয়া করবেন।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত