এই আজকে একটু দেখা করবা.?
-কেন?তুমি অফিসে যাবা না?
-নাহ আজকে ছুটি নিছি৷
-ওহ তাইলে বিকালে নদীর পাড়ে আসব?
-হুম!শুনো নীল শাড়ি পড়ে আমার মনের মতন করে আসবে কিন্তু
-ওকে মহারাজ
-বাই মহারানী
মহারানীকে তেমন সময় দেওয়া হয়ে ওঠে না৷ তাই আজকে অফিস থেকে ছুটি নিলাম৷ আজ প্রায় ১৫ দিন পর দেখা৷ খুব দেখতে ইচ্ছা করছে তাই আজকে অফিস থেকে ছুটি নিলাম৷ অফিস এ আজকাল খুব ব্যস্ত থাকি৷ তাও মেয়েটার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই৷ যেন সে আমার ব্যস্ততাটাকে বুঝে৷ অহ মহারাণীর নাম ইরা৷
নদীর পাড়ে বসে আছে৷ এখনও ইরা আসে নাই৷ নদীর পাড়ে বেঞ্চটাতে বসলাম৷ তার সাথে পরিচয় এর পর থেকে এইটাই আমাদের সবথেকে প্রিয় এক স্থান৷ পরিবেশটা মাতাল করার মত পরিবেশ৷ খুব ভাল লাগা ছুঁয়ে যায় মনে৷ দক্ষিনা হিমেল বাতাস বয়ে চলেছে শান্ত নদীটাতে৷ আসলে এই জায়গাটা খুব মন কাড়ে৷
তাকে নিয়ে আমার খুব অদ্ভুত ইচ্ছা হয়৷ ইচ্ছা তাকে নিজ হাতে সাজিয়ে দিতে৷ ইচ্ছা করে কপালের টিপটা ঠিক করার বাহানায় ছুঁয়ে দিতে৷ জানি মেয়েটা আজ সেজে আসবে না৷ আমাকে সাজিয়ে দিতে হবে৷এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ পিছনে থেকে ইরার কথা বাস্তবে ফিরে এলাম৷ ইরা বলল
-কেমন আছো?
-ভাল৷ তুমি কেমন আছ?
-ভালো নেই৷ আচ্চা আজ আমাদের ১৫ দিন পর দেখা তাই না?(আমার পাশে এসে বসতে বসতে বলল)
-হুম আসলে অফিসে খুব ব্যস্ত সময় পার করছি৷
দেখছি মেয়েটা মনমরা হয়ে বসে আছে৷ কারন তার হাতে চুড়ি,টিপ, আর কাজল আমাকে পরিয়ে দিতে হবে৷ আর কাজল পরানোর সময় কান্না করে সব লেপ্টে দিবে৷ তখন ও বলে সুখের কান্না করে৷
মেয়েটাকে অন্যদিনের খুব সুন্দর লাগছে৷ সাদা শাড়ি লাল পাড়৷ তাকে বলল,
-নীল শাড়িটা পড়ে আসো নি কেন?
-কেন জানি মনে আজকে আমাকে এই শাড়িতে বেশ সুন্দর লাগবে৷
-আজকে কিন্তু সত্ত্যি মায়াবী লাগছে খুব অন্যদিনের তুলনায়
-তাইলে শুধু নীল শাড়ি কর কেন?
-কারন নীল শাড়িতে তোমাকে অদ্ভুত মায়াবী লাগে৷ কারন তোমাকে খুব ফুটিয়ে তুলে নীল শাড়িতে
-এখন কি সুন্দর লাগছে না
-এহ অবশ্যই লাগছে৷
আচ্চা এখন এইগুলা পরি দাও৷ আর যখন টিপ পরিয়ে দিচ্ছিলাম তখন সে সাথে সাথে চোখটা বন্ধ করে নেয়৷ এই জিনিসটা আমার খুব ভাল৷ আর হাতের চুড়ি গুলা পরিয়ে দিলাম৷ আর আজকে তার জন্য এক জোড়া নুপুর কিনেছিলাম সেই গুলাও পড়িয়ে দিলাম৷ আর তখন সে বলল,
-এই কাজলটা সহ পরিয়ে দাও না
-তুমি তোহ সহ্য করতে পার না,সাথে লেপ্টে দাও
-হুম জানি তবুও দিয়ে দাও৷ আর এত কে বলতে বলল শুনি
-নাহ তবুও বললাম আরকি
-আর যতবার লেপ্টে যাবে ততবারই দিয়ে দিবা কিন্তু
কিছু সময় নিরবতা ছিলাম৷ সে আমার কাঁধে মাথা রেখে নিরব চোখে নদীর পানি দিখে থাকিয়ে রইল৷ আর আমি মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইলাম তার দিকে৷ এরপর বলল,
-এই শুনো বাবা আমার বিয়ে জন্য পাত্র দেখছে
-কি বল, সিরিয়াসলি
-এই ফাজলামি শুরু করছ কেন?
-কই ফাজলামি করলাম আমি
-সিরিয়াসলি আমাকে খুব চাপ দিচ্ছে
-তাইলে তোহ শুক্রবারে বিয়ের প্রস্তাব পাটায়৷
-সত্ত্যি, আসলে তোমাকে আমার খুব প্রয়োজন৷ তোমাকে ছাড়া আমার থাকা অসম্ভব
-তোহ আমি কি থাকতে পারব৷ আর মা-বাবাকে শুক্রবারে পাঠাবো
এইটা বলার সাথে মেয়েটা আমাকে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরল৷ তারপর দেখলাম মেয়েটা কান্না করছে৷ তারপর আমি ভাবতে লাগলাম, “কেন কান্না করছে মেয়েটা?হয়ত দু’জন একসাথে হচ্ছি বলে৷থাক কান্নার কারন জানতে হবে না৷ এইভাবে থাকুক”
তার কিছু সময় পর বললাম,
-চল যাওয়া যাক৷ সন্ধ্য হয়ে এলো
-এই আজকে সন্ধ্যা একটু ঘুরাঘুরি করব,তারপর বাড়িতে যাব
-কি সত্ত্যি৷ আসলে আমি এটাই বলতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু তোমার ঘরে কি বলে, তাই আর বলি নাই৷
-তোহ বল নাই কেন
-সরি
তারপর একটা রিক্সা নিয়ে রোডে আসলাম৷ এসে হাটতে লাগলাম তোমার হাত ধরে৷ আসলে এই সন্ধ্যায় তোমার হাত ধরে ঘুরার মজায় আলাদা৷ যেন অন্য এক অনুভূতি মনে ভিতর খেলা করে৷ যেন এইসময়টাকে থমকে দিহ৷
তুমি কী জানো তোমাকে সন্ধ্যায় সোডিয়াম আলোতে অদ্ভুত সুন্দর লাগে৷ জানো তোমাকে হলদে পাখির মত মনে হয়৷ যেন এক জোড়া হলদে পাখি হেটে যায় তাদের দিগন্তে৷ যেন তাদের নীড়ে ফিরে যাবার কোনো তাড়া নেই৷
জানো তোমাকে খুব বলতে ইচ্ছা করে কোনো এক সন্ধ্যা তারায় খুঁজে নিব তোমাকে৷ তোমাকে গভীর মায়ায় চোখে দেখব সে সময়৷ তুমি লজ্জামাখা মুখটা ডেকে রেখ না৷ তাহলে আমি ব্যর্থ৷