দোস্ত তোরা একটু চুপ কর তো! আম্মু কল দিসে!
– হ্যালো আম্মু!
– কই তুই?
– কেন আম্মু? আমি তো ইভানা’র বাসায়! তোমাকে তো বলে আসলাম – আজ ইভানার জন্মদিন!
– তুই এক্ষুণি বাসায় আয়!
– আম্মু এখন কেন আসবো? এখন তো ইভানা’র জন্মদিনের কেকটাও কাটলো না! এখন কিভাবে আসবো? কি হয়েছে আম্মু?
– তুই বাসায় আয় এরপর বুঝতে পারবি কি হয়েছে!
– আম্মু আর মাত্র একটা ঘন্টা এরপর চলে আসি! প্লিজ প্লিজ প্লিজ আম্মু!
– আচ্ছা ঠিক একঘন্টা পর কিন্তু চলে আসবি! খুব জরুরী কথা আছে!
– আচ্ছা ঠিক আছে আম্মু!
কলটা শেষ হতেই নীলিমা বললো – কিরে কোনো ঝামেলা?
– বুঝলাম না! আম্মু’র নাকি কি জরুরী কথা আছে! তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে বললো!
নীরব এসে বলে – কিরে তোরা এত সিরিয়াস! কি হয়েছে?
– মিফাকে আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যেতে হবে ; আন্টি এখন কল দিয়ে বললো – কি জরুরী কথা নাকি আছে! এখন মিফা খুব টেনশন করছে!
– আরেহ টেনশন এর কি আছে – যাইয়া দেখবি মোটা ভুড়িওয়ালা এক পাত্র আর কিছু আন্টি আংকেল তোদের বাসার সোফায় বসে চা নাস্তা খাচ্ছে! বুঝস না কেন – বিয়া শাদী’র জরুরী মামলা! তোর মোটা ভুড়িওয়ালা হবু বরের জন্য আমার পক্ষ থেকে অগ্রীম শুভকামনা!
নীলিমা শব্দ করে হাসতে থাকে!
আমি নীরবকে বলি – মোটা ভুড়িওয়ালা কোনো লোক আমার বর হবে! তুই সব অগ্রীম জানিস তাই না!
– তোর মতো পেত্নীকে না হলে কে বিয়ে করবে?
– নীরইব্বার বাচ্চা নীরইব্বা তোর হাড্ডিগুড্ডি যদি আজকে আমি চাবাইয়া চাবাইয়া না খাইসি!
এই কেক কাটবো – তোরা সবাই আয় বলে ইভানা সবাইকে ডাক দেয়া তে নীরবকে বললাম – আজ বেঁচে গেলি!
– যাঃ যাঃ পেত্নী কোথাকার!
– আমি তো কেক খাইতে যাবো আর তুই যা গাছে যাইয়া লটকাইয়া থাক! বান্দর কোথাকার! বলেই আমি ইভানার জন্মদিনের কেকের ছবি তুলতে লাগলাম।
কেক খাওয়া শেষ হতেই আমি বললাম – দোস্ত আমি গেলাম! আম্মু তাড়াতাড়ি যাইতে বলছে!
বাসায় ফিরে আসতেই দেখি বড় আপা আর দুলাভাই বসে আছে! বুঝতে আর বাকী রইলো না – এখন আমার উপর বড় দুলাভাইকে দিয়ে লেকচার দেয়া হবে! আম্মু যখনি সিরিয়াস কিছু নিয়ে কথা বলবেন তখনি বড় আপা আর দুলাভাইকে খবর দেন!
আপা আমার পিছনে পিছনে রুমে এসে বললো – তুই এটা কি করলি! আমি এখন শশুড়বাড়িতে মুখ দেখাবো কি করে!
– আপা আমি কি করেছি বলো তো?
– আমি বলতে পারবো না! তোর দুলাভাই কে পাঠাচ্ছি!
বলেই দুলাভাই কে ডাকতে লাগলো আপা!
আম্মু এসে বললো – তুই আমাদের মান সম্মানের কথা একবারেও ভাবলি না!
দুলাভাই এসে বললো – তুমি তো আমাকে একবার জানালেই পারতে! নিজে নিজেই বিয়েটা করে ফেললে – আমার একমাত্র শ্যলিকার বিয়ে কত মজা করবো প্ল্যান করেছিলাম – সব শেষ! আচ্ছা কি আর করা! তুমি নিজেই কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছো! গোপনে বিয়ে সেরে ফেললে এখন নীরব তোমাকে ডিভোর্স কেন দিচ্ছে? কাজটা খুব খারাপ হচ্ছে।
.
– কি আজব! আমি বিয়ে কখন করলাম আর নীরব আমাকে ডিভোর্স কেন দিবে?
– এখন আমরা সব জানি! তুমি কিছু আর লুকিয়ে রেখো না বোন – সত্যি সত্যি সব বলো!
উফফ – সত্যি এইরকম কিছু হলে তবেই ত আমি বলবো!
আম্মু উনার মোবাইল বের করে দেখালো – দেখ! ছিঃ ছিঃ এমন মেয়ে আমি পেটে ধরেছিলাম!
আমি মোবাইলে দেখলাম ফেসবুকে আমার আপলোড দেয়া বৈশাখের একটা খাবারের ছবি।
– এটা তো আমাদের বাসার পহেলা বৈশাখের খাবারের ছবি!
দুলাভাই বললো – সেটা ঠিক আছে কিন্তু নীরব মানে তোমার জামাই কি কমেন্ট করছে আর তুমিও কি রিপ্লাই দিছো! তোমরা যে সংসারের ঝগড়া কেন সোশ্যাল মিডিয়াতে দিয়ে দাও! ব্যাক্তিগত ব্যাপারগুলো আসলে ব্যাক্তিগত রাখাটাই ভালো! তবে তোমাদের এই কমেন্ট না দেখলে আমরা বুঝতামই না তোমারা বিয়ে করে এখন ডিভোর্স এ চলে গিয়েছো!
– দুলাভাই আচ্ছা কি কমেন্ট দেখি তো বলে – মোবাইলে দেখলাম ছবির নীচে নীরবের কমেন্ট ” তালাক ”
নীচে আমার লেখা – তুই আমারে কি তালাক দিবি আমিই দিলাম এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক!
– তোমরা এই কমেন্ট দেখে এত কিছু ভেবে বসে আছো! আরেহ এটা তো নীরব মজা করে লিখেছে – পহেলা বৈশাখের খাবারগুলো খেতে পারেনি তাই তালাক দিয়ে বলেছে – বন্ধু থেকে আমাকে বাদ! কেন আমি নীরবকে বললাম না আমাদের বাসায় এসে খেতে!
আর আমিও নীরবের তালাক দেখে মজা করে লিখেছি – তোকেও তিন তালাক দিয়ে আমিও বাদ দিয়েছি – সারাক্ষণ শুধু খাই খাই করে!
– তালাক শব্দটা যদি এভাবে চালিয়ে দাও তাহলে তো খুব মুশকিল! ফেসবুকে তোমার সাথা আমরা সহ আরো কত আত্নীয় স্বজনরা যুক্ত আছে পরে তো এটা নিয়ে আমাদের মতো সবাই ভুল বুঝবে! তাই ফেসবুকে কমেন্টে শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থেকো! দুলাভাই এগুলো বলতেই আম্মা বললো – তুই কি সত্যি বলছিস?
– আম্মা আমি একটুও মিথ্যা বলছি না! আর নীরবকে বিয়ে করবো এটা তোমরা ভাবলে কি করে! দরকার হলে আমি সারাজীবন বিয়ে করে থাকবো না তবুও এইরকম একটা বান্দরকে বিয়ে করবো না!
সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো – দুলাভাই বললো – কমেন্ট এ বুঝে শুনে লিখবা আর তোমাদের বন্ধুদেরকেও বলবা! না হলে এরকম গোলমাল সবার মাঝে তৈরী হবে! মনে রেখো বোন!
– আচ্ছা ঠিক আছে দুলাভাই! বলতেই আপা তার মোবাইলে ফেসবুকে দেখে চিৎকার করে দুলাভাই কে বললো – দেখো!
আমিও দুলাভাই এর সাথে দেখলাম – ইভানার জন্মদিনের ছবি ট্যাগ করেছে নীলিমা আমাকে! সেই ছবির নীচে অহনার কমেন্ট দেখা যাচ্ছে – দোস্ত মিফা নীরব বললো – তোর নাকি সুখবর আছে ; ট্রিট দিবি কবে?
দুলাভাই আর আপা আমার দিকে তাকিয়ে আছে ; আম্মু জিজ্ঞেস করছে – কি হয়েছে! আমাকে বলো!
.
আমি বললাম – আজকে বাসায় আসার সময় নীরব ভাবছিলো – আমাকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে আর এটাকেই সুখবর হিসেবে অহনা লিখেছে!
– তুই বানিয়ে বানিয়ে আর কত মিথ্যা বলবি! আপা বললো!
– বিশ্বাস করো আপা – আমি এক ফোঁটাও মিথ্যা বলছি না!
দুলাভাই বললো – আহা! এমন করছো কেন? ও যখন বলছে মিথ্যা বলছে না তাহলে ঠিক আছে! কিন্তু রে বোন এরকম কমেন্ট করার কি দরকার! তুমি তোমার বন্ধুদের বুঝিয়ে বলো!
মনে মনে ভাবি আর বলি – সাধে কি আর মানুষ আত্নীয় স্বজনদের ব্লক লিষ্টে পাঠায়! আমার তো নিজের ঘরের মানুষ তাদের কিভাবে ব্লক লিষ্টে পাঠাবো! আরেকটা আইডি খুলতে হবে যেখানে এইসব বদের হাড্ডি বন্ধুগুলা থাকবে আর এইধরনের সব কমেন্ট করবে! কি আর করা আজকাল মূল পোষ্টের চেয়েও কমেন্ট পড়তেই সবার বেশি আগ্রহ!