মাঝরাতে রং নম্বর

মাঝরাতে রং নম্বর

রাত দুইটা। হঠাৎ ম্যাসেজের টিউনে ঘুম ভেঙে যায়। আমার হাসবেন্ডের ফোনে ম্যাসেজ এসেছে। ভাবছি কোন এম বির অফার টফার এসেছে বুঝি। আবার যেন কি মনে করে ফোন টা হাতে নিলাম। ম্যাসেজ দেখে আমার চোখ ছানাবড়া। ম্যাসেজে লেখা ছিলো,

-‘ প্লীজ একটু ছাদে আসো।’
আমি যথারীতি ঘামতে শুরু করলাম। পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছে আমাদর। দুই বছরের সংসার। লোকটা যথেষ্ট ভালো। তাঁর সম্পর্কে এমন কিছু কল্পনাও করতে পারি নি।

নিজেকে সামলে ম্যাসেজ টা ডিলিট করলাম,আর ম্যাসেজ যে নম্বর থেকে এসেছে ওইটা ডায়েরি তে টুকে রাখলাম।
পা টিপে টিপে আস্তে আস্তে ছাদে গেলাম। আমরা থাকি পাঁচ তলায়। সাত তলার ভাবি ছাদে চুল ছেড়ে দাঁড়ানো।
আমার আর কিছু বুঝতে অসুবিধা হলো না। ভাবি আমাদের বাসায় মাঝে মাঝে আসে। কিন্তু ভুলেও কখনো এমন টা কল্পনা করি নি। চোখ থেকে আষাঢ়ের বর্ষনের মতো অশ্রু ধারা প্রবাহিত হচ্ছে। ভাবি আমায় দেখে নি। আমি চুপ-চাপ ছাদ থেকে নেমে আসি।

ভাবির হাসবেন্ড বিদেশ থাকে। উনি শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর আর ছেলে নিয়ে এখানে থাকে।
রুমে এসে ঠাস করে বিছানায় শুয়ে পরি। এত দিনের বিশ্বাস-আস্থা মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে শেষ হয়ে গলো। উনার উপর প্রচন্ড রকমের ঘৃন্য হচ্ছে। ছোট বেলা থেকে খুব বেশী রাগ। রাগের সময় একদম আউট অফ কন্ট্রোল। রাগে,জিদে,ক্ষোভে,ক্ষিপ্ত হয়ে কান্নার সাউন্ড বাড়িয়ে দিলাম।নিজের চুল নিজে টানতে লাগলাম। উনাকে কাঁচা চিবিয়ে খেতে ইচ্ছা করছে।

কান্নার শব্দে উনার ঘুম ভেঙে যায়। হঠাৎ ঘুম ভাঙার ফলে কিছুই আচ করতে পারছেন না। গোবর গনেশের মত ফ্যালফ্যাল নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।অনেক ক্ষন পর ঘুম জড়ানো কন্ঠে উদ্বিগ্ন বলল,
-‘কি হয়েছে তোমার? কোন প্রোবলেম?’

নিজের রাগ টা আর চাপিয়ে রাখলে পারলাম না। রাগে থরথরিয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল,

-‘ছিঃ! তোর মত একটা ক্যারেক্টারলেস মানুষের সাথে সংসার করে আসছি এতদিন। ভাজা মাছ মনে হয় উল্টে খেতে জানে না প্রতারক।’
উনি চোখ ঢলতে ঢলতে বলল,

-‘তুমি ঠিক আছে তো? জ্বীন-ভূতের আচর লেগেছে নাকি? এত রাতে চেঁচিয়ো না। লোকে হাসবে।’
উনাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে টেনে রুমের বাইরে বের করে ভেতর থেকে ছিটনাকি লাগিয়ে দিয়েছি। বাইরে থেকে দরজা নক করে যাচ্ছে। ওসবে কান দিলাম না। বুকের ভেতর ফেটে যাচ্ছে কষ্টে। শীতের রাত উনি বাইরে দাঁড়িয়ে শীতে কাঁপছে। দরজা জোরে জোরে ধাক্কা দিতে লাগলো।

সারা রাত কেঁদেই কাটিয়ে দিলাম। আর উনি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। সকালে উঠে কাপড় চোপড় সব গুছিয়ে নিয়ে দরজা খোল্লাম। বাবার বাসায় চলে যাবো।

দরজা খোলার সাথে সাথে উনি খপ করে আমার হাত ধরল। চোখ লাল হয়ে আছে।পাশের বাসার সেই ভাবি সকাল সকাল বাচ্চা নিয়ে আমাদের দরজার সামনে হাজির। ভাবি কে দেখে উনি আমার হাত ছেড়ে দিলো। ভাবি আমায় উদ্দেশ্য করে হেসে বলল,

-‘কোথায় যাচ্ছেন এত সকাল সকাল? ভাইয়ের সাথে জগড়া হয়েছে নাকি?’
উনার এমন ন্যাকামো মার্কা কথায় মেজাজ টা আরও খারাপ হলো। ইচ্ছে করছে গালে কষিয়ে কয়টা চড় দেই। চোয়াল শক্ত করে বললাম,
-‘ তা দিয়ে আপনার কি দরকার? আমাদের বিষয়ে আপনায় নাক গলাতে কে বলল? নির্লজ্জ মহিলা।’

উনারা দুই জন আমার দিকে অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। দম নিয়ে বললাম,
-‘একটা মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়ের সংসার ভাঙতে চান। মিনিমাম লজ্জা টুকু নেই। ভাবছেন আমি কিছুই বুঝতে পারব না?’
ভাবি বলল,

-‘কি আবল -তাবল বকেন?’
ভাবির কথা শেষ না হতেই থামিয়ে দিয়ে আমার হাসবেন্ড বলল,
-‘কালকে রাত থেকে এমন অদ্ভুধ আচরন করছে। প্লীজ কিছু মনে করবেন না। কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছি না।’
উনি আমায় হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে গেলো। আমি চেঁচিয়ে বললাম,
-‘ছাড়ুন আমায়। যেতে দেন। বন্ধ করেন এসব নাটক।’
উনি তীব্র চাপা কন্ঠে বলল,
-‘প্রোবলেম কি তোমার?’
এবার আর চুপ থাকতে পারলাম না। বললাম,

-‘ঘরে বউ থাকতে অন্য মেয়ের সাথে….. ছিঃ। কালকে রাতে তোমার ফোন ম্যাসেজ এসেছে ছাদে যাওয়ার জন্য। ছাদে গিয়ে দেখি ভাবি দাঁড়ানো। এর পর তো আর কিছু বুঝার বাকী থাকে না।’
উনি শান্ত কন্ঠে বলল,

-‘ম্যাসেজ কোথায়? আর ফোন নম্বর বলো।’
-‘ম্যাসেজ ডিলিট করে দিয়েছে। আমায় আর ভূগোল বুঝাতে হবে না। আমার সব বুঝা হয়ে গেছে।’
আমি শেষে ফোন নম্বর টা দিলাম উনাকে। ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে বলল,
-‘কে?’
উনি বলল,

-‘কালকে রাতে এ নম্বরে কোন ম্যাসেজ দিয়েছেন?’
মেয়েটা ইতস্তত বোধ করে বলল,
-‘আসলে আমার বয়ফ্রেন্ডের নম্বর আর এই নম্বর টা সেইম। লাস্টে শুধু একটা ডিজিট ভিন্ন। ভুলে ম্যাসেজ চলে গেছে।’

-‘দয়া করে বয়ফ্রেন্ডের নম্বরটা ফোনে সেইভ করে রাখেন। আর ভবিষ্যৎ এমন ভুল করবে না।’
ফোন কেটে উনি বলল ভাবি ছাদে যেতেই পারে। উনার কাছে সরি বলো।
আমি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছি!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত