– কিরে ফর্মাল শার্টটা পরেছিস ? না কেত মেরে ক্যাসুয়ালটাই পরছিস ? চুল টা কেমন আঁচড়ালি ? জেল নিয়ে স্পাইক করিসনি তো? দে তো একটা পিক্ দেখি |
-হ্যাঁ,রে বাবা ঠিক করে ড্রেসআপ করেছি ,কোনো মেয়ে থাকলে ফিদা হয়ে যাবে |
– ব্যাস,তাহলেই হল,শুধু তাকাবেই ,কাজ আর দেবে না | এত কথায় কাজ নেই,পিক্ দে |
-বলছি ফোনে চার্জ নেই,পরে দেব |
-আমার দিব্যি,ফটো দিবি কিনা বল?
-সব কিছুতেই তোর ব্ল্যাকমেল ,দাঁড়া দিচ্ছি বলে অক্ষর একটা সেলফি তুলে সেন্ড করলো বর্ণা কে |
ফটোটা ডাউনলোড করতেই মাথাটা গরম হয়ে গেলো বর্ণার ,আবার ফোন লাগলো অক্ষরকে…
– এটা তোর ইন্টারভিউ দেওয়ার ড্রেসআপ,যাওয়ার আগে কি বাংলা খিস্তিখাবি ?তোর কি ইচ্ছা আছে কোনো জব পাওয়ার ?
– কি করবো,আর কোনো ড্রেস নেই |
-তুই শুধরাবি না বলে ফোন কেটে দেয় বর্ণা |
দেওয়ালে মাথা ঠুকতে ইচ্ছা করে বর্ণার,চিৎকার করে বলে হে ভগবান! এমনি একটা অপদার্থ ছেলেকে আমার জীবনের সাথে কেন জড়ালে ? তিন বছরের সম্পর্ক ওদের ,রং নম্বর থেকে প্রেমের সূত্রপাত..এখন দুই বাড়ী থেকে মোটামোটি সব জানে,তবে অক্ষরের গায়ে এখনো বেকারের তকমাটা ঘোচে নি,আর অখানেই যত গেরো….
রাগে ফোন অফ করে দেয় বর্ণা | কিছুতেই ফোন খুলবেনা ও |
ঘন্টা দুই পর ওর মা এসে, ফোনটা হাতে দিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে ধর অক্ষরের ফোন, এবারো পায় নি | বর্ণা ফোনটা হাতে নিয়ে চিৎকার করে বলে –
তোর লজ্জা করলোনা মাকে হয়নি বলতে ?
– যা বাব্বা,যেটা সত্যি সেটা বলবোনা ?
– এলেন আমার সত্যবাদী যুধিষ্টির,এই তুই কি কোনোদিন ও সিরিয়াস হবি না?কেন বুঝিসনা তোর জবের উপর অনেককিছু নির্ভর করে আছে ..
-পরের বার পাক্কা হবে দেখে নিস,এবার অন্তত ফোনটা খুলে ভালো করে কথা বল |
-ওকে,হোয়াট অ্যাপ করছি বলে ফোনটা রাখলো বর্ণা…
এমনি করেই আরো দু মাস কাটলো ,এর মধ্যে অক্ষর আর বর্ণার বার চারেক ব্রেক আপও হয়েছে ,আবার অক্ষর তিনটে ইন্টারভিউ তে ফেলিওর ও হয়েছে …
-কি রে ,আর কটা ইন্টারভিউ জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ,তোর বয়েস যে ছাব্বিশ হলো সে খেয়াল আছে?পরে কিন্তু আর ভালো ছেলে পাবোনা,এখনো সময় আছে ভেবে দেখ ..
-আমি তোমাদের কত বার বলবো মা,বিয়ে করলে অক্ষর কেই করবো |
-সে করো,যখন লং ড্রাইভ এ যেতে ইচ্ছা করবে,টাকাটা শ্বশুরের থেকে হাত পেতে নিতে হবে তখন দেখো কেমন লাগে | বাবার টাকায় কি লাক্সারি দেখালে হয়?কোনো সোর্স অফ ইনকাম তো নেই |দেখো বিয়ের পর তোমার বাবার কাছে হাত পাততে এস না..
-আমি মরে যাবো,তবুও
কিচ্ছু চায়বো না তোমাদের কাছে,বলে ওখান থেকে উঠে চলে যায় বর্ণা |
ও মাই লাভ ,রিংটোনে ফোন বেজে ওঠে,ফোনটা ধরে বর্ণা বলে
-বল
-কলঙ্ক মুভি টা দেখতে যাবি?
মায়ের কথার চোটে ওর মাথা এমনিতেই খিচে ছিল বর্ণার,অক্ষরের কথায় আরো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো
-নিজেকে আয়নায় দেখ কলঙ্ক দেখতে পাবি ,শালা আমার লাইফ হেল করে দিলি |
– তুই আমাকে এমনি বলতে পারলি ? আমি তোকে ভালোবাসিনা ?
– শোন্ ,শুধু ভালোবাসলেও হয় না ,সংসার করতে গেলে কর্মসংস্থানের ও প্রয়োজন | এই ভাবে কত দিন ঝোলাবি আমাকে,তোর দ্বারা স্রেফ কিচ্ছু হবে না |
-আমি এখন রাখছি বলে ফোনটা কেটে দেয় অক্ষর |
ফোনটা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে বর্ণা,একটু বেশি বলে ফেলেছে ও,তাছাড়া তো উপায় ছিলোনা..অক্ষর কখনো সিরিয়াস হবে না ,শেষ অবধি কি ছিন্ন হয়ে যাবে ওদের সম্পর্ক ? দু দিন পরেও একটা ভালো কোম্পেনী তে ইন্টার ভিউ ,এবার যে ওর ভাগ্য পরিবর্তিত হবে না সেটা ভালোই জানে বর্ণা |
তার পরের দিন সকালেই বর্ণা ফোন করে অক্ষর কে..
-বল,এত ভোরে ঘুম ভাঙলি কেন ?
– ভোর না এখন সকাল আটটা,দাঁতে দাঁত চেপে বলে বর্ণা |
-শোন্,আজ থেকে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই,আর এটা মিউচুয়াল ব্রেকআপ,তোর উপর কোনো রাগ অভিমান নেই | বাবার বন্ধুর ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হচ্ছে |
-সক্কাল সক্কাল তোর ফাজলামি শুরু?
-তোর বিশ্বাস হলো না তো দাঁড়া তোকে তোকে শোনাচ্ছি,স্পীকার অন থাকবে কোনো কথা বলবিনা না কিন্তু ..
বর্ণা ফোনটা নিয়ে ওর বাবার কাছে গিয়ে বললো ,বাবা তখন কি বলছিলে ?
-হ্যাঁ অনেকদিন তো টাইম দিলাম তোদের,এবার সুখেন এর সাথে বিয়েতে মত দে মা |
-ঠিক আছে আমি রাজি |
আর শুনতে পারেনা অক্ষর,ফোন কেটে দেয় ও | শেষে বর্ণাও বিয়েতে রাজি হলো,শুধু ও বেকার বলে?কেন ওর বাবার কি কম আছে ? রাগে,অপমানে ওর চোখে জল আসে,একটু ধাতস্থ হয়ে আবার ফোন করে
-তুই এটা করতে পারলি বর্ণা?
-আমার কিছু করার ছিলোনা ,তোকে অনেক সময় দিয়েছি | আর আমাকে ফোন করিসনা |
আরো একদিন কাটলো ,অক্ষর একবার ফোন করলেও ধরেনি বর্ণা | আজ আবার সেই ইন্টারভিউ ডেট,হয়তো যাবেই না অক্ষর | চিরদিন বাবার হোটেলে খেয়ে দিন কাটাবে ভাবে বর্ণা | তবু আশায় ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে যদি ফোন করে অক্ষর…
পরিচিত রিংটোন বেজে ওঠে ফোনে ,ওর ধুকপুকানিটা এত বেড়ে গেলো যেন এখনি হৃদপিন্ড টা বাইরে চলে আসবে|
রিসিভ করতে ওই প্রান্ত বলে ওঠে…
– চাকরিটা আমার হয়ে গেছে বর্ণা শুনছো…
এখন আর কেও আটকাতে পারবেনা …
-কিন্তু আমার তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?
মাঝপথে গানটা থামিয়ে অক্ষর বলে
-কোনো বিয়ে টিয়ে হবেনা ,আমি তোর বাড়ি আসছি |
ত্রিশ মিনিটের মধ্যে,বর্ণার বাড়ি পৌছালো অক্ষর,ঢুকেই বর্ণার বাবাকে বললো
-কাকু,আমি চাকরি পেয়ে গেছি ,মাসে বাইশ দেবে| আপনি বর্ণার বিয়ে ক্যানসেল করুন ,ও আমাকেই ভালোবাসে আর আমার সাথেই ভালো থাকবে ..এক দমে কথা গুলো বলে থামলো অক্ষর |
ততক্ষনে বর্ণার মা এক গ্লাস জল ওর দিকে এগিয়ে দিয়েছে |
-ঠিক আছে আমরা ভেবে দেখছি বলে বর্ণার মা বাবা বাইরে চলে গেলো |
– কি রে কেসটা কি হলো,আমাকে মানবে তো?
ঠোঁট উল্টালো বর্ণা |
– জানিস আমি রিয়েলাইজ করলাম এই বেকার শব্দটার কাছে কত সম্পর্ক হেরে যায় |
– হ্যাঁ,ওটা তোর ঘটে ঢোকানোর জন্য তো এত কিছু |
-মানে?
-শাশুড়ি তোর জন্য পান্তুয়া আনিয়েছে ,তুই ভালোবাসিস না |
অক্ষরের চোখে তখন সর্ষে ফুল|
বর্ণার ফোন বেজে ওঠে তখনি ,ফোন স্পিকারে স্পীকারে দিয়ে বলে ..
– বলো
– আমার গুণধর ছেলে ,ঠিক মতো তোর বাবাকে বলতে পেরেছে ,তুই ছিলিস বলেই ওর বেকার নামটা ঘুঁচলো,ধন্যি তোর বুদ্ধি |
মায়ের কথা শুনে সমস্ত বুঝতে পারে অক্ষর,পুরোটা যে নাটক ছিল বর্ণার,যাক তাও শাপে বর হয়েছে মনে মনে ভাবে ও | বাস্তবে কটমট করে বর্ণার দিকে তাকায় অক্ষর |
বর্ণা ফিক করে হেসে একটা পান্তুয়া ওর মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে বলে
-ইস খুশি মে কুচ মিঠা হো যায়ে….