নতুন বৌয়ের চুল নিয়ে আমি বেশ সমস্যায় আছি।
আমার বৌ শিলার মাথার চুল গুলো অনেক লম্বা।লম্বা চুল ওয়ালা মেয়েগুলো কে আমি একসময় পছন্দ করতাম আর শিলার চুলের উপর ক্রাশ খেয়েই আমি তাকে বিয়ে করেছিলাম।কিন্তু বিয়ের এক মাসের মাথায় আজ আমি অনেক বড় গ্যাড়াকলে ফেসে আছি।চুলের দিকে তাকাতেও এখন ইচ্ছে করে না।মাঝেমধ্যে ইচ্ছে হয় শিলার চুল গুলো কেটে দেই কিন্তু বেচারি ছোট বেলা থেকে এতো কষ্ট করে চুল রেখেছে আর এতো সুন্দর চুল গুলো কাটি কীভাবে।
আসলে সমস্যা হলো শিলা খুব কেয়ার লেস মেয়ে।
বাবা-মা র আদরের কন্যা হওয়ায় সে সব কিছু ফাঁকি দিয়ে যেতো।তাই এখন অনেক কাজ না পারার পাশাপাশি কাজ গুলো তে খুব বেশি ভুল করে এবং নিজের চুল গুলো সামলে রাখতে পারে না।এইতো সেদিন রাতে খাবার খেতে বসার পর ভাত প্লেটে নিতেই কুণ্ডলী পাকানো চুলের গুছা চোখে পড়ে।চুল গুলো হাতে নিয়ে ফেলতেই কেমন জানি ঘিন ঘিন করছিলো।তবুও সেদিন শিলার মুখের দিকে তাকিয়ে কোন ভাবে খাবার গিলেছিলাম।
বাকি সমস্যা গুলোর সমাধান হলেও তার এই চুলের সমস্যার সমাধান কিছুতেই হচ্ছে না।সে নিজেকে অনেক বড় কেশবতী মনে করে।আসলেই তার চুল গুলো অনেক সুন্দর।কিন্তু এই সৌন্দর্য ঘন চুল এর যত্ন নেওয়া মাঝেমধ্যে আমার অফিসে দেরির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।সেদিন রাতে শিলাকে বলেছিলাম যে রোজ সকালে যেনো সে আমাকে টাই পরিয়ে দেয়।আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবো।
পরদিন সকালে টাই পড়াতে গিয়ে তার চুল গুলো আমার শার্টের বোতাম এর সাথে কঠিন প্যাঁচ লেগে যায়।মুহুর্তেই আমার সব রোমান্টিজম মাটিতে মিশে যায়।আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই শিলা চিৎকার দিয়ে উঠে।বাঘের গর্জনের মতো আওয়াজ তুলে সে বলে উঠে, খবর দার এক চুল পরিমাণ নড়বে না তুমি,যদি নড়ো একদম খুন করে দেবো,কেউ লাশ ও খুঁজে পাবে না।
আমি চুপ করে দাঁড়িয়েছিলাম, আধঘন্টা সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে সে চুল গুলো ছাড়িয়ে নেয়।অথচ শার্টের বোতামের সুতোর সাথে অল্প কিছু চুল আটকে ছিলো।সেদিন তার চুলের প্রতি মায়া দেখে আমি সত্যি ই খুব অবাক হয়েছিলাম।
আরেকদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পর হুট করেই কারেন্ট চলে যায়।
শিলা আমার বুকের উপর হাত রাখে।আমি তখন চোখ বন্ধ করে জেগেই ছিলাম।শিলা জেগেছিলো কি না জানি না!আমি তার হাত টা নিজের হাতে নিয়ে বুলিয়ে দিতে শুরু করলাম।মিনিট দুয়েক বুলানোর পর চুলের ঝুটি দিয়ে মুখে একটা বাড়ি পড়লো।আমি আদৌ জানতে পারি নি শিলা সেটা ইচ্ছে করে করছে কি না তবে আমি বাথরুমে গিয়ে টর্চ জ্বালিয়ে দেখেছি লাল হয়ে গিয়েছিলো আমার পুরো মুখ।
শিলার এরুপ আচরণে মহা বিরক্ত হয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে আজ এর একটা বিহিত বের করবো।শিলা হয় তার চুল কে ভালোবাসবে নয়তো আমাকে।অফিস থেকে ফেরার পথে মোড়ের ফুলের দোকান থেকে একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে নিলাম।গোলাপ হলো ভালোবাসার প্রতি। এটি দিয়ে সহজেই মন ভালো করার পাশি যে কাউকে কথায় মানিয়ে নেওয়া যায়।বাসায় কলিং বেল দিতেই শাশুড়ি আম্মা দরজা খুলে দিলেন।
আমার বুকের হার্ট বিট বেড়ে গেলো মনে হলো।শাশুড়ি আম্মা কবে এলো।মানুষের শাশুড়ি শুনেছিলাম অনেক বেশি জামাই আদর করে কিন্তু আমার কপালে এক জল্লাদ শাশুড়ি পড়েছে।যিনি চুন থেকে পান কিছু হওয়ার আগেই বকাবকি করে মাথা খারাপ করে ফেলেন।রুক্ষমূর্তি চেহারা বানিয়ে জামাই কে হুমকি দিতেও তিনি দিধা বোধ করেন না।
আমি মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে তাকে সালাম দিলাম,
-আসসালামু আলাইকুম আম্মাজান।কেমন আছেন?
শাশুড়ি আম্মা আমাকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে নিলেন।তারপর মুখ বাঁকা করে বললেন,
—ওয়ালাইকুম সালাম।আলহামদুলি
ল্লাহ ভালো তুমি কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ। বলে
জুতা টা বাহিরে খুলে ঘরে প্রবেশ করে কাধ থেকে ব্যাগ টা নামানোর আগেই শাশুড়ি চেচিয়ে উঠলেন,
—জামাই বাবু মোজা পরে ঘরে ঢুকেছো কেনো!বিচ্ছিরি গন্ধ ওয়ালা মোজা টা বাহিরে খুলে ঢুকতে পারলে না!এক্ষনি তুমি মোজা এসে বাহিরে রেখে যাও,নয়তো ভালো হবে না।
আমি ভালো ছেলের মতো এসে মোজা খুলে জুতার ভেতর পুরে রাখলাম।এই সামান্য কথাটা কতো ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে বললো আমার শাশুড়ি,সোজাসাপটা মোজা খুলে যাও বললেই পারতো।
ডাইনিং রুমে এ এসে দেখি বৌ সোফায় বসে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে টিভিতে জি-বাংলার ” কিরণ-মালা, আর বকুল কথায়”চোখ ডুবিয়ে রেখেছে।আমি একটু কেশে আমার উপস্থিতি জানান দিয়ে কথায় মাধুর্য আর ভালোবাসা মেশানোর চেষ্টা করে বললাম,
-একটু রুমে আসবে?
বৌ আমার দিকে না তাকিয়েই বললো,
–কেনো,টেবিলে খাবার রাখা আছে খেয়ে নাও।
আমি একটু জোর গলায়,
-আরে আসো না।
এর মধ্যে শাশুড়ি আম্মা চেঁচিয়ে উঠলেন,
—এই কে রে এতো চিল্লাচিল্লি করে।
ডাইনিং রুমে এসে শাশুড়ি আমার দিকে তাকিয়ে আরো বড় গলায় বললেন,
—অহ, জামাই বাবু।তুমি এখনো ফ্রেশ হও নি।তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও নয়তো ঠান্ডা খাবার খেতে হবে।
রাগে গজ গজ করতে আমি রুমে চলে এলাম।কেমন শাশুড়ি আমার।মুখে তো কি সুন্দর করে ডাকে জমাই বাবু,আর কথা বলার সময় মুখ থেকে আগুন বের হয়।
খাওয়া শেষে বৌ কে রুমে ঢুকতে দেখে আমি ও দৌড়ে রুমে ঢুকলাম। ঢুকেই দরজা আটকিয়ে বাল্টিতে ভিজিয়ে রাখা গোলাপের তোড়া টা এনে বৌয়ের দিকে বাড়িয়ে দিলাম তারপর অনেক দিন আগে শিলার চাওয়া একটি আংটি তার হাতে পরিয়ে দিয়ে তার দু হাত নিজের হাতে রেখে বললাম,
-শিলা আমি তোনাকে ভালো বাসি অনেক বেশি ভালোবাসি।সারাদিন শুধু তোমাকেই ভাবি।তুমি ছাড়া আমার জীবনে দ্বিতীয় কোন মেয়ে নেই।এবং আমি সব সময় তোমাকে এভাবেই ভালোবাসবো তবে..
তবে বলে থেমে গেলাম আমি।শিলা এমন ভাবে তাকিয়ে আছে বোঝা যাচ্ছে সে খুব মনোযোগ দিয়ে কথা শুনছে। আমাকে চুপ করে যেতে দেখে শিলা বলে উঠলো,
–তবে কি?
-তুমি প্লিজ রাগ করো না।এবং তোমার চুল গুলো সামলে রেখো।
–কেনো!!আমার চুল আবার কি করলো?(অবাক হয়ে)
-কি করলো জানো না!তোমার চুলের জন্য আমার বেঁচে থাকা মুশকিল হয়ে গিয়েছে।
শিলা রাগি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।তাকিয়ে থেকে বললো,
–তোমার বেঁচে থাকা আমার চুল কিভাবে মুশকিল করলো?
-প্রতিদিন ভাতের মধ্যে তরকারির মধ্যে তোমার চুল পাই।টাই পরিয়ে দেওয়ার সময় তোমার চুল বিধে যায়,আর সেদিন রাতে তুমি চুল দিয়ে আমার মুখে কতো জোরে বাড়ি দিয়েছিলে!
এটা বলতেই ফিক করে হেসে দিলো শিলা। তার হাসির দিকে আমি তাকিয়ে থাকলাম।
সে কিছু বলার আগেই আমি আবার বললাম,
-তুমি ভাত রান্নার সময় চুল গুলো উড়না দিয়ে বেধে রাখলে এবং টাই পরিয়ে দেওয়ার সময় চুল খোপা করে রাখলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এবং তুমি চুল খোপা করলে তোমাকে দ্বিগুণ সুন্দর লাগে।
শিলা আস্তে করে “আচ্ছা” বলে আমার বুকে নিজেকে লুকিয়ে নিলো।আমি ঘন নিশ্বাস নিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরতেই দরজার ঠোকা পড়লো।বাহির থেকে শাশুড়ি আম্মা বলে উঠলেন,”জামাই বাবু দরজা খুলো!”।