ভালোবাসা

ভালোবাসা

মেয়ে::—-তুমি হঠাৎ আসো অনলাইনে, আবার হঠাৎ চলে যাও। বলে যাও না কেন?

ছেলে::—-আমি কি হজ করতে যাই নাকি?এত বারবার বলার কি আছে?

মেয়ে::—-উফ! অসহ্য!

ছেলে::—-কি অসহ্য?

মেয়ে::—-তোমার মাথা!

ছেলে::—-অ

মেয়ে::—আবার অ? বলছি না ও বলবা?

ছেলে::—-অ! সরি! ও।

মেয়ে::—-তুমি সেদিন বাসের মধ্যে আমার বান্ধবী ইরা কে কি বলছো?

ছেলে::—-বলছি আমার ১০০০ টাকার নোট। খুচরো নাই। ভাড়া দিয়ে দেন।

মেয়ে::—-উফ! এটা না। ও নাকি ইঞ্জিনের ওপর বসে ছিলো আর তুমি সামনের সিটে?

ছেলে::—-হ্যাঁ। তারপর ইরা বলল ভাইয়া আসেন অদলবদল করি। খুব গরম লাগছে ইঞ্জিনের ওপর গদিটায়।

মেয়ে::—-আর তুমি কি করলা?

ছেলে::—-আমি আমার ব্যাগ থেকে পানিরবোতল বের করে দিলাম যাতে ইঞ্জিনের ওপর সিটে ঢেলে দিয়ে তারপর বসে।

মেয়ে::—-ওই! তুমি মানুষ হবা না? বাসের সব মানুষ হেসে ফেলছে! ইরা মাইন্ড করছে খুব।

ছেলে::—-মাইন্ড করলে আমার কি?

মেয়ে::—-তোমার কি মানে? ও আমার বান্ধবী। আর তোমাকে না বলছিলাম ভাইয়ার সাথে দেখা করতে। ভাইয়া তোমাকে দেখবে বলেছে। দেখা করেছো?

ছেলে::—-আমি কি চিড়িয়াখানার জন্তু? দেখার কি আছে?

মেয়ে::—-উফ! আমি ভাইদের একমাত্র বোন। তারা কি না দেখেই আমাকে বিয়ে দিবে?

ছেলে::—-দেখবে না কেন? তারা কি অন্ধ নাকি?

মেয়ে::—-অসহ্য! তুমি তোমার বাবা মা কে বলেছো আমার কথা?

ছেলে::—-উনারা কানে শোনেন না!

মেয়ে::—-সে কি! কবে থেকে?

ছেলে::—-যেদিন আমাকে বাসায় বিয়ের কথা বলতে বলছো সেদিন থেকে।

মেয়ে::—-ওহ! খোদা! তুমি মানুষ হবা না?

ছেলে::—-আমি কি অমানুষ নাকি?

মেয়ে::—-উফ! তোমায় নিয়ে আর পারি না!

ছেলে::—-আমার সাথে পেরে ওঠার এত শখ কেন?

মেয়ে::—-শখ না খায়েশ।

ছেলে::—-কিসের খায়েশ?

মেয়ে::—-তোমার চুলগুলো টেনে তোলার।

ছেলে::—-তোমার সামনে এলে তো তুলবা!

মেয়ে::—-কতদিন না এসে থাকবা?

ছেলে::—-যতদিন তোমার বাপে যৌতুক দিতে রাজি না হয়!

মেয়ে::—-অই!

ছেলে::—-কি?

মেয়ে::—-তোমাকে কিন্তু চাবাইয়া খেয়ে ফেলব যদি সামনে পাই!

ছেলে::—-কয়দিন হলো ভাত খাও না?

মেয়ে::—- উফ!তোমার কি কিছুতেই সিরিয়াসনেস নাই?

ছেলে::—-আছে তো।

মেয়ে::—-কিসে?

ছেলে::—-অই যে কছিম মামার সাথে লুডু খেলার সময়।

মেয়ে::—-আমার অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে গেলে বুঝবা! কি করবা তখন? হু?

ছেলে::—-ভিক্ষুককে টাকা দিবো।

মেয়ে::—-কেন?

ছেলে::—-আমাকে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে পারবা না তাই!

মেয়ে::—খোদা! পায়ে ধরি! মাফ চাই! ভালোভাবে কথা বলো প্লিজ! প্লিজ!

ছেলে::—- আশে পাশে কেউ নাই তো। কার সাথে বলবো?

মেয়ে::—-আমার সাথে?

ছেলে::—-তোমাকে তো ম্যাসেজ লিখি!

মেয়ে::—-জান বলছি! প্লিজ এমন করে না।

ছেলে::—-কেমন করি?

মেয়ে::—-উফ! অসহ্য! আমার মাথা! মুণ্ডু! মুড়ি খাও তুমি বসে বসে!

ছেলে::—-তুমি ভেজে দিও তাহলে। বয়ামে ভরে রাখবনি।

মেয়ে::—-শয়তান! তোকে যদি সামনে পাইতাম…! আচ্ছা বাবু আসো আজ বিকেলে দেখা করি একটু?

ছেলে::—-নাহ!

মেয়ে::—-কেন?

ছেলে::—-তুমি মাইর দিবা!

মেয়ে::—-নাহ। দিব না। দরকার আছে একটু প্লিজ?

ছেলে::—-আমার সময় নাই বিকেলে।

মেয়ে::—-কেন কি করবা?

ছেলে::—-ওই তো আমাদের বাড়িওয়ালার মেয়ে নাবিলা, যে আমাকে ওয়াইফাই এর পাসওয়ার্ড দিয়েছিলো ওকে নিয়ে ঘুরতে যাব একটু ধানমন্ডি লেকে।

মেয়ে::—-অই! আমি কিন্তু তোকে খুন করে ফেলব!

ছেলে::—-তাহলে আমার নাবিলার কি হবে?

মেয়ে::—-তোর নাবিলা মানে?

ছেলে::—-আমার আম্মার তো নাবিলাকেই পছন্দ। আম্মাকে ছবি দেখিয়েছিলাম নাবিলার। আম্মা বলল, কি মিষ্টি মেয়ে!

মেয়ে::—-তোকে এমন মিষ্টি খাওয়াবো! বাকি জনমে আর মিষ্টি মিষ্টি করবি না!

ছেলে::—- শোনো রূপা! এত কথার দরকার নাই। তোমার সাথে ব্রেক আপ আমার এখন! এই মুহুর্ত থেকে।

মেয়ে::—- কী!

ছেলে::—- হ্যাঁ।

মেয়ে::—-ঠিক আছে। তোর কাছে আমার যা যা আছে সব দিয়ে দে।

ছেলে::—-আমার কাছে তোমার কিছুই নাই।

মেয়ে::—-কিছুই নাই মানে? কত কিছু আছে! আর তাছাড়া গত সপ্তাহেও আমি তোকে টি শার্ট কিনে দিয়েছি একটা।

ছেলে::—-ওটা দিয়ে আমাদের বুয়া ঘর মুছে এখন। দেখবা? ছবি পাঠাবো?

মেয়ে::—-কী! ঠিক আছে! তুই যে গত মাসে আমাকে রেস্টুরেন্টে শাড়ী দিলি ওটা ফেরত নিয়ে যা।নাহলে আমি পুড়িয়ে ফেলব এখনি।

ছেলে::—-আমার কাছে ১০০০ টাকার নোট।

রিকশা ভাড়া দেয়ার জন্য খুচরা টাকা নাই। তুমি এসে ফেরত দিয়ে যাও। শেষ বিকেলে কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে দিলাম। দেখি রূপা দাঁড়িয়ে আছে, হাতে একটা প্যাকেট। মেয়েটা যে এক দুপুর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছে, সন্দেহ নেই। চোখমুখ ফুলে আছে। মেয়েটা এত পাগল! বললাম,

ছেলে::—-তোমার হাতে কি?

মেয়ে::—-শাড়ি।

ছেলে::—-ড্রাই ওয়াশ করে এনেছো তো?

মেয়ে::—-মানে?

ছেলে::—-নাবিলাকে তো এটাই দিব আবার।

মেয়ে::—-বদমাইশ!

ছেলে::—-অ! রুমে এসে বসো। আমি গুছিয়ে দিচ্ছি আমার কাছে তোমার যা যা আছে। রূপা আমার বিছানায় বসে আছে। কাছে গিয়ে বললাম, তোমার হাতটা দেখি একটু?

মেয়ে::—-কেন?

ছেলে::—-দরকার আছে। আমি রূপার ডান হাতের অনামিকায় আংটি পড়িয়ে দিলাম।

মেয়ে::—-ওমা! তুমি আমাকে রিং পড়াচ্ছো কেন?

ছেলে::—-কি যেনো কথা ছিল?

মেয়ে::—-কথা ছিল তুমি চাকুরী পেলে  আমাকে একটা লাল শাড়ী কিনে দিবা আর প্রথম মাসে বেতন পেলে একটা স্বর্ণের আংটি।

ছেলে::—-হু, তাই তো দিলাম।

মেয়ে::—-অসভ্য, ফাজিল! তাহলে এসব কি ছিল?

ছেলে::—-ভালোবাসা।

মেয়ে::—-শয়তান একটা! ভীষণ পাজি তুমি!

রূপা হাসে, রূপা কাঁদে, রূপা রাগে রূপার চোখ অভিমানে জলে ভিজে আমার এত বেশি ভালো লাগে! কিছুক্ষণ মার দেয়ার পর রূপা এই মাত্র আমার বুকে মাথা রাখলো! সত্যিই মাঝেমাঝে মনে হয়, লাইফ ইজ বিউটিফুল!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত