ভালবাসা এমনি হয়

ভালবাসা এমনি হয়

(১)
দৈনিক অফিস যাওয়াটা কেমন জানি আর্ট’এ পরিণত হয়েছে।এদিকে বস্ তো জলীল ক্যাপটা।

চাকরিতে জয়েন করার পর থেকে, আজ পর্যন্ত তার ব্যাবসায় অনেক উন্নতি সাধন হয়েছে।তার মূল ফল, আমি।

তিনটা মানুষের সমান কাজ করিয়ে নেয় আমাকে দিয়ে।তাতে কিছু মনে করি না, কিন্তু এ তিন বছরে একটি প্রোমোশন হলো না।

এদিকে বাসায় আম্মু’র কাছে বকা শুনতে শুনতে কানটাও ঘ্যাচরা হয়ে গেছে।বকা করলেও কিছুই মনে হয় না।মনে হয় ইংলিশ গান চলছে।
.
অফিস’টা ছাড়ছি না একজন ব্যাক্তির কারনে।তার চারকরির পয়েন্ট বলতে, তিনি অনেক আগের মানুষ।বয়স নাগাত, ৫০ হবে।

কম্পিউটার তেমন বোঝে না, এদিকে শরির এ বোধ হয় মাংস নেই বল্লেই চলে।অসুস্হতা কয়েক বছর ধরেই।

বস্ অবশ্য রহমত সাহেব’কে রাখতে চাইনি।

কিন্তু ওনার পরিবার এর অবস্হাও তেমন ভালো না।চাকরি করে তেমন কোন স্যালারি পান না।এই ৮ হাজার টাকা।

এতে কোন এক টানাটানি মাঝ দিয়ে যায়।বাসার মেম্বার বলতে শুনেছিলাম একটা মেয়ে আছে, এবার ইন্টার ফাষ্ট ইয়ার।

ওই লিপষ্টিক, নেলপলিশ, ফ্রেশ ওয়াশ ইত্যাদি নাকি কিনে দিতে হয় প্রায় মাসেই।

এদিকে যদি রহমত আলী এসব কিনে দেওয়া ব্যাপারে রাগ করে,তাহলে তার মেয়ে সব কিছু ভাংচুর করে।কথায় আছে, ভাত পায় না চা খায়।

এই মেয়েটি তেমনি, বাবা’র কথা কখনও চিন্তা করে না,বরং আরো তাকে সব সময় চিন্তায় রাখে।বাবার খেয়াল রাখার সময় তার কাছে নেই।

বেতন পেলে অর্ধেক টাকা তার পেছনেই যায়।নিজেস্ব বাসা বলে,বাসা ভাড়া’র টাকা বেঁচে যায়।নয়তো রহমত সাহেব’র পথে বসে যেতো।

তবুও এই মেয়েটি তার পথ বুঝবে না।
.
এই দিয়ে রহমত সাহেব ৩ বার রিকুয়েস্ট করছেন,তার চাকরিটা যেন না যায়।
অবশ্য রহমত সাহেব’র জন্য আমি এই কোম্পানি তে জব করি।মায়া হয় যখন বলে,
–“বাবা তোরিয়, তুমি তোমার বস কে একটু বুঝাও না, তিনি যেন আমাকে চাকরি থেকে বের করে না দেয়।তুমিত সবই জানো।
‘আমি তখন শুধু তার মায়াবী মুখ থেকে বের হওয়া আর্তনাদধ্বনি শুনতে পেতাম।বড্ড মায়া লাগত।তাই বস কে শতো বুঝিয়ে রাজি করাতাম।
বস সব সময় আমার নির্দেশনামা নিয়ে চলতো।আমি নিজের কোম্পানি মনে করে সাজেশন দিতাম।বস আমাকে অনেকটাই বিস্বাস করতো।

তাই রহমত সাহেব’র কাজগুলা আমিই করে দিতাম, তাতে বস কিছু বলতো না।এই ব্যাক্তির মুখের দিকে চেয়েই চাকরিটা ছাড়ছি না।
.
(২)
রাতে না খেয়েই শুয়ে পড়েছিলাম, অফিস এর কিছু ডুকুমেন্ট রেডি করতে হলো।

আমার তেমন সময় লাগেনা, কিন্তু রাতে যখন কাজ শেষ করে ঘুমাতে যাবো তখন হঠাৎই ফোন’টা বেজে উঠল।

স্কিন এ তাকিয়ে দেখি,রহমত আলীর ফোন।আমি তখনই বুঝতে পারলাম, তার কোন কাজ করে দিতে হবে।

তাই ফোন’টা ধরলাম,এবং অপাশ থেকে মেয়ে কন্ঠে,ঠান্ডা গলায় ভেষে এলো,
–“আচ্ছা আপনার নাম কি তোরিয়?
‘আমার আন্দাজে বলল,”এটা রহমত সাহেব’র মেয়ে হবে।তাছাড়া তো আর কেউ নেই।

কিন্তু আমাকে কেন ফোন করেছে সে?রহমত সাহেব’র কিছু হয়েছে নাকি? কৌতহল বসত, তার প্রশ্নের উওর না দিয়ে তাকে বললাম,
–“আপনার বাবা ঠিক আছে তো? তার কিছু হয়নি তো?
–“আমার প্রশ্নের উওর আগে দিন।
‘এ কেমন মেয়ে? তার বাবা অসুস্হ না কি সেটা জানার জন্য তাকে বলছি।

আর তার কাছে সেটা কি ইন্টপ্রোটেন্ট মনে না হয়ে, আমি তোরিয় না কি সেটা ইন্টপ্রোটেন্ট হলো? আজব।

এসব চিন্তা বাদ দিয়ে আমার উওরটাই দিলাম, নয়ত এই নিয়ে ঝগরাও করতে পারে।
–“হ্যাঁ আমি তোরিয়।এবার আপনার উওরটা দিন?
–“হুমম বাবা কিছুটা অসুস্হ।বাবা আপনাকে ফোন করতে বলল,তাই করলাম।কিছু কথা বলব?
–“জ্বী বলুন।
–“বাবার কাছে দেখলাম কিছু ডুকুমেন্ট।তিনিতো অসুস্হ।

আর ডুকুমেন্টগুলা আর্জেন্ট, জমা না দিতে পারলে চাকরিটা এবার হয়ত আপনিও বাঁচাতে পারবেন না।তাই…..
–“বুঝতে পেরেছি।আচ্ছা আপনি ডুকুমেন্টগুলো ফাইলে রেখে দিন।আমি আসছি।ও হ্যাঁ বাসার সামনে ফাইল নিয়ে দাড়িয়ে থাকবেন।

সোজা ১০ মিনিট পর।আমি গাড়ি নিয়ে এসে নিয়ে যাচ্ছি।
–“ওকে, আমি ফাইলগুলা রেডি করে বেলকনিতে দাড়িয়ে আছি, আপনি আসেন।
.
ঘুমটা আর হলো না তখন।রাত প্রায় ১১ টা হবে।রওনা দিলাম।বাসাটায় অনেকবার রহমত আলীকে ড্রপ করেছি।তাই আর কি চিনি।

পৌছতে আধা ঘন্টা টাইম লাগল।গাড়ি থেকে নেমে দেখি রহমত আলীর মেয়ে ফাইল নিয়ে দাড়িয়ে আছ, বেলকনিতে।

আমি তাকে ইশারায় নিচে ফাইল নিয়ে আসতে বল্লাম, কিন্তু সে তার ইশারায় বুঝালো”তার বাসায় তার আব্বু আমাকে যেতে বলছে।

আমি না করলাম।সে আবার রিকুয়েস্ট করল।অনেকবার রিকুয়েস্ট করার পর গেলাম।

রহমত সাহেবও অনেকবার রিকুয়েস্ট করেছিলো, আমি যাইনি।
.
ভেতরে ঢুকতেই কিছুটা অবাক করে দিলো আমাকে।মনে হলো পরিপূর্ণ তাদের এক সময় জীবন জাপন করতো।

বাসায় কোন কিছুর অভাব নেই।সবই আছে।

সোফা, টিভি, ডাইনিং টেবিল ইত্যাদি।সব কিছুই দামি।আমার একটু কৌতহল, সবই তো আছে তাদের।রহমত সাহেব তাহলে কি আমায় সব মিথ্য বলল?
তার পর রহমত আলীর রুমে গেলাম।একই অবস্হা।চার দিকে চেয়ে সব দেখছিলাম।তখনই বিছানা থেকে রহমত আলী উঠতে চেষ্টা করল।

আমি তাকে বাধা দিয়ে বললাম,
–“থাক উঠতে হবে না।আপনিত অসুস্হ।
‘রহমত আলী হয়ত বুঝতে পেরেছে, কেন আমি চার দিকে চেয়ে কি দেখছি এবং কি ভাবছি।তাই তিনি আমাকে বলল,
–“একটু অবাক হচ্ছ বাবা?অবাক হওয়ারই কথা।আমার আগে নিজেস্ব কোম্পানি ছিলো, এখন নেই।এইসব তখনকার।
‘কিছুটা আন্দাজ আসল তার কথায়।তবে মনে আরেকটা প্রশ্ন মাথা চারা দিলো।কৌতহল হলো”কেন তারা এমন অবস্হায় এসেছে?’

মনটার প্রশ্নের উওর জানাতে রহমত সাহেব কে প্রশ্ন করলাম,
–“আগে সবই ছিলো, কিন্তু এখন কেন নেই?
–“অন্য একদিন সব বলব বাবা, তুমি আমার কাজগুলো করো।
‘তার পর রহমত সাহেব তার মেয়েকে বল্লেন,
–“মা কবিতা? তোরিয় কে চা নাস্তা দাও?
–“আচ্ছা বাবা দিচ্ছি,তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।
‘তার পর কবিতা আমাকে বলল,
–“আসুন, গেষ্ট রুমে চলুন?
–“ও হ্যাঁ চলুন।
‘তার পর গেষ্ট রুমে গেলাম।কিন্তু রুমে ঢুকে যা বুঝলাম এটা কবিতার রুম।তাহলে গেষ্ট রুম এটা নয়?

কেন এমনটা করল? কবিতা আমাকে রুমে বসতে বলো, চা নাস্তা আনতে গেছে।

সে আসুক তাকে জিজ্ঞাসা করবো, কেন তার রুমে আমাকে মিথ্য বলে আনল।
.
কিছুক্ষন পর কবিতা আসল, রুমে ঢুকতে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম,
–“এটা কি গেষ্ট রুম?
–“না এটা আমার বেড রুম।
–“আপনি তাহলে তখন কেন বললেন, যে গেষ্ট রুমে চলুন?
–“গেষ্ট রুমে বসেই আব্বু কাজ করেন।তার কম্পিউটার ও সেখানে।কিন্তু সেখানে আপনাকে নিলাম না কেন জানেন?

….গেম খেলতে গিয়ে উইন্ডোজ পরেছে।
‘লাষ্ট কথাটা বলার সময় মনে হলো, কবিতা লজ্জা পেয়েছে।তাইত মাথাটা নিচু করে ফেলল।
কিন্তু কম্পিউটার এর উইন্ডোজ?
কবিতাকে তখন বললাম,
–“তাহলে আমি কাজ করব কি দিয়ে?
–“আমার বেড রুমে এর জন্যইত এনেছি, আমার ল্যাপটপ দিয়ে কাজ করবেন।সব কিছু এই পেনড্রাইভ এ আছে(পেনড্রাইভ হাতে নিয়ে)।
‘এখন সব কিছু ক্লিয়ার।
চা নাস্তা খেয়ে কাজ এ লেগে পড়লাম।
আমি কাজ করছি, আর কবিতা এদিকে বাচ্চাদের মতো ফোনে গেম খেলছে।সেটাও আমার ফোনে।
ফোনটা যখন চাইলো,তখন মনে হলো আমি তার অনেক চেনা।
আজিব এই মেয়েটা।একটু বুঝে কম মনে হয়।তাইত প্যারায় রাখে রহমত সাহেব কে ।
কাজ শেষ করলাম,রাত ১২ নাগাদ হবে কিম্বা তারও বেশি।বস্ তেমন কাজ দেইনি রহমত সাহেব কে ।

জানেও তেমন কাজ পারে না।তাই হয়তো দেননি।
কাজ শেষ করে কবিতা’কে থেকে ফোন চাইতে যাব।তখন দেখি সোফায় সে ঘুমিয়ে পড়েছে।
এখন না বলেতো যেতেও পারব না।তাই কবিতাকে ডেকে তুল্লাম।
এবং সেখান থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম।
যখন কবিতাকে বাই বললাম।তখনই মুখের ওপর ঠাস করে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।
আজব…..
.
(৩)
বাসায় এসে ঘুম দিয়ে এইত উঠলাম।মায়ের কান ধরায়।মা খুব রেগে গিয়েছিলো, তাই কানটা ধরেছে।
আসলে আদরের বাদর।কখনও মারেনি আমাকে মাই সুইট আম্মু।কিন্তু কান ধরায় উঠে ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখি ১০টা বাজে।

আমার চোখ ত চোখের জায়গায় ছিলো না, ১১টার মধ্যে ফাইল জমা দিতে হবে।আজ বস আমাকে এবং রহমত সাহেব ‘কেও বের করে দিবে।

আমার দুঃখ নাই চাকরি যাওয়াতে।দুঃখটা রহমত সাহেব কে নিয়ে।বেচ্যারা অনেক কষ্ট পাবে।তাই না খেয়েই রওনা দিলাম।

মা এর জন্য অবশ্য একটু রাগ করল।তাতে কি আমার আম্মুতো।ঠিক রাগ ভাঙাব, অফিস থেকে এসে।
.
অফিস গিয়ে পৌছালাম ১১:৩০ মিনিট এ।জ্যাম এ আধা ঘন্টা পুরাই মাটি।ফলে দুজনের চাকরি।
ফাইলটা নিয়ে গম্ভির ভাবে হেটে চলেছি।সবাই ব্যাস্ত কাজে।এই ফাকে লুকিয়ে বস এর রুমে ঢুকলাম, আস্তে করে নক করে বললাম,
–“বস আসতে পারি?
‘এই বলেই আল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ করছি, কি না কি হয়।কিছুক্ষন পর ভেতর থেকে উওর আসল,
–“ও মহা পুত্র, আসো আসো, তোমার কপাল দেখছি খুব লাক্কি।
‘এটা বিপদ এর লক্ষন মনে হচ্ছিলো।কারন এমন ভাবে বস’রা কথা বলে তখনই, যখন তাদের কোন বাঁশ দেয় কোন কর্মচারী।
কিন্তু কিছুক্ষন বস এর সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারলাম, আমারা দুজনই আসঙ্কা মুক্ত।যার সাথে ফাইল নিয়ে মিটিং ছিলো, সে আজ আসেনি।

কপাল ভালো বইকি।তা না হলে এমনটা হয়।
যাই হোক ফাইল জমা দিয়ে বস এর রুম থেকে চলে আসছিলাম, তখন বস বলে উঠলেন,
–“এই যে তোরিয় আহমেদ! রহমত সাহেব এর কি হয়েছে? তার ফাইলত সাবমিট করল না?
–“বস ওনার শরির খারাপ তাই আসতে পারেনি।আর ওইখানে রহমত সাহেব এর ফাইলও আছে।
–“ও আচ্ছা ঠিক আছে।
বস এর রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে ঢুকলাম।গিয়েই কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে বেশ হারে চোখ বুজেছি।
.
চোখ খুল্লাম বস এর ডাকে।আমি তাকিয়ে দেখি পুরো অফিস এর মানুষ আমার রুমের বাইরে দাড়িয়ে।

কিন্তু কেন? ঘটনা কি? বস এসে গম্ভির গলায় বলল,
–“আরে মিয়া ঘুমাবে আমায় বল্লেই পারতে, আমি ছুটি দিতাম।তাই বলে রুমে লক করে ঘুমিয়ে পড়ছো?

তোমাকে একটা কাজে ডেকে পাঠানোর জন্য হেদায়েতুল কে পাঠিয়েছিলাম।সে তোমার রুম লক দেখে ভাবছে তোমার কিছু হয়েছে।

আমার কাছে কথাগুলো বলার পর, আমি তোমাকে ফোন দেই।৫০ বার ট্রাই করেও কাজ হয়নি।ফোনটা তুল্লে না।তখন আমারও চিন্তা হচ্ছিলো।

তাই অন্য চাবি দিয়ে তোমার রুম খু্ললাম।আরে মিয়া এটা ঘুম নাকি অন্য কিছু।
‘আমাকে আমারই আবুল মনে হতে লাগল।এটা সত্যিই কি ঘুম?এমনটা তো কখনও হয় নি?
ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি ৭০ বার মিস কল।বস ৫০ অন্যরা ২০।
তার পর সবাই চলে গেলো।ভালো লাগছিলো না তাই বাসায় চলে এলাম।
বাসায় এসে খেয়ে, আম্মুকে সব বললাম।আম্মুতো হেসে পুরো বাসা মাথায় তুলে ফেলল।
অতঃপর আম্মুও আমায় আবুল উপাধি দিলো।
.
রাতে ডাইরী লিখতে বসব ভাবছি।আগে প্রায়ই ডাইরী লিখতাম, এখন সময় পাই না বলে লেখা হয় না।

ডাইরীতে তেমন কেউ লুকিয়ে নেই।আমিতেই অর্ধেক ভরে আছে।ইচ্ছা আছে বাকি অংশ অন্য কারো জন্য লিখব।
ডাইরী লিখতে বসেছি।কি দিয়ে শুরু করব ভাবছি।

সেই মুহুর্তেই ফোনটা বেজে উঠল,অচেনা নাম্বার,ফোনটা ধরতেই অপাশ থেকে বয়স্ক একজন লোকের কন্ঠে ভেঙে আসল,
–“বাবা তোরিয় কবিতা অজ্ঞান হয়ে গেছে,তুমি প্লিজ একটু আসো।রক্তও পড়ছে অনেক।কি করব বুঝতে পারছিনা।
‘কথাগুলো কান্না স্বরে বলছিলেন তিনি।আর এটা রহমত সাহেব, এটা কবিতা বলার পর টের পেলাম।
আমি কিছু না বলে সময় নষ্ট করলাম না।স্রেফ গাড়ি নিয়ে রহমত সাহেব এর বাসার দিকে রওনা দিলাম।

রাস্তা জ্যাম ছিলোনা বলে খুব তাড়াতারিই সেখানে পৌছে গেলাম।গিয়ে দেখি কবিতা তার রুমে শুয়ে আছে, এবং তার পাশে তার বাবা।

হাত কাপর দিয়ে বাধা।কিন্তু রক্ত তবুও বের হচ্ছে।তার বিছানার খানিকটা ভিজে গেছে।

আমি কোন কিছুর অপেক্ষা না করে কবিতাকে হসপিটালে নিয়ে গেলাম।
তার পর কবিতাকে ইমারর্জেন্সিতে নিয়ে যায়ওয়া হলো।
এদিকে রহমত সাহেব কাঁদছেন।কারন তার একটি মাত্র মা মরা মেয়ে।তার সেষ সম্বল তার মেয়ে।
আমি রহমত সাহেব কে বললাম,
–“কবিতা’র কি করে এমনটা হলো?
‘রতমত সাহেব কেঁদে উওর দিলেন,
–“কম্পিউটার এর উইন্ডোজ এর জন্য বকা দিয়েছিলাম বলে, রাগ করে এসব করেছে।
‘আমি শুধু ভাবছি, কেন এই মেয়ে এমন করছে?
তবে মায়ের ভালোবাসা পাইনিতো, তাই এমনটা করে।আর আগেত তারা এমন ছিলেন না।বিত্তবানই ছিলেন বটে।তাই আগের অভ্যাস পাল্টায় নি।
.
(৪)
আধা ঘন্টা পর ডক্টর বেড়িয়ে আসলেন।আমি দৌড়ে তার কাছে কি জিজ্ঞাসা করলাম,
–“কবিতা’র কেমন অবস্হা?
–“তেমনটা ভালো নয়, রক্তক্ষরণ হওয়ার ফলে রক্তশুন্যতা দেখা দিয়েছে।দু ব্যাগ রক্ত প্রয়জন।নইলে ক্ষতি হবে পারে।
–“ডক্টর রক্তের গ্রুপ কি?
–“এবি নেগেটিভ।
–“আমার এবি নেগেটিভ, আমি রক্ত দিব চলুন।
‘ডক্টর হেসে ফেল্লেন।তার পর হাসি থামিয়ে বল্লেন,
–“এক ব্যাগ নিলেই চলবে।তবে আরেক ব্যাগ?
–“দু ব্যাগই আমার শরির থেকে নিন।
–“নিজের শরির এর দিকে চেয়েছেন কখনও? দু ব্যাগ নিলে আপনাকে কে বাঁচাবে?
এক ব্যাগ পারব।আরেক ব্যাগ জোগার করুন।
‘বন্ধুদের ফোন দিলাম।তাতে কাজ হলো না।তার পর রক্ত কিনতে গেলাম।এবং পেয়েও গেলাম।
অতঃপর কবিতাকে রক্ত দেওয়া হলো।
রাত প্রায় ৩টা বাজে।কবিতাকে রক্ত দিয়ে ঘুমিয়ে রাখা হয়েছে।ডক্টর সকাল বেলায় আসতে বল্লেন।
তবে রহমত সাহেব যেতে চাইছিলেন না।জোর করেই তাকে বাসায় ড্রপ করে, বাসায় এসে ঘুম দিলাম।
.
ঘুম আজ আর হলো না।ফজর এর আযান শুনতেই নামায পড়লাম এবং আল্লাহ্‌’র দোয়া করলাম, যে কবিতা যেন তাড়াতারি সুস্থ হয়।
নামায পড়ে ঘুম আর হলো না।তাই বাকি রাতটুকো নিমেষেই শেষ হয়ে গেলো।
সকালে নাস্তা করে কবিতাকে দেখতে বের হলাম।
হসপিটালে গিয়ে দেখি মেয়েটা ঘুমাচ্ছে।একদম বাচ্চা মানুষের মতো।অনেকটা মায়াবী তার মুখ।

যে কেউ একবার ভালো করে তাকিয়ে তাকে দেখলে,তার মাযায় পড়ে যাবে।
আমিও পড়েছি।তাইত ছুটে এসেছি তাকে দেখতে।
আধা ঘন্টার মতো বাইরে থেকে কবিতাকে দেখছিলাম।
তার পর তার ঘুম ভাঙল।ডক্টর এর পারমিশন নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম।
ভেতরে ঢুকতেই কবিতার চোখে আমার ছোখ পড়ল,কিছুটা লজ্জা বোধ করলাম।তবে এমনটা কখনও হয় নি।

সব কিছু কাটিয়ে ইচ্ছা জাগল কবিতার সাথে কথা বলার।কি দিয়ে শুরু করব সেটাই ভূলে গেছি।মাথা কেন জানি কাজ করছে না।

তাই আমতো আমতো করে বল্লাম,
–“এ..এখন কেমন ফিল করছেন?
–“জ্বী ভালো।
‘তারপর কবিতা এদিক ওদিক তাকিয়ে কি যেন পেল না,তখন আমাকে বলল,
–“আব্বুকে যে দেখছি না কই?
–“বাসায়,কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে।চিন্তা করার দরকার নেই।
‘কিছুক্ষন আবার নিশ্চুপ।অবসান ঘনিয়ে, কবিতা বলে উঠল,
–“রক্ত দিছেন আমার জন্য?
‘কি বলব ভাবছি? যদি হ্যাঁ বলি তাহলে নিজের প্রশংসা করা হবে।তবে মিথ্য যে বলতে পারব না।
তাই সত্যটা বললাম।
তখন কবিতা বলে উঠল,
–“আপনি খুব ভালো।থ্যাংস দিলাম না।ছোট করা হবে বলে।
‘তার পর নার্স খাবার দিয়ে গেলো।কবিতার হাত কাটা বলে খেতে চাইল না।তবে সেই বেপারটা আমি বুঝতে পেরেছি।

কাল থেকে খাইনি।খাবে না বল্লেই হলো।তাই অনেক বুঝালাম খাওয়ার জন্য।রাজি হলো খেতে।

খেতে যাবে তখন মনে হলো তার হাত কাটা।খাবে কেম্নে?
ভাবলাম আমি খাইয়ে দেই? এটা ভাবছিলাম, সেই সময় কবিতা বলে উঠল,
–“খাইয়ে দিন না? খুব ক্ষুদা লাগছে।
‘নিজের অজান্তেই ঠোটের কনে একটা মৃদু হাসি ফুটে উঠল দুজনারি।
তার পর নিজের হাতে খাইয়ে দিলাম।কবিতা কাঁদছিলো,তার চোখের এক কোনে অশ্রুজলে আহবান সাড়া দিয়েছিলো।

কবিতা বাচ্চা দের মতো কেঁদে কেঁদে বলে উঠল,
–“এমন ভাবে সেই কবে খেয়েছি জানিনা, আম্মু চলে যাবার পর থেকে খুব একা হয়ে গিয়েছিলাম।ধন্যবাদ।
‘আমার মনটাও কিছুটা ভালো হয়ে গেলো।তার পর আমি অফিসে চলে গেলাম।
.
রাতে আর ঘুম পাচ্ছিলো না, কবিতার মায়াবী কান্না জরীত মুখটা কল্পনায় ভেষে আসছিলো,বার বার।
এদিকে ছটফট করছি কবিতাকে দেখার জন্য।আর অপেক্ষা করছি কখন সকাল হবে।
এই সব ভাবতে ভাবতে কখন নিদ্রায় চলে গেছি মনে নেই।
খুব সকালেই উঠলাম,ফোনে এলার্ম দেওয়া ছিলো।তাই সকালে উঠে নাস্তা করে অফিস না গিয়ে কবিতাকে দেখতে গেলাম।
.
গিয়ে দেখি কবিতা খাওয়ার জন্য বায়না করছে।নার্সরা খুব চেষ্টা করছে খাওয়ানোর জন্য,কিন্তু কবিতা কিছুতেই খেতে চাইছে না।

আমি শুধু এগুলা চেয়ে চেয়ে দেখছি।
এদিকে আমি যে দাড়িয়ে আছি সেটা কবিতার খেয়াল নেই।আমি দাড়িয়ে না থেকে কবিতার বেড এর পাশে গেলাম।

তার পর কবিতা নিশ্চুপ হয়ে গেলো।
আমি নার্সদের খাবার রেখে চলে যেতে বললাম, তারা চলেও গেলো।
আমি কবিতাকে বললাম,
–“না খেলে সুস্হ হবে কি করে শুনি? খাও আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
‘কবিতা বাচ্চাদের মতো করে বলে উঠল,
–“দিন খাইয়ে দিন, ক্ষুদা লাগছেত।
‘আমি তখন থমকে পরলাম, এ মেয়ে কি কয়? আমি কবিতাকে বললাম,
–“মানে ক্ষুদা লাগছে তবু খাচ্ছ না? বলছো খেতে ভালো লাগছে না, ক্ষিদে নেই? আর আমি খাইয়ে দিচ্ছি আর বলছো ক্ষুদা লাগছে?

মানেটা কি বলোত কবিতা?
‘কবিতা কিছুটা লজ্জা পেলো, মুখটা নিচে করে বলে উঠল,
–“এমন করে সারা জীবন খাইয়ে দিবেন?
‘আমি যেন কথাটা শুনতে পেলাম,তবুও আবার শুনতে ইচ্ছা করল।তাই কবিতাকে আবার কথাটি বলতে বল্লাম,
–“কি বললে কবিতা?
–“চুপ থাকেনত, ঘোড়ার ডিম বলেছি।
–“আমি কিন্তু আগেই শুনতে পেয়েছি।
–“ঘোড়ার ডিম শুনছেন।যান এখন খাওয়া হয়ে গেছে।অফিস যান।
‘আমায় জোর করে উঠিয়ে অফিস যেতে বলল, থাকতে ইচ্ছা করছিলো আরো কয়েক জনম।সেটা ত ভাবনায়।
তার পর অফিসে যাওয়ার জন্য রওনা দিয়ে যেতে লাগলাম।তখন পিছন থেকে কবিতা মিষ্টি স্বরে বলে উঠল,
–“কালও কিন্তু খাইয়ে দিতে আসতে হবে।
‘আমি কিছু না বলে পিছনে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে এলাম।
তার পর হাটছি আর ভাবছি।
একমাত্র ভালোবাসাই পারে একটা মানুষের জীবনটা রঙিন করে দিতে।যেটা হবে সত্যকারের ভালোবাসা।
আমিও তেমনই ভালোবাসতে চাই কবিতাকে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত