সু্প্ত ভালোবাসা

সু্প্ত ভালোবাসা

আমি ঈশান…বসে বসে আমার প্রিয়তমা স্ত্রী টোম্পার কার্যকলাপ দেখছি।এতো সুন্দর করে সেঁজেছে যে আমার শুধু তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করছে।

বাপের বাড়ি যাবে তো তাই খুব হাসি খুশি দেখাচ্ছে। একটু রাগিয়ে..তুললে খারাপ হয় না, বউ আমার রাগলে আরো সুন্দর লাগে।
—এই তুমি এমন কেনো( টোম্পা)
— আমি আবার কি করলাম।
—–এখনও রেডি হচ্ছ না কেনো??
—আমি তো যাচ্ছি না, চলো তোমাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আসি।
—- কিহ! তুমি যাচ্ছ না?(টোম্পা)
— নাহ, — কথাটি বলতে দেড়ি হইছে বউের হাতে যে কাপরের ব্যাগ ছিল তা ছুড়ে ফেলতে দেড়ি হয়নি।ব্যাগটি ছুড়ে ফেলেই রুমে চলে গেলো…।

আমি কাছে গিয়ে দেখি….বউ আমার কান্না করতেছে।বউয়ের কান্না…আমার আর ভালো লাগলো না….তাই বউকে একটা কবিতা শুনালাম:-
তুমি হাসলে যেনো মুক্তা ঝরে,
রাগলে জেনো…..আগুন
অভিমানি রুপে তোমায়-
সুন্দর লাগে দ্বিগুন।।
নাহ…কবিতাতে…কাজ হয় নি….তাই পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বললাম…চলো তাড়াতাড়ি চলো দেড়ী হয়ে যাচ্ছে।
–নাহ আমি যাবো না….।(অভিমানি কন্ঠে)
–আরে বাবু স্যরি বললাম তো স্যরি আর এমন করবো নাহ..প্লিস এখন চলো দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।
— সত্যি বলছো তো আর এমন করবে নাহ??( টোম্পা)
— হুম এক সত্যি, দুই সত্যি, তিন সত্যি.. কখনোও আর এমন করবো না। এখন চলো…।
বাসে ওঠে বসে আছি, টোম্পা জানালার পাশেই বসেছে আমি…টোম্পার পাশে বসেছি। চারপাশটা একটু দেখে নিলাম, আমাদের পাশের সিট দুইটি খালি।

পিছনে বসেছে দুজন বয়স্ক লোক।হঠাৎ খেয়াল করলাম জানালা দিয়ে টোম্পা কি যেনো দেখছে।
— কি হয়েছে টোম্পা??
— আচ্ছা দেখো না মানুষগুলো কেমন ব্যস্তময়।(টোম্পা)
— হুুম ব্যস্তময় এই শহরে মানুষ গুলাও ব্যস্তময়।
গাড়িটিও চলছে জোরে জোরে হর্ন বাজাচ্ছে।এ রকম শব্দে টোম্পার হয়তো খারাপ লাগছে তাই মনে হয় টোম্পা আমার কাঁধে মাথা রেখে সুয়ে থাকার চেষ্টা করলো।

আমি এতক্ষন টোম্পার সাথে বাইরের দৃশ্য দেখতে ছিলাম। তো যেই গাড়ির ভিতরে তাকিয়েছি তখনি মেঘাকে দেখতে পেলাম।

মেঘা আমার ক্লাসমেট ছিলো।

ও আমাদের পাশের সিটেই বসেছে। সাথে ৪ থেকে ৫ বছরের একটা বাচ্চাও আছে। তো আমাকে হয়তো দেখতে পায়নি…দেখলে অবশ্যই কথা বলতো।

একবার ভাবলাম আমি নিজে থেকেই কথা বলি পরক্ষনেই ভাবলাম নাহ টোম্পা আবার কি না কি ভাববে থাক…

এসব ভাবতেছি তখনি মেঘা বলে উঠলো আরে ঈশান কেমন আছো??
আমি: হুুম ভালো আছি, তুমি কেমন আছো??
আর তখনি টোম্পা আমার কাধ থেকে মাথা সরিয়ে মেঘাকে দেখলো।
আমি ভালো আছি, ঐ টা কে, ভাবী নাকি?? (মেঘা)।
আমি বললাম, হুম….ওর নাম টোম্পা।
ভাবি কেমন আছেন??( মেঘা)
হুুম ভালো, আপনি কেমন আছেন?? (টোম্পা)
হুুম খুব ভালো এখন আপনাদের দেখে আরো ভালো লাগছে।।(মেঘা)
তারপর….আরো অনেক কথায়…..হলো, হঠাৎ মেঘা বললো জানো তোমাদের না….এখনও অনেক মিস করি বিশেষ করে তোমাকে….।

মেঘার কথাটি শুনে আমার কাশি ওঠে গেলো, টোম্পার দিকে তাকিয়ে দেখি খুব মনোযোগ দিয়ে মেঘার কথা শুনছে।

মেঘা বলতে লাগলোএভাবে যে আমাদের দেখা হবে আমি ভাবতেই পারি নি।

ঈশান আমি….সামনের স্টেশনেই নামবো…তোমরা ভালো থেকো…আর ও হ্যা তোমার নাম্বারটা দাও তো..।
আমি নাম্বার দিয়ে দিলাম। তারপর আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মেঘা নেমে পরলো।

টোম্পা সেই কখন থেকেই চুপ আছে কোনো কথা বলছে না….শুধু বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।

নাহ এখন কিছু একটা বলতে হবে, আচ্ছা টোম্পা তোমার বড় বোন ও চাচাতো বোনগুলা না আশার কথা ছিলো…ওরা আসেনি??
—-জানি না..। ( টোম্পা)
— আচ্ছা তুমি এ রকম চুপ করে আছো কেনো??কি হয়েছে তোমার?
— কি আবার হবে কিছু না(টোম্পা)।
— আমি আর কিছু বললাম না।
সামনেই স্টেশন ওখানেই নামতে হবে…
টোম্পাকে বললাম…এই উঠো…..এসে পরেছি…নামতে হবে এখন। টোম্পা কিছু বলল না…শুধু নামার জন্য প্রস্তুতি নিল।
এই সাবধনে নেমো….তাও টোম্পা কিছু বলল না। আমি অনবরত কথা বলতেই আছি কিন্তু টোম্পা কোনো কথা বলছে না।
না বলুক কথা আমিও আর কিছু বলবো না। একটা ভ্যান ভাড়া করে…শশুরবাড়ির দিকে রওনা হলাম…..,

ভ্যান থেকে নেমে যেই ভাড়া দিতে যাবো তখনি কে যেনো বলল এসে পরেছেরে এসে পরেছে…….

আর তখনি বাড়ির কিছু মহিলারা..আর বাচ্চা কাচ্চা সবাই দৌড়ে আসতেছে…

মৌমাছির চ্যাকে ডিল ছুড়লে যেমন মৌমাছি তাড়া করে ঠিক তেমনি এরাও দৌড়ে আসছে কিছুটা হলেও প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম।

তারা কাছে আসার পরে লম্বা করে একটা সালাম দিলাম…,

কেননা কথায় আছে শুশুর বাড়ির কুত্তা দেখলেও সালাম দিতে হয় আর এরা তো দিব্যি মানুষ এদের সালাম দিতে প্রভলেম কি???

যাই হোক বাড়ির ভিতরে যাওয়ার পর চার জন নব মহিলা ও চারজন পুরুষকে বসে থাকতে দেখলাম।

মনে মনে ভাবতে লাগলাম সবাই আমাদেরকে আনন্দে গ্রহন করতে গেল, কিন্তু এরা যায়নি কেনো?

হুম এরা মনে হয় ভি.আই.পি..তাই আসন গ্রহন কর বসে আছে।
একি আমার বউ দেখি ভি. আই. পি. মহিলাদেরকে জরিয়ে ধরছে..তারাও দেখি আমার বউকে পেয়ে খুশিতে আপ্লুত হচ্ছে।

আমার বউয়ের ঐ হাসি মুখ দেখে আমারও অনেক ভালো লাগছে যাইহোক….দিনের শেষে বউয়ের ঐ হাসি মুখ খানা দেখতে পেলাম।

বউ সবার সাথে আমাকে পরিচয় করে দিলো।পরিচয় পর্ব শেষ করেই বুজতে পারলাম এরাই সেই গুনধর ব্যাক্তি, কর্ম ব্যস্ততার কারনে আমার বিয়েতে উপস্থিত হতে পারে নি।

যাইহোক তাহলে এই সম্মানিত…ভুরিওয়ালা লোকগুলো আমার দোলাভাই। আর ভি. আই. পি…মহিলাগুলো হচ্ছেবড় আপু।

সবার সাথেই কিছুক্ষন কথা বলে,…ফ্রেস হয়ে একটা রুমে গিয়ে…বিশ্রাম করছিলাম।

এমন সময় বউ এসে বলল চলো খাবার টেবিলে সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে..। খাবার খেয়ে আমি আবার রুমে এসে সুয়ে পরলাম।

অনেকক্ষন ধরে সুয়ে আছি বউয়ের আসার খবর নাই। রাত ১০ টা বাজে…..তাও আসছে না…অবশেষে ১০ : ৩০ এ আমার বউয়ের দেখা পেলাম।

বউ এসেই কোনো কথা না বলেই সুয়ে পরলো। সন্ধ্যায়তো খুব হাসি খুশি দেখলাম এখন আবার কি হলো?.

এসব ভেবে যেই বউকে টাচ্ করলাম তখনি বলে এই তুমি আমাকে টাচ্ করবা না।(অনেক রাগী মুডে)।

আমি একটা জিনিস বুঝি না….

নিশাচড় প্রানীদের যেমন রাতের বেলায় পাওয়ার বেশি হয় ঠিক তেমনি রাতের বেলায় বউদের রাগ অভিমান এবং কোনো কিছুর আবদারও বেশি হয়।

কেনো যে রাতের বেলায় এদের রাগ অভিমান বাড়ে এটা নিয়ে গবেষনা করতে হবে, তবে আপাতত এখন বউয়ের রাগ ভাংঙ্গাতে হবে।

কিন্তু কিসের জন্য রাগ করেছে সেটায়তো জানি না।
–আচ্ছা তুমি কিসের জন্য রাগ করছো বলতো??
–আমি রাগ করবো কেনো আমার রাগে কারো আসে যায় কি, সে তো আছে যে তাকে মিস করে…যার কাছে নাম্বার দেয় তাকে নিয়ে।(টোম্পা)
— টোম্পা এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে, মেঘা শুধু মাত্র আমার ফ্রেন্ড।এক ফ্রেন্ড আরেক ফ্রেন্ডকে মিস করতেই পারে।

তাই বলে কি তোমার সন্দেহ করতে হবে।মনে রেখো সন্দেহ কিন্তু মধুর সম্পর্কও নষ্ট করে।

আসলে তোমার দোষ নেই, দোষ আমার কেননা আমি তোমাকে বুঝাতে পারি নি যে আমি তোমাকে কত ভালোবাসি।

স্যরি টোম্পা আমি হয়তো তোমার ভালাবাসার যোগ্য নই। বউ দেখি কান্না করতে করতেই আমাকে জরিয়ে ধরে বললো, আমার ভুল হয়েছে আমাকে মাফ করে দাও।

জানো তোমাকে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখলেই আমার অসহ্য লাগে। আমি নিজেকে অনেক বুঝাতে চেষ্টা করেছি তারপরেও আমার কেমন যেনো লাগে।

স্যরি আমার ভুল হয়েছি আমি আর কখনও এমন করবো না।
আমিও বউকে জরিয়ে ধরে বলতেছি তুমি আমাকে এত ভালোবাসে অথচ তুমি প্রকাশ করতে চাও না…

এই ভালোবাসাকে লুকিয়ে রেখে একটু একটু করে আমাকে ভালোবাস তাই না??

যাইহোক এখন সু্প্ত ভালোবাসার সন্ধান পেয়ে গেছি,তাই বেশি বেশি ভালোবাসা দিতে হবে।
আচ্ছা দেব কিন্তু আমাকেউ ভালোবাসতে হবে।(টোম্পা)
হুুম ভালোবাসবো।।অবশেষে শুরু হলো আমাদের ভালোবাসাময় রাত। আমরা যেন এভাবেই সারাজীবন একে অপরকে ভালোবাসতে পারি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত