নিয়মিত সৌরভের সকল ডে,স্টোরিতে লাভ রিয়েক্ট দিচ্ছি,সকল পোস্টে লাভ রিয়েক্ট দিচ্ছি,কিন্তু সৌরভ পাত্তাই দিচ্ছেনা।
কিয়েক্টাবস্থা!
আর কি ভাবে সৌরভকে বোঝাবো?আজকে দুইবছর ধরে ওকে পছন্দ করি।আমি স্কুল লাইফে জীবনে কোনো ছেলের দিকে তাকাইনি।এসব প্রেমটেম থেকে ভীষণ দূরেই ছিলাম।
কিন্তু সৌরভকে কেন জানি খুব ভালো লাগে।এই ভালো লাগাটাও শুরু হয়েছে কলেজে উঠার পর।অথচ ওকে আমি সেই স্কুল থেকেই চিনি।কিন্তু স্কুলে আগে ওকে দেখলে আমি ভাবতাম,”এই ছেলে তো কোনো দিক দিয়েই সুন্দর না।এমন হাবলা ছেলেকে কেনো ক্লাসের এত মেয়ে পছন্দ করে?”কেনো জানি সৌরভকে দেখলেই রাগ উঠতো।তবে কলেজে উঠার পর থেকে এই ভাবনা আর কাজ করেনা।সৌরভকে দেখলেই এখন মনের ভেতর টুং টাং ঘন্টা বাজে।হার্টবিট বেড়ে যায়।কিন্তু আমি তো ওকে প্রোপোজ করতে পারবোনা।কিয়েক্টাবস্থা!
মেয়েরা ছেলেদেরকে প্রপোজ করে নাকি? আমার ক্লাসের যেই মেয়েগুলা নিজে প্রপোজ করেছে,একটারো রিলেশন ছয় মাসের বেশি যায় নি। তাই আমি আমার ডিসিশন পাল্টিয়েছি।
আমার মুখ থেকেও জীবনে আই লাভ ইউ আগে বের করবোনা।কিন্তু সৌরভকে নিয়ে তো ভালো বিপদে পড়লাম।।
ওর প্রোফাইলে তিন বছর আগের আপলোড দেওয়া ছবি,যেখানে কেপশন “হাই ফ্রেন্ডস,দিস ইজ মি,অনলি মি” সেখানেও লাভ রিয়েক্ট দিয়েছি।ভাবা যায় এগ্লা?
প্রতিদিন সৌরভের প্রোফাইল চেক করি,ও যাতে সেটা টের পাই তার জন্য ওর ফেইসবুকের প্রথম দিকের পোস্ট গুলাতে গিয়েও লাইক কমেন্ট করি।ওর চার বছর আগের একটা পোস্ট দেখলাম,”এখন রাত দুইটা বাজে।কে কে অনলাইনে আচেন?লাইক দিয়ে জানাবেন বন্দুরা”
এই পোস্টে লাইক দিয়েছি,শুধু লাইক দিয়েই থামিনি,ভালোবাসা বোঝানোর জন্য পোস্টে কমেন্টও করেছি,”লাইক দিয়ে পাশে আচি” ।
সৌরভও পোস্টে ‘আচেন’ লিখেছে।ওকে ভালোবাসি বলেই ওর সাথে মিল রেখে আচি লিখেছি।
কিন্তু এসবেও ওর মনের দরজা খুলছেনা।সেইম ব্যাচ,কিন্তু কোনোদিন আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে কথাও বলেনি।সেইম স্কুল,সেইম কলেজ,কিন্তু ভার্সিটি লাইফ আলাদা।আলাদা হলেও স্কুল কলেজের ফ্রেন্ডদের সাথে রিইউনিয়ন,ঘুরাফেরা-এসবের মাধ্যমে সৌরভের সাথে দেখা হয় কিছুদিন পর পরই।খবর নিয়ে দেখেছি,ও এখনো সিঙ্গেল।
তাই আশা ছাড়িনি।একদিন দেখলাম সৌরভ পোস্ট দিলো,
“বাথরুমে বসে আছি,তোমরা কি করছো ফ্রেন্ডস?”
এই পোস্ট দেখে খুব হাসি পাচ্ছিলো।সবাই দেখি হাহা দিয়েছে,আর ওর ফ্রেন্ডসরা কমেন্টে বকাবকি করতেছে এরকম পোস্ট করার জন্য।
কিন্তু আমি তো ওকে ভালোবাসি।আমি কিভাবে হাহা দিবো,ভাবতেই হাত কাঁপছে।
আমি ভাবলাম এটাই সুযোগ,সৌরভ কে আমার ভালোবাসা বোঝানোর।
দিলাম লাভ রিয়েক্ট।কমেন্ট করলাম,”সৌরভ,তোমার বাথরুমের একটা ছবিও দিয়ে দিতে,খুবই ভালো লাগলো পোস্টটা পড়ে।মানুষের নেগেটিভ কমেন্ট্স এ কান দিওনা।ভালো কাজে বাধাঁ আসবেই”
প্রায় চল্লিশটা কমেন্ট ছিলো,সবাই খারাপ কমেন্ট করেছে।একমাত্র আমিই লাভ রিয়েক্ট দিয়েছি এবং মন ভরে যাওয়ার মতো সুন্দর একটা কমেন্ট করেছি।
এটা দেখে সৌরভ নিশ্চয় বুঝবে,কে ওর প্রকৃত ভালোবাসা।
দুইদিন পর সৌরভ আবার স্ট্যাটাস দিলো,ওর আইডি নাকি হ্যাক হয়ে গিয়েছিলো,সেই পোস্টটাও নাকি হ্যাকারই করেছিলো।একটু পর নোটিফিকেশন আসলো,সৌরভ আমার সেই কমেন্টে হাহা দিয়েছে,সাথে আরো বিশটার মতো হাহা আগেই ছিলো কমেন্টটাতে।
“যার জন্য করি চুরি,সেই বলে চোর।”অনেকটা এরকম হলো ব্যাপারটা।
কষ্টে আমি একঘন্টা ফেইসবুকে ঢুকিনি।আমি যে এক ঘন্টা ধরে ফেইসবুকে নেই,সেটাও কি সৌরভ দেখলোনা?জীবনেও তো নিজে থেকে আমাকে নক দেয়না।একটা মেয়ে হয়ে আমি সৌরভকে নক দেয় মাঝে মাঝে।
যাই হোক,এই এক ঘন্টা অপরাধী গানটা শুনলাম।
“পোলারে পোলারে তুই অপরাধী রে” এটা লিখে স্ট্যাটাস দিলাম এক ঘন্টা পর ফেইসবুকে ঢুকে।এই স্ট্যাটাসে যদি সৌরভ সেইড রিয়েক্ট দেয়,তাহলেই আজকে বুঝবো ও কি আমাকে ভালোবাসে কিনা।বার বার নোটিফিকেশন চেক করছি।অলরেডি উনিশটা হাহা রিয়েক্ট পেয়েছি।যাই হোক,এগুলা সমস্যা না,সৌরভের একটা রিয়েক্টের অপেক্ষা করছি।একটুপর দেখলাম সৌরভ লাইক দিয়েছে।কোনো রিয়েক্টই দেয়নি।মন টা চাইতেছিলো,এখনি সৌরভের প্রোফাইলে আমার দেওয়া সব লাভ রিয়েক্ট উঠায়া নেই।কোনোমতে নিজেকে শান্ত করলাম।
তারপর সৌরভকে ব্লক দিয়েছি,কারণ আমার বেস্টফ্রেন্ড বলেছে,”যেই ছেলে তোর কষ্টের পোস্টে সেড রিয়েক্ট না দিয়ে লাইক দেয়,সে তো তোর ভালোবাসা পাবার কোনো যোগ্যতা রাখেনা”