অভি

অভি

———হ্যালো! আবির ভাইয়া….
__ হুমম! এতদিন পর হঠাৎ। কেমন আছো তিশা?
__ ভাইয়া
__ হুমম! শুনছি বলো?
__ আব্বু আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে,
__ ওহ! আচ্ছা
__ আপনার কিছুই বলার নাই?
__ তোমার আব্বুকে আমি আবার কী বলবো?
__ হুমম! তাইতো, আপনি আবার কী বলবেন?
__ ………
__ আবির ভাইয়া! একটা সত্যি কথা বলবেন?
__ হুমম বলবো
__ আচ্ছা আবির ভাইয়া, আপনি কী আমার আবেগ, ভালো লাগা, আপনার প্রতি আমার অনুভূতিগুলো কিছুই বোঝেন না? নাকি বুঝতে চাননি?

__ সত্যি বলতে কী তিশা, আমাদের মতো ফ্যামিলির ছেলেদের, প্রতিটা দিন কাটে নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে। এইসব ভালো লাগা, ভালবাসা আমাদের পাত্তা দিতে নেই। রাত পোহালেই যখন পেটের চিন্তাটা আসে, তখন এইসব ঠুনকো আবেগ বাতাসে মিলিয়ে যায়।

__ তারমানে আপনার প্রতি আমার ফিলিংসগুলো সব ঠুনকো আবেগ?
__ না আমি সেটা বলিনি। ওমা! কাদছোঁ কেনো?
__ আমি কাদলেও কী দোষ ভাইয়া?
__ দেখো তিশা বোঝার চেষ্টা করো। আমি তোমাদের লেভেলের না। আর তোমার বাবা কেনো, কেউই এই সম্পর্ক মেনে নেবেনা! কাজেই….

__ আমি কিচ্ছু বুঝতে চাইনা, আপনি যেভাবেই পারেন আমায় নিয়ে যান, আর একটা মুহূর্ত আর আমি এখানে থাকতে চাইনা।

__ পাগলের মতো এইসব কী বলছো? মাথা ঠান্ডা করো। আর আমি যেটা বলছি শোনো, তুমি ঐ ছেলেরেই বিয়ে করে নাও। তাতে তোমার আমার সবারই লাভ!

__ ভাইয়া! আপনি আমায় নিয়ে পালাতে পারবেন না?
__ এই কী বলছো এইসব? পালাবো মানে? পালিয়ে যাবো কোথায়? কই রাখবো তোমায়? ভবিষ্যৎ কী হবে ভাবছো?
__ আপনি এরকম করছেন কেন? আপনিতো এখন আর বেকার না। একদম না খাওয়ায়তো আমায় রাখবেন না। আর বিয়ের পর আমিও কিছু করবো। দিব্বি চলে যাবে আমাদের।

__ হাসালে তিশা। যে মেয়ে কিচেনে যায়না, গায়ের রং ময়লা হবে বলে। এসি ছাড়া নাকি গরমে দম বন্ধ হয়ে যায়। সেই মেয়ে নাকি আমার ঐ ভাঙ্গা বাড়িতে থাকবে, কিছু করবে। হা হা হা আর কী বললে চাকরী! আমার মনে হচ্ছে খুব বেশিদিন আমি এই জবটা করতে পারবো না। প্রথমে অফিসে গিয়ে মনে হয়েছিলো, জবটা আসলে স্বপ্ন, রিয়েল কিছুনা। এত বড় পোস্টে জব পাবো ভাবিনি কখনো! দুদিন যেতেই শুরু হলো ইন্সুরেন্স, নিজস্ব জামানতের তালবাহানা, এটাই নাকি এই কোম্পানির নিয়ম। নাহলে চাকরি থাকবেনা। বাবার একটা একটা জমানো টাকাগুলো দিয়ে জবটা টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম। এখন মনে হচ্ছে সব ভূয়া!

__ তারমানে আপনার এখন চাকরি নেই।
__ কোনো রকমে ঝুলে আছি, পুরোপুরি ছাড়তেও পারছিনা আবার করতেও পারছিনা। অনেকগুলি টাকা দিছিতো এজন্যে ছাড়তে মায়া লাগে। আর এখন যেখানে পোস্টিং দিছে এখানে অফিসের কোনো চিহ্নই নেই, সারাদিন গাধার খাটুনি খাটার লাগে, ওয়ার্কার আর আমার কোনো বিভেদ নেই।

__ হায় আল্লাহ! এখন কী হবে?
__ কী আবার হবে? দেখো তিশা আমি তোমার হোম টিউটর! তোমার আর আমার ছাত্রী-শিক্ষক সম্পর্ক। আমার মনে হয় সারাজীবন এই সম্পর্কই থাকুক। এই সম্পর্ক বিয়েতে নিয়ে গেলে তুমি টিকতে পারবানা। এত অভাব অভিযোগ তোমার সহ্য হবেনা।

__ কিন্তু ভাইয়া! বাবার ঐ পছন্দ করা ছেলে থার্টি ফাইভ প্লাস। দেখতেও ভালোনা, কালো আবার সামনের পাটির দাত কিরকম উচুঁ উচুঁ।
__ তোমার বাবারে বলো ইয়াং আর স্মার্ট ছেলে খুজঁতে। তাহলেই সব প্রবলেম সলভ হয়ে যাবে।
__ আমি অতকিছু বুঝিনা,

আপনি যেভাবেই হোক আমায় বিয়ে করবেন। নাহলে আমি সত্যি সত্যি স্লিপিং পিল খেয়ে সুইসাইড করবো। হ্যালো সিয়াম ভাইয়া! শুনতে পারছেন হ্যালো হ্যালো পাচঁবছর পরের কথা। তিশা সেই কালো, থার্টি ফাইভ প্লাস মানুষটার সাথেই দিব্যি সংসার করছে। বিয়ের এক বছরের মধ্যে তিশা আর তুসার উদ্দীন (তিশার হাজবেন্ড) সাহেবের কোল জুড়ে সেঁজুতি আসে। সেঁজুতির বয়স এখন চার। সেঁজুতি এখনই তার মায়ের মতো তুসার সাহেবকে সবসময় শাসনের মধ্যে রাখে। খাবার টেবিলে বসে হুবহু তার মায়ের গলায় বলে, “এই তুসার রেডি হয়ে, তাড়াতাড়ি খেতে আসো। টেবিলে নাস্তা দিছি। ” মেয়েটা একটু রাগে কিংবা অভিমানে ঠোঁট ফুলিয়ে রাখে, নিঃশব্দে কাদেঁ অথচ কারো নামে নালিশ করে না। কোনো বায়না না মেটানো হলে, বারবার অন্য বাচ্চাদের মতো রিপিট করেনা। নিজের ছোট ছোট কাজগুলো নিজে করে, কারো থেকে হেল্প নেয়না।

তুসার সাহেব একাকী মাঝেমধ্যে ভাবেন, এখনি এত আবেগ কেন মেয়েটার? আর এই দেবশিশুর মতো মেয়েটি কী সত্যিই তার? এইরকম ধবধবে সাদা গায়ের রং, কোকরানো রেশমি চুল কোনোটাই তার বংশে নেই। তমার এই বাচ্চাটা কেমন জানি রহস্যজনক। বিয়ের সাতমাস পর মানে থাক! সব প্রশ্নের উত্তর না পাওয়াই ভালো। তুসার সাহেব এইসব চিন্তাগুলোকে দামি সিগারেটের ধোয়ায় বিলীন করে দেন। উত্তরের জন্য তমার কাছে জিজ্ঞেস করেন না।

তুসার সাহেব, তমা আর সেঁজুতি যখন রেষ্টুরেন্টে কিংবা চাইনিজে বসে খাবার অর্ডার করে। ঠিক তখনই, ওইপ্রান্তে থাকা আবির একটুকরো রুটির সাথে এককাপ চা খেয়ে ঘুমানোর জন্য বিছানায় যায়।কখনো কখনো এক-আধ প্যাকেট সিগারেট আবিমের রাত জাগার সঙ্গী হয়। আবির আবার তার আগের লাইফে ফিরে গেছে। দু একটা টিউশনি করিয়ে চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়া, আড্ডা শেষে মাঝরাতে বাড়ি ফেরা, সকাল হলেই আবার নতুন চাকরির খোজ করা।

পরিবারের অভাব অনটনের কথাগুলো মুখবুজে শোনা। কোনোদিন বাধ্য হয়ে বাবার অটো নিয়ে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করা। মিডল ফ্যামিলির ছেলেদের প্রেমের শেষ পরিনতি গুলো এমনই! এরা বাস্তবতার কাছে হেরে গিয়ে, নিজের প্রিয়জনকে বিসর্জন দিয়ে দেয়। অপরদিকের মানুষটা নিজের ভাগ্যকে মেনে নিয়ে সারাজীবন সুখী গৃহিনীর অভিনয় করে যায়। গল্পগুলো এভাবেই চলতে থাকে, কখনোই ফুরোয় না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত