–স্যার আপনাকে একজন এইটা (চিঠি) দিয়েছে (আরোহী)।
— কি এটা?
— স্যার মনে হয় চিঠি
— চিঠি!!!
–হ্যা স্যার
–আমাকে আবার কে চিঠি লিখবে?
–কেন স্যার আপানাকে কি কেউ চিঠি লিখতে পারেনা??
–ঠিক তা না।
–স্যার আপনিতো দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম। তাই হয়তো কেউ ক্রাশ খাইছে।
আমি চুপ করে চেয়ে আছি আমার ছাএী আরোহীর দিকে। কেন জানি মনে হচ্ছে আরোহী আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছে। আরোহীকে পড়ানো শেষ করে মেসে চলে আসলাম। আর ভাবছি যে, কে আমাকে চিঠি লিখতে পারে। তেমন তো কাউকে দেখিনা। ওহ্ একজন আছে অবন্তী( অবন্তী আরোহীর বড় বোন)। অবন্তী আবার আমাকে চিঠি লিখে নাইতো। নাহ্ অবন্তী আমাকে কেন চিঠি লিখবে। সে তো আমার সাথে কখনো কথা বলেনা। তার সাথে আমার মাএ দুই দিন দেখা হইছে। আচ্ছা আরোহী লিখে নাইতো। ধূর কি সব ভাবছি। আরোহীতো আমার ছাএী সে কেন লিখবে।
যাই হোক চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলাম। পুরো চিঠি জুরেই আমার চোখের বর্ণনা দেওয়া হইছে। আমি নিজেই আশ্চর্য হচ্ছি, যেখানে সব সময় ছেলেরাই মেয়েদের এমন করে চোখের বর্ণনা দেয়। আর কোনো মেয়েকিনা আমার চোখের বর্ণনা এমন করে দিলো। অভাক হচ্ছি এটা ভেবে যে, একটা মেয়ে এতো সুন্দর করে চিঠি লিখতে পারে কি করে। সম্ভবত এই কারনেই হয়তো হুমায়ন স্যার বলেছিলেন ” মেয়েদের একটি অদ্ভুদ ক্ষমতা হলো তারা অনেক সুন্দর করে চিঠি লিখতে পারে, বিধাতা শুধু এই ক্ষমতাটা মেয়েদেরকেই দিয়েছেন “। যে কেউ এই চিঠিটা পড়লে তার প্রেমে যাবে। তাই আমিও প্রেমে না পরে থাকতে পারলামনা। পরের দিন আরোহীকে জিগ্যেস করলাম
–আচ্ছা আরোহী বললা না তো চিঠিটা কে দিয়েছে।
–স্যার আপু নিষেধ করছে নাম বলতে।
আরোহী খাতাতে লিখতে লিখতে বলে ফেললো। আপুর কথা বলেই সে আমার দিকে গোল ফ্রেমের চশমার মধ্য দিয়ে অদ্ভুদভাবে তাকিয়ে আছে। এই মুহুর্তে আরোহীর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অপরাধটা সে করেছে। অবশ্য এই মুহুর্তে আরোহীকে অনেক সুন্দর লাগছে, তার বোকা বোকা চেহারার জন্য। যাই হোক আর কোনো কথা না বাড়িয়ে আমি অবন্তীকে খোঁজার জন্য তাদের ছাদে গেলাম। কারন এই মুহুর্তে কেন যেন আমার মনে হচ্ছে অবন্তী হয়তো ছাদে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। এ কিহ্!! সত্যিই অবন্তী ছাদের এক কোনে দাড়িয়ে আছে। অবন্তীর চুলগুলো হিমেল হাওয়ার সাথে খেলা করছে। এই মুহুর্তে অবন্তীর চুলের গন্ধ নিতে আমার অনেক ভালো লাগছে। তাই চোখ বন্ধ করে অবন্তীর চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছি। যদি এই মুহুর্তে রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকতো তাইলে হয়তো অবন্তীর চুল নিয়ে অনেক বড় একটা কবিতা লিখে ফেলতো । দুঃখের ব্যাপার আমি রবীন্দ্রনাথ নই তাই শুধু ঘ্রাণটাই নিচ্ছি।
–এই যে মিঃ হিমেল সাহেব (অবন্তী)
–জ্বী
আমি যে চোখ বন্ধ করে অবন্তীর চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছিলাম, হয়তো এই জন্য মনেই নেই যে আমার সামনে অবন্তী দাড়িয়ে আছে। অবন্তীর ডাক শুনে চোখ খুলে তাকাতেই লজ্জাবোধ করলাম।
–সেই কখন থেকেই দেখছি এভাবে দাড়িয়ে আছেন চোখ বন্ধ করে।
–আসলে কি বলবো বুজতে পারছিনা।
–থাক কিছু বলতে হবেনা।
–আচ্ছা আপনি কি এই চিঠিটা আমাকে লিখছেন?
–কেন লিখলে কোনো সমস্যা?
–না না কোনো সমস্য নেই। আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাই।
–এই দাড়ান। আমি যে আপনাকে ভালবাসি সেটা তো আপনি এই চিঠিটা পাওয়ার পর বুঝছেন তাইনা?
— হুম।
–আগে বোঝেন নাই কেন?
–কেমনে বুঝবো।
আপনার সাথে তো আমার মাএ দুইবার দেখা দেখা হইছে। অবশ্য এই দুইবার দেখেই আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি। তারপরআরোহীকে পড়ার সময় প্রায় প্রত্যেকদিন আপনাকে দেখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য তাই আপনাকে দেখতে পারিনি।
–হুম আমিও আপনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে এই দুবছর দেখেছি।
কিন্তু কখনো সামনে যাইনি। আর এভাবে থাকতে পারছিলাম না তাই কালকে আরোহীকে দিয়ে আপনাকে চিঠিটা দিয়েছি। আর হ্যা মিঃ হিমেল সাহেব আপনার চোখদুটো আসলেই অনেক সুন্দর সেই সাথে আপনিও। তাই চিঠিতে শুধু আপনার চোখের বর্ণনাই দিয়েছি।
–আর এই জন্যই আমিও আপনার প্রেমে পরেগেছি।
–সারাজীবন আপনাকে চিঠি লেখার অনুমতি দিবেন তো
–যদি না লেখেন তাইলে কিন্তু….
–তাইলে কি?
–বলবোনা।
–বলেন বলছি।
–বলবোনা বলবোনা বলবোনা।
–দাড়ান দেখাচ্ছি মজা বলেই অবন্তী হিমেলের পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে। আর এভাবেই শুরু হলো দুটি মনের পথচলা……