এইসএসসি পরীক্ষার পর বেশ কিছুদিন ছুটি পেলাম | এই সময়গুলোতে কোনো কাজ না থাকায় হিন্দি মুভি দেখা আর গল্প লেখা ছিল আমার প্রতিদিনের রুটিন | এভাবেই আমার অবসর সময়গুলো কেটে যাচ্ছিলো | একদিন রাতে বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল | ঘুম আসছিল না তাই কফির মগটা নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম |
কফি খাচ্ছি আর বৃষ্টি পড়া দেখছি এমন সময় হঠাৎ অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসলো | কোনো কিছু না ভেবেই কেনো জানি না ফোনটা কেটে দিলাম |
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত এগারোটা পনেরো বাজে | কিছুক্ষণ পর ঐ নাম্বার থেকে আবার ফোন আসলো | ফোনটা আবার কেটে দিলাম |
এই ভাবে ৭ বার কাটার পর ফোনটা রিসিভ করলাম |
:- হ্যালো আস্সালামুআলাইকুম, কে বলছেন?
(অপর পাশ থেকে খুব সুন্দর একটা মেয়ের কণ্ঠ ভেসে আসলো)
:- ওয়ালাইকুম আসসালাম, কেমন আছেন?
:- কে আপনি? আর আমি যেমনই থাকি না কেনো আপনাকে কেনো বলব?
:- আমি একজন মানুষ |
:- হুম জানি, মানুষ ছাড়া তো আর পশু-পাখি মোবাইল ইউজ করে না |
:- জানি আপনার সাথে আমি কথায় পেরে উঠবো না | আমি কিন্তু আমার উত্তর পেলাম না..
:- কিসের উত্তর?
:- ঐ যে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কেমন আছেন |
:- হুম ভালো, আপনি?
:- এইতো আপনার মতই আছি |
:- আমার মতো কেনো!!!?(একটু অবাক হয়ে)
:- না এমনিই | কি করছেন?
:- কিছু না, কফি খাচ্ছি আর বৃষ্টি পড়া দেখছি |
:- ওহ, আমিও বৃষ্টি পড়া দেখছি |
:- যাই করুন না কেনো তাতে আমার কি,, আপনি কে আগে তাই বলুন?
:- আমি মিস্টি |
বলেই ফোনটা কেটে দিল | সঙ্গে সঙ্গেই আমি তাকে ফোন দিলাম ঐ পাশ থেকে ভেসে আসলো আপনার কাঙ্খিত নম্বরে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না |
বারবার ট্রাই করলাম তার নাম্বার বন্ধ পেলাম |
তাকে ফোনে না পেয়ে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম | ভোর ৬ টায় ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো | ঘুম জড়িত চোখেই ফোনটা রিসিভ করলাম |
:- হ্যালো, কে?
:- শুভ সকাল, এখনো ঘুম থেকে ওঠেন নি?
(কাল রাতের ঐ মেয়েটার কণ্ঠ শুনেই চোখ থেকে ঘুম উধাও হয়ে গেলো)
:- আপনি?? এতো ভোরে ফোন দিয়েছেন কেনো? আর আমি ৯ টার আগে কখনো ঘুম থেকে উঠি না |
:- হুম আমি | ঘুম থেকে উঠেন না তবে এবার থেকে উঠবেন | তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়তে যান |
:- কিন্তু…
:- কোনো কিন্তু না | যা বলছি তাই করুন | (আমাকে থামিয়ে দিয়েই উনি বললেন এবং বলেই ফোন কেটে দিলেন)
আমার আরামের ঘুম হারাম করার জন্য তাকে মনে মনে খুব বকলাম | কি আর করার রাগে দুঃখে উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়তে চলে গেলাম |
নামাজ শেষ করে আসার সময় ভাবলাম একটু রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসি |
তো যেই ভাবা সেই কাজ নদীর কিনারা দিয়ে হাঁটার সময় হঠাৎ ঐ মেয়েটার(মিস্টির) কথা মনে পড়ে গেলো |
নাহ সকালে মনে মনে মেয়েটাকে বকাটা আমার উচিৎ হয়নি | ওনার জন্যই আজ এতো সুন্দর সকালটা উপভোগ করতে পারলাম |
এরপর কথা হলেই মেয়েটাকে থ্যাংকস জানিয়ে দিতে হবে | অনেকক্ষণ হাঁটার পর খুব ক্লান্তি নিয়ে বাসায় ফিরলাম |
সকালে নাস্তা করেই বাইরে বেরিয়ে গেলাম একটা কাজের জন্য | কাজটা শেষ করতে করতে রাত ৯ টা বেজে গেলো |
সারাদিনে মেয়েটার কথা একবারও মনে হয়নি | মেয়েটার কথা মনে পড়তে না পড়তেই তার ফোন পেলাম |
:- আস্সালামুআলাইকুম, কেমন আছেন?(আমি)
:- ওয়ালাইকুম আসসালাম | জি ভালো, আপনি?
:- এইতো আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি | আর থ্যাংকস |
:- থ্যাংকস কেনো!!!
:- আজ আপনার জন্যই এতো সুন্দর সকালটা উপভোগ করতে পারলাম |
:- ও তাই?? ওয়েলকাম |
:- আচ্ছা একটা কথা বলব?
:- হুম বলুন!
:- আপনি আসলে কে? আমার মোবাইল নাম্বার কোথায় পেলেন?
:- সবই জানতে পারবেন | আচ্ছা আমরা কি বন্ধু হতে পারি?
:- হুম |
:- ধন্যবান, আর আপনি কি কোথাও হাঁটছেন?
:- জি না | আমি একটা কাজের জন্য বাসার বাইরে ছিলাম, এখন বাসায় যাচ্ছি |
:- ও, সাবধানে যাবেন কেমন?
:- হুম ওকে বাই |
:- বাই |
ঐ রাতে মিস্টির সাথে অনেক কথা হলো আর আমাদের কথা আপনি থেকে তুমিতে চলে এসেছিলো এবং
আমাদের বন্ধুত্ত্ব টা দিন দিন খুব গভীর হতে হতে এক পর্যায়ে ভালোবাসায় রুপ নেয় | একথাটা আমরা দুজনেই বুঝতাম তবুও কেউ কাউকে বলতাম না |
ওর সাথে প্রায় সময়ই FB তে কথা হতো | ওকে সামনা-সামনি দেখবো বলে কখনো ওর ফটো দেখতে চাইনি | একদিন সকালে ওর সাথে ফোনে কথা হচ্ছিলো |
:- আস্সালামুআলাইকুম মিস্টি, কেমন আছো?
:- ওয়ালাইকুম আসসালাম | হুম ভালো, তুমি?
:- হুম ভালো | আচ্ছা একটা কথা বলবো?
:- হুম বলো…
:- চলোনা আমরা দেখা করি?(ও আমাদের এলাকা মেহেরপুরে ছিল)
:- এতো তাড়াতাড়ি?? কিন্তু…
:- কোনো এক্সকিউজ নই, কালকেই আমরা দেখা করবো that’s final.
:- ওকে বাবা ওকে, কোথায় দেখা করবা?
:- তুমিই বলো…
:- মুজিবনগর |
:- (মুজিবনগরের কথা শুনেই বুকের ভিতর একটু কেঁপে উঠল | তবুও কাঁপাটা কেয়ার না করে বললাম) আচ্ছা ঠিক আছে | সময় বিকাল চারটা |
:- ওকে |
(আগেই বলে রাখি, মুজিবনগর ছিল অপার খুব প্রিয়ো একটা জায়গা | আর অপা হলো আমার কলেজ জীবনের প্রথম ভালোবাসা |
আমাদের ভালোবাসা সম্পূর্ণ রুপ নেওয়ার আগেই ও আমার জীবন থেকে হারিয়ে যায় | যাইহোক, আসল ঘটনায় আসি)
যথারীতি, চারটা বাজার আগেই মুজিবনগর পৌছিয়ে গেলাম এবং একটা জায়গায় বসলাম |
একটু পরে দেখি লাল শাড়ি পড়া একটা মেয়ে এদিকেই এগিয়ে আসছে |
মেয়েটাকে দূর থেকেই চেনা চেনা লাগছে তবুও কে না কে ভেবে আর গুরুত্ব দিলাম না | কিছুক্ষণ পরে আমার ঘাড়ে কারোর হাতের স্পর্শ পেলাম |
পিছুনে ঘুরেই দেখি ঐ মেয়েটা যাকে একটু আগে এদিকে আসতে দেখলাম | ওকে দেখা মাত্রই ৪২০ ভোল্টেজের একটা শক খেলাম |
আর আমার দের বছর আগের ঘটনাটা মনে পড়ে গেল |
..
আম্মু তাড়াতাড়ি আমার নাস্তা রেডি করো, আজ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ক্লাস আছে তাড়াতাড়ি কলেজে যেতে হবে |
ডাইনিং টেবিলে দেখলাম আম্মু আগেই সবকিছু রেডি করে রেখেছে | তাড়াতাড়ি নাস্তা করেই কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম |
আজ দশ মিনিট লেট হয়ে গেছে না জানি সরোওয়ার স্যার কি বলবেন | এসব ভাবতে ভাবতে যেই ক্লাসে ঢুকতে যাব ঠিক তখনি
একটা মেয়ের সাথে ভিষণ জোরে ধাক্কা খেলাম | সেও ঐ সময়ে তাড়াতাড়ি করে ক্লাস ঢুকছিলো |
কেউ কাউকে কিছু না বলেই ক্লাসে ঢুকে গেলাম | কিছুক্ষণ পর যখন ঐ মেয়েটার দিকে তাকালাম দেখি ও
আমার দিকে রাক্ষসী রাণী কটকটির মতো তাকিয়ে আছে | দেখে অবশ্য একটু ভয়ই পেলাম |
প্রতিদিনের মতো সেদিনও কলেজের পাশের কফি শপে আড্ডা দিচ্ছি |
আমার বন্ধু শ্রাবন বলল, দোস্ত দেখ ঐ মেয়েটা তোর দিকে কিভাবে তাকিয়ে আছে?? কই??
তারপর দেখি রাক্ষসী রাণী কটকটি(আমার দেয়া নাম) আমার দিকে এগিয়ে আসছে |
দেখেও না দেখার ভান করে আড্ডায় মনযোগ দিলাম | এসেই আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
:- এই যে মি. শুনছেন?
:- আপা কারে কন?
:- যার সামনে খারায় আছি তারে কই | কেন সেকি কানা যে কানে কথা শুনে না?
(কথা শুনেই টাস্কিত খেলাম)
:- না মানে কিছু বলবেন আপু?
:- এইতো লাইনে আসছেন | তখন আমাকে ঐ ভাবে ধাক্কা দিলেন কেনো?
:- আসলে দেড়ি হয়ে গিয়েছিল তাই তাড়াহুড়ো করে ক্লাসে ঢুকতে গিয়েই আরকি..(একটু বোকার মত হাসি দিয়ে বললাম)
:- ঐ হাসি থামান | আপনি ভদ্রতা শিখেন নাই? অন্যায় করে আবার সরি না বলেই চলে গেলেন?
:- ওকে কটকটি সরি | (মুখ ফোস্কিয়ে বেরিয়ে গেল)
:- কি???? আমি কটকটি??? আপনি কটকটি, আপনার দাদা কটকটি, আপনার চৌদ্দ গুষ্ঠি কটকটি |
(বলেই রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেল)
বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে দেখি তারা এতক্ষণ হা করে তাকিয়ে আমাদের ঝগড়া দেখছিল | ধ্রুবের মাথায় গাট্টা মেরে বলি ঐ শালা কি দেখিস??
দোস্ত তুইতো পুরো ফাটিয়ে দিছিস | আর পাম দিসনা চল বাসায় যায় | তারপর বাসায় চলে আসলাম |
মেয়েটাকে প্রায়ই দেখতাম | কেমন যেন একটা মায়াবী চেহারা | সব সময় ওর কথা মনে হত | কোনো কাজ ঠিক মতো করতে পারতাম না |
ওর প্রতি কেমন জানি একটু টান টান অনুভব করতে লাগলাম| ও হ্যা বলাই হয়নি, মেয়েটার নাম অপা |
ও আমাদের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী | যায়হোক, একদিন আমরা বন্ধুরা মিলে মজিবনগরে ঘুরতে যাই |
গিয়ে দেখি কটকটি মানে অপা সেখানে আগেই এসে ঘুরে বাড়াচ্ছে | ওর একটা বান্ধবীর কাছে জানতে পারলাম
এই জায়গাটা নাকি ওর খুব প্রিয়ো, ও প্রায়ই এখানে ঘুরতে আসে | তারপর দেখি কটকটি একটা টং দোকানে দাড়িয়ে পাপড় কিনছে,
আমি তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমার পছন্দের একটা শিল্পীর গান গেয়ে উঠলাম,
..
“তাকে দেখলেই পাতা ঝরা দিন মনে পড়ে যায় সেই সব দিন ভর,
ছিল বেদোনারও মনোথর, ছিল প্রণয়েরও সমাগর,
আলটং দোকানেতে কিনতে দাড়িয়ে থাকা দু টাকায় চারটে পাপড় |”
..
গানটা শুনেই মেয়েটা হাসতে হাসতে বলল, এখানে চারটা পাপড়ের দাম দু টাকা না বারো টাকা হা হা হা হা |
আমি তার কথা শুনেই পাগল হয়ে গেলাম | ওর প্রতি আমার ভালোবাসা আস্তে আস্তে বেড়েই চলেছে |
একদিন রাতে আর থাকতে না পেরে ভাবলাম আমার ভালোবাসার কথা তাকে বলতেই হবে |
তারপরের দিন একটা লাল গোলাপ কিনে কলেজে গেলাম আমার হৃদয়ের কথা তাকে বলব বলে |
অনেক্ষণ কলেজ ক্যাম্পাসে দাড়িয়ে থাকলাম তবুও তার দেখা পেলাম না | সারা কলেজে তাকে খুঁজলাম কিন্তু তার দেখা পালাম না |
ঐ দিনের পর তাকে আর কলেজে আসতে দেখিনি | অবশেষে ওর কাছের একটা বান্ধবীর কাছে জানতে ওরা এই শহর থেকে চলে
গেছে এর বেশি ও কিছুই জানেনা বলল | তার কথা শুনে আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেল | দিন যায়, মাস যায় তবুও তাকে পেলাম না |
:- এই হ্যালো কোথায় হারিয়ে গেলেন?
(আমি ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে এলাম)
:- অপা তুমি ফিরে এসেছো??
:- তোমার ভালোবাসা আমাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে এনেছে |
:- কিন্তু তুমি আমার খবর পেলে কিভাবে?
:- এই সবকিছু তোমার বন্ধু ধ্রুব করেছে |
:- সত্যিই??
:- হুম আকাশ |
(মনে মনে ধ্রুবকে অনেক ধন্যবাদ দিলাম )..
..
অতঃপর একটি ভালোবাসা পূর্ণতা লাভ করলো |