ভালবাসার অনুভুতি

ভালবাসার অনুভুতি

–এইইইইই(সাদিয়া)
=হুমম(আমি)
-এইইইইই যে..
=হুউউ যে..
-কিসব শুরু করলেন??
=কিছুনা তো!!
-আচ্ছা আপনি এতো হাবা কেনো?
=জা—নিনা তো!!
-কেনো হাবা সেটাও জানেন না!! বিয়ের পর বউয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তাও জানেন না!! তো জানেন টা কি আপনি??
=জানি তো!!
-হা! জানেন! কচুর মাথা!!

কথা টা বলেই সাদিয়া মুখ টা কে আলু টাইপ করে ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে, আর আমি তাকিয়ে আছি সাদিয়ার দিকে, মেয়েটার দিকে সব সময় তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়, কিন্তু সেই সুযোগ টা পাইনা, কারন টা হলো সাদিয়াই সারাক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকে আর মিটি মিটি হাসে। মেয়ে টা যে এতো সুন্দর করে কিভাবে হাসে বুজতেই পারিনা!! ওর হাসি টা শুধু যে মুখের মধ্যেই সিমাবদ্ধ থাকে তা না, সাদিয়া যখন হাসে তখন ওর চোখ দুটো তেও স্পষ্ট হাসির ঝলক দেখতে পাওয়া যায়, মেয়েটা চশমা পরে। চশমা পড়া মেয়েদের উপর অনেকের ই হালকা দুর্বলতা থাকে, কিন্তু আমার তা কখনো ছিলো না। তবুও ওর চশমা পরা চোখের হাসিটা কেনো যেনো আমার মধ্যে অন্যরকম কিছু একটা তৈরি করে। ওর প্রতিটা হাসির মিটি মিটি শব্দের সাথে সাথে আমার বুকের বা পাশ টায় অদ্ভুত এক ধরনের কিছু একটা অনুভুত হয়।

=তুমি কি রাগ করেছ?(আমি)
-হুহ!+ (সাদিয়া)
=বলোনা?
-কথা বলবেন না আপনি!!

সাদিয়ার এক ঝারিতেই আমি চুপ। ওর ঝারিগুলোও কেমন যেনো। ওর সব কিছুই কেমন যেনো। আমার সব টুকুতে স্পর্শ করে। _&&&&&&&_বিয়েটা আমাদের হুট করেই হয়ে গেলো।আমি সবে মাত্র অনার্স শেষ করলাম। কিভাবে কিভাবে যে সব কিছু হয়ে যায় বুজতেই পারিনি আমি। অনার্স শেষ করে যেই আমি এম বি এ করার জন্যপ্রিপেয়ার হচ্ছিলাম ঠিক তখন ই একদিন হঠাৎ আব্বা সকালে আমাকে কাচা ঘুম থেকে উঠিয়ে অফিসে নিয়ে গেলো। ছোট কাল থেকেই দেখেছি আব্বা যখন সিরিয়াস কিছু বলে তখন আমাকে সাথে করে অফিসে নিয়ে যায়।তারপর যা বলার বলে, আরবাবাদের সিরিয়াস কথায় সন্তানেরা মন খারাপ করে এটাই সাভাবিক।

তাই যখন আব্বার সিরিয়াস কথা শুনে আমার মন খারাপ হয়ে যায় তখন আব্বাআমাকে নিয়ে যে কোনো জায়গায় ঘুরতেনিয়ে যায় অথবা এমন কিছু করে যেটাতে আমি খুশি হই। সেই ছোট্ট কাল থেকেই এই রিতিতেই বড় হচ্ছি। সেদিন যখন আব্বা অফিসে নিয়ে গেলো তখন বুজতে পারছিলাম সিরিয়াস কিছু বলবে। তবে কি বলবে তা বুজতে পারছিলাম না, কিন্তু আব্বু যাবললো তা শুনবো বলে কখনো ভাবিনি, আব্বার কথা গুলো ছিলো এমন” তুই কি বুজতে পারছিস যে সেই শুরু থেকে এ পর্যন্ত তোর আম্মা পরিবার টা কে দির্ঘদিন ধরে সামলেআসছে!এখন তার বয়স হয়েছে। আমার ও হয়েছে। তুইও বড় হয়ছিস। তোর বোন টা কেও ক’বছর আগে বিয়ে দেয়া হয়েছে, আর তাই এখন তোর আম্মা মোটামুটি নি:সঙ! তার একজন সঙ্গী প্রয়োজন। তোর আম্মাওএবং আমি মনে করছি যে সেই সঙি স্থান টাপুরন এরদায়িত্ব তোর। আমি কি বলছি বুজতে পারছিস?? ”

আমি বললাম “জি না আব্বা” আব্বা বললো “এখানে না বুঝার মতো তো কিছু দেখছিনা। তোর কয়েকবছর পর সব কিছু দেখতে হবে, এর জন্য তোকেও প্রস্তুত থাকতে হবে, । আর তোকেও প্রস্তুত করার জন্যই আমরা একজন গাইডঠিক করেছি, ।কিছু দিন পর থেকে তোর সেই গাইডএর আন্ডারে চলতে হবে। বুজতে পারছিস?? ” আমি বললাম “জি আব্বা”!! কিন্তু আসলে যে আব্বা কি বুঝাতে চাচ্ছিলো তা আমিও নিজেও বুজতে পারছিলাম না। আমি ধরে নিয়েছিলাম যে বিজনেস এর বিষয়ে আমাকে এক্সপার্ট করতেই হয়তো কোনো গাইড!!

এই কথা ভেবেই যেই আমি নিজেকে শান্ত করছিলাম ঠিক তখন ই মাথায় আরেকটা চক্কর খেলো!! আচ্ছা আমার গাইড আম্মার সঙ্গী হতে যাবে কোন দু:খে!! সব কিছু কেমন যেনো এলোমেলো লাগছিলো। এলোমেলো ভাব দুর হতে না হতেই আব্বা আমাকে নিয়ে উপস্থিত হলো এক বাড়িতে। বাড়িটাতে ঢুকে আমি আরো বড় ভ্যাবাচেকা খেলাম। পুরো ঘর লোকারণ্য!! তার মধ্যে আবার আমার আম্মা আপি দুলাভাই রাও। কিছুই বুজছিলাম না। মাথা টা কেমন যেনো ঘুরাতে লাগলো। আশেপাশে কি হচ্ছিলো বুঝছিলাম না। যখন একটু স্থির হতে নিলাম ঠিক তখন ই দেখি ঠিক আমার বরাবর একটু সামনে শাড়ি পরা একটা মেয়ে ঘুমটা দিয়ে বসে আছে। যেই আমি হকচকিয়ে যেয়ে একটু তাকাতে গেলাম ঠিক তখন ই সবাই হো হো করে হেসে উঠে আমাকে জিজ্ঞেস করলো “কি? কেমন? ভাল?”

কিসের কি কেমন আর ভাল বুজতে না পেরে মেয়েটার দিকে আরেকবার তাকাতেই দেখি মেয়েটা মুখ দিয়ে নিচের ঠোটে কামর দিয়ে সবার চোখ ফাকি দিয়ে চোখ বড় বড় ভয় দেখানোর মতো করে আমার দিকে তাকালো!! আমি এতোই ভ্যাবাগঙ্গারাম হয়ে গেলাম যে যেই সবাই আবার জিজ্ঞেস করলো যে”কি? ভাল?” আমি কিছু না বুকেই হ্যা বলে মাথা বারিয়ে দিলাম। আর সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। সব কিছুই তরিত গতিতে আমার বুঝার আগেই ঘটে গেলো । ফুল সহ্যার রাতে আমি লজ্জায় লাল হয়ে যখন ঘরে ঢুকে এক কোনায় বসে রাত কাটানোর চিন্তা করলাম তখন ঘরে ঢুকতেই হঠাৎ সাদিয়া র হুংকার! “এই যে শুনুন! আমার সাথে কখোনো রাগ দেখাবেন না! দেখালে কিন্তু দাত গুলো সব ফেলে দিবো!” আমি বললাম–“জি আচ্ছা”(আমি ভাবলাম ও হয়তোবা আমায় মানতে পারছে না বা ওর কোনো বিএফ আছে) তাই সাদিয়ার কথাতে একটু খটকা লাগলো । তাই মেনে নিলাম।

মেয়েটা তখন কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো, একটু পর আবার হুংকার!! “আরেকটি কথা শুনুন! আমার গায়ে টাচ করার চেষ্টা করবেন না খবরদার!! করলে কিন্ত হাত দুটো গুরিয়ে দিবো!!” আমি এবার হেসে দিলাম নিজের অজান্তেই!! মেয়েটা কিছুটা লজ্জা পেয়ে গিয়ে নিচু করে মুখ টা লুকিয়ে নেয়। সে রাতে সাদূ খুব জলদি ঘুমিয়ে পড়ে। তাই আর তেমন কিছুই হলো না আমি দুরেই বসে ছিলাম। হঠাৎ সাদিয়ার ঘুমানো মুখটার দিকে চোখ পড়ায় এক নজর দেখার সাথে সাথে বুকের মধ্যে কেমন যেনো মোচর অনুভব করি। মেয়েটা ভুলে চশমা পরেই ঘুমিয়ে পরেছিলো। সেই চশমা টা খুলতেই লেগেছিলো আমার দু ঘন্টা!! ভয়ের মধ্যে ছিলাম কখোন আবার ও উঠে গিয়ে আমার হাত ভেঙে ….

আগে প্রতিদিন আমার ঘুম ভাঙতো ঘরির কটকট আওয়াজ এ। কিন্তু সে রাতের পর প্রতিদিন ঘুম থেকে চোখ মেলার সাথে সাথেই আমার মুখের সামনেই সাদিয়ার মায়াময় হাসি মুখ টা দেখতে পাই। রোজ ই মেয়েটা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আমার ঘুম ভাঙায়। ঘুম ভাঙার পর নিজের মাঝে এক ধরনের আলাদা অনুভুতি খুজে পাই। যখন ই আমি চোখ মেলি তখন ই সাদিয়া সেই চোখ ঝলকানো হাসিটা দিয়ে চলে যায়। সব কিছুই কেমন যেনো। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় ঘুম থেকে উঠেই ওকে একটু জড়িয়ে ধরি, কখনো বা ইচ্ছে হয় ওর চশমা টা খুলে ওর চোখ দুটোয় দুটো স্পর্শ একে দেই, কিন্তু তখন ই ভয় যদি সাদিয়া অন‍্য কিছু ,,,সে ভাবেই চলছিলো সব। সেই শুরু থেকেই ওর কথার বাহিরে চলিনি। রাতে ঘুমানোর সময় চুপচাপ করে কখোনো বা ওর দু চারটা ঝারি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম।

কিন্তু আজ সাদিয়া হঠাৎ করেই নিজ থেকে জানালার বড় পর্দাটা সরিয়ে দিয়ে লাইট অফ করে দেয়। ঘর ময় জোস্নার আলোতে ভরে যায়। আমাকে অবাক করে দিয়ে সাদিয়া আমার শার্টের কলার টেনে ধরে নিজের পাশে নিয়ে বসায়, মেয়েটা এখন ও সেই আগের মতোই মুখ টা ফুলিয়ে আছে। কিন্তু এ কি!! সাদিয়া কাদছে! চশমার ভিতর দিয়ে চোখ থেকে টপটপ করে পানী পড়ছে। চোখের পানির সাথে পাল্লা দিয়ে সাদিয়ার গাল দুটোও ফুলছে। আমি কিছু বুজতে না পেরে পায়চারি শুরু করে দিলাম…

=কি হয়েছে তোমার?? কাদছো কেনো?? কেউ কিছু বলেছে??(আমি)

-চুপ করুন, কথা বলবেন না, আপনি একটা হাবা, একটা গাধা, একটা কমন সেন্স হীন ছেলে!! (সাদিয়া)

=কেনো? কি করেছি আমি??
-আবার বলে কি করেছি!! এই আপনি বিয়ে করেছেন কেনো?? কে বলেছে বিয়ে করতে?? একটা দিন এসে আমার হাত টা ধরেছেন?? একটা দিন নিজথেকে কথা বলেছেন!! আমি কি বাঘ না অন্য কিছু?? এতো ভয় পাওয়ার কি আছে??

=না মানে!! তুমি তো বলেছিলে…….
-আমি বলেছি কি?? কি বলেছি আমি??

আর আমি যা বলবো তার সবই কি মানতে হবে?? কিছু বুঝেননা না?? হনুমান কথাকার!! আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই সাদিয়া ঝাপটা দিয়ে আমার বুকে এসে মাথা টা গুজেই এক হাত দিয়ে জরিয়ে ধরে অন্য হাতে আমার গালে বুকে আদর মাখা হাতে মারতে থাকে, অন্য এক আবেশে জরিয়ে গেলাম যেনো আমি সাদূ কাদছে, কেনো যেনো আমার চোখ বেয়েও কান্না আসছে, কিন্তু না আমার কান্না করাটা ঠিক হবেনা, কান্না টা কে ভালবাসায় রুপান্তরিত করে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম সাদিয়াকে……

নিজের মাঝেও তখন আরো একটা সত্তার অস্তিত্ব পেলাম, যে অস্তিত্ব আমায় জোর দিয়ে বলছে “কখনো ছেরে দিয়োনা, জরিয়ে ধরো, আরো শক্ত করে, ভালবাসার সব টুকু অনুভুতি নিয়ে….

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত