ফারহানের ধারণা ছিল অবন্তী তার সাথে রিলেশনে পুরোপুরি লয়্যাল। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে অবন্তীর যে আচরণ তাতে এই ব্যাপারে ফারহানের যথেষ্ট সন্দেহ জেগেছে।
সন্দেহ জাগাটাই স্বাভাবিক। আজকাল অবন্তী ফারহানকে খুব কমই সময় দেয়। এটা ওটার কথা বলে ব্যস্ততার অজুহাত দেখায়। মেসেঞ্জারে এক্টিভ থাকলেও রিপ্লাই দেয় অনেক দেরীতে। আগে প্রতিদিন মিনিমাম তিনবার ফোনে কথা হতো তাদের, কিন্তু এখন কথা হয় প্রতি তিন দিনে ম্যাক্সিমাম একবার।
অবন্তীর লয়্যালিটি নিয়ে সন্দেহ জাগলেও ফারহান ছেলেটা নিতান্তই সাদাসিধে বলে এই ব্যাপারে কিছু বলেনা অবন্তীকে। অবন্তী যে অজুহাতই দিক না কেন, ফারহান সেটা সত্যি বলে মনে নেয়।
অবন্তী যে আসলেই অন্য দিকে ঝুঁকেছে, ব্যাপারটা সত্যি। শোভনের সাথে পরিচয় হওয়ার পর বলতে গেলে অবন্তী এখন ফারহানের চেয়ে শোভনকেই বেশী সময় দেয়। ফারহানের সাথে তার প্রতিদিন দেখা হয়না, কিন্তু শোভনের সাথে হয়। যে ব্যক্তি চোখের আড়ালে থাকে তারচেয়ে যাকে প্রতিদিন চোখে দেখা হয় তার প্রতি টান বেশী থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এবং ঠিক এভাবেই একটা রিলেশনে থাকা সত্ত্বেও অবন্তী জড়িয়ে পড়লো আরেকটা রিলেশনে।
এদিকে ফারহানও কম যায়না। অবন্তীর ব্যাপারে সে যে ডিপ্রেশনে ভুগছে সেটা কাটাতে ফেসবুকে ইদানীং এক মেয়ের সাথে ভাব জমিয়েছে সে। মেয়েটার নাম তারিন। যদিও ফারহান তারিনকে দেখেনি কখনো। অবন্তী যে সময়টাতে মেসেঞ্জারে এক্টিভ থাকা সত্ত্বেও ফারহানকে রিপ্লাই দেয়না সেই সময়টাতে ফারহান তারিনের সাথে মেসেজিং করে সময় কাটায়। এভাবে চলতে চলতেই ফারহান একদিন বুঝতে পারলো সে তারিনের প্রতি দূর্বল! এবং ঠিক এভাবেই অবন্তীর সাথে রিলেশন থাকা সত্ত্বেও ফারহান জড়িয়ে পড়লো আরেকটা রিলেশনে। কিন্তু ফারহান আর অবন্তীর কেউই কারোর সাইড রিলেশনের ব্যাপারে জানেনা।
পরদিন পহেলা বৈশাখ। তারিন প্রথমবারের মতো ফারহানের সাথে দেখা করবে বলেছে। দেখাও হলো সমুদ্র সৈকতে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে ঘুরাঘুরিও হলো। কিন্তু অবন্তীর ব্যাপারে ফারহান কিছুটা কনফিউজড। অবন্তীও নিশ্চয় কাল পহেলা বৈশাখের সময়টা ফারহানের সাথে কাটাতে চাইবে। কিন্তু এদিকে তারিন বলেই দিয়েছে যে সে কাল দেখা করছে।
অবশেষে সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ফারহান ফোন দিল অবন্তীকে।
মুখ কাচুমাচু করে বললো “বাবু, কাল কি আমরা ঘুরতে যাবো কোথাও? কাল না পহেলা বৈশাখ?”
অবন্তী নরম গলায় বললো, “বাবু আমার কেমন জানি জ্বর জ্বর লাগে। এই গরমে শুধু শুধু বের না হই। ঘোরাঘুরির জন্য দিন তো আর শেষ হয়ে যাচ্ছেনা বলো!
“তা অবশ্য ঠিক বলেছো। আমারও শরীরটা তেমন ভালো ঠেকছে না। আচ্ছা অন্য কোনদিন ঘুরতে যাবো আমরা!”
ফারহান ফোন রেখে দিল। এত সহজে বিষয়টা ম্যানেজ হয়ে যাবে সে ভাবেইনি। এখন নিশ্চিন্তে সে তারিনের সাথে ঘুরতে যেতে পারবে।
এদিকে অবন্তীও ভাবেনি যে এত সহজে ফারহানকে সে পাশ কাটাতে পারবে। এখন কালকের পুরো দিনটা সে শোভনের সাথে কাটানোর জন্য ফ্রি। শোভন বলেছে তাকে বীচে ঘুরতে নিয়ে যাবে। যে খুশী যার মতো!
পরদিন পহেলা বৈশাখে বিকেলে ফারহান ঘুরতে বেরুলো তারিনের সাথে, আর অবন্তী বেরুলো শোভনের সাথে। উভয়পক্ষেরই লক্ষ্য এক জায়গা, সমুদ্র সৈকত।
তারপর যা হবার তাই হলো। ফারহানরা বীচে হাঁটতে হাঁটতে একসময় সামনে পড়ে গেল অবন্তীদের! মুখোমুখি হতেই দুইপক্ষ চমকে উঠে থমকে দাঁড়ালো। ফারহান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো অবন্তীর দিকে, আর অবন্তী মুখ হা করে তাকিয়ে থাকলো ফারহানের দিকে। দুজনে এতটাই অবাক হয়েছে যে ফারহান তার সাথে থাকা তারিন আর অবন্তী তার সাথে থাকা শোভনের দিকে লক্ষ্য করতে ভুলেই গেল।
ভুলে না গেলে তারা দেখতে পেত শোভন আর তারিন রীতিমতো মারামারি লাগিয়ে দিয়েছে।
শোভন তারিনকে বলছে, “তুমি না বলছিলা তোমার কাজিনের বিয়ের শপিং এ যাবা? সমুদ্র সৈকতে কখন থেকে শাড়ী গয়না বিক্রি শুরু হলো?”
আর তারিন শোভনকে বলছে, “হারমজাদা তুই না বলছিলি তোর ডায়রিয়া হয়েছে? তোর তো শালা টয়লেটে থাকার কথা, তুই অন্য মেয়ের সাথে বীচে কি?”