ব্রেকআপ

ব্রেকআপ

পুষ্পর সাথে ঝগড়া করছি সম্ভবত হতে পারে তার সাথে অামার এটা শেষ দেখা। অামাদের মাঝে ভীষণ কথা কাটাকাটি হচ্ছে এক পর্যায়ে এই ডিসিশনে উপনীত হলাম ব্রেকঅাপ। দীর্ঘসময় ঝগড়ার পর দুইজনেই ব্রেকঅাপ করার ডিসিশন নিলাম। সেই মুহুর্তে হঠ্যাৎ করেই অামাদের মাঝে একটা লোক এসে বলতে লাগল।

— কখন থেকে অাপনাদের মাঝে তর্কাতর্কি দেখছি, অামি অাড়াল থেকে অাপনাদের সকল কথা শুনেছি অাপনারা ব্রেকঅাপ করেন ভালো। তবে তার অাগে অামার একটা গল্প শুনবেন? গল্পটা শুনার পর হয়তো অাপনাদের ব্রেকঅাপ করার ভূত মাথা থেকে কেটে যাবে। লোকটার প্রতি খুব রাগ হচ্ছিল। এমনিতে অামার গার্লফ্রেন্ড চলে যাচ্ছে উনি অাসছে গল্প শোনাতে। অামার গার্লফ্রেন্ড পুষ্প লোকটার গল্প শুনতে রাজি। তাই বাধ্য হয়ে অামাকেও শুনতে হবে।

লোকটি তখন বলতে শুরু করল। অাজ থেকে
ঠিক তিন বছর অাগে ইমন একটি মেয়েকে ভালবাসত। মেয়েটিও ইমনকে প্রচণ্ড রকম ভালবাসত। এতোই ভালবাসত যে ওর প্রচণ্ড

ভালবাসা একটা সময় ইমনের কাছে বিরক্ত মনে হচ্ছিল। অনেক বেশি বিরক্ত। তাদের প্রেমটা শুরু হয় এক বর্ষায়। বর্ষার মেঘলা বাদল দিনে ইমন অফিস যাচ্ছিল। হঠ্যাৎ করে তার গাড়ি স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। গাড়ি থেকে নেমে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে, সেই সময়ে হুট করেই বৃষ্টি নামল। বৃষ্টির পানিতে ইমন ভিজতে লাগল। হঠ্যাৎ অনুভব করল তার মাথায় বৃষ্টির পানি পড়ছে না। অবাক দৃষ্টিতে উপরে তাকিয়ে দেখতে পেল ছাতা। পিছন ফিরে তাকাতেই ইমনের চোখ চরকগাছ। একটা সুন্দরী মেয়ে তার মাথার উপড় ছাতা ধরে দাঁড়িয়ে অাছে, অফিসের তাড়াহুড়োয় ইমন সেদিন শুধু ছোট করে ধন্যবাদ দিয়েছিল।

এভাবেই গল্পের শুরু।

প্রতিটা সম্পর্কের শুরুতেই অগাধ প্রেম, ভালবাসা রোমান্টিকতা দিয়ে শুরু হয়। কিন্তু দেখা যায় কিছুদিন পর সেটা অার থাকে না। তাদের মাঝে ও তার ব্যতিক্রম কিছু হয়নি। মেঘলা! হ্যাঁ, মেয়েটির নাম মেঘলা। মেঘলা ইমনকে এতো বেশি ভালবাসতো, এতো কেয়ার করত। এক পর্যায়ে ইমন সেটা নিতে পারছিল না। মেঘলার চাওয়া ছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠেই তাকে ফোন করতে হবে, বাথরুমে যাওয়ার অাগে, ফ্রেশ হওয়ার অাগে, খাওয়ার অাগে, অফিসে যাওয়ার অাগেও তাকে ফোন করে বলতে হবে। অাবার অফিস থেকে ফিরে, ঘুমানোর অাগে ফোন দিতে হবে অার না হয় মেঘলা নিজ থেকে ফোন করে ঝারি দিতো। ইমন প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যেতো মেঘলাকে খুশি রাখতে।

এভাবেই কেটে গেলো কয়েক মাস।

অফিসের কাজের ব্যস্ততায়। একদিন মেঘলাকে
ফোন দিতে পারেনি। সারাদিন অফিস করে অনেক টায়ার্ড যেই একটু ঘুমাবে তখনি মেঘলার ফোন। ফোন সাইলেন্ট করেই ইমন ঘুমিয়ে পড়ে এরপরই শুরু হয় মেঘলার সন্দেহ। সম্পর্কের মাঝে যখন সন্দেহ নামক শব্দটা প্রবেশ করে তখন সম্পর্কটার প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে যায়। মেঘলা ভাবতো ইমন তাকে ভালবাসে না। কিন্তু ইমন মেঘলাকে পচণ্ড ভালবাসে তবে তাঁর এই অতিরিক্ত মাত্রায় কেয়ারিংটা ইমন নিতে পারছিল না। একদিন এসব নিয়েই অনেক ঝগড়া হয়। সেই দিনটি ছিল তাদের রিলেশনের জন্য সবচেয়ে বাজে দিন। একটি রেস্টুরেন্টে হাজির হয় মেঘলা ও ইমন। সেদিনও বৃষ্টি ছিল। বৃষ্টির কারণে, পৌঁছাতে ইমনের অাসতে দশ মিনিট লেইট। মেঘলা ভাবছে, ইমনের লেইট করে অাসা কী প্রমাণ করেনা রিলেশনের প্রতি ইমন সিরিয়াস নয়। ইমন অাসতেই তাদের মধ্যে অনেকক্ষণ ঝগড়া হয়। ঝগড়ার কারণ, ইমনের লেইট করে অাসা। মেঘলা সেদিন প্রচুর রেগেছিল। রাগ করার কারণ যথার্থ। অামি যাকে ভালবাসি হঠ্যাৎ করে তাঁর পরিবর্তন। মেঘলার অাচরণে ইমনও রেগেছিল। রাগ অভিমানে এক পর্যায়ে ইমন বলেছিল ব্রেকঅাপ। রাগ অভিমানে মেঘলা তাকে

ফেরায়নি। মেঘলা মেনে নিয়েছিল ব্রেকঅাপ। বরাবরের মতো, অারো একবার প্রমাণ হলো, রাগ অভিমান কখনোই ভালো কিছু বয়ে অানে না। ইমন বারবার মেঘলার চোখের দিকে তাকাচ্ছে অার ভাবছে মেঘলা অাবার সরি বলে সবকিছু ঠিকটাক করে নিবে। বিপরীতে মেঘলার ভাবনা, ইমন তাকে ফেরাবে। সবকিছু অাগের মতো ঠিক করে নিবে। কিন্তু তা হয়নি। বাইরে ঝুম বৃষ্টি, রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে ছাতা খুলে দুই জন

দুই দিকে চলে গেল। পৃথিবী কতো অদ্ভুদ? অদ্ভুত পৃথিবীর মানুষগুলো। এক বর্ষায় মেঘলা ইমনকে তার ছাতার নিচে ঠাঁই দিয়েছিল। সেদিন ইমনের কাছে ছাতা ছিল না। তবে অাজ দু’জনের কাছেই ছাতা রয়েছে। দুইজন অাজ দুই পথের যাত্রী।

ব্রেকঅাপের পর ইমন বুঝতে পারল মেঘলা তাঁর কতোটা জায়গা জুড়ে ছিল। তার কেয়ারিং ভালবাসা, ঝগড়া মিস সবকিছুই ইমন মিস করছিল। ভালোবাসা তো এমনি হওয়ার কথা। রাগ অভিমান খুনসুটিতে মেতে থাকবে। তাদের ফোন বেজে ওঠা মানে এইতো বুঝি ইমন ফোন করেছে, এইতো মেঘলা ফোন করেছে। তাদের ইগুর পরিমাণ এতোই ছিল কেউ কাউকে সরি তো দূরে কোন টেক্মটও করেনি। অপরদিকে ইমনকে হারিয়ে বুকে অজস্র কষ্ট নিয়েই প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার যুদ্ধ করছে মেঘলা। এইতো সব ঠিক হয়ে যাবে। এইতো এই ভাবনায় ইমনের অপেক্ষয়মান মেঘলা। ব্রেকঅাপের ছয় মাস পর মেঘলা তার বাবার পছন্দের একটি ছেলেকে বিয়ে করে নেয় অার ইমন উদ্দেশ্যহীন ছেলের মত ঘুরে বেড়ায়। যখনি একে অপরের কথা মনে হয় তখনি তাদের বুকের বাম পাশটায় চিনচিন ব্যাথা অনুভব করে। বিয়ের পর যেখানে স্বামীকে নিয়ে বেড়াবে, ঘুরবে সেখানে বারবার মেঘলাকে ইমনের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। গভীর রাত্রে ইমন মেঘলার ছবির দিকে তাকিয়ে ভাবছে হয়তো মেঘলাও তাই করছে। বিয়ের তিনমাস পর মেঘলা তাঁর প্রাক্তন ইমনকে একটা চিঠি লিখে যেখানে লেখা ছিল।

প্রিয় ইমন,
তুমি কেমন অাছো? তবে অামি কিন্তু ভালো নেই। তোমার সাথে সেদিন সত্যি এমন করা উচিত হয়নি তবে ভেবেছিলাম তুমি অাসবে কিন্তু তুমি অাসোনি। বড্ড মিস করি তোমায়। ভালো থেকো ভালোবাসা।

মেঘলার চিঠি পেয়ে ইমন তাঁর দু’চোখের জল
ছেড়ে অাকাশপানে তাকিয়ে থাকে। নিজেদের ছোট একটি ভুলে চার অক্ষরের ব্রেকঅাপ নামক শব্দের কাছে হার মেনেছিল মেঘলা ও ইমনের ভালবাসা। একে অপরের স্মৃতি নিয়ে হয়তো সারাজীবন পার করে দিতে পারবে কিন্তু সুখি হতে পারবে না। ব্রেকঅাপ নামক একটা শব্দ জীবন থেকে সুখ নামক শব্দটা কেড়ে নিল।

গল্পটি বলা শেষ করতেই দেখতে পেলাম। অামার সাত বছরের নাতনির চোখে জল। এতোসময় গল্পটি বলছিলাম অামার নাতনির সাথে। অাজ থেকে ঠিক ত্রিশ বছর অাগে অামি ও পুষ্প যখন ব্রেকঅাপ করব ঠিক সেই সময়েই ইমন নামের ছেলেটা এসে তার জীবনে ঘটে যাওয়া গল্পটা বলে অার তাদের গল্প থেকে শিক্ষা নিয়ে অামরা বুঝতে পারলাম। ইমন ও মেঘলার মতো ভুল পথে অামরাও হাঁটছিলাম। অার সেদিন নিজেদের ভুল শুধরে সারাজীবন এক সাথে থাকার শপথ করি। সেদিনের প্রতিজ্ঞা বদ্ধের পর থেকে গত ত্রিশ বছর অামরা একত্রে। এক ছেলে সন্তান, ছেলের বউ ও নাতনি নিয়ে পুষ্প ও অামার সংসার। অাজ অামাদের ত্রিশতম বিবাহ বার্ষিকী। সাত বছরের নাতনি জানতে চেয়েছিল তার দাদা-দাদির গল্প।

এতো বছর পর এসেও মনে ভাবনা। সেদিন যদি
পুষ্পর সাথে ব্রেকঅাপ করতাম তাহলে হয়তো
পুষ্পকে অার পাওয়া হতো না। ব্রেকঅাপ নামক একটি ভুলে ইমন মেঘলার মতো অামাদের জীবন থেকে সুখ নামক বস্তু হারিয়ে যেতো। তবে ত্রিশ বছর পর যখন ইমন মেঘলার গল্পটির কথা মনে হয় তাদের জন্য নিজের অজান্তেই চোখে জল চলে অাসে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত