_নিলা তুই কি সত্যি পিকনিকে যাবিনা?(মিমি)
_নারে।এইসব পিকনিক আমার একদম ভালো লাগেনা। তোরা যা ঘুরে আয়।(নিলা)
_প্লিজ নিলা চল যাই। দেখ সবাই একসাথে ভালো লাগবে।আমরা সবাই মিলে মজা করব,তুই থাকবিনা তাই হয় নাকি! চল প্লিজ।
নিলা আর মিমি দুই বান্ধবী। কথা হচ্ছে পিকনিকে যাওয়া নিয়ে। ওরা সব ফ্রেন্ডরা মিলে একটু ঘুরতে যাবে,সবাই রাজি শুধু নিলা বাদে। ওরা কেউই নিলাকে রাজি করাতে পারছে না। ওর এক কথা, ও পিকনিকে যাবেনা। এই একটা কথাতেই ও আটকে আছে। সড়ছেও না,নড়ছেও না। যেন না কথাটাতেই নিলা আটকে আছে। এমন সময় ওদের আরেক বান্ধবী রিতু ঝড়ের বেগে রুমে ঢুকল। রিতু একটু বদমেজাজি টাইপের। বেশি কথা বলা পছন্দ করেনা,যা বলার তা সামনাসামনি বলাটাই পছন্দ করে। কারো অগোচরে কথা বলাটা ওর একদম ভালো লাগেনা। এইজন্য অনেকেই ওকে পছন্দ করেনা।কিন্তু তাতে যেন ওর কিছু যায় আসেনা।রিতু এসেই বলতে লাগল..
_কি ব্যাপার নিলা তোকে তেল মারতে মারতেতো দেখছি আমরা ফকির হয়ে যাব। ভাই এতো ঢং না করে চলনা আমাদের সাথে।
_আরে আমি তখন থেকে বুঝানোর চেষ্টা করছি,কিন্তু ও কিছুতেই মানতে চাচ্ছেনা। তুই একটু বলনা(মিমি)
_আমি ভাই অতো তেল মারতে পারবনা। আচ্ছা তোর সমস্যা কি বলবিতো। টাকার সমস্যা? পরিবারের সমস্যা? নাকি! কিছুতো বলবি। আমরা তোর বান্ধবী, বি এফ নয় বা অপরিচিত কেউ ও নয়।বলতে সমস্যা কি!(রিতু) নিলা তবুও চুপ।আবার মিমি বলতে লাগল…
_এই মেয়েটাকে কোনো কথা বলা আর ফাকা জায়গায় চিল্লাপাল্লা করা একই কথা।
নিলা ওর বান্ধবীর কথাগুলো সহ্য করতে পারছে না আর। ওর মনে হচ্ছে কেউ ওর গায়ে কাঁটাওয়ালা কোনোকিছু দিয়ে জোরে জোরে আঘাত করছে আর তাতে ওর সারা শরীর যেন ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। যা শুধু নিলাই অনুভব করতে পারছে। ওর খুব জোরে শব্দ করে কান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে,” আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। হাজার হাজার টাকা খরচ করে পিকনিকে যাওয়া আমাকে মানায় না। আমাকে যে একটা ছোট জিনিস কিনতে গেলেও হিসেব করতে হয় কোনটা নিলে দাম কম হবে! বাইরে কিছু খেতে গেলেও যে হিসেব করতে হয় কোনটা খেলে খরচও কম হবে আর পেটটাও একটু শান্ত হবে! আমার যে বেহিসাব হলে চলবে না। যে টাকা দিয়ে আমি পিকনিকে যাব, সে টাকায় আমার কয়েকদিন আরামে চলে যাবে। আমাকে যে অনেক কিছু ভাবতে হয়”। কিন্তু নাহ! এসব যে সবাই বুঝবে না। সবাই কিপটা বলেই পার পেয়ে যাবে। অন্যকে নিয়ে মজা করতে যে আমরা ভালবাসি! কথাগুলো ভাবতে ভাবতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো নিলা। ও পিকনিকে যাবেনা ব্যস শেষ। কারো কাছে কোনো কৈফিয়ত দেয়ার ইচ্ছে ওর নেই।
রাত ততটা গভীর হয়নি,সবে সন্ধ্যার শেষ হতে চলেছে। আকাশের লালচে আভাটা অন্ধকার হতে শুরু করেছে। নিলা ওর পরিবারের সবার ছবি দেখছিল আর পুরোনো স্মৃতিগুলো মনে করে পুলকিত হচ্ছিল। অভাব থাকা সত্ত্বেও ওদের পরিবারের মাঝে ভালবাসার বন্ধনটা খুব শক্ত। কয়েকমাস ধরে ওর বাবা অসুস্থ থাকায় অনেক টাকাপয়সা লাগছে। ওষুধের জোরেই হয়ত আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এমন অবস্থায় পিকনিকের টাকা চাওয়া নিলার পক্ষে সম্ভব নয়। ওর বড় দুই ভাই,কেউ এখনো বিয়ে করেনি,ওরাই সব খরচ চালায়। ওর বড় বোন মিলির বিয়ে হয়ে গেছে।
হঠাৎ ফোনের রিংটোন বেজে উঠল। ওর বড় ভাই রতন কল করেছে।
_আসসালামু ওয়ালাইকুম।
_ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছিস?
_আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনি?
_আলহামদুলিল্লাহ ভালো। কি করিস? খাওয়া-দাওয়া হইছে?
_না। শুয়ে আছি। আপনি খেয়েছেন?
_না অফিসের কাজ শেষ করলাম।বাসায় যাব। পিকনিকে যাচ্ছিস না কেনো?
_না ভাইয়া! আসলে… আপনাকে কে বলল?
_কেনোরে! এমনিতো ফোন করে কত কথা বলিস,আর পিকনিকের কথা বলা যায়না!
_না,আমার যাওয়ার ইচ্ছে নেই,তাই
_ইচ্ছে নেই মানে! এখনিতো ঘুরাঘুরির সময়। আমি টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি।
_ ভাইয়া…
_হুম। পাগলি একটা,আমাকে বলা যায়না। তোর ভাই এখনো বেচে আছে,ওকে। কোনো সমস্যা হলে বলবি। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করবি।
_আচ্ছা ভাইয়া।
_আল্লাহ হাফেজ।
নিলা জানে এটা রিতুর কাজ,ওর ভাইকে জানানো। রিতু খুব ভালো করেই জানে নিলার বড় ভাই বললে নিলা সেটা কখনওই না করতে পারবে না। তাই আসল জায়গায় জানিয়েছে। তবে নিলার যেন হাতছানি দিয়ে ডাকা স্বপ্নটা এবার সত্যি হবে। ওর নিজেরও খুব ইচ্ছে ছিল সবার সাথে পিকনিকে যাওয়ার। ওর মাঝে যেন আনন্দের এক হিল্লোল বয়ে যাচ্ছে।
রতন নিলাকে টাকাটা পাঠিয়ে রুমে যাচ্ছে। বাসায় টাকা পাঠিয়ে,বাসা ভাড়া দিয়ে,খাওয়ার খরচ চালানোটাই ওর কষ্ট হয়ে যায়। নিলাকে যে টাকাটা পাঠালো ওইটা ওর নিজের অফিসট্যুরের জন্য জমিয়েছিল। কোনোবারেই ও অফিস থেকে ট্যুরে যায়না অযথা টাকা খরচ হবে বলে,এইবার ভেবেছিল যাবে,কিন্তু এইবারেও কোনো না কোনো বাহানা বানিয়ে বলতে হবে। তবে নিলার হাসিমুখের কথা মনে করে ওর এই কষ্ট কিছুই মনে হচ্ছেনা। বড় ভাইয়ের কাছে ছোট ভাইবোনের হাসিমুখের চাইতে দামী আর কিছু হতেই পারেনা!