যেদিন তোমায় প্রথম প্রপোজ করেছিলাম সেদিন তোমার হাত থেকে বই গুলা পরে গেছিলো। ষ্মার্টনেস দেখাতে তরিঘরি করে বই গুলা তুলে দিতে গেছিলাম। কিন্তু নিজেই পিছলে তোমার ছড়ানো বইগুলার সাথে পরে রয়েছিলাম রাস্তায়। ঠিক সে মুহুর্তেই বৈদ্যুতিক তারে বসে থাকা পাখিটা ইয়ের বোমাটা করে দিছিলো আমার একদম মুখে। মনের ভুলে রুমালটাও আনতে ভুলে গেছিলাম। তখন তুমি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে তোমার রুমালটা আমাকে দিছিলা। রুমালটা নিয়ে দৌড়ে পালানোর সময় তখনো আমার কানে আসছিলো তোমার সেই হাসির আওয়াজ.…
এপ্রিলের নয় তারিখ। সেদিন একটা গোলাপ দিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে তোমায় আবার প্রপোজ করি। আমি ভাবতেও পারিনি তুমি আমাকে একসেপ্ট করবা।সেদিন আমার হাত থেকে মোবাইলটা পরে গেছিলো। মোবাইলটা নিতে গিয়ে উল্টে পরে গিয়েছিলাম। সেদিন তুমি আমার নাম দিছিলা ‘উষ্টা বাবু’। তোমার সেই ‘উষ্টা বাবু’ ডাকটা শুনতে অনেক মিষ্টি লাগতো।
সেইদিন বৃষ্টির ভেতর তোমার হাত ধরে ঘুরে বেড়ানোর কথা মনে আছে তোমার?? আমি একটু সাইডে হিসু করতে গেছিলাম আর তোমাকে বৃষ্টির ভেতর একা দেখে একটা ছেলে ভাব নিতে ওর নিজের ছাতাটা তোমাকে দেয়। আমি তখন রেগে গিয়ে তোমার কাছে জোরে হেটে যেতে গিয়ে কাদায় পিছলে পরে যাই। তুমি ছেলেটিকে ছাতাটা ফেরত দিয়ে দৌড়ে ছুটে এসেছিলে আমার কাছে। বলেছিলে, ‘আমার উষ্টা বাবু, উঠো বৃষ্টির ভেতর রাস্তায় ঘুমাতে নেই’
মনে আছে সেইদিন ঘুরতে গিয়ে তোমার বাবা কে দুর থেকে আসতে দেখি। দুজন দুই দিকে দৌড় লাগাই। তুমি তো ঠিকই দৌড় দিয়ে লুকিয়েছিলা কিন্তু আমি দৌড়াতে গিয়ে রাস্তায় উষ্টা খেয়ে পরি। আমার ঠোঁট কেটে রক্ত পরে। তুমি তখন বাবার ভয় আগ্রাহ্য করেই ছুটে এসেছিলা আমার কাছে। আমি তখন আমার রুমাল খুজছিলাম। কিন্তু সেইদিন ও ভুলে রুমাল এনেছিলাম না। তুমি তখন তোমার একহাতে রুমাল দিয়ে আমার ঠোঁট মুছে দিচ্ছিলা আর আরেক হাত দিয়ে আমার কাধে কিল মারছিলা। তোমার চোখে সেদিন প্রথম জল দেখেছিলাম। তোমার বাবা আমাদের পাশ দিয়েই চলে গেছিলেন। মুখে তার ছিলো মুচকি হাসি।
এপ্রিলের নয় তারিখেই আমাদের বিয়ে হয়। সেইদিন বাসর ঘরে সব মালা ছিড়ে ফেলেছিলা তুমি। সব ফুল বিছানার এক যায়গায় জড় করেছিলা। তারপর ফুলের স্তুপ অর্ধেক করে নিজের অর্ধেক থেকে আমার মাথায় ফুল ছিটিয়ে দিয়েছিলা আমিও তখন বাকি অর্ধেক ফুল তোমার মাথায় ছিটিয়ে দিয়েছিলাম।
মনে আছে বাসর ঘরে গ্লাসে করে শরবত খাওয়াতে গিয়ে পুরা গ্লাস আমার মাথায় ঢেলে দিছিলা!! মুছতে গিয়া দেখি রুমাল নেই। তুমি খুব হেসেছিলা। বলেছিলা তুমি নাকি আগেই জানতে যে আমার কাছে রুমাল থাকবে না। তখন তোমার রুমালটা দিয়ে আমাকে মুছে দিছিলা। সেদিন তোমাকে, তোমার হাসি অনেক সুন্দর লাগছিলো।
প্রতিদিন সকালে এককাপ চা বানাতে আমার জন্য। আমার অর্ধেক খাওয়া হলে তুমি কাপটা কেড়ে নিতা। নিয়ে বাকি অর্ধেক তুমি খেতা। বাজারে অনেক খুজে খুজে একটা বড় থালা কিনেছিলা তুমি। তুমি আমি সামনে বসে একসাথে সেই থালায় খেতাম। তুমি আমাকে খাইয়ে দিতা আমিও তোমাকে খাইয়ে দিতাম। আমাদের গ্লাস ও একটাই ছিলো।
বিয়ের প্রথম বর্ষ পুর্তিতে স্পেশাল কিছু চেয়েছিলা তুমি। আমি তো দিতেই চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি ই তো নিলানা। আর কখনো নিবেও না। কি এক অভিমান করে চলে গেছো আমাকে একা করে।
জানো এখনো সেই বড় থালায় খাবার খাই আমি। অর্ধেক খেয়ে বাকি অর্ধেক নষ্ট করি। সকালের সেই অর্ধেক কাপ চা এখনো পরে থাকে। কিন্তু বাকিটুকু আর তুমি কেড়ে খাও না।
জানো আজ এপ্রিলের নয় তারিখ। এই গোরস্থানে আসার পথেও পরে গেছিলাম আমি। কিন্তু ‘উষ্টা বাবু’ বলে কেউ আর আমাকে ডেকে তুলেনি। দেখো তোমার জন্য গোলাপ এনেছি। পরে গিয়ে একটু মাটি লেগেছে ফুলটায়। তোমার কি পছন্দ হয় নি? দেখো আমি কাঁদছি। চোখ মুছবো রুমালটাও আনতে ভুলে গেছি। কই আমার চোখের জল তো তুমি তোমার রুমাল দিয়ে মুছে দিচ্ছনা। এতোটাই পর করে দিলে আমায়? এভাবে আমাকে ভুলে একা একা কি করে আছো তুমি??
আমাদের বিয়ের প্রথম বর্ষ পুর্তি হবার কথা ছিলো আজকে। তুমি স্পেশাল কিছু চেয়েছিলা আমার কাছে। হ্যা আমি তোমাকে আজ সেটা দিবো। আমি ই তোমার সেই স্পেশাল কিছু। আজ নিজেকে গিফ্ট করবো তোমাকে। তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা আমার জন্য আর সম্ভব না। আমি আসছি তোমার গিফ্ট হয়ে।
সকাল বেলা নিমতলা গোরস্থানের একটি কবরের কাছে মানুষের ভিড়। সেখানে গিয়ে দেখা গেলো একজন মৃত যুবক একটি কবর জড়িয়ে ধরে নিথর পরে আছে। যুবকের এক হাতে ছিলো একটি লাল গোলাপ, অপর হাতে ছিলো একটি বিষের বোতল।