–কী বাচ্চাদের মত কান্না কাটি করছো। চোখের কাজলগুলো লেপটে যাবে তো।
—-তাতে তোমার কী।
—-আমার কিছু না।দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে তাই বললাম।
—আসছে ঢং করতে।
—-ঢং তো মেয়েরা করে।
—-কী,আমি ঢং করি।
—-আরে কী বলি,আর লহ্মী বউটা কী বুঝে।
—এতো বুঝে আমার কাজ নেই।আমার আইসক্রিম কই? (অভিমানি সুরে)
—না মানে তখন তো বললাম আমার মনে নেই।
—তা মনে থাকবে কেনো।এখন তো আর আমাকে ভাল লাগে না। (একটু রেগে)
—-কী আজিব কথা বার্তা।কী বলি আর কী বুঝে।
—শুনো আমি ঠিকই বুঝি।
—-বললাম তো আমার অফিসে অনেক কাজ ছিলো,কাজের চাপের কারনেই কিছু মনে নেই।
—-কাজের চাপ ছিলো নাকি অফিসের সেই কলিগ জনি না টনি তার সাথে গল্প করতে গিয়ে আমার আইসক্রিমের কথা মনে নেই।
—কি সব বাজে কথা বলছো।
—কোন বাজে কথা না।যা বলছি সব সত্যি বলছি।যাও এখান থেকে তুমি।
>এই যা মুখ ঘুড়িয়ে ঐ দিকে শুয়ে পড়ল।আমি রবিউল ইসলাম রবি রাজশাহী একটা সরকারি ব্যাংকে চাকরি করি ।আর এই যে এতহ্মন যে আমাকে ঝাড়ি দিলো সে আমার মিষ্টি বউ মিম। পুরাই আইসক্রিম পাগলী।
>আমাদের বিয়ে হয়েছে মাত্র একমাস। পারিবারিক ভাবেই বিয়েটা হয়েছে।মিম কে না দেখেই বিয়েটা করেছি।বাসর রাতে যেদিন দেখলাম, সেদিন পুরাই টাশকি খেয়ে গেছিলাম।কখনো ভাবিনি এমন কিউটি একটা বউ হবে আমার। সবই ঠিকআছে বাট ঐ আইসক্রিম লাগবে তার বাসর রাতে। কী বিপদে না পড়েছিলাম সেই রাতে।ভাগ্য ভাল যে ফ্রীজে আইসক্রিম ছিলো।না হলে যে কী হতো।ঐ একটা শর্তই দিয়েছিলো যে প্রতিরাতে তাকে আইসক্রিম এনে দিতে হবে। মিম আইসক্রিম পাইলে পৃথীবির সব ভুলে যাবে শুধু আমাকে ছাড়া।কারন ও আমাকে বড্ড ভালবাসে।মিম যখন আইসক্রিম খায় তখন একদম বাচ্চাদের মত লাগে দেখতে।
>মাঝে মাঝে মিমের সাথে আইসক্রিম খেতে বের হলে রাস্তার আশে পাশে মেয়েদের দিকে আমি ইচ্ছা করেই ইশারা করে তাকিয়ে থাকি।এতে মিম প্রচুর রেগে যায়।আসলে মিম কে রাগানোর জন্যই এটা করি। যার ফলে আমাকে অনেক ঝাড়ি শুনতে হয়। রাগলে মিমকে বেশ মিষ্টি লাগে দেখতে।
কিছুহ্মন পরে…..
—এই মিম সত্যি আমার অনেক কাজ ছিলো।
>কোন সাড়া শব্দ নেই।কেমন জানি আওয়াজ আসতেছে।এই মিম তুমি কাঁদতেছো কেনো।সত্যি এখন আমার খুবই খারাপ লাগছে। ভালবাসার মানুষটা এভাবে কান্নাকাটি করলে নিজের বুকটার মধ্যও ফেটে যায়।
—এই মিম চলো খেতে হবে।
—তুমি খাও আমি খাবো না। (কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
—প্লিজ চলো,তোমাকে ছাড়া আমি কখনো খেয়েছি।
—আর আমি রাতে আইসক্রিম ছাড়া কখনো খেয়েছি। (একটু রেগে)
—-কাল থেকে আর ভুল হবে না, প্রমিজ।
—-না, আজ আমার আইসক্রিম লাগবেই।
—এতো রাতে আইসক্রিম?
—এতো কিছু আমি জানি না।
—আচ্ছা, উম্মাহ,,
—এটা কী করলা?
—কই কী করলাম।
—এই মাত্র এটা কী দিলা আমার মুখে।
—কিস দিলাম।
—কিস দিলা কেন?
—ওমা,আমার বউকে কী আমি চুমু দিতে পারবো না।শুনো তুমি আমার বিয়ে করা বউ তোমাকে যত ইচ্ছা চুমু দিতে পারি।
—-না পারো না,একটা আইসক্রিম কিনে দেয়ার মুরোদ নেই আবার আসছে সোহাগ করতে।
—কি আজব,প্রতিদিনই তো কিনে দেয় একদিন না হয় মনে নেই।
—-মনে ছিলো না নাকি কী ছিলো সেটা আমি ভাল করে জানি।
—আচ্ছা চলো খেয়েনি,রাগ করো না প্লিজ।
—আইসক্রিম ছাড়া আমি কিচ্ছু খাবো না।
—-প্লিজ চলো।এই কান ধরলাম সরি।
—কিছুতেই হবে না,আমার আইসক্রিম চায়ই চায়।
—আচ্ছা চলো আগে রাতের খাবার খেয়েনি তার পর যাবো।
—সত্যি রাতে নিয়ে যাবে আমাকে?
—হুমম যাবো।
—প্রমিজ?
—প্রমিজ।
রাতের খাবারের পর,,,
—এই তুমি শুয়ে পড়লা কেন? (মিম)
—ওমা,রাতের খাবারের পর মানুষ না শুয়ে কী করবে।
—কী করবে মানে, তখন কী কথা হলো আমাদের।
—কী কথা হলো শুনি।
—কিছু না।
—এই চলো চলো যাচ্ছি বাবা,এমনি ফান করছিলাম।
>কথাটা শুনে মিম মুচকি মুচকি হাসা শুরু করল।মিম জানে ও রাগ করলে আমি ওর কথা না শুনে থাকতে পারবোই না।
>আসলে আমি ইচ্ছা করেই আজ আইসক্রিম নিয়ে আসেনি।তার কারন মিমকে নিয়ে বের হবো বলে।মিম আইসক্রিমের জন্য যা ইচ্ছা করতে পারে।তাই সুযোগ টা কাজে লাগাইলাম।
>মিম কখনো বের হয় না। ওর তেমন কোন আবদার নেই আমার কাছে।শুধু আমাকে ওর পাশে চায় সব সময়। এমন একজন কে বউ হিসেবে পেয়ে জীবনটা সুখের সাগড়ে ভাসতে থাকে।
>তাছাড়া আজ রাত ১২ টা বাজলেই ১৪ই ফ্রেব্রুয়ারি মানে ভালবাসা দিবস।এই সব মিম মানে না।কারন তার কাছে সবদিনই ভালবাসার দিন।আগামিকাল বের হবে না জানি তাই একটু একসাথে বেরোনোর সুযোগ করে নিলাম।
—এই এই রবি এতো জোড়ে হাটছো কেনো?
—শুনো তুমি এখানে পাঁচ মিনিট দাঁড়াও আমি আসতেছি।
—কই যাবা আমাকে একা রেখে, আমার ভীষন ভয় লাগবে তো।
পাঁচ মিনিট পর…
—চোখ বন্ধ করো মিম
—কেনো,আর কই গেছিলে বলো আগে।
—সব বলছি আগে চোখ বন্ধ করো।
—না,না,না,,আমার আইসক্রিম কই বলো আগে। আমি কিন্তু কান্না করে দিবো।
—আরে বাবা চোখ বন্ধ করতে বলেছি, আগে চোখ বন্ধ করো।
—আচ্ছা করলাম।
—হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন ডে মিম আমি তোমাকে ভীষন ভালবাসি। আমার আইসক্রিম পাগলীকে ভালবাসি।
>খোলা রাস্তার মাঝখানে হাটুগেড়ে বসে মিম কে আইসক্রিম দিয়ে কথাগুলো বললাম।এখন রাত বারো টা পেরিয়ে গেলো আজ ভালবাসা দিবস।মিমকে একটু সারপ্রাইজড করার জন্য এই সকল আয়োজন।যার সাহ্মী আমি,মিম ,এই হালকা কুয়াশা ভরা গভীর রাত,আর আকাশের তারা।
>মিম কোন কথা বলছে না,শুধু মুখে হাত দিয়ে এক দৃষ্টিতে আমার কান্ড কারখানা দেখছে।
—উহহহ,,, (আমি)
—এই কী হলো তোমার। (মিম)
—আইসক্রিম কি ঠান্ডা। গলে যাচ্ছে তো, সব আমার হাতে এসে পড়ছে।
—পাগল একটা, এমন পাগলামী বুদ্ধি কোথা থেকে আসল শুনি।
—কেনো আমার বউটার জন্য কী আমি এতটুকু করতে পারি না।
>মিম কোন কথা না বলেই আইসক্রিমটা নিয়েই আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
–আমি আমার দুষ্টু বরটা কে ভীষন ভালবাসি।
–কেমন ভালবাসো জানি সেটা হু।তুমি আইসক্রিম কে বেশী ভালবাসো।
—কখনোই না,আগে আমার বর তারপর আমার আইসক্রিম।
—সত্যি তো।
—হুমম সত্যি।
—ঠিকআছে এবার আইসক্রিম খাও গলে যাচ্ছে তো।
—তুমি খাবে?
—না মানে।
—ও খাবে না তুমি।ঠিকআছে আমি খায় আর তুমি দেখো।
>কী মেয়েরে বাবা কখন বললাম খাবো না। দিলে আবার খায় না কে।একটা নিয়ে আসছি যাতে দুজন মিলে খাবো।আর বউ তো একাই খেয়ে ফেলছে।
—এই নাও খাও। (মিম)
—না খাবো না,তুমি খাও। (আমি)
—উলে বাবা লে,বাবু আবার রাগ করে দেখি। কোথায় রাগ হইছে দেখি?
—না রাগ করব কেনো।
—এই তুমি খাবে নাকি,,,?
—না,না,খাইতেছি।
>মিম আবার মুচকি মুচকি হাসছে।ও রাগলেই যে আর সেই কাজ না করে থাকতেই পারি না।বউকে দেখলেই সবাই একটু একটু ভয় পায়।আমিও তার ব্যতিক্রম নয়।
>মিম কে নিয়ে এখন মহিপুর ব্রিজে হাটছি ।হালকা কুয়াশা মোড়া রাত। একচাদরের মধ্যে দুজনে আছি।দূর থেকে মনে হবে কোন সুখী একজোড়া পাখি হেটে যাচ্ছে। রাস্তার দুই পাশের আলো গুলো কে দেখে মনে হচ্ছে তারা জোস্না ছড়াচ্ছে।শুনশান আওয়াজ,মাঝে মাঝে কোথা থেকে কুকুরের ডাক ভেসে আসছে।আমরা দুজন ছাড়া আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না রাস্তায়।এই নীরব নদির ধারে হাটতে মিম বেশ পছন্দ করে।দিনের বেলা এটা ব্যস্ত শহরে পরিনত হয়।যেটা রাতে বোঝা সম্ভব না।
>হয়তো এই পথ শেষ হওয়ার না।মিম আমার কাছে আইসক্রিম পাগলী।বাচ্চাদের মত আইসক্রিম খাচ্ছে আর আমাকেও মাঝে মাঝে খাওয়াই দিচ্ছে।
সমাপ্ত