আজ ভার্সিটির প্রথম ক্লাস।ক্লাস শেষ করে বাইরে দাড়িয়ে থেকে খালাতো বোনের জন্য অপেক্ষা করছি।তখন পিছন থেকে একটা মেয়ে আমার নাম ধরে ডাকলো:
—-তৌফিক(মেয়ে)
—-জ্বি (আমি)
—-কেমন আছো?(মেয়ে)
—-ভালো আছি,আপনাকে তো আমি চিনলাম না?(আমি)
—-আমি নিহা,অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি (নিহা)
—-ও আচ্ছা একই ক্লাসে আমরা।(আমি)
—-হুম(নিহা)
—-কিন্তু আমার নাম জানলেন কিভাবে? (আমি) তখন অরিন(আমার খালাতো বোন) বলল:
—-আমি বলেছি,আমি আর নিহা দুইজন দুইজনের বেষ্টু।প্রতিদিন তোকে আর আমাকে কলেজ লাইফ থেকে আসা যাওয়া দেখে তাই তোর নাম জিজ্ঞেস করেছিলো তাই বলেছি(অরিন)
—-ও,এতো কিছু শুনতে চাইছি কি আমি?(আমি)
—-আচ্ছা হয়েছে নে বাসায় যাই, নিহা তুইও চল আমাদের সাথে,তিনজন একসাথেই যাওয়াযাক।(অরিন) রাস্তা দিয়ে হাঁটছি।নিহা আর অরিন দুইজন কথা বলছে। নিহা বলল:
—-আপনি কোন কথা বলছেন না কেন?(নিহা)
—-এমনি।(আমি)
—-ও কথা একটু কম বলে?(অরিন)
—-আচ্ছা আমরা তো সেম ক্লাসের,তো আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি?(নিহা)
—-ওকে হতে পারি তবে শুধুই ফ্রেন্ড এর বেশি কিছু না(আমি) কিছুদুর আসার পর নিহা ওর বাড়ির দিকে চলেগেলো।অরিন বলল:
—-ভাই তুই যেন আবার নিহার প্রেমে পরিস না,ও দেখতে যে সুন্দরি(অরিন)
—-অরিন তুই ভালো করে জানিস আমি কিরকম,এসব প্রেম ভালোবাসা আমার ভালো লাগে না।(আমি)
—-জানি,তবু বলা তো যায় না(অরিন)
—-চুপ করে থাক তো(আমি) বাসায় চলে এলাম।এরপর থেকে নিহা আর আমার মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে।একদিন কলেজ যাচ্ছিলাম দেখলাম নিহা মন খারাপ করে আছে তাই ওকে মন খারাপের কারন জিজ্ঞেস করলাম:
—-কি রে নিহা আজ কি তোর মন খারাপ? (আমি)
—-হুম সেরকমই,আজ অরিন আসে নি তাই কলেজ যেতে ইচ্ছে করছে না।(নিহা)
—-আমাকেও যেতে ইচ্ছা করছে না,এমনিতেও আকাশের অবস্থা খুব খারাপ,বৃষ্টি আসতে পারে (আমি)
—-বৃষ্টি আসলে আমি ভিজবো(নিহা)
—-তাহলে আমি বাসায় যাই,বৃষ্টিতে ভিজলে আমার জ্বর আসে তুই থাক(আমি)
—-ওলে ওলে কচি খোকা বৃষ্টিতে ভিজলে নাকি জ্বর আসে,হি হি(নিহা)
—-হাসছিস কেন?(আমি)
—-তোর কথা শুনে,তবে আজ তোকে বৃষ্টিতে ভিজিয়েই ছাড়বো দেখিস(নিহা)
—-দেখা যাবে(আমি) একটু বাদে ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি নামলো।নিহা বৃষ্টিতে ভিজছে।আমি যাত্রী ছাউনিতে দাড়িয়ে আছি।তখনি আমার গায়ে নিহা কাঁদা ছুড়ে মারলো।রেগে গিয়ে বললাম:
—-এটা কি করলি(আমি)
—-কি করলাম দেখলিই তো(আমি) বলে আবার কাদা মারলো।নিহাকে ধরতে গেলাম।কিন্তু ওকে ধরতে গিয়ে পুরো গাভিজে গেলো।মেয়েটা আমায় ভিজতে দেখে হাসছে আর বলছে:
—-কি বলেছিলাম বৃষ্টিতে ভিজিয়ে ছাড়বো,দেখলি তো আমি যেটা বলি সেইটাকরি(নিহা)
—-জানিস নিহা,তোর এই পাগলামি গুলোর জন্য তোকে আমার এতো ভালো লাগে(আমি) সেদিন বৃষ্টিতে ভিজার কারনে রাতে প্রচন্ড জ্বর আসে।জ্বরের কারনে প্রায় একদিন আমার কোন হুশ ছিলো না।জ্বর কমার পর চোখ মেলাতেই দেখি আমার পাশে অরিন আর আম্মু বসে আছে:
—-কেমন লাগছে বাবা এখন?(আম্মু)
—-এখন একটু আরাম লাগছে,কাল আমি ইচ্ছে করে বৃষ্টিতে ভিজি নি আম্মু আসলে,,,(আমি)
—-জানি তুই ইচ্ছে করে ভিজিস নি,নিহা বাসায় এসেছিলো,আমাকে সব বলেছে আর তোর মাথায় পানিও ঢেলেছিলো।মেয়েটা বেশ ভালো রে(আম্মু)
—-আন্টি নিহাকে কিন্তু আমার ভাবি বানালে মন্দ হয় না হি হি(অরিন)
—-এক থাপ্পড় দিবো, কি যা তা বলিস(আমি)
—-অরিন কথাটা মন্দ বলে শুধু শুধু রাগ করছিস তুই (আম্মু) আম্মু একথা বলে চলে গেলো।আমি ফোন হাতে নিয়ে নিহাকে কল দিলাম।কল দেওয়া মাত্রই রিসিব করলো:
—-হ্যালো,তোর শরিরের অবস্থা কেমন এখন? (নিহা)
—-এই তো রে বেশ ভালোই।তুই নাকি বাসায় এসেছিলি।(আমি)
—-হুম এসেছিলাম তো।আচ্ছা তুই কাল একটু দেখা করবি আমার সাথে যদি শরির ভালো থাকে তো নাহলে দরকার নেই(নিহা)
—-আচ্ছা দেখা করবো। এখন রাখি(আমি) পরেরদিন দেখা করতে গেলাম।নিহা পার্কে বসে আছে।আমি গিয়ে বললাম:
—-কি জন্য দেখা করতে বললি?(আমি)
—-তোকে আমি একটা কথা বলতে চায় কিন্তু তুই কি ভাববি বুঝতে পারছি না(নিহা)
—-বলে ফেল কিছু ভাববে না(আমি)
—-আমি না তোকে খুব ভালোবাসি(নিহা)
—-তুই কি আমার সাথে মজা করছিস নিহা? (আমি)
—-আমি সিরিয়াসলি বলছি,আমি তোকে খুব ভালোবাসি।(নিহা)
—-আমি তোকে শুধুই বন্ধু ভাবি এর বেশি কিছু না,এসব প্রেম ভালোবাসা আমার ভালো লাগে না (আমি)
—-তুই আমায় ভালোবাসিস না?(নিহা)
—-না,আর এসব বলবি না আমায়(আমি)
—-ঠিক আছে আর বলবো না ভালো থাকিস। (নিহা)
বলে চলে গেলো।একটু পর রাস্তায় মানুষের হৈ চৈ শুনতে পেলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে।ভিড় ঠেলে সামনে গিয়ে দেখলাম রাস্তার একপাশে নিহার রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে।তখনি নিহার কাছে গেলাম।একবার আমার দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। কয়েকজন মানুষ মিলে নিহাকে কাছের একটা হাসপাতালে ভর্তি করে দিলাম।আমি অরিন খবর দিলাম।অরিন এসে নিহার বাবা-মা কে খবর দিলো।অরিন আমাকে বলল:
—-এসব কি করে হলো?(আমি) আমি সমস্ত কিছু খুলে বললাম।তখন ও বলল:
—-জানিস তুই যখন ইন্টারে পড়তি তখন থেকে নিহা তোকে পছন্দ করতো।তোর ভিতরে থাকা সহজসরল ভাবটাকে ও ভালোবেসেছিলো।তো র কাছে আসার অনেক চেষ্টা করতো কিন্তু পারতো না।খুব ভালো মেয়ে নিহা।তোকে একদম নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসেছিলো আর তুই তাকে এভাবে ফিরিয়ে দিলি? (অরিন) নিজেকে খুব খারাপ লাগছিলো।নিহার মা আমাকে বলছে:
—-আমার মেয়ে তোমাকে ভালোবাসে এটা আমাদের কে জানিয়েছিলো আর আমরা মেনেও নিয়েছিলাম আর কাল থেকে খুব খুশি ছিলো।কিন্তু আজ দেখো ও মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।(নিহার আম্মু) আমি কিছু বললাম না।বাসায় চলে আসলাম। আমার পুরো শরিরে নিহার রক্ত লেগে আছে। যে আমায় এতো ভালোবাসতো আর আমি কি না তাকে দুরে ঠেলে দিলাম।নিহার জন্য বুকে কেমন একটা শূন্যতা অনুভব করছিলাম।আমিও নিহাকে ভালোবেসে ফেলেছি বুঝতে পারি নি। প্রায় তিনদিন পর নিহার জ্ঞান ফিরলো। নিহার বাবা-মা আমার আম্মু আর অরিন গিয়ে নিহার সাথে দেখা করলো।সবাই দেখা করার পর আমায় যেতে বলল।নিহার কাছে গেলাম আমার দিকে তাকিয়ে কাঁদছে।তখন আমি বললাম:
—-সরি নিহা(আমি)
—-সরি কেন বলছিস,তুই তো কিছু করিস নি (নিহা)
—-আমি তোর এতো কাছে থেকেও তোর ভালোবাসা বুঝতে পারি নি রে(আমি)
—-ভালোবাসবি আমায়?(নিহা)
—-হ্যাঁ রে খুব ভালোবাসি তোকে(আমি) বলেই জড়িয়ে ধরলাম।নিজের চোখ থেকেও পানি পড়ছে।তখন নিহা বলল:
—-এমন ছোট বাচ্চার মতো কাঁদছো কেন? (নিহা)
—-কই কাঁদছি,এটা তো সুখের পানি এসেছে চোখে(আমি) নিহা আমায় শক্ত করে আবার জড়িয়ে ধরে বলল
—-খুব ভালোবাসি তোমায়(নিহা)
—-আমিও খুব ভালোবাসি রে পাগলি।(আমি) তখন অরিন এসে বলল:
—-যাক বাবা এতোদিনে আমার ইচ্ছাটা পূরন হলো(অরিন)
—-তোর আবার কি ইচ্ছে?(আমি)
—-বান্ধবিকে ভাবি বানানোর ইচ্ছে।(অরিন)
—-হুম।(নিহা)
—-তুই এখন যা এখান থেকে এবার আমাদের একা থাকতে দে(আমি)
—-ওকে গেলাম(অরিন)
—-এরকম দুষ্টু ননদি আর এমন একটা মিষ্টি বর থাকলে আমার আর কিছু চায় না(নিহা)
—-আমারো এমন একটা কিউট বউ থাকলে আর দরকার নাই।(আমি)
—-I Love You(নিহা)
—-I Love You Too(আমি)
(সমাপ্ত)