বন্দুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম।এমন সময় মনে হলো কিছু একটা প্যান্টের পকেটে নড়ছে।
পকেটে হাত দিয়ে আবিষ্কার করলাম একটা ফোন।আমার ফোন কখনো বাকরোধ অবস্থায় থাকেনা।
বন্দুদের সাথে যখন আড্ডা দেই তখন বাধ্য হয়ে করতে হয়।এটা আমাদের একটা রুলস।
@
ফোন রিসিভ করার পর ওপাশ থেকে শব্দ পেলাম কেমন আছেন।কন্ঠ শোনে বোঝতে
পারলাম মারিসার ফোন।?
আমি ঃ ভালো।আপনি?
মারি ঃ জি ভালো।কোথায় আপনি?
আমি ঃ এই তো রাস্তায়,বাড়িতে যাচ্চি।
মারি ঃ দুপুরবেলা বেলা রাস্তায় হাঁটলে কষ্ট লাগে না বোঝি?
আমি ঃ কি করবো বলেন?আমার তো শুশুর বাড়ি নেই যে এসি যুক্ত মাইক্রো চাইবো।
মারি ঃ থাকলে চাইতেন মনে হচ্ছে।
আমি ঃ তা অবশ্য চেতাম না।পরের দেওয়া গাড়িতে চরে নিজের সম্মান হারাতে কে চায় বলোন তো।
মারি ঃ অভাব নেই,এসব লোকের সংখ্যা বর্তমানে বেশি।
আমি ঃ খারাপ বলেন নি।আচ্ছা আমাদের বাড়িতে আসছেন কবে?এখন তো আপনার পরিক্ষা শেষ।
মারি ঃ আপনার তো পড়াশোনাই শেষ ধরতে গেলে,আপনি আসতে পারেন না।
আমি ঃ আচ্ছা যাবো এক সময়।ভালো থাকবেন রাখি।
মারি ঃ ভালো থকবেন।
মারিসা বাবার বন্দু মো:আরিফ সাহেবের মেয়ে।আমাদের মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়।তার মাত্র একটিই সন্তান।
শোনেছি আমার আব্বা আর মারিসার আব্বার বন্দুত্ব স্কুল জীবন থেকে শুরু হয়েছে।
আজও টিকে আছে,আজীবন থাকবে বলেই আমার ধারনা।মাঝে মাঝে আরিফ সাহেব আসেন আমাদের বাড়িতে।
তিনি আমাকে খুব ভালবাসেন,তার কোনো ছেলে সন্তান নেই বলেই হয়তো।
আর আমরা দুই ভাই-বোন।ছোট বোন ক্লাস নাইনে পরে,আমি এম.এ. শেষ করেছি।
বর্তমানে বেকার বলে,সবাই বাড়িতে আমার উপরে হাড়ি ভাঙ্গে।
আমরা মোট চার জন,একটা বাসাতে থাকি।বাবা ছোট একটা ব্যবসা করেন,সেই ব্যবসার টাকা দিয়ে আমাদের চাহিদা মেটান।
আমরা পরিবারে সবাই বন্দুর মতোই বসবাস করি।
বাড়িতে এসেই আব্বাকে দেখলাম।অফিসে কাজ নেই বলে হয়তো চলে এসেছেন আজ।
বাবা ঃ এই দুপুর বেলা কোথায় গিয়েছিলি?
আমি ঃ একটু বন্দুদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।ওরা সবাই বাড়িতে এসেছে তো।
বাবা ঃ আচ্ছা তোর বন্দুরা সবাই চাকরি করে তাই না।
আমি ঃ হ্যাঁ।অনেকেই বিয়েও করেছে।
বাবা ঃ তাহলে তুমি কোন রাজার ছেলে যে চাকরি না করলেও চলবে।
আমি ঃ আসলে বাবা….
বাবা ঃ থাক।চাকরি করবি না ভালো কথা, বাপের ব্যবসা টা তো দেখতে পারিস।
আমি ঃ আমি তো তোমার ব্যবসার কথাই ভাবছি।
বাবা ঃ তা কি ভাবলি।
আমি ঃ একটা বিয়ে করিয়ে দাও আমাকে।শুশুর বাড়ি থেকে কিছু টাকা এনে,তোমার ব্যবসাটা একটু বড় আকার বানিয়ে চালাতে চাচ্ছি।
(পরিবেশ ঠান্ডা করার জন্য বললাম)
বাবা ঃ এই তোর লজ্জা বলতে কিছু নেই, বাপের সামনে নিজের বিয়ের কথা বলিস?
আমি ঃ আমাকে কি কোনো আংশে দেখতে মেয়েদের মতো যে লজ্জা করবে।
বাবা ঃ তুই মেয়ে হলে না,সারাদেশের ফকিরদের এনে দুবেলা খাওয়াতাম।
আমি ঃ হয়ছে।তখন ছেলে ছেলে বলে কান্না করতে দিনে রাতে।সেটা ভালো করেই জানা আছে।
বাবা ঃ বজ্জাত ছেলে,তুই সামনে থেকে যা।
আমি ঃ এখন যাচ্চি বিকালের মধ্যেই আমার কথার জবাব দিবে।না হলে কিন্তু পরে আমাকে কিছু বলতে পারবে না।
বাবা ঃ তুই কি করতে পারিস আমার জানা আছে।তোকে আমি হারে হারে চিনি কিনা।
আমি ঃ যখন আরিফ চাচার মেয়েকে আর খোঁজে পাবে না,তখন টের পাবে কি পারি হুম।
যাক শেষ কথাটা জায়গা মতো লেগেছে।এখন আর বাছাধন দুদিন আমার সাথে লাগবে না।ক্ষুধা যা লেগেছে না,দেখি মা কি করছে।
মাকে রুমেই পাওয়া গেলো।
আমি ঃ মা কি করো?
মা ঃ কিছু না।কি বলবি বল?
আমি ঃ ক্ষুধা লাগছে।
মা ঃ ক্ষুধা লাগছে নিয়ে খা।আমি আর তোকে খেতে দিতে পারবো না।
আমি ঃ তা হলে মিলুরে দিতে বলো।আমি হাত মুখ পরিষ্কার করে আসি।
মা ঃ সেও দিবে না।
আমি ঃ মিলুর কিছু হয়েছে নাকি মা?
মা ঃ না।তর সাথে এতো কথা বলতে পারবো না,তুই যা চোখের সামনে থেকে।
আমি ঃ এই মা,কি হলো তোমার।সকালেও তো ভালো ছিলে।এর মাঝে কি এমন করলাম যে,কেউ আমাকে দেখতে পারছো না।বাবাও কথা শোনালো।
মা ঃ তোমার কি বোঝার বয়স এখনো হয়নি,তোমার পরিবার কি চায় তুমি বোঝনা।
আমি ঃ না আমি বোঝি না।তুমি বলো কি চাচ্ছ আমার থেকে।
মা ঃ বউ চাচ্ছি,ছেলের বউ।আমি আর কতো সামলাব।এখন তোর সংসার তুই বোঝে নি।
আমি ঃ ও এই কথা।সেটা প্রথমে বললেই পারতে।মেয়ে দেখা শুরু করে দাও এখন থেকেই।
দেরি করলে দেখা-দেখির আশা মিটবে না।কখন যে বউসহ হাজির হবো ভাবতেও পারবা না।
মা ঃ তুই রাজি তো।আর আমি যাকে বলবো তাকেই করবি?
আমি ঃ হুম।
মা ঃ আচ্ছা খাবি আয়।
খাবার খেয়ে শোয়ে আছি।আর ভাবছি কিছু একটা করতেই হবে।বাবা ঠিকি বলেছেন এতো দিন একটা চাকরি করলে অনেক টাকা জমাতে পারতাম।
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম।৫টা বাজে।একটু বাহিরে হেটে আসলে ভালো লাগবে।
এ দিকে আবার আরেক সমস্যা দেখা দিলো,মানিব্যাগটা খোঁজে পাচ্ছিনা।এমন সময় মিলুর আগমন।
মিলু ঃ কি খোঁজতেছিস?
আমা ঃ তোকে বলবো কেনো।
মিলু ঃ আমি খোঁজে দিতাম।
আমি ঃ তাহলেই হয়েছে।তোমার হাতে পরলে মানিব্যাগটা ফাঁকা করে ছাড়বে।তুমি যাও আমি খোঁজে নিবোনি।
মিলু ঃ তা কি করে হয় ভাইয়া।তোর কিছু হাড়িয়েছে আর সেটা আমি খোঁজবো না।
আমি ঃ সাবধান আমার রুম থেকে বেরিয়ে যা।
আমার কথার গুরুত্ব না দিয়ে।মিলুও খোঁজা খোঁজি শুরু করে দিলো।মিলুর হাতে পরার আগেই আমাকে খোঁজে পেতে হবে।
না হলে শুধু মানিব্যাগটাই থাকবে।
যা বাবা সর্বনাশ হয়ে গেলো ! ভাগ্য খারাপ থাকলে যা হয়।
মিলু ঃ হা করে তাকিয়ে আছিস কেনো।
আমি ঃ মিস্টি বোন আমার।
মিলু ঃ বল মিস্টি ভাই।
আমি ঃ মানিব্যাগটা দেনা।
মিলু ঃ অবশ্যই দিবো।কিন্তু যা আছে অর্ধেক আমার।না হলে কানা কড়িও পাবি না।
আমি ঃ দেখ দুদিন আগে বাবা ১,০০০ টাকা দিয়েছে।আমি এক টাকাও খরচ করিনি।তুই ৫০০ নিলে আমার এ মাস যাবে কি করে।
মিলু ঃ সেটা তোর ব্যপার।
আমি ঃ যা তোকে ৫০ টাকা দিচ্ছি।
মিলু ঃ মাত্র ৫০ টাকা।
আমি ঃ ১০০ দিবো,না করিস না বোন।
মিলু ঃ তুই এতো কিপটে কেনো রে।
আমি ঃ সে দিন না তুই টাকা নিলি।আজ আবার টাকা দিয়ে কি করবি?
মিলু ঃ আমার লাগবো,তুই দিবি কিনা বল!
আমি ঃ ১০০ এর বেশি দিতে পারবো না।
মিলু ঃ যা ২০০ দে ছেড়ে দিচ্চি।
কি আর করা যাবে।দিতে হবে যখন কিছু করার নেই।দিতে না চাইলে আবার পুরোটাই যাবে।
বাহিরে না গিয়ে আবার শোয়ে পরলাম।হাঠাৎ মনে হলো ভূমিকম্প হচ্ছে,তাই ওঠে পরলাম।
না মনের ভুল ছোট বোনের অত্যাচার।বাবা ডাকছে বলেই হাসতে হাসতে চলে গেলো।
হাসির মাঝে রহস্যের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।দেখি কিসের জন্য ছোটো বোন হাসতে হাসতে গেলো।
ভেবেছিলাম দুদিন বাবার সামনে পড়তে হবে না।কিন্তু ইনার হাত থেকে নিস্তার পাওয়া,এতো সোজা না।
গেস্টরুমে বাবা আর আরিফ চাচাকে বসে থাকতে দেখে অবাক হলাম।তিনিই বা আসলেন কখন,আর তাকে আজকেই বা
কেনো আসতে হলো।চাচাকে সালাম দিয়ে তার পাশে বসলাম।
আমি ঃ ভালো আছেন চাচা?
চাচা ঃ ভালো।তোমার কি খবর?
আমি ঃ এইতো যাচ্ছে।
চাচা ঃ কিছু ভাবলে তোমার বাবার ব্যবসা সম্পর্কে?
আমি ঃ আপনাকে তো আগেই বলেছি।কিছু টাকা হলে বাবার ব্যবসাটা একটু বড় করে নেমে পরবো।কিন্তু টাকা পাচ্ছি না।
বাবা ঃ যতো-খানি আছে তাই তুই দেখিস না,আবার বড় হলে তোকে খোঁজেই পাওয়া যাবে না।শুধু শুধু মিথ্যে বলিস না।আল্লা নারাজ হবেন।
চাচা ঃ তোর ছেলে আমাকে অনেক আগেই তার পরিকল্পা জানিয়েছে।যে ভাবে বলেছে, এভাবে করতে পারলে ভালই হবে।
বাবা ঃ সেটা না হয় মানলাম।কিন্তু টাকা পাবে কোথায়?
আমি ঃ সে বুদ্ধি তো তোমাকে আগেই দিয়েছি!
বাবা ঃ এক থাপ্পড় মেরে দাঁত ফেলে দিবো।
আমি ঃ তুমি বাপ ফেলতেই পারো।কিন্তু বলে রাখলাম তখন আমি আর শুশুর বাড়ি যাবো না।তোমাকেই যেতে হবে।
চাচাঃঃ হুম।একদম রাইট।
বাবা ঃ তুই বজ্জাতটার সাথে তাল মিলাবি না।জানিস ও কি বলেছে আমাকে।
চাচা ঃ আমি জানবো কি করে।বলতো শোনি। অবশ্যই ভালো কিছু হবে।
সুযোগ বোঝে কেটে পরলাম।রুমে আসার আগেই আরিফ চাচার হাসির শব্দ কানে আসলো।
কিছুখন পরে।
খাবার টেবিলে ডাক পড়লো।আগেই আসলাম।কারন বাবার সাথে যা বলেছি তা তিনি কিছু বলতে বাকি রাখবেনা সেটা ভালো করেই জানি।
আগেই কেটে পরার ধান্দা।কিন্তু
না দুজন এক সাথেই হাজির হলো।তাও আবার আমাকে মাঝখানে রেখে বসলো।
চাচা ঃ বাবা তাহলে বিয়েটা এবার করেই ফেলো।
আমি ঃ চাচা কি যে বলেন।আমার মতো পাত্রের কাছে কে মেয়ে দিবে।
বাবা ঃ কেনো পালিয়ে যাবি।
আমি ঃ তুমিও না বাবা।
বাবা ঃ তখন না তাই বললি।
আমি ঃ তোমার মন খারাপ ছিলো,তার জন্য বলেছি।
চাচা ঃ থাক এ সব।
বাবা ঃ আরিফ আমার ছেলে তো বিয়ে করবেই না।তোর মেয়ে কে ঘরে বসিয়ে রাখিস না।
চাচা ঃ হুম।এবার ওর বিয়ের ব্যবস্থা করতেই হবে।(বলেই আমার দিকে তাকালেন)
আমি ঃ জি চাচা ওর বিয়ে দেওয়া দরকার।যতেষ্ট বড় হয়েছে।
চাচা ঃ হুম।সে চেষ্টায় আছি,কিন্তু মনের মতো মিলাতে পারছি না।
আমি ঃ খোঁজতে থাকেন পেয়ে যাবেন আশা করি।
চাচা ঃ বাবা আমার একটা কথা তোমাকেই রখতে হবে।
আমি ঃ কেনো-নয় চাচা,আপনি বলেন তো চিন্তা না করে।
চাচা ঃ তুমি আমার মেয়ে কে বিয়ে করো।অমত করো না দয়া করে।
তার পরে আর কথা বলিনি খাবার টেবিলে।বাবা আর চাচা দুজনেই কথা বলছে।মারি দেখতে খারাপ না।পড়াশোনায় ভালো।
এ দিকে আমি বেকের,এ সময় কি আর বিয়ে করা যায়।খাবার খেয়ে রুমে চলে আসলাম।কিছুখন পরে মা এসে হাজির।
মা ঃ কি করিস বাবা?
আমি ঃ কিছু না মা।
মা ঃ তোর চাচার কথার কিছু বললি নাতো।
আমি ঃ কি বলবো আমি।
মা ঃ মারি তো মেয়ে খারাপ না।আর আমার মারি কে খুব পছন্দ।তোর বাবাকে বলে আজ আমি আরিফ সাহেব কে আনিয়েছি।না করিস না।
এমন মেয়ে আর পাবি না।
আমি ঃ সেটা ঠিক।
মা ঃ তার পরেও ধর তোর চাচার একটা কথার দাম দিবি-না।সে তোকে কতো ভালবাসে।
আমি ঃ কি বলি বলো তো?
মা ঃ নাকি তোর পছন্দের কেউ আছে।থাকলে বলতে পারিস,আমরা ব্যবস্থা করবো।
আমি ঃ সেটা না।বাব কি বলেন?
মা ঃ সে-তো আরো আগে থেকেই রাজি।শুধু তুই কিছু করিস না বলে কিছু করতে পারছে না।
আমি ঃ তা হলে তো কথাই নাই।আজ রাতে কাজ সেরে ফেলো।
মা ঃ যা পাগল ছেলে এভাবে বলতে হয়।আমি আসছি।
@
বিয়েটা কিছুদিন পরে করতেই হলো।এখন আর বাসায় থাকার সুযোগ নেই।
বাবার ব্যবসা এখন আমিই দেখছি।আরিফ চাচা টাকা দিতে চেয়েছিলেন ব্যবসা বড় করার জন্য।আমি নেইনি।
এর জন্য বাবা কম জ্বলায়নি।আরিফ চাচা আমাদের বাড়িতে আসলেই বলতেন,কিরে টাকা লাগলে বল তোর শুশুর এসেছে।
এখন আমি অফিস করি বাবা বসে থাকেন।মিলুর জ্বালাতন আরো বেড়েছে।সপ্তাহে একদিন ছুটি পাই তাও ওকে নিয়ে বেড়াতে যেতে হয় আগের মতই।
এখন আর টাকা নেওয়ার জন্য আমার কাছে আসে না মিলু।আমাকেই তার কাছে যেতে হয়।কারন যতো টাকা ব্যবসায় আয় হয় সবটাই বাবার কাছে রাখি।
তিনিই সবাইকে হাত খরচ দেন আগের মতো।মারি কে কিছু কিনে দিতে গেলে,আমার কাছে টাকা থাকেনা।তারও তো কিছু চাওয়ার থাকে।
এর জন্যই এখন মিলুর পিছনে দৌড়াতে হয়।আজকেও দৌড়াইলাম ১০০ টাকার জন্য।