পবিত্র ভালোবাসা

পবিত্র ভালোবাসা

অবন্তী কে নিয়ে আজকে ঘুরতে বের হয়েছি।দুজনে পাশাপাশি রিক্সায় বসা। মেয়েটি অনেক দিন ধরেই বলতেছিল ঘুরতে যেন বের হয়।সময়ের স্বল্পতা আর ব্যস্ততার কারণে মেয়েটিকে নিয়ে কখনো ঘুরতে পারি নাই।মেয়েটির এত গুলো বায়না কখনো থাকে না।শুধু আমাকে নিয়ে একটা দিন ঘুরতে চাই।এটাই তার ইচ্ছা।তাই আজকে একটু ফ্রি হওয়াতে মেয়েটিকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছি।নীল আকাশের নিচে রৌদ্রজ্জ্বল দিনে রিক্সায় আমি আর অবন্তী বসা।মেয়েটি আজ কমলা কালারের শাড়ি পড়ে এসেছে।

আমি কমলা কালার খুব পছন্দ করি।তার জন্যই কমলা কালার শাড়ি পড়া।মেয়েটি আমার হাতে হাত রেখে কাধে মাথায় রেখে বসে আছে।রিক্সা চলছে আপন গতিতে। . কয়েকদিন আগে অসু্স্থ ছিলাম প্রচুর।বিছানা থেকে ওঠতে পারছিলাম না।তাছাড়া মেয়েটির সাথেও এত একটা কথা বলা হয় নি।নিজ থেকে মেয়েটিকে টেক্সট কিংবা কোনো কল দেই নি।মোবাইলটাও ধরা হয় না।কোনো এক ভোর বেলা মেয়েটির আগমন ঘটল আমার রুমে।চোখ মেলে তাকাতেই দেখি অবন্তী।ওর চোখে চোখ পড়তেই দেখি অবন্তীর চোখের কোণাই পানি।আমার মাথায় হাত দিয়ে বলল, – কখন থেকে জ্বর আমি বললাম, – এই তো দুই তিন দিন হবে মেয়েটি বলল, – আমাকে একটা বারও বলার প্রয়োজন হয় নাই।

আমি কি এতটা পর। এই বলে মেয়েটি কেঁদে দিল।আমি বললাম, – আরে বোকা সময় পাই নি। তাই বলা হয় নি – মেডিসিন নেওয়া হয়ছে – না – কেন – টাকার প্রবলেম . আর কোনো কথা হয় নি।মেয়েটি রুম থেকে চলে গেল।কিছুক্ষন বাদেই মেডিসিন আর কিছু খাবার নিয়ে হাজির হলো।মাথায় পানি দিয়ে নিজ হাতে খাবার খাইয়ে দিয়ে মেডিসিন গুলো খাওয়াল।আমি তখন কিছুই বলতে পারলাম না।শুধু বিরামহীন দুই নয়ন দিয়ে দেখে যাচ্ছি।কি করে একটা মেয়ে এতটা ভালোবাসতে পারে।তাছাড়া আমার মতো একটা ছন্নছাড়া ছেলেকে কি দেখে অবন্তী ভালোবাসল।মেয়েটি বলল, – এখন যাই বিকেলে কল দিয়ে আমাকে জানাবে,শরীর কেমন – আচ্ছা – বাই – সাবধানে যেও বাই . রিক্সায় বসা আমরা।অবন্তী বলল, – কি ভাবতেছ – কিছু না মেয়েটি কে কখনো ভালো ভাবে ভালোবাসতে পারি নাই।মেয়েটিই আমাকে বেশি ভালোবাসে।বর্তমান সময়ের ভালোবাসা গুলো দেখলে আমার কেমন যেন এক অদ্ভুত লাগে।মনে হয় যেন ভালোবাসা আজকাল রাস্তাঘাটে কিংবা ফুটপাতে বিক্রি হয়।প্রথমে প্রেম করা।তারপর ডেটিং করা।

এরপরে রুম ডেটের প্রস্তাব দেওয়া।মেয়ে গুলোও যেন কেমন।ছেলে গুলোর খারাপ প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।দুই দিন পরে রাত কাটিয়ে দুজনের মধ্যে ব্রেকআপ হয়ে যায়।ছেলে গুলো তখন মেয়ে গুলো কে বলে,”মজা তুমিও পাইছ আমিও পাইছি” এই কথা বলার পরে তাদের ভালোবাসা শেষ।ছেলেটি আবার অন্য একটি মেয়ের সাথে প্রেম করতে থাকে।আর মেয়েটিও অন্য এক ছেলের সাথে প্রেমে ব্যস্ত হয় পড়ে। . এর জন্য বলে থাকি আজকাল ভালোবাসা রাস্তাঘাটে কিংবা ফুটপাতে বিক্রি হয়।ভালোবাসার নামে শুধু নোংরামি।আমার মতে ভালোবাসা জিনিসটা হলো পবিত্র।যার মধ্যে কোনো খারাপ চিন্তা ভাবনা থাকবে না।শুধু একে অপরকে ভালোবাসবে,বুঝবে,শাসন করবে,কেয়ার করবে ইত্যাদি।এগুলোই পবিত্র ভালোবাসা। বলতে বলতে রিক্সাটা নদীর পাড়ে এসে পড়েছে।রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দুজনে নদীর কাছাকাছি বসলাম।বলতে গেলে আমি প্রকৃতিকে বেশি ভালোবাসি।যখন মাঝে মাঝে খুব মন খারাপ থাকে তখন আমি প্রকৃতির মাঝে থাকি।দু চোখ মেলে প্রকৃতিকে দেখি,প্রাণ ভরে হাওয়া নেয়।তার জন্যই নদীর কাছে আজকে আসা। . এখানে আমরাই শুধু এসেছি না।কিছু কাপলদেরও দেখা যাচ্ছে।

আমি আর অবন্তী দুজনে নদীর প্রাণে তাকিয়ে আছি।কিছুক্ষন বাদেই এক জোড়া কাপলদের কে দেখলাম ভালোবাসার নামে নোংরামিতে মেতে ওঠেছে।কি বলব,বলার ভাষা নেই।এখান থেকে ওঠে একটু দূরে গিয়ে আমি আর অবন্তী বসলাম।অবন্তী কে বললাম, – অবন্তী,আমাকে তুমি কতটা ভালোবাস.? অবন্তী আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মেয়েটি এটাই বুঝাতে চাচ্ছে যে আমাকে কতটা ভালোবাসে।কারণ আজ পর্যন্ত মেয়েটি থেকে কখনো আমি কোনো ধরণের কষ্ট পাই নি।বরং আমিই মেয়েটিকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।মেয়েটি আমাকে বলল, – তুমি জান না কতটা ভালোবাসি – জানি,তারপরও বলো . মেয়েটি বলতে লাগল, – জমিন থেকে আকাশ পর্যন্ত যতটা না খালি জায়গা আছে তার চেয়েও বেশি ভালোবাসি।যা কখনো মাপা যাবে না।শুধু অনুভব করা যাবে।পৃথিবীর যতটা না সমুদ্র,সাগড়,নদী আছে।তাদের সকল পানি একত্রিত করলে যতটা না হবে,তার চেয়ে বেশি ভালোবাসি।শুধু আমাকে ভালোবেসে আগলে রেখ।

“আমি কি বলব, বলার কথা হারিয়ে ফেলছি।মেয়েটি কে আমি হারাতে চাই না।আপন করে পেতে চাই।সারা জীবনের জন্য,পবিত্র ভালোবাসা দিয়ে।আমি বললাম, – তোমার সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে আমাকে ধরে রেখ।যেন আমি কখনো পিছ পা না হয়।তার সাথে আমার ভালোবাসাটা যোগ করে নাও,যেন সারা জীবন এক সাথে থাকতে পারি। . দুজনের চোখে পানি।কষ্টের না পরম সুখের।যা টাকা দিয়ে কিনতে পাওয়া যায় না।রাস্তাঘাটে বিক্রি করা ভালোবাসা না।যেটা মজা নেওয়ার জন্য করা হয়। বেঁচে থাকুক পৃথিবীর সমস্ত পবিত্র ভালোবাসা গুলো।আর পবিত্র ভালোবাসার মানুষদেরও পবিত্র ভালোবাসা ঠিকে থাকুক আজীবন অমৃত।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত