রিয়ার সাথে আজকাল প্রেমটা আর জমে না আমার৷ রিয়ার ভাষ্যমতে প্রেমিক হিসেবে আমি মোটেই রোমান্টিক না৷
সেই দুঃখে হতাশ মনে উদাস হয়ে ছোটভাইদের খেলাধুলা দেখি প্রতি বিকেলে৷ মাঝে মাঝে আম্পায়ারিং করি আমি৷ রিয়ার ভাই যে টিমে পরে৷ ঐ টিমের দিকে বেশি সাপোর্ট করি আমি৷ রিয়ার ভাইকে বারকয়েক আউট পর্যন্ত দিই নি৷ প্রেমিক হিসেবে প্রমাণ করার জন্য এটাও একটা নিন্জা টেকনিক বলে বিবেচিত করি আমি৷
দু’দিন ধরে রিয়ার ভাই খেলছেনা৷ আমিও আম্পায়ারিং দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছি৷ টেনশনে পরে গেলাম, আমার হবে হবে শালাটা কেন খেলছেনা৷ শেষমেষ তার বন্ধুদের জিজ্ঞেস করেই ফেললাম৷ প্রথমে বলতে চায় নি কেউ৷ শেষে পিচ এর মধ্যে গম চাষ করার হুমকি দিয়ে আসল কথাটা বের করে নিয়েছি৷ রিয়ার ভাই আজকাল খেলাধুলা ছেড়ে দিয়েছে একদম৷ মাঠের কোণে বসে ফোনে গুজুর গুজুর করে কথা বলে৷ এইসব দেখে আমার ইচ্ছে হল তাকে গিয়ে বলি, ধর আমারে গলা টিপে মেরে ফেল৷ সুযোগ মতো একদিন খপ করে ধরে ফেললাম৷ শালা আমার লজ্জা রাঙা অবস্থা৷ আমি তার পিঠ চাপড়ে বললাম,
-কি শালাবাবু কতদিন ধরে?
-শালাবাবু মানে?
-তুমি সূত্রটা শুনোনি কখনো?
-কিসের সূত্র?
-ঐ যে এলাকার যে ছেলেটার সুন্দরী বোন থাকবে৷ তার বোনের বিয়ের আগ পর্যন্ত সে সবার শালা৷
শালাবাবু কিছু বললো না৷ তবে আমি নিশ্চিত৷ সাইজে আরেকটু ছোট হলেই আমাকে গিলে খেয়ে ফেলতো অবস্থা করে একটা চাহনী দিল৷
-আচ্ছা বলো কতদিন ধরে?
-কি?
-এই যে মাঠের কোণে বসে ফোনের মধ্যে প্রেমালাপ করো৷ এগুলা কিন্তু ভিডিও করেছি৷ শ্বশুরের কাছে দেখিয়ে দিবো?
-না ভাইয়া এটা করবেন না৷
-দুলাভাই ডাকো তাইলে৷ আর আমি যা বলেছি উত্তর দিবা৷ বুঝেছো?
-হ্যা৷ বলুন৷
-প্রেম কতদিন ধরে?
-মাসখানেক৷
-কিভাবে শুরু?
-এক সাথে কোচিং পড়তাম৷ সেখানেই৷ প্রথমে চোখাচোখি তারপর মুচকি হাসি, তারপর একদম ফাঁসি৷
-বাহ! কবিতার ছন্দে ছন্দে বর্ণনা! দারুণ৷ ছ্যাকা খাওয়ার পর কাজে লাগবে!
-ভাইয়া কিছু বললেন?
-না তো৷ স্পেশাল কি কি করো শুনি৷
-এই যেমন তাকে ম্যাথগুলা বুঝাই দিই মাঝে মাঝে৷”
শালাবাবুর প্রথম কথাটা শুনেই বুকটা আমার বেদনায় ভরে গেল৷ সর্বশেষ ম্যাথ এ কবে পাশ করেছি ভালোমতো৷ সেটা আমার মনে নেই৷ আর রিয়াতো ম্যাথে ফাষ্ট৷ শালাবাবুর পিঠে হালকা জোরে থাপ্পড় দিয়ে বললাম,
-পড়ালেখা বাদে অন্যকিছু থাকলে বলো৷
-টিফিনের টাকা জমিয়ে চুঁড়ি কিনে দিলাম সেদিন৷”
ভেবে দেখলাম, সিঙারা আর ডিমচপ না খেলে আমি বাঁচবোনা৷ এসব টাকা বাঁচানো আমার দ্বারা সম্ভব না৷
দাঁতে দাঁত চেপে হাসি মুখে বললাম,
-আর কি করো শুনি?
-সপ্তাহে তিনদিন ভোরে উঠে তার বাসার সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি৷ সকালে উঠে নাকি আমাকে তার দেখতেই হবে৷ সম্ভব হলে প্রতিদিনই যাই আমি৷” নাহ! সর্বশেষ যে তারিখে আমি ভোরে উঠেছিলাম৷ সেই তারিখের ক্যালেন্ডারটা এতদিনে বায়বীয় পদার্থ হয়ে গিয়েছে৷ একপাশে ঘুম, অপরপাশে পৃথিবী৷ এসব আজগুবি কারবার আমার দ্বারা সম্ভব নাহ৷”
-যখন রাগারাগি হয়৷ তখন কি করো?
-এই ধরেন, ব্লেড দিয়ে হাতে একটু আঁকিবুকি করি!
“আমি তো রক্ত দেখলেই বেহুশ হয়ে যাই৷ সেখানে শিল্পকর্ম করবো কিভাবে!”
-আচ্ছা তোমার চুলগুলা এত ছোট করে কাঁটা৷ সেটাও কি প্রেমিকার শর্ত?
-আপনি কিভাবে জানলেন ভাইয়া! হ্যা এটাও প্রেমের অংশ৷
-কিভাবে?
-এই ধরেন চুল ছোট রাখলে কোনো মেয়ে হুট করে প্রেমে পরবেনা আমার৷
“আমার কলিজাটা মূঁচড়ে উঠলো৷ একবার ছোট করে চুল কেটেছিলাম আমি৷ অন্যদের কথা বাদ৷ নিজেকে নিজের কাছেই চোরের মতো মনে হয়েছিল৷ রিয়ার ভাইকে বিদায় দিয়ে চলে আসলাম সেদিনের মতো৷ আজ আমি রিয়ার কোচিং এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি চিঠি হাতে৷ হাতের লেখার ভয়ংকর অবস্থা৷ এলাকার ছোট ভাইকে দিয়ে চিঠি লেখিয়েছি৷
প্রিয় রিয়া,
প্রথমত তোমাদের কোচিংয়ূ সব মেয়ে৷ সেই হিসেবে তোমার কোচিংয়ে ভর্তি হওয়া সম্ভব নয়৷ তাই আর চোখাচোখি, মুচকি হাসি৷ এসব হওয়া একদমই অসম্ভব৷ তারপর একেতো তুমি ম্যাথের মধ্যে সেরা৷ আর আমি কবে ভালো পাশ করেছি মনে নেই৷ সেই হিসেবে তোমাকে ম্যাথ করিয়ে পটানোও আমার দ্বারা সম্ভব না৷ আর আমি সিঙারা আর ডিমচপ ছাড়া বাঁচবোনা৷ সেহেতু হাত খরচের টাকা বাঁচানোও সম্ভব না৷
সকালের ঘুম ছাড়া আমি বাঁচবোনা৷ তাই তোমার বারান্দার সামনে গিয়েও দাঁড়ানো সম্ভব না আমার৷ আর আমি রক্ত দেখলেই বেহুশ হয়ে যাই৷ ঐসব কাঁটাকাঁটি আমার দ্বারা সম্ভব না৷ তোমার রোমান্টিসিজম প্রেমিক আমি হতে পারবোনা৷ রোমান্টিসিজম এর অপর নাম কামলা প্রেমিক৷ সেটা আমি তোমার ভাইকে দেখেই বুঝে ফেলেছি৷ আর শুনলাম, তুমি নাকি বিরিয়ানীটাও ঠিকঠাক রাঁধতে পারো না৷
তাই তোমার রিজেক্ট করলাম৷ আর দিনদিন মুটিয়ে যাচ্ছো৷ হাতি হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছো৷ তাই তোমাকে রিজেক্ট করলাম৷ আর তোমার বান্ধবীকে দেখে আমি অনূভব করলাম, তোমার চেয়েও সুন্দর মেয়ে এলাকাতে আছে৷ তাই তোমাকে রিজেক্ট করলাম৷ আর ভবিষ্যতে কোনো একদিন তোমার বাচ্চাকে আমার সামনে এনে বলবা, বাবু দেখো এটা তোমার মামা! ভালো থেকো৷”
ইতি
তোমার পাড়াতো প্রেমিক