বাবাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হলো কিছুক্ষন আগে। ডাক্তার বলেছে সাধারন একটা অপারেশন। পিঠের বামপাশে ঘাঁ এর মতো হয়েছিল যার ব্যাথা প্রথমে একটু হলেও পরে অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। বাইরে চেয়ারে মা কেঁদেই চলেছে। পাশেই আপুর কোলে অমিহা চুপ করে বসে আছে। বারবার আপুকে বলছে, আম্মু নানুমনির কি হয়েছে? আপু কিছু না বলে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ মা আপুর দিকে তাকিয়ে বলল, এই মুখপুড়ির জন্য সেদিন তোর বাবাকে বকেছিলাম।
মানুষটা কিছইু বলেনি। মানুষটা বাইরে অনেক শক্ত হলেও ভেতরটা অনেক নরম রে। ওর মনটাতে কিচ্ছু নেই। এরকম একটা কথা শুনে আপু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে চলে গেলো। আপুকে দাড়াতে বললেও কিছু শুনলো না। মায়ের কান্না আরও বেড়ে গেলো। আমি মায়ের পাশে বসে উনার মাথাটা জড়িয়ে বলি কেন এভাবে কান্না করছো মা? ডাক্তার তো বলেছে ছোট একটা অপারেশন। এই কান্নার চেয়ে বরং তুমি দোয়া কর। মা আস্তে করে বলল, তোর বাবা ইন্জেকশনের সিরিজ দেখলেই ভয় পায় আর ভেতরে না জানি ডাক্তার আর নার্স মিলে তার কি অবস্থা করেছে।
আমি হেসে ফেলি মায়ের এই বাচ্চামী কথায়। মা তাকিয়ে বলে, তোর খুব মজা লাগছে না? এদিকে আমি চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছি আর তুই হাসছিস? আমি তখনও হেসেই চললাম। একটু পরে মা বলল, এই নিলু কোথায় গেলো দেখতো? এখন একটুতেই রেগে যাচ্ছে। আমি নাহয় কি বলতে কি বলেছি তাতেই চলে যেতে হবে? এখন সব আমার দোষ। আমিই খারাপ। আমি মাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলি, মা বাবার কিছু হবে না। তুমি এই বাচ্চামী কথাগুলো আর বলিও না তো। মা আর কিছু বলল না। আপুকে ফোন দিলাম। ফোন ধরে আপু বলল, ভাই আমি বাসায় যাচ্ছি রে। রাতে তো বাবাকে এখানেই থাকতে হবে তাই একটু রান্না করে নিয়ে আসি। রাতে নাহয় আমিই থাকবো। আমি একটু চুপ থেকে বললাম, আমার জন্য একটু খাবার নিস। রাতে তোকে গল্প শোনাবো। ও একটু চুপ থেকে ফোনটা কেটে দিল। আমি জানি ও এখন মুখ চেপে কান্না করছে।
এরকম একটা জিবনে মানুষের স্বপ্নগুলো কত নিনিষেই যে শেষ হয়ে যায় তার উত্তর আমার এই বোনটা ছাড়া আর কেই বা জানে। ওর যখন ডিভোর্স হয় হয় তখন অমিহার বয়স মাত্র দেড় বছর। কিছুদিন আগেই ওর তৃতীয় জন্মদিন করেছি আমরা। ডিভোর্স জিনিসটা আমাদের সমাজে এখন প্রায়ই দেখা যায়। তবে সত্য এটাই যে আমাদের সমাজটা এরকম কোন নিয়ম নীতিতে অভ্যস্ত নয়। তাই আমার বোনটাও এটা এখনও ভালভাবে মেনে নিতে পারিনি। সে হয়তো চেয়েছিল তার মানুষিক রোগে আক্রান্ত স্বামীকে নিয়ে কষ্ট সহ্য করে হলেও বাকি জিবনটা কাটিয়ে দিতে।
কিন্তু অমিহার জন্য সে আর পেরে উঠেনি। তার জন্য যখন ঐটুকু ছোট বাচ্চাও অনেক সময় ঝুকির মধ্যে পরে যেতো তখন সে আর মানতে পারে নি। সেদিনই চলে এসেছিল ও আমাদের কাছে। এরপর থেকে প্রায়ই ওকে চুপচাপ থাকতে দেখা যেতো। বাবা মা ওকে অনেক বুঝিয়েছে যে চিন্তা করিস না আমরা আছি, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু জিবনে আমার বোনটাই কি কম বাধা দেখেছে? সে কি জানেনা তার জিবনটা কোথায় যাচ্ছে? বাবা মা কখনও তাকে কিছু বলেনি তবে সামান্য একটু অন্যভাবে বলা কথাটাই সে মানতে পারতো না। সবসময় তার মনে হত যে সে এ বাড়িতে বোঝা হয়ে আছে। তার প্রানখোলা সেই হাসিটা আমি কতদিন দেখিনা। এই পরিস্থিতিতে তার এরকম মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বের হল। মা তাকিয়ে আছে ডাক্তারের থেকে কিছু শোনার জন্য। আমি সামনে গিয়ে দাড়াতেই ডাক্তার বলল, আপনি তো দেখি টেনশনে ঘেমেই গেছেন। এরকম ছোট একটা অপারেশনে এতো চিন্তা করলে হয়। আপনার বাবাকে কেবিনে নেওয়া হয়েছে। যান, কথা বলুন। উনি সুস্থ আছেন। একটু পরে আমি আর মা কেবিনে ঢুকলাম। বাবা মাকে দেখে মুচকি হাসলো। মা যেন কোন কথাই বলতে পারছে না। পাশে নার্স আমাকে ডেকে নিয়ে প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দিয়ে বলল, এই ওষুধ গুলো নিয়ে আসুন। আমি বাবার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে ওষুধ আনতে গেলাম। অনেকটা হালকা লাগলেও মনটা খারাপ হয়ে গেল আপুর জন্য। কাউকে যদি বলা হয় যে আমাদের মাঝে কে বাবা মা কে বেশি ভালবাসে তাহলে আপুর নামটাই আগে আসবে। সে হয়তো বাবাকে বের না করা পর্যন্ত এখানেই থাকতো তবে সেটা তো আর হলো না।
ওষুধ গুলো নিয়ে যখন কেবিনে এলাম তখন দেখি মা বাবার একটা হাত ধরে আছে। আমি আসতেই মা বলল, তুই থাক আমি একটু বাসায় যাই। তোর বাবাকে তো এখানেই থাকতে হবে তাই বাসা থেকে কিছু খাবার নিয়ে আসি। আমি হেসে বললাম, চলো তোমায় বাসায় রেখে আসি। আপু একটু পরেই আসবে এখানে। ও রান্না করে নিয়ে আসবে। তুমি বরং আজ বাসায় থাকো। সকালে চলে এসো এখানে। মা কি যেন ভাবলো। তারপর বাবার কাছে গিয়ে কি যেন বলে মাথায় হাত বুলিয়ে এসে আমায় বলল, চল যাই। মা বেরিয়ে গেলে, বাবাকে আমি বললাম, একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর। আমি আসছি মা কে বাসায় রেখে। বাবা একটু হেসে বলল, তোর মা কেঁদেছিল তাই না? আমি হেসে বললাম, হুম একটু। আপুকেও বকেছে এজন্য। যাই হোক তুমি ঘুমানোর চেষ্টা করো একটু। এটা বলেই আমি মাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
এসে দেখি আপু রান্না প্রায় শেষ করে ফেলেছে। মা বাসায় ঢুকেই রান্নাঘরে চলে গেলো। আমি রুমে এসে দেখলাম অমিহা আমার বিছানাতেই ঘুমিয়ে আছে। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে যখন আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি তখনি বাইরে থেকে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। তড়িঘড়ি করে বাইরে গিয়ে দেখি মা আর আপু একে অপরকে জড়িয়ে কাঁদছে। মা বলছে, আমার কথায় একটুতেই রেগে যাচ্ছিস এখন। আমি কি ওসব কথা মন থেকে বলি বল? তুই কি আমাকে বুঝবিনা? আপু কিছু না বলে শুধু কাঁদছে। বাইরে থেকে এসব দৃশ্য দেখে দেখে আমি অভ্যস্ত। যদিও চোখের কনে আমারও একটু পানি এসেছিল তবুও এসব ভুলে বললাম, ফেমিলি ড্রামা আমার একদমই পছন্দ না। আপু আর মা তখন নিজের কান্না ভুলে আমাকে গালি দেওয়া শুরু করল।
আমি হেসে চলে আসলাম। সন্ধ্যায় আপুসহ হাসপাতালে আসলাম। বাবা ততোক্ষনে ঘুম থেকে উঠেছে মাত্র। আপু গিয়ে বাবার পাশে বসলো। বাবার হাতে হাত ঢুকিয়ে বলল, খারাপ লাগছে কি? বাবা মৃদু হেসে বলল, রাগ করেছিস তুই? আপু কিছু বলল না। বাবার জন্য নিয়ে আসা খাওয়ার গুলো বের করলো। অমিহা আমার কাছে চিপস খাবে বলে বায়না ধরেছে। আমি আপুকে বলে বাইরে গেলাম অমিহাকে নিয়ে। ফিরে এসে দেখি আপু বাবাকে খাইয়ে দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিচ্ছে। বাবাকে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে আপু ঘুমোতে বলল বাবাকে। পাশের বিছানায় অমিহাকে শুইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি তখন আপু একটা প্লেটে খাওয়ার নিয়ে এসে আমাকে খাইয়ে দিতে লাগলো। আমি বললাম, তুই খাবি কখন? আমার সাথেই একটু খেয়ে নে। ও হেসে বলল, অমিহা ঘুমিয়ে গেলে তুই আমাকে খাইয়ে দিবি। আমি হেসে বললাম, ও ঘুমিয়ে গেছে প্রায়। আপু বলল, তাহলে তাড়াতাড়ি খেয়ে নে এরপর আমাকে খাইয়ে দিবি।
খাওয়া শেষ হলে প্লেটে খাওয়ার নিয়ে ওকে খাইয়ে দিচ্ছি। খেতে খেতেই ও বলল, আমাকে কিছু টাকা দিতে পারবি ভাই? একটু চিন্তুক ভাব এনে বললাম, হুম আমার টাকা মানে তো তোরই টাকা তাই দিতে পারব তবে আমাকেও শপিংয়ে নিয়ে যেতে হবে। কোন শার্ট ভাল মানাবে এটা আমি পছন্দ করে দিবো। এর আগে কি একটা টকটকা লাল শার্ট দিয়েছিলি উনাকে। কি বিদঘুটে পছন্দ তোর। আপু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আবার এক লোকমা খাইয়ে দিলাম ওকে। ও বলল, তুই কি দেখেছিলি আমাকে সেদিন? আমি হাসলাম। ও তখন মাথা নিচু করে নিলো। ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, দুনিয়াটা কত আজব তাই না রে? কেউ সংসার চেয়েও করতে পারে না আর কেউ পেয়েও ধরে রাখতে চায় না। নিজের ওপর তুই কোন বোঝ রাখিস না আপু। আমি জানি তুই যা করছিস, ঠিক করছিস। আপুর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। চোখের পানিটা মুছে দিয়ে বললাম, খেয়ে নে, আমি সবসময় তোর পাশে আছি।
আপু আমার বাম হাত জড়িয়ে বলল, আমার সাথেই কেন এমনটা হল বলতো? প্রথম প্রথম তো সব ঠিক ছিল। একটু থেমে ও বলল, ঐ লোকটা আমায় অনেক ভালবাসতো জানিস। বিয়ের দিন থেকে নিয়ে সবসময় ও আমার পাশে থেকেছে। আমাদের সুখের সংসারে আরও প্রশান্তি নিয়ে এসেছিলো অমিহা। খুব ভয় হতো আমার, যে লোকটা ওর মেয়েকে পেয়ে আমায় ভুলে যাবেনা তো? কিন্তু ও যখন অমিহাকে আদর করতো, খেলতো, তখন আমিই আলাদা একটা প্রশান্তি পেতাম। এতো কিছুর পরেও লোকটা আমার যত্ন নিতে ভুলতো না। নিজ হাতে খাইয়ে দিতো আমায়। কিন্তু এতো সুখ আমার হাহাকারের সাগরে বিলীন হয়ে গেলো। সেদিন সেই গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট থেকে জিবনটাই কেমন পাল্টে গেলো। ডাক্তার প্রথমে বুঝতেই পারেনি যে ওর মাথায় আঘাত লেগে ব্রেইনে সমস্যা হয়েছে। পরে বুঝলেও কিছু করার ছিল না।
জানিস ভাই, নিজের অজান্তে ও আমাকে অনেক মারতো আর বলতো, আমাকে নিলার কাছে নিয়ে যা। তুই কে? তুই এখানে কি করছিস? আমি অনেক কষ্ট পেয়েও তার ভালবাসাটা বুঝতে পারতাম। কিন্তু শেষে যখন ও ক্লান্ত হয়ে থেমে যেতো তখন একটু চোখ বুজে থাকতো। একটু পরে ঔ হঠাৎই আমায় চিনে ফেলতো। চিনে ফেলে আমাকে জড়িয়ে পাগলের মত কাঁদতো সে। নিজেই ক্ষত গুলোতে মলম লাগিয়ে দিতো। দিনদিন ওর অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছিলো। আমিও তবুও ভেবেছিলাম, লোকটা আমার স্বামী আর আমি তাকে নিজের জিবনের চেয়েও ভালবাসি তাই যাই কিছু হোক এই মানুষটার হাত ছেড়ে আমি যাব না। কিন্তু একদিন এই লোকটাই আমার সাথে ওর নিজের মেয়েকেও যখন পেটাতে গেলো তখন আমি আর পারলাম না। ওর একটা মাইরও যদি মেয়েটার গায়ে পরতো তবে অমিহার অনেক ক্ষতি হয়ে যেতো। পরে আবারও ও কান্না করে বলেছিলো, তুমি চলে যাও এখান থেকে। আমার মেয়েটার জন্য হলেও চলে যাও। ওয়াদা করো আমার মেয়েটাকে তুমি মানুষ করবে? আমি কিছু বলতে পারিনি লোকটাকে।
শুধু তার চোখে ভালবাসার আকুতি দেখেছিলাম। তাই বাসায় চলে এসেছিলাম। সেদিন যখন মানুষটাকে এক পলক দেখায় জন্য ঐ বাড়িতে যাই তখন দেখি ঐ লোকটাকে একটা ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। ডিভোর্স হয়েছে আমাদের কিন্তু তার প্রতি ভালবাসাটা রয়ে গেছে ভাই। তাই পারিনি আর থাকতে। তোর থেকে টাকা নিয়ে ওর জন্য শপিং করে নিয়ে যাই। ওকে গোসল করিয়ে নতুন কাপড় পরিয়ে কিছু সময় কাটাই ওর সাথে। মুখ দিয়ে একটা কথাও বলেনি জানিস। শুধু তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। জানিনা সে আমায় চিনতে পেরেছে কি না তবে চলে আসার সময় ঐ লোকটার চোখের পানি কেন যেন বারবার বলছিলো, ক্ষমা করে দিও আমায়। পারলাম না সারাটা মুহুর্ত তোমার সাথে থাকতে। পারলাম না তোমার প্রতিটা বিশ্বাসের স্বাক্ষী হতে।
আপুর চোখ দিয়ে অনবরত পানি গড়িয়ে পড়ছে। আমিও কিছু না বলে খাওয়ার প্লেটটা ধরে আছি। একটু পরে আপু শান্ত হলো। আমি বললাম, তো এখন কি ভাবছিস? আবারও কি দুলাভাইর কাছে যাবি? ও একটু হাসলো। বলল, ঐ মানুষটা আর তোর দুলাভাই না রে। ঐ ডাকটা ডাকার অধিকার আমি কেরে নিয়েছি। তবে ভাবছি একটা চাকরী করবো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, তা হঠাৎ চাকরির দরকার হলো কেন? ঐ লোকটার জন্য কিছু করতে হলে তোর চাকরি করতে হবে? আমি কি মরে গেছি? আপু সামনে তাকিয়ে বলল, বিয়ের পরে মেয়েদের আপন নীড় হল তার স্বামীর ঘর ভাই।
পরে চাইলেও আর নিজের বাবার বাড়ি আপন থাকে না। তোর উপর আর কতদিন চলবে বল? আর তাছাড়া অমিহাকে মানুষের মত মানুষ করতে হবে। কারও ওয়াদা আমাকে পুরন করতে হবে রে। আপুকে এবার শুধু এটুকু বললাম, তো এর জন্য তুই ভাবছিস চাকরি করবি? এই তোর কি একটুও আমার কথা ভাবতে ইচ্ছে হয় না? তোর কখনও মনে হয়নি যে তোর একটা ভাই আছে? ভাই মানে কি বুঝিস তুই? নাকি সবসময় পর ভেবে এসেছিস? অমিহা তোর মেয়ে আর আমার কেউ না? কিভাবে ভাবতে পারলি যে তোর এই বাড়ি আপন না? সত্যি বলতে তুই আমাদের কখনও ভালই বাসিস নি তাই তোকে আর কিছু বলে লাভ নেই, যা ইচ্ছে কর।
রাগ আর অভিমান দুটোই এসে জমাট বেধেছে এখন। কেবিনের বাইরে বেলকনিতে দাড়িয়ে আছি। একটু পরে আপু এলো। বলল, তোকে দুটো কথা বলব, শুনবি? আমি সরাসরি না করে দিলাম। আপু তখন আমার সামনে এসে দাড়ালো। আমি মুখ ঘুড়িয়ে নিলাম। ও বলল, তাকা আমার দিকে। আমি আবারও মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। একটু পরে ও হেসে ফেলে বলল, ওমা তুই কান্না করছিস? এতো বড় ছেলে হয়েও কাঁদছিস। অমিহা, মা এসে দেখে যা তোর মামা কাঁদছে। এসব বলে ও হেসেই চলেছে। আমি চোখের পানিটা বেরোতে না দিয়ে চোখেই মুছে ফেললাম। কান্না চলে আসলে আর কি বা করার আছে।
আপুর ওপর রেগে বললাম, হাসতে থাক। আমাদের কান্না তোর চোখে পরবে নাকি? জিবনে তো ঐ একটা লোকই তকে ভালবেসেছে আর বাকি আমরা সবাই ঘাস কেটেছি। আপু হাসি থামিয়ে বলল, তোর অভিমানে ভরা মুখটা দেখতে এতো কিউট লাগে যে কি বলব আমি। মনে হয় গালটা টেনে দেই বলেই ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। আমি ছাড়িয়ে নিতে চাইছি আর বলছি, এই ছাড় আমায়, তুই ধরবিনা আমাকে। তারপরও ও শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে একটু পরে কান্না শুরু করলো। একটু ছাড়াতে চেষ্টা করেও ওর কান্না দেখে আমিও জড়িয়ে নিলাম। বললাম, এরপর আর এরকম কথা কখনও বলবি না। আমি তোর ভাই, তোর ওপর আমার অধিকার আছে। বিয়ের পর হয়তো মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি চলে গিয়ে স্বামীকেই সবচেয়ে কাছের ভেবে নেয় তবে কোন এক ভাইকে জিজ্ঞেস করে দেখিস, সে কি হারায়? আপু আরও শক্ত করে জরিয়ে ধরলে আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম।
একটু পরে ও আমায় বলল, দেখ ভাই, তোরও একটা জিবন আছে। কিছুদিন পর তোরও বিয়ে হবে, সংসার হবে তখন আমি কিভাবে এ সংসারে থাকবো ভেবে দেখেছিস? সব কিছু কি আর ভালবাসা দিয়ে হয় রে পাগল? আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, ছোট বেলায় মা একটা কথা বলতো তোর মনে আছে? আপু প্রশ্নসুচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম, মা বলতো, যার মা নেই তার যদি কোন বড় বোন থাকে তবে সেই মা। এবার তোর প্রশ্নের উত্তর, আমার সংসার হলে তুই আমার বড় বোন হলেও আমার মা হয়ে থাকবি যেভাবে ছোটবেলায় তুই আমায় আদর করতি, শাষন করতি সেভাবেই থাকবি। আর এসব যদি কেউ মেনে নিতে না পারে তবে আল্লাহ কে স্বাক্ষী রেখে বলছি, আমি কখনও বিয়েই করবো না। কোন সংসারও আর হবে না। এবার আপু পেছনে ঘুরে কান্না করছে মুখ চেপে। তাকে সামনে ঘুরিয়ে বললাম, ছোটবেলা যখন অন্য সবাই আমাকে কাঁদানোর জন্য তোকে টেনে নিয়ে যেতো তখন আমি খুব কাঁদতাম৷ আর সাথে সাথেই তুই সবাইকে ছেড়ে আমাকে জড়িয়ে ধরতি। আমি তখন তোকে হারানোর ভয়টা কাটিয়ে আবার শান্ত হতাম।
এসব হতো ছোটবেলায়। আর এখন তো বড় হয়েছি, বুঝতে শিখেছি। এমনকি আল্লাহর রহমতে ভাল একটা চাকরিও করছি। কিন্তু এখন যদি সেই হারানোর ভয়টা আবারও আসে তবে কেমন খারাপ লাগবে একটু ভেবে দেখতো? আপু আর পারলো না সামলাতে। আমাকে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিল। বলল, আমি তোকে ছেড়ে আর কোথাও যাব না রে। তুই আর এসব বলিস না ভাই। আমি আর পারছি না। তোকে কখনও আর এসব বলবো না। তুই আমাকে ভুল বুঝিস না রে। আমার কলিজা তুই, সত্যি তোকে অনেক ভালবাসি ভাই। নিজের চেয়েও অনেক বেশি ভালবাসি তোকে। কান্না করতে করতে ও এসব বলছে আর আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নিজের চোখ মুচছি। এমন সময় ভেতর থেকে বাবা ডেকে বলল, ঐ তোরা ভেতরে আয়। একসাথে কান্না করি।
কথা শুনতে পেয়ে চোখের পানি মুছে দুজনেই ভেতরে গেলাম। বাবা বলল, দুটোই কান্না করছিস আর আমার কথা ভুলে গেলি। আপুকে বাবা বলল, তুই আমাদের প্রথম সন্তান। তোকে কতটা ভালবাসি এটা তুই কি বুঝিস না? নিজেরই তো একটা মেয়ে আছে তারপরও কি বুঝিয়ে বলতে হবে? আমি এবার বাবাকে বললাম, সেটাই, আমিই তো অবহেলায় মানুষ হয়েছি। কেউই সেরকম একটা যত্ন নেয় নি। বাবা বলল, হুম, ঠিক বলেছিস। তুই তো বন্যার জলে ভেসে আসছিলি তোকে আর কিসের যত্ন। আমি বললাম, তাহলে পাশের বাড়ির রসুল কাকা যে বলেছিলো, আমায় কুড়িয়ে পেয়েছিলে তুমি, সেটা কি মিথ্যে? বাবা তখন পারলে অসুস্থ অবস্থায় এসে আমাকে পিটায় কিন্তু করলো না।
আপু আমাকে ধরে হেসে চলেছে এসব শুনে। হেসেই আমার উপর ঢলে পরছে সে। অনেকদিন পর তবে বোনটার মুখে সেই প্রানোজ্জল হাসিটা দেখতে পেলাম৷ বাবা আপুকে বলল, আয়, আমার কাছে আয়। আপু অনেকটা ঝাপিয়ে পড়লো বাবার বুকে। কতটা হাহাকার তার ভেতরে লুকিয়ে আছে বুঝতে পারলাম। একটু পরে বাবা আমাকে বলল, আয়, তুইও আয়। কুড়িয়ে পেলেও মানুষ যখন করেছি তখন আয়। আমিও হেসে চলে গেলাম বাবার কাছে। আপু বাবা দুজনি আমায় জড়িয়ে ধরে আছে। একটু পরে হঠাৎ অমিহা কেঁদে উঠলো। আমি দৌড়ে গেলাম তার কাছে। আমাকে দেখেই ও শান্ত হলো। কলে নিয়ে বাবার কাছে এলাম। তিনজন মিলেই ওর সাথে খেলা করছি।
এরপর কিছুদিন কেটে গেছে। বাবাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। এর মাঝে আপুর শ্বশুরবাড়ি থেকে আপুর শ্বাশুড়ি, ননদ, আর দেবর এসে বাবাকে দেখে গিয়েছে। আসলে আপুকে ডিভোর্স নেওয়ার জন্য আপুর শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও অনেক বুঝিয়েছিল। তারাও চেয়েছিল আপু নতুন করে জিবন শুরু করুক কিন্তু সে করেনি। সত্যি বলতে আপু শুধু অমিহার জন্য ডিভোর্স নিতে বাধ্য হয়েছিল তাছাড়া সে কখনই তার স্বামীকে ছেড়ে থাকতো না। এরপরও সবি ঠিকঠাক ছিল তবে ইদানিং আপুর একমাত্র ননদ আমাদের বাড়িতে খুব বেশি আসা যাওয়া করছে। শুধু আসা যাওয়া করলেও ঠিক ছিল কিন্তু সে আমার ঘরেও আমার অনুপস্থিতিতে ঢুকে পরে। আজ তো অফিস থেকে এসে দেখি সে আমার বুকশেল্ফ থেকে বই বের করছে। আমি রুমে ঢুকেই এটা দেখে একটু গলা খাকরী দিয়ে বললাম, কি করছেন আপনি আমার রুমে? ও একটু চমকে তাড়াহুরো করতে করতে কয়েকটা বই ফেলে দিল। বই গুলো তুলতে তুলতে বলল, দেখছেনই তো বই বের করছি। হুদাই জিজ্ঞেস করেন কেন? আর এতো দেরী হল কেন বাসায় আসতে? কোথায় টাংকি মারতে গিয়েছিলেন? এসব বলতে বলতে মেয়েটা দুটো বই নিয়ে ঘরের বাইরে চলে গেলো।
সাথে সাথেই আমি দরজা বন্ধ করে কয়েকটা জোরে নিঃশ্বাস নিলাম। মেয়েটা কি বলল এসব? আপুর বিয়েতে একটু মজা করেছিলাম এই মেয়ের সাথে। মজা বলতে ঐ হলুদে নতুন বেহানি হিসেবে একটু কয়েকজন মিলে কথা বলেছিলাম। একটু যেচে পরে মানুষের সাথে কথা বলার চেষ্টা আরকি। কিন্তু এই মেয়ে ওটাকে সরাসরি টাংকি মারা বলে বলে দিল। হ্যা একটু তো বটে। সুন্দরী মেয়েরা একটু আদটু এই ধরনের টাংকি পছন্দ করে তাই বলে এতোদিন পর এটা বলে খোটা দিতে হবে। মেয়েটার নামটা কি যেন ছিল, ও হ্যা মনে পড়েছে, নিম পাতা মানে নিপা। ওরকমি তেতো মনে হয়। তবে সেসব মজা বা টাংকি যেটাই বলি ওসব বিয়ের দিনেই শেষ। এরপরে এই মেয়ে অনেকবার এসেছে তবে কথা হয়নি খুব একটা। রাতে আপু ঘরে এলো। বলল
– কিরে কি করছিস? (আপু)
– এইতো একটু গান শুনছি। তোর ননদ ভাগছে?
– এভাবে কেন বলছিস? মেয়েটা অনেক ভাল। তোর মত অগোছালো নয়। (আপু)
– তো তুই হঠাৎ তোর গুনধর ননদের খাইসটা প্রশংসা আমার সামনে করছিস কেন? কিছু খাইয়েছে নাকি তোকে? ওই ঘুষ আরকি।
– একদম ফালতু কথা বলবিনা মামুন। ও ভাল তাই ভাল বলছি। তোকে একটা কথা বলবো?(আপু)
– তার আগে বল ঐ ছেমড়ি আমার রুমে কি করে? বই যে নিয়ে গেল দিবে কবে?
আপু এবার হুট করে কেমন যেন নরম হয়ে গেল। আমার ডানহাতটা ধরে বলল, সত্যি করে বলতো, নিপাকে কেমন লাগে তোর? হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, কাজের মাইয়া লাগে। নিজের বাড়ির কাজ নাই আমাদের বাসায় এসে কাজ করে। আপু এবার মুখটা ভারী করে বলল, আমি সিরিয়াস কিন্তু। এবার ওর হাতটা ধরে বললাম, আচ্ছা ভালই লাগে কিন্তু এসব আমাকে কেন বলছিস বলতো? আপু বলল, আসলে ওর সাথে তোর বিয়ের ব্যাপারে বাবা মায়ের সাথে কথা বলেছি। তারা রাজি তাই তোর থেকে শুনতে এলাম তুই কি বলিস। আমি অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম, বিয়েটা করব আমি আর তুই রাজি করালি বাবা মাকে। কেমন রাজনীতি ভাই এটা? আর ঐ বান্দরনিকে আমি বিয়ে করব না। কেমন যেন গোমড়ামুখো। সবার সাথে মিশতেও পারে না। এতোবার এসেছে আমার সাথে কথাও বলে নি। আপু এবার হেসে ফেলে বলল, মেয়েটা এতোবার এই বাসায় কেন আসে জানিস? তোর জন্য। তোকে একটাবার দেখার জন্য। তুই এলেই দেখিস না একটু পরে চলে যায়।
আমি এবার আপুর দিকে তাকিয়ে আছি। বললাম, তুই কি জানিস তুই কি বলছিস? আপু আমার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল, আমি জানি আমি কি করছি। মেয়েটাকে আমি চিনি জানি বলেই তো আমার কলিজাটার সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছি। মেয়েটা অনেক ভাল জানিস। আর আমার সাথে সে খুবই অন্তরঙ্গ। তাই বলছি ভেবে দেখ। আর তোর সুবিধার জন্য আমি ওকে কাল তোর সাথে দেখা করতে বলেছি। দুপুরে লান্চটা একসাথেই করিস। ঠিক আছে? আমি বিরবির করে বললাম, সব তো ঠিক করেই রেখেছিস তবে বিয়েটাও সেরে দিতি। তারপর না হয় শুনতাম এসব। বিরবির করছি দেখে আপু বলল, কিরে কিছু বলছিস? আমি মুখটা যথাসম্ভব চওড়া করে একটা হাসি দিয়ে বললাম, না তো। তুমি বলেছো এর মাঝে আমি আর কিছু বলতে পারি। সমস্যা নেই তুমি এগিয়ে যাও, আমি কাল দেখা করে নিবো। এরকম একটা কথা শুনে আপু হেসে চলে গেলো।
রেষ্টুরেন্টে ঢুকেই দেখি নিপা কর্নারের টেবিলে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। মনে মনে ভাবলাম, এটাতো ভালই জানো যে কর্নারের টেবিলে বসে গল্প করতে হয়। কথথেকে হয়েছে এই অভিজ্ঞতা হুম? টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়াতেই ও উঠে আমাকে সালাম দিল৷ সালাম না নিয়ে ভাবছি ও কি আমাকে সালাম দিল। কিছুই বলছিনা দেখে ও বলল, দাড়িয়ে কেন বসুন না? আমি কিছু না বলে বসে পরলাম। মেয়েটা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। মনে মনে ভাবছি, যে লজ্জা দেখাচ্ছো আজ, এটার যদি বিন্দুমাত্রও আগে থাকতো। পরোক্ষনে ভাবছি, আজকি সব মনে মনেই বলবো নাকি? এতোক্ষন ধরে তো একটা কথাও বলিনি।
আচ্ছা আমি নিজেই কি লজ্জা পাচ্ছি? এটা ভাবতেই আরও লজ্জা পেলাম মনে হল। যা সালা। ঠিক করলাম মেনু থেকে ওকে অর্ডার করতে বলি। এটা বলতে যেয়েও আমার গলাটা কেঁপে উঠলো। মেয়েটা হেসেই ফেলল। বলল, এতো নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই। আপনি সহজভাবে কথা বলতে পারেন। আর আমি জানি আমরা এখানে কেন এসেছি। তাই সহজ হয়ে কথা বলুন। আর তা নাহলে বন্ধু ভেবে যা বলার বলুন। এসব শুনে একটু সময় নিলাম। তাকে বললাম, আমায় কি আপনার পছন্দ হয়েছে? এটা শুনে আবারও নিপা হাসলো। বলল, পছন্দ হয়েছে বলেই তো এসেছি। আপনার আমাকে পছন্দ হয়েছে তো? আমি আমতা আমতা করে বললাম, জি মানে হ্যা তা তো হয়েছে তবে একটা কথা রাখবেন? ও বলল, জি নিঃসংকোচে বলুন। বিয়ে যেহেতু হচ্ছেই তাই বলছি আরকি।
সবসময় কি বন্ধু হিসেবে আমার পাশে থাকবেন? এটা শুনে ও মুচকি হাসলো তারপর আমার চোখে চোখ রেখে বলল, আমি তো আপনার অর্ধাঙ্গিনী হতে যাচ্ছি তাই জিবনের সেরা বন্ধুটাও যদি আপনি হন তবে এর থেকে খুশির আর কিই বা হতে পারে। আমি ভাবছি, উত্তরটা মনের মত পেয়েছি। অনেকটা ভাললাগা ঘিরে ধরেছে তাই শেষবারের মত বললাম, আরেকটা কথা রাখবেন? ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বললাম, আমার পরিবারটাকে নিজের করে নিতো পারবেন? বিশেষ করে আপুর তো সবকিছুই জানেন। তাকে কিন্তু কোনভাবেই কষ্ট দেওয়া যাবে না। এটা আমি মানতে পারবো না। বলতে পারেন আপু আমার দ্বিতীয় মা। নিপা বলল, আমি জানি এসব।
আপু আমাকে বলেছে। আসলে আমারও তো বোন নেই। তাই ভাইয়ার বিয়ের পর থেকেই তাকে নিজের বোন হিসেবে মেনেছি। এখনও তাই। আর সবথেকে বড় কথা আমি উনাকে ভালবাসি একজন বোন হিসেবে। তাই কষ্ট দেওয়ার কোন মানেই হয় না। এসব বলে যখন ও থামলো তখনও আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। খুশিমনে বললাম, আপনার কিছু বলার আছে? ও মৃদু হেসে বলল, আমি ছাড়া আর কারও সাথে টাংকি মারা যাবে না। এটা শুনে আমি হেসেই ফেলি। আরও বিভিন্ন কথার মাঝেই খাওয়া শেষ করে বাসায় আসলাম। অফিসে আর গেলাম না। শুধু বারবার এটাই মনে হয়েছে, সামনে ভাল একটা জিবন পেতে যাচ্ছি। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা টা একটু এলিয়ে দিলাম।
পরোক্ষনেই আপু এসে বলল, নিপা ফোন করেছিল, আমি জানতাম তুই আমার কথা ফেলবি না। বলেই কপালে একটা চুমু দিল। আমি হেসে বললাম, বিয়ে আমি করছি তুই লাফাচ্ছিস কেন? আপু বলল, ভাইয়ের বিয়েতে বোনদের যে কতখুশি লাগে এটা তুই বুঝবি না। অমিহাও এসে বলল, মামা, আমার নাকি মামানি আতবে? কখন আতবে মামানি? আমাকে নিয়ে তলো আমি মামানি দেতবো। আমি ওকে কোলে নিয়ে বললাম, তোর মা কে বল। তোর মা যত তারাতাড়ি ব্যবস্থা করবে তত তাড়াতাড়ি তোর মামানি আসবে। আপু এটা শুনে মাথায় গাট্টি মেরে বলল, এ্যাহ ছেলের আর তোর সইছে না বলেই চলে গেলো। আমিও অমিহার সাথে একটু খেলে পাশে শুইয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে যাই৷
রাতে আপুর ঘরে গেলাম। দেখলাম আপু বেলকনিতে বসে আছে। পাশে গিয়ে দাড়ালাম। আশেপাশে না তাকিয়েই ও বলল, তোকে অনেক ধন্যবাদ ভাই, ও বাড়িতে যাওয়ার একটা পথ করে দেওয়ার জন্য। পাশের চেয়ারে আমিও বসলাম। ওর একটা হাত নিজের মুষ্টিতে নিয়ে বললাম, তুই অনেক ভাল রে আপু। দেখিস একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি সবসময় তোর সাথে আছি। আপু আমার হাতের মুষ্টিতে চুমু খেয়ে বলল, সবার কপালে তোর মত একটা ভাই থাকে না রে ভাই। তুই শুধু আমার ভাই না রে, কাঠিন্যতার এই দুনিয়ায় তুই আমার শক্তিও। এরপর দুজনি অনেকখন চুপচাপ সামনে তাকিয়ে থাকলাম।
হঠাৎ বললাম, আপু একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? আপু আমার দিকে তাকালো। আমি বললাম, সত্যি কি কেউ নিজের স্বামী বা স্ত্রীকে এতোটা ভালবাসতে পারে? আপু হাসলো, হেসে বলল, কেউ যখন বিশ্বাস, সম্মান আর মায়া দিয়ে ভালবাসার স্তম্ভ গড়ে তোলে সেই স্তম্ভ কি ভাঙ্গা সম্ভব বল? আমি জানি ওই লোকটা আমার এখন কেউ না তবুও কেন যে আমি তাকে এতোটা ভালবাসি তা জানিনা। তবে এটুকু জানি আমি এখনো তার চোখে আমার জন্য সম্মান আর ভরসা দেখি। যেটাই একটা মানুষের জিবনে সবথেকে বড় প্রাপ্তি। আমি আর কিছু বললাম না। আপুর কাধে মাথা দিয়ে সামনের দিগন্তে তাকিয়ে আছি। ভাবছি ভালবাসার বিস্তৃতিটা কত বড় হলে এরকম কাউকে পাওয়া যায়।